ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, তিস্তা, ধরলা, সুরমা-কুশিয়ারার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার কারণে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি ঘটছে, পানিবন্দী লাখো মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগ আর কষ্টে দিনপাত করছে। সামান্য খাবারের আশায় বানভাসি মানুষ অপেক্ষার প্রহর গুনছে। কিন্তু ত্রাণ যেভাবে পাওয়ার কথা সেভাবে তারা পাচ্ছে না। বিপন্ন মানুষগুলোর কষ্টের কথা লিখলে সমাপ্তি টানা যাবে না। সারা দেশে বন্যায় শতাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর পত্রিকার পাতায় মুদ্রিত হয়েছে। মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে। মানুষ কি পারে না একটু সহানুভূতি পেতে? শিল্পীর গানের কথাগুলো রূপকথার গল্পের মতো কারও কারও কাছে মনে হতেই পারে। কেননা আজ মানুষ মানুষের বিপদে এগিয়ে আসার অনুভূতি হারিয়ে ফেলেছে। মানুষের জীবন ইজ্জতের দাম কচু পাতার পানির চেয়ে হালকা বিষয়ে পরিণত হয়েছে। যে কারণে সমাজ ও রাষ্ট্রে মানুষের ভালোবাসার পরিবর্তে দুশমনী সর্বত্র বিরাজ করছে। বানভাসি পরিবারগুলো তাদের শিশু, বয়োবৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষগুলো নিয়ে এক মানবেতর জীবন যাপন করছে। অথচ ক্ষমতাসীন দলের এমপি, মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতা নেত্রীরা সুপ্রীম কোর্টের রায় ও পর্যবেক্ষণ নিয়ে বিভেদের রাজনীতিকে উসকে দিচ্ছেন। বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণের জন্য অসহায় মানুষের ছোটাছুটি ও বুক সমান পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকার করুণ দৃশ্য গণমাধ্যমে প্রতিদিন মুদ্রিত হচ্ছে। ত্রাণ সংকটের প্রতিবেদনও তুলে ধরা হচ্ছে কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি আশানুরূপ হচ্ছে না। একটা সময় তো এমন ছিল যে কেউ বিপদে পড়লে সবাই এগিয়ে আসতো। এখন আর তেমনটা দেখা যায় না। মানুষ আগের মতো আর বিপন্নদের পাশে ত্রাণ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে না। ১৯৮৮, ১৯৯৮ ও ২০০৪ সালের বন্যায় বানভাসিদের জন্য সব শ্রেণী পেশার মানুষের সাহায্য নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার নজির স্থাপন করেছিল। বানবাসি মানুষের পাশে দাঁড়ানো সরকারের কর্তব্য হলেও তেমন করে সে কর্তব্য পালন করতে দেখা যাচ্ছে না।
সরকার বন্যার অভিশাপ থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। ভারত থেকে ধেয়ে আসা পানির কারণে উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতির মধ্যে ঢাকার বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, টঙ্গী খাল, ধলেশ্বরীর পানি বেড়েই চলেছে। এসব নদীর পানি বিপদসীমার নিচে প্রবাহিত হলেও কয়েকদিনের মধ্যে তা বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র আভাস দিয়েছে। পাশাপাশি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকার নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা। দুর্ভোগের শিকার হবে নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। যমুনা নদীর পানি ইতোমধ্যেই ১৯৮৮ সালের মহাবন্যার সীমা অতিক্রম করেছে যা ২০০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সীমা বলে জানা গেছে। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় বানবাসি মানুষের দুর্ভোগের খবর প্রকাশিত হলেও বিপন্ন মানুষের পাশে ক্ষমতাসীনদের দাঁড়ানোর গরজ তেমন দেখছি না। দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলো বন্যাকবলিত হয়ে লাখ লাখ বানভাসি মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। খাদ্য, সুপেয় পানি, পানিজনিত রোগের চিকিৎসাসহ মৌলিক চাহিদা পূরণ না হওয়ায় বন্যা দূর্গত এলাকায় মানবিক বিপর্যয়ের পদধ্বনির আওয়াজ সর্বত্র শোনা যাচ্ছে।
বন্যায় ভেসে গেছে লক্ষাধিক হেক্টর ফসলি জমি। বন্ধ রয়েছে বিভিন্ন জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিপাকে পড়েছে নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদি পশু। বিশেষ করে বন্যাকবলিত এলাকার গো-চারণ ভূমি তলিয়ে যাওয়ার ফলে গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারি ত্রাণ অপ্রতুল হওয়ায় সবার ভাগ্যে জুটছে না ত্রাণ সামগ্রী। এমন অভিযোগ করছেন বন্যাকবিলত এলাকার হাজারো মানুষ। দেশের এই সংকটকালীন মুহুুর্তে সরকারের উচিত বন্যা প্রতিরোধের জন্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা। পাশাপাশি বানভাসি মানুষের জীবনকে রক্ষা করার প্রয়াসে পুনর্বাসনে ব্যবস্থা জরুরি ভিত্তিতে করা প্রয়োজন। আমরা আশা করব, সরকার দেশের মানুষকে বন্যার অভিশাপ থেকে রক্ষা করার প্রয়াসে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।