Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন চায় যুক্তরাষ্ট্র’

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসনাল কমিটিকে এলিস ওয়েলস

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

২০১৮ সালে বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ ও সব দলের অংশগ্রহণ দেখতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ‘২০১৮ সালে বাংলাদেশে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়’ বলে গত বুধবার দেশটির পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াভিত্তিক ভারপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যালিস ওয়েলস কংগ্রেসনাল কমিটিতে এক লিখিত বক্তব্যে এ কথা জানান। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে বাংলাদেশের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র কারণ নির্বাচনে যেন সবাই অংশগ্রহণ করতে পারে এবং ভোটে গণতান্ত্রিক চর্চা থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যালিস ওয়েলস কয়েক দিন আগে বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। ঢাকা সফরের সময় তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী এবং প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) তারিক আহমেদ সিদ্দিকীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ ছাড়াও তিনি সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, পেশাজীবী ও সুশীলসমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বাংলাদেশের সার্বিক চিত্র তিনি তুলে ধরেন।
আমেরিকার বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় শুক্রবার ভোরে ‘মেইন্টেইনিং ইউএস ইনফ্লুয়েন্স ইন সাউথ এশিয়া : দ্য এফওয়াই বাজেট ২০১৮’ উপস্থাপন করার কথা অ্যালিস ওয়েলসের। তার একদিন আগেই তিনি বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরেন কংগ্রেসে। তিনি বলেন, হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর বাংলাদেশের সঙ্গে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সম্পর্ক আরো জোরদার করছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ এমন হুমকি মোকাবেলায় কাজ করে যাচ্ছে। আমরা সরকারি কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বাহিনীদের মানবাধিকার রক্ষা ও উগ্রবাদ দমনে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, অনেক মার্কিন প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ এখন উপযুক্ত জায়গা। এ জন্য সন্ত্রাস মোকাবেলায় দুই দেশের যৌথ উদ্যোগ সবেচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে- বাংলাদেশ অন্তত ৪০টি জঙ্গি হামলার দায়ভার স্বীকার করেছে আইএস ও আল-কায়েদা। অ্যালিস বলেন, জুলাইয়ে হলি আর্টিজানে হামলার পর আইএসের উত্থানে আমরা মানিলন্ডারিংয়ের বিরুদ্ধে ও সন্ত্রাস মোকাবেলায় যৌথ অভিযান চালাব। বাংলাদেশের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ থাকা সত্তে¡ও বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরী পোশাক রফতানিকারক দেশ বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সহযোগী। বাংলাদেশে গার্মেন্ট কর্মীদের অধিকার নিশ্চিত করতে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশ কারখানার ভবন ও আগুন নিরাপত্তা ব্যবস্থায় উন্নতি করেছে উল্লেখ করে অ্যালিস ওয়েলস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আশা করে এই খাতে বাংলাদেশে তাদের উন্নতি বজায় রাখবে এবং শ্রম আইনকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাবে। বিগত দুই দশকে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ সত্তে¡ও বাংলাদেশ তাদের উন্নতি অব্যাহত রেখেছে। অনেক নারী এখন কর্মক্ষেত্রে যোগ দিচ্ছে। ফলে দেশের উন্নতি ত্বরান্বিত হচ্ছে। দারিদ্র্য বিমোচনে ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে রোল মডেল মনে করে বলেও জানান ওয়েলস। বিগত পাঁচ বছরে শিশুমৃত্যুর হারও অনেক কমে গেছে।
বিশ্বব্যাংকের তালিকা অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। আর শিগগিরই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হয়ে যাবে বলে মনে করেন অ্যালিস। তিনি বলেন, অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্তে¡ও বাংলাদেশ খুবই ভালো করছে এবং এটা নিয়ে সরকার গর্ব করতেই পারে। এ জন্য বাংলাদেশ শিক্ষা ক্ষেত্রে জোর দিচ্ছে যা মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের লক্ষ্যকে পূরণ করবে।
সন্ত্রাস মোকাবেলায় বাংলাদেশ ১৩ কোটি ৮৫ লাখ ডলার বিদেশ সহায়তা চেয়েছে। এতে করে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী আরো শক্তিশালী হবে। এফওয়াই ২০১৮-তে এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসার পরিধি বাড়বে, সিভিল সোসাইটিতে সমর্থন জোরদার হবে, কৃষিকাজে আর্থিক সহায়তা করতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তরুণদের উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা ও শিশু স্বাস্থ্যে তাদের সহায়তা জোরদার করবে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে বিতর্কিত নির্বাচন মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। সে জন্য দেশটি বাংলাদেশে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য চাপ দিয়ে আসছে। এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ১৫ জুলাই ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী ৩১ জুলাই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপ শুরু হয়েছে। কয়েক দিন পর নির্বাচনে সবচেয়ে বড় স্টেকহোল্ডার হিসেবে পরিচিত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করবে নির্বাচন কমিশন। এর আগে সুশীলসামাজের প্রতিনিধি, সিনিয়র সাংবাদিক, সংবাদপত্রের সম্পাদক এবং টিভির প্রধান কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক দলের নেতারা ইসির সঙ্গে সংলাপে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এবং ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে সে জন্য নির্বাচনে সেনা মোতায়েনসহ নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টির দাবি জানান। তারা সকলেই লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দাবি জানান। এ জন্য প্রয়োজনে আদালতের নির্দেশনা নেয়ার পরামর্শ দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে। সরকারের সিনিয়র মন্ত্রী হিসেবে পরিচিত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দু’দিন আগে ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে সব রাজনৈতিক দল। নির্বাচন নিরপেক্ষ করতে বিএনপি থেকে সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ থেকে বলা হচ্ছে সহায়ক সরকারের প্রধান থাকবেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্র সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের প্রত্যাশা যখন করছে তখন দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল নির্বাচনের সময় সহায়ক সরকার ইস্যু নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত রয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করেন ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ এমন দাতাদেশ ও সংস্থার প্রতিনিধি যারাই ঢাকা আসছেন তারাই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরামর্শ দিচ্ছেন।



 

Show all comments
  • Delwar Hossain ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৩:১২ পিএম says : 0
    amara adeser jonogon o seta e chai
    Total Reply(0) Reply
  • faruk ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৩:১৩ পিএম says : 0
    kintu dekhar bisoy holo sarker ki chay
    Total Reply(0) Reply
  • MD S A Sojol ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৫:৩২ পিএম says : 0
    দেশের জনগণও চায়
    Total Reply(0) Reply
  • ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ পিএম says : 0
    সরকার কি চায়
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

১৬ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ