Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বানভাসিদের পাশে দাঁড়াতে পারাই তার আনন্দ

প্রকাশের সময় : ৯ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে
ডাক দিলেই নৌকা নিয়ে ছুটে আসেন ইসলাম মিয়া। সেই সময়টা দিন বা মধ্যরাত হোক তাতে তার যায় আসে না। বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতেই তার আনন্দ। এজন্য ডাক পেলেই ছুটে যান। ভালোবাসার বৈঠা ছুঁয়ে পারাপার করেন বন্যার্ত মানুষদের। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে বানভাসিদের আপন মানুষ এখন ইসলাম মিয়া। পেশায় রিকশাচালক ইসলাম মিয়া বর্ষা মৌসুমে বাড়িতে থেকে মানুষের উপকার করে বেড়ান। বাকি সময় ঢাকায় রিকশা চালান। যা আয় করেন তার সিংহভাগ মানুষের পেছনে ব্যয় করেন। খোলামনের এই মানুষটি প্রতি বছর ধরলা নদীর অপর পাড়ে সীমান্ত ঘেঁষা নামাটারী চরের ৪০ পরিবারের মানুষের সুখ-দুখের খোঁজখবর নেন। এই পরিবারের মানুষগুলো বন্যার সময় যখন নদী পেরিয়ে এপাড়ে আসতে পারে না। পরিবারে কেউ অসুস্থ হলে ডাক্তার দেখাতে পারেন না। তাদের জন্য অকুতোভয় ইসলাম মিয়া নিজ গরজে ছুটে আসেন। প্রতি বর্ষা মৌসুমে তার মাঝারি ডিঙি নৌকাটি তিনি মেরামত করেন। এই নৌকা দিয়ে পারাপার করেন নামাটারী গ্রামের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতাদের। ওই গ্রামের নুর ইসলাম জানান, ইসলাম মিয়া আমাদের জন্য আশীর্বাদ! গত একযুগ ধরে বর্ষা মৌসুমে আমাদের গ্রামের লোকজনকে বিনা ভাড়ায় নদী পারপাপার করছেন তিনি। এর বিনিময়ে একটি টাকাও নেননি। আদম আলী নামে আরেক গ্রামবাসী জানান, যত রাতই হোক কেউ অসুস্থ হয়েছে। তাকে ওপারে নিয়ে যেতে হবে; হাঁক দিলেই ইসলাম মিয়া নৌকা নিয়ে ছুটে আসেন। এমন পরোপকারী মানুষ আমরা দেখিনি। উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের গোরকম-ল নামাটারী গ্রামের মৃত কিছি মুদ্দিনের ছেলে ইসলাম মিয়া (৪৭)। এক ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে তার সংসার। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলেরও বিয়ে দিয়েছেন। নাতি-নাতনিসহ এখন ৬ জনের সংসার। ছেলে দিনমজুরি করে। পাশাপাশি সংসারের দেখাশোনা করে। স্ত্রী ও ছেলে বাবার এধরনের কর্মকা-ে প্রথমে নাখোশ হলেও তারা এখন বাবার এই কাজকে সমর্থন করেন। মানুষ যখন ইসলাম মিয়ার প্রশংসা করে তখন তাদের গর্ব হয়, বুকটা ভরে যায়। ইসলাম মিয়া সম্পর্কে নামাটারী গ্রামের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আর্জিনা ও দ্বিতীয় শ্রেণীর আফরিনা জানায়, শুকনো মৌসুমে আমরা মেঠোপথ ও আবাদি জমির আইল দিয়ে স্কুলে যাই। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে আমাদের ভীষণ সমস্যা হয়। এখন আমাদের কোনো সমস্যা নাই। আমাদের জন্য ইসলাম জ্যাঠা আছেন। তিনি আমাদেরকে বিনে পয়সায় নৌকায় পার করিয়ে দেন। এ ব্যাপারে ইসলাম মিয়া জানান, মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়াতে আনন্দ পাই। এজন্য মানুষের ভালোবাসা পাইছি। আল্লাহর কৃপায় আমরা ভালোই আছি। মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত মানুষের সেবা করতে চাই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বানভাসিদের পাশে দাঁড়াতে পারাই তার আনন্দ
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ