Inqilab Logo

বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হজযাত্রীদের মাঝে স্বস্তি

১ লাখ ২৫ হাজার যাত্রী সউদীতে পৌঁছেছে

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২৮ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫৫ পিএম, ২৭ আগস্ট, ২০১৭

সকল যাত্রীই আজকের মধ্যে চলে যাচ্ছেন -বজলুল হক হারুন এমপি

বহু চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে প্রতারণার শিকার অধিকাংশ হজযাত্রী বিমানের টিকিট হাতে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। স্বপ্নের হজের টিকিট হাতে পেয়ে অপেক্ষমান হজযাত্রীরা আল্লাহ রব্বুল আলামীনের শুকরিয়া আদায় করেছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো থেকে প্রাক-নিবন্ধনের সময়ে জমাকৃত বিমান ভাড়ার টাকা উত্তোলন করে বিমানে পরিশোধের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হজযাত্রীদের বিমানের টিকিট ক্রয় করা হয়েছে। বিমানের টিকিট হাতে পেয়ে হজ ক্যাম্পে ও বিভিন্ন হোটেলে অবস্থানকৃত হজযাত্রীরা আত্মীয়-স্বজনের সাথে কুশল বিনিময় করে তড়িঘড়ি করে ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে দেখা গেছে। হজ ক্যাম্পে অপেক্ষমান প্রতারণার শিকার অধিকাংশ হজযাত্রী জেদ্দার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। হজ ফ্লাইট শুরুর পর থেকে গতকাল গভীর রাত পর্যন্ত বিমানের নতুন ৬টি শ্লট ব্যবহার করে এবং সাউদিয়া এয়ারলাইন্সে’র একই দিনে ৯টি হজ ফ্লাইট যোগে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার হজযাত্রী সউদী আরবে পৌঁছেছেন। আগামী বৃহস্পতিবার পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল রোববার মদিনা থেকে সকল হজযাত্রী হজ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কায় এসে পৌঁছেছেন। আজ সোমবার থেকে মিনায় যাওয়ার কার্ড দেয়া শুরু করবে সউদী মোয়াসসাসা কর্তৃপক্ষ। মক্কা থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
হাবের শীর্ষ নেতা রুহুল আমিন মিন্টু জানিয়েছেন, ইকো এভিয়েশন ট্যুরিজমের প্রতারণার শিকার ২১ জন হজযাত্রীর টিকিট ক্রয় সম্পন্ন হবার পথে। এসব অপেক্ষমান হজযাত্রীর দালাল আতাউর রহমান তার স্ত্রী নিয়ে হজ ক্যাম্পে বলে টিকিট যোগাড়ে ছুটাছুটি করছে। তারা হজযাত্রীদের পুরো টাকা পরিশোধ না করায় যাত্রী প্রেরণে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। হাব নেতা রুহুল আমিন মিন্টু আগামীতে সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থ রক্ষা এবং হজযাত্রীদের প্রতারণার হাত থেকে বাঁচাতে প্রাক-নিবন্ধনের সময়েই হজ প্যাকেজের পুরো টাকা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে জমা রাখতে হবে। এতে মধ্যস্বত্বভোগী দালাল চক্রের দৌরাত্ব্য হ্রাস পাবে বলেও ঐ হাব নেতা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুন এমপি গতকাল হজ ক্যাম্পে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক-নির্দেশনায় বিমান কর্তৃপক্ষ অপেক্ষমান হজযাত্রী পরিবহনের লক্ষ্যে আরো অতিরিক্ত ৮টি শ্লট লাভ করেছে। সউদী সরকারের সাথে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক থাকার কারণেই হজ ফ্লাইটের শেষ পর্যায়ে ৮টি শ্লট পাওয়া সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, সকল হজযাত্রীরাই আজকের মধ্যে হজে চলে যাচ্ছেন। যেসব হজ এজেন্সি’র মালিক ও দালালের প্রতারণার দরুণ হজযাত্রী পরিবহনে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রতারণার শিকার সকল হজযাত্রীই বিমানের টিকিট পেয়ে যাচ্ছে। গতরাতেই ভিসাপ্রাপ্ত সকল হজযাত্রীই সউদী আরবে চলে যেতে পারেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বজলুল হক হারুন এমপি বলেন, সউদীর ই-হজ সিস্টেমের সাথে সমন্বয় রেখে আগামীতে হজ ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজানো হবে ইন-শা আল্লাহ। যারা হজ নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি করবে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে ফৌজদারী মামলা করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে, গতকাল দুপুরে হজ ক্যাম্পের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত হজ ব্যবস্থাপনা ও হজযাত্রী পরিবহন সংক্রান্ত এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেছেন, ভিসা প্রাপ্ত সকল হজযাত্রীকেই আজ সোমবারের মধ্যে সউদী আরবে পাঠানো হবে। তিনি বলেন, যেসব এজেন্সি ভিসা সংগ্রহের পরও হজযাত্রীদের ফ্লাইটের ব্যবস্থা করছে না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, মধ্যস্বত্বভোগী দালাল ও ফড়িয়াদের কাছে হজের টাকা দিয়ে অনেক হজযাত্রী প্রতারণার শিকার হচ্ছে। হজ কার্যক্রমে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ব্য চিরতরে বন্ধ করতে হবে।
বাংলাদেশ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সউদী অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স হজযাত্রী পরিবহন করছে। এবার হজ এজেন্সিগুলোর গাফিলতি ও অতি মুনাফার লোভের কারণেই একের পর এক হজ ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। হজ ফ্লাইট শুরুর পর থেকে ভিসা জটিলতায় ও হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত কারণে প্রায় ২৪টি হজ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। বিমান জেদ্দাস্থ সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আরো অতিরিক্ত ৮টি শ্লট লাভ করেছে। এ নতুন শ্লটের মধ্যে শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় বিমানের হজ ফ্লাইট (বিজি-১৫১১) যোগে ৪শ’ ১৮জন হজযাত্রী জেদ্দায় গিয়ে পৌঁছেছে। বিমানের হজ ফ্লাইট (বিজি-১৫২৫) যোগে রাত ৩টা ৩০ মিনিটে ৪শ’ ১৯ জন যাত্রী নিয়ে সর্বশেষ হজ ফ্লাইট জেদ্দার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা। এ হজ ফ্লাইট যোগে পরিচালক হজ সাইফুল ইসলাম ও হাবের মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিমের জেদ্দার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগের কথা রয়েছে।

 

চারজন হজযাত্রীর ভিসা টিকিট হওয়ার পরেও তাদের পাসপোর্ট হজ অফিসে আটকে রেখে পরিচালক হজ স্ইাফুল ইসলাম রাতে তরিঘড়ি করে হজে চলে গেছেন। ফলে তারা হজে যেতে না পেরে হজ ক্যাম্প থেকে কানাকাটি করে নিরাশ মনে বাড়ী ফিরে গেছেন। পরিচালক হজের ধারনা হজ ক্যাম্পের অসাধু কর্মকর্তাদের মাধ্যমে উল্লেখিত চারজন হজযাত্রীর ভিসা করা হয়েছিল। যার কোনো নথি হজ ক্যাম্পে পাওয়া যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু নিরপরাধ হজযাত্রীদের হজে যাওয়া বন্ধ করা হয়েছে। খাজা আজমী ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী শেখ ইউনুসুর রহমান এ অভিমত ব্যক্ত করেন। ধর্ম মন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান হজ প্রতিনিধি দল নিয়ে বর্তমানে মক্কায় অবস্থান করছেন। হজযাত্রী পরিবহন নিয়ে বিপর্যয় শুরু হলে বিমানের প্রায় ২৪টি হজ ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রী কয়েক দফাই ঘোষণা করেছেন একজন হজযাত্রী রেখেও আমি হজে যাবো না। কিন্ত গতকাল রোববার বিকেল ৩টার দিকে পরিচালক হজ সাইফুল ইসলাম হজ ক্যাম্পে ভিসাপ্রাপ্ত ও বিমানের টিকিটপ্রাপ্ত চট্রগ্রামের চারজন বৈধ হজযাত্রী’র পাসপোর্ট হজ ক্যাম্পের শাখায় আটকে রেখে রাতের হজ ফ্লাইটে তড়িঘড়ি সউদী আরবে চলে গেছেন। এতে সহকারী হজ অফিসার আব্দুল মালেকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা হতবাক হন। হজ ক্যাম্পের শাখার অফিস সহকারী সাফু নিশাল ওভারসীজের (১৮৩)’র চার জন হজযাত্রী কাজী মো: আব্দুল করিম তার মাতা সুয়া খাতুন , আব্দুল মাহবুব ও তার স্ত্রী রবিজা খাতুনের ভিসাযুক্ত পাসপোর্টের ফাইল নিয়ে দৌড়ে হজ ক্যাম্পের গেইটে পরিচালক হজ সাইফুল ইসলামের কাছে নিয়ে গেলে উল্লেখিত হজযাত্রীদের পাসপোর্ট জব্দ করার নিদের্শ দেন। কিভাবে এসব পাসপোর্টের ভিসা হয়েছে তা’ হজের পরে এসে পরিচালক তদন্ত করবেন। হজযাত্রী কাজী মো: আব্দুল করিম ও আব্দুল মাহবুব বলেন, হজে যাওয়ার জন্য বৈধ হজ ভিসা ও টিকিট পাওয়ার পরে আমাদের পাসপোর্ট সকাল থেকেই হজ ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছে। ভিসাপ্রাপ্ত পাসপোর্টগুলো পাওয়ার জন্য হাব মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিম ও পরিচালক হজ সাইফুল ইসলামের কাছে ৭/৮ ঘন্টা ধরণা দিয়েও কোনো সুরাহা পায়নি বলে ভুক্তভোগী হজযাত্রীরা অভিযোগ করেন। ভুক্তভোগী হজযাত্রীরা জানান, সহকারী হজ অফিসার আব্দুল মালেক বলেছেন , জব্দকৃত পাসপোর্টগুলোতে কিভাবে হজ ভিসা লেগেছে তা’ স্যার দেশে ফিরলে তদন্ত করে দেখা হবে এবং প্রয়োজনে নিশান ওভারসীজের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আপনারা হজে যেতে পারবেন না গ্রামের বাড়ীতে চলে চান। পরে সন্ধ্যার দিকে উল্লেখিত অসহায় হজযাত্রীরা চোখের পানি মুছতে মুছতে চট্রগ্রামের বাড়ীর পথে যাত্রা করেন। খাজা আজমীর ট্রাভেলসের (৮৮১) স্বত্বাধিকারী শেখ ইউনুসুর রহমান রাতে ইনকিলাবকে জানান, আমার ৫৩জন হজযাত্রীকে লিড এজেন্সি হিসেবে চট্রগ্রাম জোনের হাব মহাসচিব মাহমুদুল হক পেয়ারুর নিশান ওভারসীজ ও হক ইন্টারন্যাশনাল (৩৮৯)-এর মাধ্যমে হজে পাঠাতে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে। কিন্ত চট্রগ্রাম হাবের মহাসচিব পেয়ারু প্রতারণা করে ৭জন হজযাত্রীর ভিসা করেনি এবং ৪জন হজযাত্রীর ভিসা টিকিট করে দিয়ে গতকাল সকালে সউদী আরবে পালিয়ে গেছে। সে ৪২জন হজযাত্রীকে সউদী আরবে নিয়েছে। শেখ ইউনুসুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নিশান ওভারসীজের মালিক পেয়ারু একটা চিটিংবাজ। গত শনিবার থেকে টেলিফোন ধরেনি। ভিসাপ্রাপ্ত চারজন হজযাত্রীকে হজে না নেয়ায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন বলেও তিন্ িউল্লেখ করেন। ####



 

Show all comments
  • মোঃ মনির উদ্দিন চৌধুরী ২৮ আগস্ট, ২০১৭, ৭:০৮ পিএম says : 0
    অনেক দিন পর একটা ভালো সংবাদ সুনলাম। জাজাকাল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হজ

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ