চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
সংবাদ বলতে মুদ্রণজগৎ, প্রচার মাধ্যম, সম্প্রচার কেন্দ্র, ইন্টারনেট কিংবা গণমাধ্যমের উপস্থাপিত বর্তমান ঘটনা প্রবাহের একগুচ্ছ নির্বাচিত তথ্যের সমষ্টি। যা যোগাযোগের আনুষ্ঠানিক পক্রিয়া সম্পন্ন করে। পরিবর্তিত সমাজ বাস্তবতায় সংবাদপত্র এবং গণমাধ্যমের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও সাংবাদিক নির্যাতন হচ্ছে। সাংবাদিকগণ মুক্ত স্বাধীনভাবে সংবাদ প্রচার করতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দল কিংবা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও অনেক সময় সংবাদিকগণ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। নির্যাতিত সাংবাদিকগণ ন্যায়ভিত্তিক বিচারও পাচ্ছে না। নিহত সাংবাদিকদের পরিবার রাষ্ট্রের কাছে ঠাই পাচ্ছে না। তাই ‘বিশ্ব মুক্ত সাংবাদিকতা দিবস’কে সভা, সেমিনার, র্যালী ও বক্তৃতাৃ, বাণীর মাঝে সীমাবদ্ধ না করে এর মূল তাৎপর্র্য সম্পর্কে সবাইকে সচেতন হতে হবে। তবে শুধু এক পক্ষকে দুষলেই দায়িত্ব শেষ হবে না। সাংবাদিকদেরকেও হতে হবে নিরপেক্ষ। তারাও সাংবাদিকতার নীতি মেনে চলতে হবে এবং সত্য সংবাদ যাচাই-বাচাই করে প্রকাশ করতে হবে। বর্তমানে সাংবাদিকদের প্রতিও মানুষের আস্থা নেই। তারা অনেক সময় দলান্ধ হয়ে, আবার কখনো নীতিহারা হয়ে সংবাদ প্রকাশ করছে। মুক্ত সাংবাদিকতা দিবসে সংবাদের নীতি অনুসরণের শপথ নিতে হবে।
১৪শ’ বছর আগে আল্লাহ তা‘আলা ও তার রাসুল সা. সংবাদ বিষয়ে যে নীতিমালা দিয়ে গেছেন তা অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সা.-এর দেয়া নীতিমালা সত্যিই অনন্য। ইসলামে সংবাদ এক ধরণের আমানত। এই আমানত হচ্ছে কোন তথ্য ও সংবাদকে অবিকৃত অবস্থায় সংবাদ মাধ্যমে তুলে ধরা। নিজস্ব চিন্তা কিংবা দল মতের রঙ লাগিয়ে সংবাদকে আংশিক বা পুরোপুরি পরিবর্তন করে উল্টোভাবে প্রচার না করা, কোন রকম সংযোজন বিয়োজন না করে সংবাদ পরিবেশন করা। ইসলাম কেবল নিরেট সত্যকেই তুলে ধরতে বলেছে। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো।” -সূরা আহযাব-৭০
সংবাদের তথ্য যাচাই ও সত্যতা নিরুপণ করা সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “হে মুমিনরা! যদি কোন পাপাচারি তোমাদের কাছে কোন বার্তা নিয়ে আসে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে। যাতে অজ্ঞতা বশতঃ তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতি সাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে যাতে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য তোমাদের অনুতপ্ত না হতে হয়।” -সূরা হুজুরাত-৬
ব্যক্তি, দলীয় ও নিজস্ব চিন্তা-চেতনা বিরোধী হওয়ার কারণে কোন কোন সাংবাদিক কিংবা গণমাধ্যম প্রাপ্ত তথ্য গোপন করে থাকে। কোন কোন সময় তৃণমূল থেকে যে সংবাদ পৌঁছানো হয়, পত্রিকার মালিক, সম্পাদকের চিন্তাবিরোধী হওয়ায় তা প্রকাশ করা হয় না। এভাবে সত্য গোপন করাকে ইসলাম পাপ হিসেবে বিবেচনা করেন। মহান আল্লাহ বলেন, “তোমরা সাক্ষী গোপন করো না। আর যে তা গোপন করে অবশ্যই তার অন্তর পাপী। -সূরা বাকারা-২৮৩। কোন বিষয়ে সংবাদ পরিবেশনের আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা সাংবাদিকতার অন্যতম শর্ত। নবীজী সা. বলেছেন, “যা শুনবে তাই বর্ণনা করা মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট। -মুসলিম শরিফ
তাই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা নিয়ে পরিচ্ছন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে সংবাদ প্রচার করা সাংবাদিকের অপরিহার্য কর্তব্য। ব্যক্তিগত আক্রোশে, কাউকে হেয় করার মানসে কারো একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরা ইসলামের দৃষ্টিতে খুবই গর্হিত কাজ। মহান আল্লাহ বলেন, কোন সম্পদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদের কখনো যেন সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে। -সূরা মায়েদা-৮
হাদিস শরিফে এসেছে, “যে ব্যক্তি নিজ ভাইয়ের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখে আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। -বুখারী ও মুসলিম
মিথ্যা সংবাদ প্রচারের ব্যাপারে কুরআনে শাস্তির বিধান রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “আর যারা সচ্চরিত্র নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারপর তারা চারজন সাক্ষী নিয়ে আসে না, তবে তাদেরকে ৮০টি বেত্রাঘাত করো এবং তোমরা কখনো তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করো না । আর এরাই হলো ফাসিক। -সুরা নুর-৪ ৃ। কালামে পাকে আরো ইরশাদ হয়েছে, “সুতরাং মূর্তিপূজার অপবিত্রতা থেকে বিরত থাকো এবং মিথ্যা কথা পরিহার করো।” -সূরা হজ-৩০
কালামে পাকে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “আর যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না এবং যখন তারা অনর্থক কথা-কর্মের পাশ দিয়ে বলে তখন সসম্মানে চলে যায়।” -সূরা ফুরকান-৭২
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।