পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
ইনকিলাব ডেস্ক : অবশেষে মৌখিক তালাককে (মুখে তিন বার তালাক শব্দটি উচ্চারণের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ) অবৈধ ঘোষণা করে যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। তিন তালাকের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা ভারতীয় মুসলিম নারীদের কয়েকটি পিটিশনের ওপর সা¤প্রতিক শুনানি শেষে গতকাল মঙ্গলবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচজন বিচারপতির বেঞ্চ বিভাজিত রায় দেয়। তবে ওই বেঞ্চের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতির মত তিন তালাককে অসাংবিধানিক ঘোষণার পক্ষে যাওয়ায় (৩-২ ব্যবধান) অবশেষে মৌখিক তালাককে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। প্রধান বিচারপতি জে এস খেহরের নেতৃত্বে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী বিচারপতিদের নিয়ে গঠিত হয় এই বেঞ্চ। অন্য বিচারপতিরা হলেন, ইউ ইউ ললিত, আর এফ নরিম্যান, আবদুল নাজির ও কুরিয়ান জোসেফ। ৫ বিচারপতির মধ্যে ৩ জনই তিন তালাক নিষিদ্ধ করার পক্ষে রায় দিয়েছেন। বাকি ২ বিচারপতি বলেন, এ নিয়ে কেন্দ্রকে আইন প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হোক, ছয় মাসের মধ্যে ওই আইন প্রণয়ন করতে হবে এবং সে সময় পর্যন্ত তিন তালাক প্রথা নিষিদ্ধ থাকবে। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ মত তালাক প্রথার বিরুদ্ধে যাওয়ায় প্রাচীন এই শরিয়তি প্রথা আজ থেকে নিষিদ্ধ হয়ে গেল ভারতে। একাধিক মুসলিম দেশের উদাহরণ তুলে ধরে শীর্ষ আদালত প্রশ্ন করেছে, স্বাধীন ভারত কেন এই প্রথা থেকে মুক্ত হতে পারবে না। এরপরই তালাক প্রথা খারিজ করে আদালত বলেছে, ৬ মাসের মধ্যে মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে কেন্দ্রকে নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, মুসলিম ব্যক্তিগত আইনের ইতিহাসে আজকের দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত থাকবে। এনডিটিভির খবরে দিনটিকে ভারতীয় মুসলিম নারীদের জন্য ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতীয় মুসলিম সমাজ ১৯৩৭ সালে কার্যকর হওয়া মুসলিম পার্সোনাল আইন বা মুসলিম পারিবারিক আইন দ্বারা পরিচালিত। তবে মুসলিম ভারতীয় নারীরা তাদের পিটিশনে বলেছেন,তিন তালাক মুসলিম মেয়েদের সমানাধিকারের পরিপন্থী। একে নারীর মর্যাদা ক্ষুণ্নকারী একটা ব্যবস্থা বলেছেন তারা। ভারতীয় সংবিধানের ২৫ (১) অনুচ্ছেদে নিজস্ব ধর্মাচরণ, ধর্মপ্রচারের যে অধিকার সুরক্ষিত আছে, তালাকের বিধান তার মধ্যে তা পড়ে না বলেও উল্লেখ করা হয় পিটিশনে। তিন তালাকের বিরুদ্ধে যারা শীর্ষ আদালতে পিটিশন ফাইল করেন,তারা হলেন সায়ারা বানু,আফরিন রহমান,ইসরাত জাহান,গুলশন পারভিন ও ফারহা ফয়েজ। গত মে মাসে মুসলিম নারীদের দায়ের করা পিটিশনগুলোর ওপর শুনানি করেন প্রধান বিচারপতি জে এস খেহরের নেতৃত্বাধীন সংবিধান বেঞ্চ। গ্রীষ্মকালীন অবকাশে টানা ছয়দিনের ম্যারাথন শুনানির শেষে গত ১৮ মে এই মামলার রায়দান স্থগিত রেখেছিল প্রধান বিচারপতি জে এস খেহরের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ। শুনানির সময় আদালত জানিয়েছিল যে, বহুগামিতার বিষয়টি এই মামলায় বিবেচনা করা নাও হতে পারে। মুসলিম ধর্মে তিন তালাক অবিচ্ছেদ্য মৌলিক অধিকার কিনা,শুধুমাত্র এই বিষয়টিই খতিয়ে দেখা হবে। পিটিশনের পাশাপাশি ২০১৫-র অক্টোবরে শীর্ষ আদালতেরই এক বেঞ্চের নির্দেশের ওপর আজ রায় দেওয়া হয়। প্রধান বিচারপতি খেহর শুনানির সে সময় বলেছিলেন,প্রথমত দেখতে হবে,তিন তালাক ইসলামের অবিচ্ছেদ্য বিষয় কিনা। এটি ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলে দেখতে হবে,সেখানে আমরা হস্তক্ষেপ করতে পারি কিনা। দ্বিতীয়ত, বিবেচনায় নিতে হবে এই প্রথা ধর্মীয় সংস্কারমূলক কিনা। তৃতীয়ত, কোনও প্রয়োগযোগ্য মৌলিক অধিকার এই প্রথার ফলে লঙ্ঘিত হচ্ছে কিনা তাও খতিয়ে দেখতে হবে। তিন তালাক প্রথা সম্পর্কে সাতটি আবেদনের মধ্যে পাঁচটি দায়ের করেছিল মুসলিম নারীরা। আর্জিতে তিন তালাক প্রথাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন তারা। শুনানির সময় আদালত তার পর্যবেক্ষণে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য মুসলিম সমাজে প্রচলিত তিন তালাক প্রথা জঘন্য বলেও মন্তব্য করেন। বিবাহবিচ্ছেদের এ ধরনের প্রথা আদৌ কাক্সিক্ষত নয় বলেও মন্তব্য করেছিল আদালত। যদিও মুসলিম স¤প্রদায়ের বিভিন্ন মহলে ওই প্রথাকে বৈধ বলে দাবি করা হয়। এনডিটিভি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।