পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সড়ক মহাসড়কে চলাচলে যতদুর চোখ যেত দেখা যেত বিশাল ও বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। বড় বড় মাঠের সংখ্যা ছোট হয়ে আসছে। চারিদিকে মাঠ আর গ্রাম এখন একাকার হচ্ছে। গ্রাম বড় হচ্ছে, আর ছোট হচ্ছে মাঠ। মাত্র কয়েকবছর আগেও যে আবাদী জমি চাষাবাদ করে কৃষক পরিবার খাদ্য যোগাড় করতো। সেই জমিতে গড়ে উঠেছে বাড়ীঘর। নগর ও শহরের আয়তন স¤প্রসারিত হচ্ছে দ্রæত। মাঠের চেহারা বদলে যাচ্ছে। প্রবাসী ও বিত্তশালীদের অর্থে মাঠেও গড়ে উঠছে অপরিকল্পিত বাড়ীঘর ও শিল্প প্রতিষ্ঠান। কৃষকের বেঁচে থাকার অবলম্বন কৃষিজমি হাতছাড়া হচ্ছে। ভোগবিলাসে সাময়িক ভালো থাকলেও ভবিষ্যত প্রজন্মের বিষয়টি মাথায় রাখা হচ্ছে না। জমি কমে যাওয়ায় চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। কৃষি উৎপাদনে বিপ্লব ঘটানো ও খাদ্যে উদ্বৃত্ত এলাকা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে খোঁজ নিয়ে ও কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে এই মাঠচিত্র পাওয়া গেছে। কৃষি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদদের মতে, প্রতিটি গ্রামেই গড়ে শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ মানুষের জীবন-জীবিকা কৃষির উপর নির্ভরশীল। তাদের স্থায়িত্বশীল জীবনযাত্রা বাধাগ্রস্ত করে উন্নয়ন অসম্ভব ব্যাপার। সরকারী নির্দেশনা আছে কৃষি জমি কোনভাবেই যেন নগরায়নে, শিল্পে কিংবা ঘরবাড়ী নির্মাণ না হয়। কিন্তু নির্দেশনা কোন কাজে আসছে না।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের জরিপ রিপোর্ট অনুয়ায়ী জাতীয় অর্থনীতি ও খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। অঞ্চলটির ১০ জেলায় সর্বমোট জমির পরিমাণ ২২ লাখ ৫১হাজার ৭৬১ হেক্টর। আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ১২ লাখ ২৩ হাজার ৬৮৯ হেক্টর। সাময়িক পতিত ও স্থায়ী পতিতসহ অনাবাদী জমি রয়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৭২১ হেক্টর জমি। যা আবাদের আওতায় আনা যায়নি দীর্ঘদিনেও। নানা কারণে অনাবাদী ছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পানিবদ্ধতা ও লবণাক্ততায় যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের আবাদী জমির অপুরণীয় ক্ষতি হচ্ছে প্রায় প্রতিবছর। ক্রমবর্ধমানহারে বাড়ছে জনসংখ্যা। প্রায় ৩ কোটি জনসংখ্যার এই অঞ্চলটিতে ৭ হাজার ৮শ’৩০ গ্রাম রয়েছে। গত এক দশকে ভূমিহীন কৃষকের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। প্রান্তিক, ক্ষুদ্র ও মধ্যম কৃষকের সংখ্যাও বেড়েছে। ভূমিহীন, ক্ষুদ্র, প্রান্তিক, মধ্যম ও বড় কৃষকের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ২৭ লাখ। এর মধ্যে বড় কৃষকের সংখ্যা মাত্র ৯লাখ ১৮হাজার। প্রতিটি গ্রামেই মাঠের আবাদী জমি কমছে খুব দ্রুত। অকৃষি জমির পরিমাণ বাড়ছে সমহারে। সুত্র জানায়, গত ১০ বছরের ব্যবধানে যে জমি হাতবদল হয়েছে, তার সিংহভাগই কৃষকদের হাতে যায়নি। একশ্রেণীর বিত্তবানরা জমি ক্রয় করে তাতে ব্যাংক ঋণ নিয়ে শিল্প গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতিতে সামান্য স্টাকচার করে অর্থ ভিন্নখাতে ব্যয় করছে। ওই জমিতে শিল্পও হচ্ছে না, আবার আবাদের সুযোগও থাকছে না। গাছপালা লাগিয়ে ফেলে রাখার দৃশ্যও চারিদিকে চোখে পড়ছে। যাতে কিছুদিন আগেও বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হত। আবার শিল্প কলকারখানা গ্রামে স্থাপন করে পরিবেশ দুষণ করা হচ্ছে। এলাকাবাসী প্রতিবাদ করছেন কিন্তু প্রশাসন শুনছেন অর্থবিত্তশালী ও দাপটধারীদের কথা।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি গবেষণা ইন্টটিটিউট ও বিএডিসি সুত্র জানায়, কৃষি ভান্ডার হিসেবে খ্যাত অঞ্চলটি ধান, সবজি, রজনীগন্ধা, গম, ভুট্রা, কলা, পাট, নারিকেল, তামাক, কুল ও পান-সুপারীসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। ওইসব কৃষিপণ্য আঞ্চলিক চাহিদা মিটানোর পর রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করতে সক্ষম হয়। কম জমিতে আধুনিক প্রযুক্তিতে চাষাবাদ করে খাদ্য চাহিদা মিটানোর প্রাণান্ত চেষ্টা চলছে। কিন্তু যেহারে আবাদী জমি কমছে, তাতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের তুলনায় খাদ্য চাহিদা মিটানো কঠিন হবে বলে বিশেষজ্ঞদের আশংকা। কৃষি স¤প্রসারণ সুত্র আরো জানায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে খাদ্য চাহিদা রয়েছে ৩০ লাখ ৭৫ হাজার ৬০৯ মেট্রিক টন। গড় হিসাবে ধান ও গমসহ খাদ্যশস্য উৎপাদন হয় ৪১ লাখ ৮ হাজার ২৯০ মেট্রিক টন। খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকতো ১০ লাখ ৩২ হাজার ৬৮১ মেট্রিক টন। উদ্বৃত্তের ওই তথ্যের সাথে এখন অনেকটাই গরমিল দেখা যাচ্ছে বলে আরেকটি সুত্র দাবী করেছে। ইতিপূর্বে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে খাদ্য ঘাটতি স্পর্শ করতো না কখনোই। কিন্তু ক্রমাগতভাবে উদ্বৃত্তের হার কমে যাচ্ছে। কৃষি বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীদের মতে, অঞ্চলেটির সাময়িক পতিত ও স্থায়ী পতিত জমির পুরোটাই আবাদের আওতায় আনা সম্ভব। তাছাড়া আবাদী জমি ক্রমহ্রাসরোধে পদক্ষেপ এবং আবাদী জমিতে বাড়ীঘর ও শিল্প প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সরকারী নির্দেশনার বাস্তবায়ন হলে কৃষক ও কৃষির স্বার্থ সংরক্ষিত হবে বলে সচেতন ও পর্যবেক্ষক মহল এবং কৃষি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদদের অভিমত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।