নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বিশ্বকাপের ডায়েরী, শামীম চৌধুরী, ধর্মশালা, ভারত থেকে : ধর্মশালার উত্তরে যতোই যাবেন, ততোই উঠতে হবে উঁচুতে। পাহাড়ের গা বেয়ে উঠতে থাকবেন, উপর থেকে দেখবেন হিমালয়ের পাদদেশে গড়ে ওঠা ছোট্ট শহর ধর্মশালা। খালি চোখে দূর থেকে ধর্মশালা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গোলাপী রঙের প্যাভিলিয়ন ভবনও দেখতে পাবেন অনায়াসে। চোখের নাগালে চলে আসবে হিমালয়, নীচে সবুজের সমারোহ, উপরে শ্বেত শুভ্র বরফের আস্তরণ। কোথাও বা পাহাড়ের উপর থেকে গড়িয়ে পড়া পাথরও দেখতে পাবেন। যতোই উঠবেন উপরে, সৌন্দর্য মুগ্ধ করবে ততোই। কৃত্রিম জলপ্রপাত ভাগসুর দূরত্ব ধর্মশালা থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার। হিমাচল রাজ্যে এই জলপ্রপাতের আকর্ষণ পর্যটকদের কাছে টানবেই। দুর্গম পাহাড়ের আঁকা বাঁকা, বিপদসংকুল পথ পেরিয়ে ট্যাক্সিতে ৪০ মিনিটের ভ্রমণ শেষে ভাগসুতে এসেই কিন্তু থেমে যাচ্ছে না কেউ। দূর থেকে জলপ্রপাতের দৃশ্য জুড়িয়ে যাবে চোখ। তবে খুব কাছে থেকে কৃত্রিম জলপ্রপাতের দৃশ্য দেখতে হাঁটতে হবে অন্তত: মিনিট বিশেক সময়। তারপর পেয়ে যাবেন ভাগসু জলপ্রপাত। চীনের প্রাচীরের মতো সিডি বেয়ে প্রায় হাজার ফুট উঁচুতে উঠতে হবে। ধর্মশালার চেয়ে উঁচুতে ম্যাকলিয়ডগঞ্জ, সেখান থেকে তিন কিলোমিটার দূরে, আরো উঁচুতে ভাগসু জলপ্রপাতের অবস্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬৯৬০ ফুট উপরে জলপ্রপাত! ভাবুন তো। অবিরাম হাজার হাজার বছর ধরে এই জলপ্রপাত থেকে পড়ছে তীব্র গতিতে পানির ধারা, আঁকা-বাঁকা পথ বেয়ে সেই পানিই কৃত্রিম জলাধার করছে সৃষ্টি, মিশে গেছে নদীর সাথে। গতকাল ধর্মশালার তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি থেকে ৩ ডিগ্রীতে করেছে ওঠা-নামা। ভাগসু জলপ্রপাতের তাপমাত্রা এর চেয়েও কম। ঠাÐা কনকনে বাতাসে দাঁড়িয়ে থাকাই দায়!
ভাগসু জলপ্রপাত থেকে পানির ঝর্নাধারা তীর্যকভাবে পড়ছে, পাহাড় থেকে ঝরে আসা বড় বড় বরফের উপর শোঁ শোঁ শব্দে পড়ছে পানি। উপর থেকে সেই তীর্যক ভূমির উচ্চতা ৩০ ফুট। ভারতে এর চেয়েও বেশ ক’টি বড় কৃত্রিম জলপ্রপাত আছে। তবে ভাগসুর সৌন্দর্যকে ভারতের শীর্ষ ৪টি জলপ্রপাতের মধ্যে রাখতে হচ্ছে। ঐতিহাসিকদের বর্ণনা অনুযায়ী প্রায় ৫ হাজার বছর আগে হিমাচলে ভাগসু নাগ মন্দিরের অস্তি¡ত্ব করা গেছে আবিস্কার। এই মন্দিরের খুব কাছাকাছি জলপ্রপাতের অবস্থানকালের বিবর্তনে জলপ্রপাতের নামকরণ হয়ে গেছে ভাগসু জলপ্রপাত। শীতকালে এই জলপ্রপাতের কাছাকাছি যাওয়াটা দুর্গম হিমালয় বেয়ে ওঠার মতোই। গ্রীষ্ম আসি আসি মৌসুমে তাপমাত্রা যেখানে মাইনাসের কাছাকাছি, স্বচ্ছ স্ফটিকের মতো বরফ গলা পানিতে পা রাখলে পুরো শরীরটাই হয়ে যাবে হিম, সেখানে শীতকালে পর্যটকরা এখানে আসবে কিভাবে? অথচ কি জানেন, এই জলপ্রপাতের পাশেই ২টি কফি শপ, খাবার দাবারও আছে পর্যটকদের সুবিধার কথা ভেবে। কোথাও এক ফুট, কোথাও বা বড়জোর ৩ ফুট চওড়া পাথরের রাস্তা, পাহাড় কেটে পাথরের সিঁড়ি। দোকানীদের সব মালামাল পরিবহন করছে গাঁধা। স্থানীয় গৃহিণীদের ছাগল চরানো এখানে নিত্যদিনের কাজ। তাদের কাছে দুর্গম পাহাড় বেয়ে ওঠা যেনো দুধভাত। ভাগসুর সৌন্দর্য দেখতে আসা পর্যটকদের জন্য আছে জলপ্রপাতের প্রবেশ পথে রকমারি পণ্যের মার্কেট। আছে বেশ ক’টি ধাবা টাইপের রেস্তোরাঁ।
ভাগসু জলপ্রপাতের উচ্চতা এক সময় ছিল আরো বেশি। ৭ হাজার ১১২ ফুট থেকে এখন ৬ হাজার ৯৬০ ফুটে নেমে এসেছে এর উচ্চতা। এর পেছনে কারণটাও আছে। ১৯০৫ সালে ভয়াবহ এক ভূমিকম্পে ভাগসু জলপ্রপাতের উপরের অংশ যায় ধসে। ব্রিটিশ আমলে গুরখা রেজিমেন্টের জন্য স্থাপিত সেনানিবাসটি ভাগসুর খুব কাছেই ছিল। ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তাদের জন্য এই ভাগাসু’র কাছাকাছি পাহাড়ের উপর ছিল অফিসার্স মেস, ভূমিকম্পে লÐভÐ হয় সেটিও। ম্যাকলিয়ডগঞ্জ, ধর্মশালা এমনকি ক্যাংরা শহরেও ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। ভূমিকম্পে প্রাণ হারায় প্রায় ২০ হাজার। ধর্মশালাকে গ্রীষ্মকালীন রাজধানীতে পরিণত করার যে পরিকল্পনা ছিল ব্রিটিশদের, এক ভূমিকম্পে সেই পরিকল্পনা পাল্টে ফেলে তারা। সামার ক্যাপিটাল হিসেবে পরবর্তীতে বেছে নেয় তারা সিমলাকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।