চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
শ্রেষ্ট গ্রন্থ পবিত্র কালামে আল্লাহ পাক হজ্জ্ব সম্পর্কে ঘোষণা করছেন, আর অর্থ: এবং মানুষের কাজে হজ্জ্বের ঘোষণা করে দাও তারা তোমার কাছে আসবে পদব্রজে ও সর্ব প্রকার ক্ষীণকার উষ্ট সমূহের পিঠে সওয়ার হয়ে তারা আসবে দুরদূরান্তর পথ অতিক্রম করে। সূরা হজ্জ্ব (২২:২৭)
হজ্জ্ব শব্দের আভিধানিক অর্থ সংকল্প করা ইচ্ছা করা, পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে হজ্জ্বের মাসে নির্ধারিত দিন সমূহে নির্ধারিত পদ্ধতিতে বায়তুল্লাহ শরীফ ও সংশ্লিষ্ট স্থান সমূহ যিয়ারত ও বিশেষ কার্যাদি আল্লাহর সন্তুষ্ঠি ও নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে সম্পাদন করাকে হজ্জ্ব বলা হয়। হজ্জ্ব ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম একটি স্তম্ভ। যে সকল প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিম নরÑনারীর হজ্জ্বে যাওয়ার মত শারীরিক ও আর্থিক সামর্থ রয়েছে তাদের উপর কেবল জীবনে একবার হজ্জ্ব আদায় করা ফরজ। মহান আল্লাহ তায়ালা বলে, যার অর্থ আল্লাহর উদ্দেশে আল্লার ঘরÑকাবা শরীফের হজ্জ্বব্রত পালন করা ফরয ঐ ব্যক্তির উপর যাহারা সেই ঘর পর্যন্ত পৌছিবার সামর্থ রাখে। (পারাÑ ৪ রুকু ১)
হজ্জ্বের তাৎপর্য হজ্জ্বের প্রতিটি কাজ ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত ও তাৎপর্যপূর্ণ হজ্জ্ব বিশ্ব মুসলিমের মহামিলন ও ঐক্যের প্রতীক। আদম (আঃ) ও হাওয়াকে যখন বেহেস্থ হইতে দুনিয়াতে আগমন করেন। আল্লাহ পাক তখন তাদেরকে বিছিন্ন করে দুনিয়ার জমিনে নিক্ষেপ করেন। অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে তারা পরষ্পরকে খুজতে থাকেন এবং কাঁদতে থাকেন, মাফ চাইতে থাকেন অবশেষে নবীকুলের স¤্রাট আমাদে রনবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর উসিলা নিয়ে দু’য়া করার পর আল্লাহ পাক তাদেরকে আরাফাতের ময়দা পরষ্পর মিলিত হওয়ার ব্যবস্থা করেন এবং তাদের মাফ করে দেন। তারই কৃত্তজ্ঞতা স্বরূপ আদম সন্তানগণ দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতি বছর আরাফাতের ময়দানে সমবেত হয়ে আল্লাহর দরবারে কান্না কাটি করে। যারা আল্লাহর জন্য ত্যাগ করে। আল্লাহ পাক তাদের ভুলেন না। এই জন্য কিয়ামত পর্যন্ত যারা হজ্জ্বের যাবে তাদের জন্য আরাফাতে অবস্থা করা আল্লাহ পাক ফরয করে দিয়েছেন এবং সেখানে অবস্থান করে মাফি চাইলে আল্লাহ পাক এই গোলাম গোলনীর জন্য মাফির ব্যবস্থা রেখেছেন। এভাবে সা’ফা মারওয়ার মধ্যে সাঈ মীনায় শয়তানকে কংকর মারা এবং কোরবানীর প্রেক্ষাপটে যা হযরত ইব্রাহীম আং বিবি হাজেরা এবং তাদের শূণ্যবান সন্তান হযরত ইসমাঈল দ্বারা রচিত হয়েছে আজ থেকে প্রায় চার হাজার বছর পূর্বে।
সর্ব প্রথম হযরত আদম আং বায়তুল্লাহ শরীফ হজ্জ্ব আদায় করেছেন। এরপর শীষ এবং নূহ (আঃ) সহ অন্যান্য নবীÑরাসূলরা সকলে বায়তুল্লাহর জিয়ারত তাওয়াফ করেছেন। বায়তুল্লাহর মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহ পাক ঘোষণা করছেন যার অর্থ- মানব জাতির জন্য সর্বপ্রথম সেঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা তো বাক্কায় যা বরকত ময় ও বিশ্বজগতের দিশারী তাতে অনেক সুÑস্পষ্ট নিদর্শন আছে। যেমন মাকামে ইব্রাহীম এবং যে কেউ (সেথায় প্রবেশ করে সে নিরাপদ) (সূরা ইমরান ৩ঃ ৯৬-৯৭)
বলা হয়, মক্কাই বাক্কা, বাক্কা হল শুধু ঘর বা তাওয়াফের স্থান সহ ঘর আর মক্কা গোটা শহরের নাম বর্ণিত আছেঃ ফেরেশতাগণ আদম (আঃ) এর সৃষ্টির দু’হাজার আগে এ ঘর প্রতিষ্টা করেন। তারা এতে হজ্জ্ব করতেন, আদম (আঃ) যখন বায়তুল্লাহর হজ্জ্ব করলেন। এখন তার বললেন, আপনার হজ্জ্ব পবিত্র হোক হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর দোয়ার বরকতে আল্লাহ পাক এই শহরের মর্যাদা আরও বাড়িয়ে দেন।
ইব্রাহীম (আঃ) দোয়া করলেন যার অর্থ: স্বরর্ণ কর ইব্রাহীম বলেছিল, হে আমার রব এই নগরীকে নিরাপদ কর এবং আমাকে ও আমার পুত্রগণকে প্রতিমা পূজা হইতে দূরে রেখো। (“আয়াত ৩৫- সূরা ইব্রাহীম”) আল্লাহ পাক হযরতে ইব্রাহীমকে অনেক পরীক্ষা করেছিলেন সকল পরীক্ষায় ইব্রাহীম (আঃ) কে যখন আগুনে নিক্ষেপ করেছিল ‘আল্লাহ বলেন, হে আগুন, তুমি ইব্রাহীমের জন্য শীতল হয়ে যাও তারা ইব্রাহীম কে উলাঙ্গ করে আগুনে নিক্ষেপ করেছল আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতি পোষাক পরিয়ে দিলেন। বৃদ্ধ বয়সে সন্তান দিয়েও তাহাকে পরীক্ষা করলেন, বললেন তোমার ছেলেকে আমার নামে কোরআনী দাও (অর্থাৎ মারার জিনিসকে) তিনি এবং তার ছেলে জয় লাভ করলেন। তাদের এই ত্যাগের কথা কিয়ামত পর্যন্ত স্মরণ রাখার জন্য আল্লাহ পাক কোরবানী মধ্যে ব্যবস্থা করে রাখলেন হজ্জ্বের ফযিলত, হজ্জ্বের ফজিলত অগণিত ও অপরিসীম এ বিষয়ে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছেঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত একদা নবী করীম (সাঃ) কে প্রশ্ন করা হলো যে, সর্বোত্তম আলম কোনটি তিনি উত্তরে বললেন, আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমান আনা প্রশ্ন করা হল। তারপর কোনটি? তিনি জবাব দিলেন আল্লাহর পথে জিহাদ করা পূনরায় তাকে জিজ্ঞেস করা হল এরপর কোনটি জবাবে তিনি বললেন, হজ্জ্বে মাবরুর অর্থাৎ মাকবুল হজ্জ্ব (বোখারী ও মুসলিম)।
অন্য হাদিসে আছে মকবুল হজ্জ্বের প্রতিদান, বেহেস্ত ছাড়া কিছুই নয়। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত নবী করীম (সাঃ) বলেন যে, ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ্ব করল। হজ্জ্বের কার্যাবলী আদায় কালে স্ত্রী সম্ভোগ থেকে বিরত থাকল ও গুনাহের কাছ করল না। সে মাতৃগর্ভ হতে নবজাত শিশুর ন্যায় নিংষ্পাপ হয়ে ফিরবে। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে হজ্জ্ব করার ও মদীনা শরীফ নবীজির রওজা মোবারক জিয়ারত করার তৈৗফিক দান করুন (আমীন)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।