Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ক্লুলেস মার্ডার : নারীর গলিত লাশ উদ্ধার খুন করেও স্বাভাবিক ছিল তিন খুনী

নূরুল ইসলাম : | প্রকাশের সময় : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দুপুরে থানায় ফোন এলো। একজন জানালো, জুরাইন শিশু কবরস্থানের পাশে এক বাসার দ্বিতীয় তলার তালা লাগানো রুম থেকে পঁচা দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। খবর পেয়ে পুলিশ যায় ঘটনাস্থলে। বাড়িওয়ালাসহ আশপাশের লোকজন জানায়, এক নারী গার্মেন্টস কর্মী ওই রুমে ভাড়া থাকতো। কয়েক দিন ধরে তার দেখা নাই। এলাকার মানুষজনকে সাথে নিয়ে পুলিশ ওই রুমের তালা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে। দেখে বিভৎস, বিকৃত এবং বিবস্ত্র এক নারীর পঁচা গলা লাশ পড়ে আছে মেঝেতে। রুমের দরজা খোলার পর পঁচা লাশের গন্ধে মানুষজন আর টিকতেই পারে না সেখানে। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শেখ মফিজ তো আর পিছুপা হতে পারেন না। তিনি ঘটনাস্থল খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন। লাশের মুখের ভিতর একটা ছুরি , মাথা রক্তাক্ত থেতলানো, গলায় ফাঁস লাগানো এবং শরীরে পাশবিক নির্যাতনের চিহ্ন। তদন্তকারী কর্মকর্তা অনুমান করেন, পাশবিক নির্যাতনের পরে ওই নারীকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু কারা করেছে এই নৃশংস কাজ? সেটা বের করাই পুলিশের জন্য চ্যালেঞ্জিং। তাৎক্ষণিক পরিচয় নিশ্চিত করতে না পারায় পুলিশ বাদী হত্যা মামলা নিয়ে শুরু হয় ক্লুলেস এই মামলার তদন্ত।
তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ প্রথমে নিহত ওই নারীর পরিচয় খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। কর্মস্থল থেকে সেই পরিচয় মেলে। নাম ফরিদা। পারিবারিক অনটনের কারনে ময়মনসিংহের ফুলপুর থেকে কাজের সন্ধানে ঢাকায় আসে ফরিদা। জুরাইনে এক গার্মেন্টসে চাকরি পায় সে। অভাব ঘুচাতে পরিবারের কাউকে না জানিয়ে বয়োস্ক একজনকে বিয়ে করে। বৃদ্ধ স্বামীকে নিয়ে জুরাইনের বাসায় ভাড়া থাকতো ফরিদা। ঘটনার দুই মাস আগে তার বৃদ্ধ স্বামী মারা যায়। একা হয়ে যায় সে। সহকর্মী শামীম ও সাগর জানতো স্বামী মারা যাওয়ার পর ফরিদা একাই থাকে ওই বাসায়। এই দুজনের সাথে যোগ হয় ফরিদার বান্ধবীর স্বামী জাকির। চলতি বছরের ৬ জুলাই রাত ১১টার দিকে শামীম, সাগর ও জাকির যায় ফরিদার বাসায়। তিন সহকর্মীকে সাধ্যমতো আপ্যায়ন করে ফরিদা। অনেক রাত হওয়ার পরেও তারা যখন যেতে চাচ্ছিলো না, তখন ফরিদার তাদেরকে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু তারা তো আর অনুরোধ শুনতে যায়নি। তিনজন মিলে ফরিদাকে পাশবিক নির্যাতন করে। শেষ ব্যক্তি হিসাবে ফরিদাকে নির্যাতন করে ধরা পড়ার ভয়ে সাগর ফরিদার মুখে ধারালো ছুরি ঢুকিয়ে দেয়। শামীম আর জাকির মাথা থেতলে আর গলা চেপে ধরে ফরিদার মৃত্যু নিশ্চিত করে। বিবস্র অবস্থায় তারা লাশ ফেলে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যায়। ধরা পড়ার পর ওই তিন পাষন্ড পুলিশের কাছে ফরিদা হত্যাকান্ডের নির্মম লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে।
পুলিশ জানায়, ফরিদাকে খুন করার পর এতোটুকু পরিবর্তন ছিল না খুনীদের মধ্যে। তারা আগের মতোই স্বাভাবিক জীবন যাপন করছিল। আনন্দ ফুর্তিরও কমতি ছিল না। পুলিশ যখন ফরিদার কর্মস্থলে গিয়ে সহকর্মীদের সাথে কথা বলে তখন খুনীরা ছিল স্বাভাবিক। তারা ফরিদাকে চিনলেও কেউ তেমন কোনো তথ্য দিতে চায় নি। কথায় কথায় সন্দেহ হয় তদন্তকারী কর্মকর্তার। ফরিদার বান্ধবীর সাথে কথা বলতে গিয়ে বেরিয়ে আসে ফরিদার প্রতি জাকিরের দুর্বলতার তথ্য। সেই সূত্র ধরে পুলিশ একে একে তিনজনকেই সনাক্ত করে। গ্রেফতারের পর তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। গার্মেন্টস কর্মী ফরিদা খুন হওয়ার সাত দিনের মাথায় তিন খুনী ধরা পড়ে। এ প্রসঙ্গে কদমতলী থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, কোন অপরাধের ঘটনাই ক্লু-বিহীন হয়না। অপরাধীরা অপরাধ করার সময় যত সতর্কতাই অবলম্বন করুক না কেন, কোনো না কোনো চিহ্ন রেখে যায়। আর সেই চিহ্ন বা ক্লু থেকেই অপরাধীকে সনাক্ত করা হয়। তিনি বলেন, পুলিশের চাকরিতে কোন ঘটনাকে হালকাভাবে নিলে কখনও সফল হওয়া যায় না। কখনও কখনও জটিল বিষয়কে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে সরকারী দায়িত্বের পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে নিতে হয়। তাতে সফল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ওসি বলেন, এসআই শেখ মফিজ একজন অজ্ঞাতনামা মহিলাকে নৃশংসভাবে হত্যাকান্ডের ঘটনাকে ঠিক নিজ আত্মীয় খুন হয়েছে মনে করে অতীব গুরুত্বের সাথে তদন্ত করে একশ’ভাগ সফল হয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ১০ জুলাই কদমতলী থানা পুলিশ জুরাইন শিশু কবরস্থানের পাশের এক বাসা থেকে অজ্ঞাতনামা এক মহিলার পঁচা গলিত লাশ উদ্ধার করে। বাড়িওয়ালাসহ আশপাশের লোকজন ওই মহিলার পরিচয় সম্পর্কে কিছুই জানতো না। দুই মাস আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর মহিলা একাই ওই বাসায় থাকতো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুন

২৪ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ