Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এক লাখ চার হাজার হজযাত্রী সউদী পৌঁছেছেন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গতকাল বুধবার রাত পর্যন্ত বিমান ও সাউদিয়া এয়ারলাইন্সে’র হজ ফ্লাইটের মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ ৪ হাজার হজযাত্রী সউদী আরবে পৌঁছেছেন। বিমানের ৯টি হজ ফ্লাইট গতকাল জেদ্দায় পৌঁছেছে। বিমানের ৮শ’ ৩২জন হজযাত্রী পরিবহনের ক্যাপাসিটি শট রয়েছে। সাউদিয়া এয়ারলাইন্স এসব হজযাত্রীকে সউদী আরবে পৌছে দিতে অক্ষমতা প্রকাশ করেছে। আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে জেদ্দাস্থ সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ বিমানকে নতুন শ্লট বরাদ্দ না দিলে উল্লেখিত হজযাত্রীকে হজে পাঠাতে বিকল্প পথ অনুসরণ করতে হবে বিমানকে। বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ এ তথ্য জানান। গতকাল সকাল পর্যন্ত হজযাত্রী পরিবহনে বিমানের ত্রিশটি শ্লট হাতে ছিল। এদিকে গত ২৪ জুলাই থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত মক্কা-মদিনায় ২৩ জন হজযাত্রী ইন্তেকাল করেছেন। দ্বি-পাক্ষিক হজ চুক্তি অনুযায়ী বিমান ও সাউদিয়া এয়ারলাইন্স সকল বাংলাদেশী হজযাত্রীকে অর্ধেক করে পরিবহনের কথা। হজ ক্যাম্পের পরিচালক হজ সাইফুল ইসলাম জানান, গতকাল পর্যন্ত লক্ষাধিক হজযাত্রী সউদী আরবে পৌঁছেছেন। হজযাত্রী পরিবহনে যে পরিমান ক্যাপাসিটি শট রয়েছে তা সউদী সরকারের সহায়তায় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে পরিচালক হজ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। গতকাল বিকেলে আশকোনাস্থ হজ ক্যাম্পে ধর্ম মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং হাবের নেতৃবৃন্দের যৌথ সভায় যেসব হজযাত্রী’র টিকিট এখনো ক্রয় করা হয়নি তাদেরকে মতিঝিলস্থ বিমান অফিসে সরাসরি যোগাযোগ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব হাফিজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব, পরিচালক হজ সাইফুল ইসলাম, হাবের মহাসচিব মোঃ শাহাদাত হোসাইন তসলিম ও বিমানের কর্মকর্তাগণ। আগামী ২৭ আগস্ট ও ২৮ আগস্ট বিমানের হজযাত্রী পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টির বিষয়টি জেদ্দাস্থ সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ গতকাল পর্যন্ত অনুমতি দেয়নি।
মতিঝিলস্থ বিমান অফিসে অনেক হজ এজেন্সি’র মালিক হজ টিকিট ক্রয়ের জন্য ধর্ণা দিয়েও হজ টিকিট পায়নি।
আবাবিল হজ গ্রুপের ১শ’ ৪৪ জন হজযাত্রীর টিকিট গতকাল বিকেল পর্যন্ত বিমান কর্তৃপক্ষ দিতে পারেনি। এসব হজযাত্রী চরম উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। আবাবিল হজ গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ এ তথ্য জানান। এদিকে, কে বি এয়ার ইন্টারন্যাশনালের (৮৬৫) তিন জন প্রতারক গ্রুপ লিডার ২শ’ ৮৫ জন হজযাত্রীর হজ প্যাকেজের প্রায় ৬০ লাখ টাকা পরিশোধ না করেই সউদী আরবে চলে গেছে। সউদী আরবে গিয়ে হজের আগে এসব বাকি টাকা পরিশোধের আশ্বাস দেয় গ্রুপ লিডাররা। গাজীপুর জেলার মাওনা এলাকার একজন গ্রুপ লিডার ১২ জন হজযাত্রীর প্রায় ৭ লাখ টাকা কে বি এয়ার ইন্টারন্যাশনালকে পরিশোধ না করে পালিয়ে গেছে। কে বি এয়ার ইন্টারন্যাশনালের সত্ত¡াধিকারী আলহাজ হাফেজ মোঃ কামাল উদ্দিন উল্লেখিত হজযাত্রীদের নির্বিঘেœ হজে পাঠানোর জন্য ফকিরাপুলস্থ জি-ন্যাট টাওয়ারের সাড়ে ১৬শ’ স্কয়ার ফিটের নিজস্ব অফিস সাফ কবলা বিক্রি করে দিয়েছেন। কে বি এয়ার ইন্টারন্যাশনালের সকল হজযাত্রী এখন মক্কা-মদিনায় পৌঁছেছেন। হজ এজেন্সি’র সত্ত¡াধিকারী হাফেজ মো: কামাল উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, গ্রুপ লিডাররা আমাদেরকে জিম্মি করে প্রায় ৬০ লাখ টাকা বাকি রেখেই হজে চলে গেছে। নিজস্ব অফিস বিক্রি করেও সকল হজযাত্রীকে হজে পাঠাতে পেরে তিনি মহান আল্লাহ’র কাছে শুকরিয়া আদায় করেন। তিনি গ্রুপ লিডারদের জিম্মি দশা থেকে হজ এজেন্সিগুলোকে চিরতরে মুক্তি’ দেয়ার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হাব নেতৃবৃন্দের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
চলতি বছর পবিত্র হজ পালন করতে গিয়ে মক্কা-মদিনায় এযাবত ২৩ জন বাংলাদেশী হজযাত্রী ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। এদের মধ্যে ২২ জন পুরুষ এবং ১ জন মহিলা। মক্কা থেকে আইটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছর সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মোট হজযাত্রীর সংখ্যা ১ লাখ ২৬ হাজার ২শ’ ৫ জন। এ ছাড়া ফিরতি হজ ফ্লাইট আগামী ৬ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে শেষ হবে ৫ অক্টোবর।
এ বছর পবিত্র হজ পালন করতে সউদী আরব যাবার পর গত ২৮ জুলাই প্রথম বাংলাদেশের নেত্রোকোনা জেলা সদরের বাসিন্দা খোন্দকার এ আর এম ইউসুফ (৭৪) মারা যান। সর্বশেষ গত ২২ আগস্ট দুই বাংলাদেশি ইন্তেকাল করেন। ২৩ জনের মধ্যে মক্কায় ১৭ জন ও মদিনায় ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২২ আগস্ট (মঙ্গলবার) নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের বাসিন্দা রশীদ ভূঁইয়া (৬৭) মারা যান। একই দিন নাটোর জেলার গুরুদাসপুরের নজিরপুর গ্রামের মো. মহসিন আলী প্রামানিক (৭১) মারা যান। গত সোমবার রংপুর সদরের বাসিন্দা মো. আবদুর রাজ্জাক(৫৭) মৃত্যুবরণ করেন। অন্যজন হলেন, জামালপুর সদরের বাসিন্দা মো. দানেশ আলী (৭৫)। গত ২০ আগস্ট চট্টগ্রাম জেলার বাকলিয়ার ১৭ নম্বর ওয়ার্র্ডের জহুর কলোনির বাসিন্দা মো. জাকের হোসেন (৬০) মৃত্যুবরণ করেন। ১৯ আগস্ট মারা যান টাঙ্গাইলের কালিহাতির বাসিন্দা মো. আবদুর রাজ্জাক মিয়া (৬২)। ১৮ আগস্ট মো. আবুল কাশেম ব্যাপারী (৬৫) নামে আরও এক বাংলাদেশি ইন্তেকাল করেন। তার গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাট সদরের পঞ্চগ্রাম গ্রামে। ১৭ আগস্ট বগুড়া সদরের বাসিন্দা আবদুল হামিদ পাইকার(৬৫) মারা যান। একই দিন ফেনী ছাগলনাইয়ার ইয়ার আহমেদও (৫৬) মারা যান। ১৪ আগস্ট মক্কা আল মোকাররমায় মো. শফিকুল ইসলাম (৫৮) ইন্তেকাল করেন। তার গ্রামের বাড়ি নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে। ১২ আগস্ট কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি থানার মো. আবদুস ছোবহান (৬৩) মারা যান। ১১ আগস্ট মদিনায় মারা যান চাঁদপুর জেলার মো. আবু জাফর(৬৫)। একই দিন রাজধানীর দক্ষিণ খানের বাসিন্দা শরিফা বেগম (৫২) মক্কায় মারা যান। ১০ আগস্ট বরিশাল সদরের আবুল কাশেম মো. শাহজাহান (৬১) মক্কায় মারা যান। ৮ আগস্ট বগুড়া সদরের বাসিন্দা মো. আবদুল গফুর শেখ (৬৭) মৃত্যুবরণ করেন। একই দিন মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থানার বাসিন্দা মো. বিল্লাল হোসেন (৫৭) মারা যান। ৭ আগস্ট বগুড়ার গাবতলী থানার মহিষাবান গ্রামের আবদুস সোবহান (৬১) মারা যান। একই দিন গাইবান্ধা সদরের ফুলমিয়া মন্ডল (৬৩) নামে আরও এক হজযাত্রী মারা যান। ৬ আগস্ট মো. বাদশা হোসেন (৭৪) নামে এক বাংলাদেশি হজযাত্রী মারা যান। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার দুর্লভপুর গ্রামের বাসিন্দা। ৫ আগস্ট মক্কা আল-মোকাররমায় নাটোর জেলার মো. জাহাঙ্গীর কামাল (৬৬) মারা যান। ২ আগস্ট রাজবাড়ী সদরের আবদুর রাজ্জাক (৭৫) মারা যান। ১ আগস্ট মারা যান বরিশাল জেলার মুলাদী থানার মো. ফরিদ উদ্দীন (৬১)।
হাবের মহাসচিব তসলিম ইনকিলাবকে বলেন, হজযাত্রী পরিবহনে বিমানের ক্যাপাসিটি শট মেকআপ করা হচ্ছে। সকল হজযাত্রীই হজে যাওয়ার সুযোগ পাবেন বলে হাব মহাসচিব আশাবাদ ব্যক্ত করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হজ

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ