Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভরসা রাখুন দেশি গরুতে

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান | প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম


সামর্থবানদের জন্য কোরবানি ওয়াজিব। তাই সামর্থবান মুসলমান মাত্রই কোরবানি করতে পিছপা হন না। কেউ গরু, কেউ খাসী কেউবা ভেড়া, ছাগল দিয়ে কোরবানি আদায় করেন। কোরবানির পশু নিয়ে চিন্তা ভাবনা সকলেরই থাকে। ভালো পশু সঠিক সময়ে পাওয়া যাবে তো? বছরে দেশে প্রায় ২ কোটি ৩১ লাখ ১৩ হাজার গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল জবাই করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ৬০ ভাগ জবাই হয় কোরবানির ঈদের সময়। কিছুদিন আগেও এই বিপুল সংখ্যক পশুর প্রাপ্যতা নিয়ে ভাবতে হতো। প্রতিবেশী দেশগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে হতো। এখন সে অবস্থা নেই। দেশ গত কয়েক বছরে পশু সম্পদ খাতে ব্যাপক উন্নতি করেছে। বেকার তরুণ-যুবকরা নতুন খামার স্থাপন করেছে। তাদের সরকার সহজশর্তে লোন সহায়তা প্রদান করেছে। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ তহবিলের আওতায় খামারীরা স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা পেয়েছে। গত বছর কোরবানি হয়েছিল প্রায় ১ কোটি ৫ লাখ পশু। এবার কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত আছে ১ কোটি ১৫ লাখ ৫৭ হাজার। এর মধ্যে ৪৪ লাখ ৫৭ হাজার গরু, মহিষ রয়েছে। সারা দেশে ৫ লাখ ২২ হাজার ২৮৯ জন খামারী বড় আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে। কোরবানিতে ভালো দামে পশু বিক্রি করবে। রাজশাহী, কুষ্টিয়াসহ অনেক স্থানে স্থানীয় চাহিদার চাইতে অনেক বেশি কোরবানি উপযোগী পশু প্রস্তুত আছে। প্রায় ২০ লাখ গরু আসবে গৃহস্থ পরিবার থেকে। যারা অন্য কাজের পাশাপশি গরু পালন করেন। কোরবানির জন্য উন্নত মানের গরু রেডি করেন। একটু লাভ হবে সে আশায়। গরু বিক্রির টাকায় মেয়ের বিয়ে হবে, নতুন ঘর তোলা হবে, মহাজনের আগের ধার শোধ করা হবে এমন অনেক আশা থাকে কৃষকের। চোখ-মুখে থাকে স্বপ্নের আভা। এটুকুন স্বপ্ন দেখা কৃষকের অন্যায় নয়। এরা সেই কৃষক, যারা লোকসান হলেও উৎপাদন কমায় না। বরং বাড়ায়।
সরকারি নজরদারীতে কোরবানির জন্য ৩৩ লাখ ৩০ হাজার গরু মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে। এই সব গরুকে নিষিদ্ধ রাসায়নিক ষ্টেরয়েড, হরমোন, অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয়নি। যারা রাসায়নিক উপাদান দিয়ে গরু মোটাতাজা করত, তারা এবার তা করছে না। গতবার অসংখ্য খামারী, পাইকার পথে বসেছে। গরু হাটেই অকালে মৃত্যুবরণ করেছে। গাড়িতে প্রাণ হারিয়েছে। সে কারণে ইনজেকশন দিয়ে গরু মোটাতাজাকরণ এবার হয়নি বললেই চলে। প্রকৃতিক খাদ্য খাইয়ে গরুর স্থাস্থ্য ভালো করা যায়। দেশের পশু সম্পদ কর্মকর্তারা সে বুদ্ধিই কৃষকদের বাতলে দিয়েছেন। তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করেছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলেছেন।
কোরবানির জন্য আমাদের প্রতিবেশী দেশের পশুর কোনই প্রয়োজন নেই। গত কোরবানিতে দেশি পশু কিনতে মানুষের সমস্যা হয়নি মোটেও। এবারও হবে না। পরিসংখ্যান এবং প্রাণি সম্পদ বিভাগ সেটাই বলছে। তারা দেশি পশুতে সম্পূর্ণ ভরসা রাখতে বলেছেন। ৩১টি করিডোর দিয়ে চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে ৩,৭৪,৯৭৫টি গরু দেশে ঢুকেছে। কোরবানির সময় অসংখ্য করিডোর দিয়ে পশু দেশে আসে। যা পুরোটাই অবৈধ্যভাবে। এ অবস্থায় যারা লোন নিয়ে খামার করেছে তারা দুশ্চিন্তায় আছেন। যে কোন মূল্যে এবার মিয়ানমার, ভারত থেকে পশু আসা ঠেকাতে হবে। যদি না আমরা দেশি খামারীদের ভালো চাই, পশু সম্পদ খাতে দেশকে সমৃদ্ধ করতে চাই। তাছাড়া প্রতিবেশী দেশের পশু গুণে ও মানে আমাদের দেশের চাইতে মোটেও ভালো নয়। তাই সকলের প্রতি অনুরোধ, অহেতুক আতংকিত হবেন না। গরুর সংকট হবে, ভুলেও এমন কথায় কান দেবেন না। সময় মত হাটে গিয়ে দেশি পশু কিনুন। এই কোরবানিতে দেশি গরুতে ভরসা রাখুন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভরসা

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
২৩ জানুয়ারি, ২০১৯
২৪ নভেম্বর, ২০১৭

আরও
আরও পড়ুন