দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
প্রশ্ন : কুরবানি কি ত্যাগ ও বিসর্জনের প্রেরণা যোগায়?
উত্তর : কুরবানি হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর স্মৃতি বিজড়িত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। প্রতি বৎসর কুরবানি এসে আমাদেরকে মুসলিম মিল্লাতের পিতা হযরত ইবরাহীম (আঃ) কে স্মরণ করিয়ে দেয়। যেমন হাদিস শরীফে এসেছে “যায়েদ ইবনে আরকাম রাঃ থেকে বর্ণিত রাসূল (সঃ) এর সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন হে আল্লাহর রাসূল! এই কুরবানি কি? (অর্থাৎ এই কুরবানি কি আমাদের শরীয়তে নির্দিষ্ট হয়েছে না পূর্বেও কোন শরীয়তে ছিল?) তিনি ইরশাদ করলেন এটি তোমাদের পিতা হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর সুন্নাত।” (মিশকাত পৃঃ ১২৯)
হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর প্রাণপ্রতিম পুত্র ইসমাঈল (আঃ) এর বয়স যখন ৭ কিংবা ১৩ বছর তখন ইবরাহীম (আঃ) কে উপর্যুপরি তিন দিন স্বপ্নে দেখানো হয়েছিল যে তোমার প্রিয় জিনিস আল্লাহর রাস্তায় কুরবানি কর। আর একথা সর্বজন স্বীকৃত যে পয়গম্বরগণের স্বপ্নও অহী। তাই হযরত ইবরাহীম (আঃ) তদীয় পুত্র ইসমাইল (আঃ) কে কুরবানি করার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলেন এবং তার সাথে পরামর্শের ভঙ্গিতে মতবিনিময় করে নিলেন যে, আমি স্বপ্নে দেখি তোমাকে যবেহ করছি। সুতরাং তোমার অভিমত কি? ইসমাঈল (আঃ) বিনয় এবং আনুগত্যের ভঙ্গিতে জবাব দিলেন হে পিতা! আপনাকে যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে আপনি তা সেরে ফেলুন। ইনশা’আল্লাহ্ আপনি আমাকে ধৈর্যধারণকারীদের মধ্যে পাবেন। অতপর আল্লাহর নির্দেশের সামনে অনুগত হয়ে যখন পিতা পুত্রকে যবেহ করতে এবং পুত্র যবেহ হতে আরম্ভ করলেন সাথে সাথেই আল্লাহ তা’আলা ডাক দিয়ে বললেন ও ইবরাহীম! তুমি তোমার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করে দিয়েছ। আল্লাহর আদেশ পালনে তুমি কোন ত্রæটি করনি। তোমার পরীক্ষা পূর্ণ হয়ে গেছে। সুতরাং ইসমাঈলকে ছেড়ে দাও।
ইবরাহীম (আঃ) আওয়াজ শুনে উপরের দিকে তাকালেন এবং দেখতে পেলেন যে জিবরাইল (আঃ) আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি ভেড়া নিয়ে দাড়িয়ে আছে। মোটকথা এ জান্নাতী ভেড়া হযরত ইবরাহীম (আঃ) কে দেয়া হল এবং তা তিনি কুরবানী করে ফেললেন। এভাবেই আল্লাহ তা’আলা হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর পুত্র কুরবানি কবুল করে নিলেন। কথিত আছে যে উক্ত ভেড়াটি হযরত হাবীল (আঃ) এর কুরবানিকৃত জানোয়ার ছিল যা আল্লাহ তা’আলা জান্নাতে লালন পালন করতেছিলেন। আল্লাহ তা’আলা হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর পুত্র কুরবানীর ঘটনাটিকে কিয়ামত পর্যন্ত প্রচলন করে দিলেন। আর তারই ধারাবাকিতায় ইসমাঈলী বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ সšতান এবং সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল আমাদের নবী মুহাম্মদ (সঃ) কে নির্দেশ করলেন “আপনি নামাজ পড়–ন এবং কুরবানি করুন”(সুরা কাউসার)। সে হিসেবে মহানবী (সঃ) মাদানী জীবনের দশ বছরের প্রত্যেক বছরই কুরবানি করেছিলেন (মিশকাত পৃঃ ১২৯)। এভাবেই আমাদের মুসলিম মিল্লাতের উপর কুরবানীর বিধান প্রবর্তিত হয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন আমি পরবর্তীদের মধ্যে তার জন্যে এ বিষয়টি রেখে দিয়েছি। তাই যাদের নিকট কুরবানির দিন সমূহে গৃহাস্থলীর প্রয়োজন অতিরিক্ত সাড়ে সাত তোলা স্বর্ন বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য অথবা তার মূল্য পরিমাণ সম্পদ থাকবে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব।
এ কুরবানির রয়েছে অনেক ফযিলত। যেমনঃ “একদা সাহাবায়ে কেরাম মহানবী (সঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন হে আল্লাহর রাসুল! এ কুরবানিতে আমাদের কি সাওয়াব রয়েছে? হুজুর (সঃ) জবাব দিলেন কুরবানির পশুর প্রত্যেকটি পশমের বিনিময়ে এক একটি করে নেকী রয়েছে। তারা পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন হে আল্লাহর রাসুল! ভেড়ায়তো পশম অনেক বেশী রয়েছে সুতরাং ভেড়ার ক্ষেত্রেও কি একই বিধান? রাসুল (সঃ) জবাব দিলেন ভেড়ারও প্রত্যেকটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকী দেয়া হবে” (মিশকাত পৃঃ ১২৯)। অন্য একটি হাদীছে আছে “রাসুলুল্লাহ (সঃ) হযরত ফাতেমা (রাঃ) কে তার কুরবানির নিকট উপস্থিত থাকতে বলেন এবং ইরশাদ করেন, এই কুরবানির প্রথম রক্তবিন্দু প্রবাহিত হওয়ার সাথে সাথে আল্লাহ তা’আলা তোমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন ইয়া রাসুলাল্লাহ! এটা কি শুধু আহলে বাইতের জন্য নাকি সকল মুসলমানের জন্য? তিনি উত্তরে ইরশাদ করলেন, এই ফযিলত সকল মুসলিমের জন্য”(মুসনাদে বাযযার ২/১৫৪)।
উত্তর দিচ্ছেন : মোঃ সহিদ উল্লাহ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।