সড়ক দুর্ঘটনায় জিডিপির ক্ষতি ১ দশমিক ৬ শতাংশ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : সড়ক দুর্ঘটনার আর্থিক ক্ষতি বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ১ দশমিক ৬ শতাংশ বলে জানিয়েছে ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল
মে রী না পা র ভী ন
(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
দি
ন যায় আর একটু একটু করে আশ্্ফাক সাহেবের পরিধি বড় হয়। অফিস থেকে আসার পর পরিধির সেবা-যতœ হতে শুরু করে তার যত কাজ-কর্ম আছে তিনি সব খবরদারি করেন। বাড়ির একজন ছুটা কাজের মানুষ আছে তার সাথে আশ্্ফাক সাহেবের যতো মনোমালিন্যÑ এটা করে-সেটা করে না, এটা হলো তো-ওটা হলো না নানান রকমের কথা। তার পরিধি হামাগুঁড়ি দিচ্ছে, যত ঘরদোর আছে সব হওয়া চাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। সবকিছু যেন পরিধিকে নিয়েই। তার যতœ-আত্মে যেন কোন ত্রুটি না হয় সেই দিকে আশ্্ফাক সাহেবের বিশেষ খেয়াল। দিন যায় আর একটু একটু করে বড় হয় তার মেয়ে “পরিধি”।
দিন যায় আর একটু একটু করে পরিধি বড় হয়ে ওঠে। আর তাকে ঘিরে আশ্ফাক সাহেবের স্বপ্নের পরিধিও বড় হয়। পরিধিকে নিয়ে আশ্্ফাক সাহেব শহরের কাছে-পিঠে যতগুলো পার্ক আছে সবগুলোতে ঘুরে বেড়িয়েছেন। সে বড় হলে আশফাক সাহেব তাকে নিয়ে বেড়াবেন দূর-দূরান্তে। পরিধির জীবনে তিনি কোন পরিধি রাখবেন না। কোন সীমানা বা গ-িই রাখবেন না। তার মেয়ের জীবনের পরিধি হবে অনন্ত আর অসীম।
আশ্্ফাক সাহেব মনে মনে ভাবেন, তিনি মেয়েকে গান শেখাবেন, নাচ শেখাবেন, শেখাবেন কোরআন তিলাওয়াত, হামদ ও নাত, আত্মরক্ষার জন্য শিক্ষা দেবেন মার্শাল আর্ট আর সাঁতার। কোন কিছুতেই যেন তার মেয়ে পিছিয়ে না পড়ে। লেখা-পড়ার পাশাপাশি সববিষয়ে তার মেয়েকে প্রশিক্ষণ দেবেন তিনি। সে কারণে আশ্্ফাক সাহেবের অনেক উৎকণ্ঠা। আগ্রহপ্রবণ মনমানসিকতা নিয়েই দিন যায়, রাত কেটে যায়। পার হয় মাস, পার হয় বছর। শামীমার সাথে এসব বিষয় আলোচনা করেন আশ্ফাক সাহেব। শামীমা শুধু ভাবেন আর হাসেন। শামীমা বললেন, খেলাটা বাদ যাবে কেন? খেলাধুলাও শেখাও মেয়েকে। আশ্ফাক সাহেব বললেন, যে খেলাতে আঘাত পাবার ভয় নেই সে খেলাগুলো বেশি করে শেখাবো। স্বামী-স্ত্রী দু’জনে মিলে শুধু হাসেন আর হাসেন।
দিন কেটে যায় আর পরিধি বড় হয়। আর তাকে নিয়ে বাঁধা স্বপ্নের পরিধিও বড় হয়। কিন্তু অন্যদিকে যতই দিন যেতে থাকে আর অজানা এক আশঙ্কা বাসা বাঁধতে থাকে শামীমার বুকে। পরিধি ঘরে দৌঁড়ে যায় আর মাঝে মাঝে হোঁচট খেয়ে পড়ে। আর অমনি বুক কাঁপে পরিধির মা শামীমার। উড়তে গেলে পাখি যেমন আছড়ে পড়ে তার মেয়েরও সেই অবস্থা। অজানা চিন্তা এসে ভিড় করে শামীমার মনে। একদিন হঠাৎ করেই দু’একটা কথা নিয়ে আশফাক সাহেব আর শামীমার মধ্যে মনোমালিন্য হয়ে যায়। কারণ আশ্ফাক সাহেব এই স্মার্ট যুগে মেয়েকে নিয়ে অনেক বড় বড় আর স্মার্ট স্বপ্ন দেখেন আর শামীমা তাতে বাধা দেয়। তাই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটি চলে প্রায়ই। তবে সেদিন একটু বাড়াবাড়িই হয়ে গিয়েছিল। তর্কের শেষে আশফাক সাহেব শামীমাকে পরিষ্কার করে বলতে বললেন, ‘শামীমা তুমি আমার মেয়েকে কেন পাখির মতো উড়তে দেবে না, কেন বাধা দাও ওর স্বাধীনতার কথায়?’
উত্তরে : শামীমা বললেন, ‘কারণ তোমার পরিধি যখন বড় হবে উড়তে শিখবে তখন সে হবে একজন যুবতী মেয়ে। এ দেশ স্বাধীন তবে দেশের পরিবেশ-পরিস্থিতি এখনও যুবতী মেয়েদের পক্ষে অনুকূল নয়।’
এ কথা শোনার পর আশ্ফাক সাহেব যেন আকাশ থেকে পড়লেন, একটা সাধারণ কথা কাটাকাটির মাধ্যমে শামীমা তাকে একটা নিদারুণ সত্যি কথা বলে ফেলেছেন। তিনি তাকে স্বপ্নের ঘোর থেকে বের করে চরম বাস্তবতার মধ্যে নিয়ে এসেছেন। আমাদের দেশ এগিয়ে গেছে অনেক স্তরে। উন্নয়ন এসেছে মানবজীবনে তথা সমাজের সর্বস্তরে। কিন্তু আজও বদলায়নি সমাজে ছোট, বড়, মধ্য স্তরে বিভিন্ন পর্যায়ের মেয়েদের ভাগ্য। আজও গ্রামে বাল্যবিবাহ হয়। আজও শহরে এসএসসি পাস করে মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করে সংসার জীবনে ঠেলে দেওয়া হয়। আজও ইভটিজিংয়ের ভয়ে মেয়েরা ঘর ছেড়ে বেরুতে ভয় পায়। মেয়েদের যুবতী সময়টা যেন অভিশাপ। আশ্ফাক সাহেব ভাবেন, তবে মেয়েদের ভবিষ্যৎ কি এখনও অনিশ্চিত। কোন ধরনের টার্গেটহীন। আমার পরিধির মতো আরও অনেক পরিধি আছে এই সমাজে তবে তাদের সবার ভাগ্যেও কি হবে? কেউ কি জানো না কি হবে ঐ সকল পরিধিদের পরিণতি? (সমাপ্ত)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।