Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কাজিপুরের বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ ইঞ্জিনচালিত নৌকার শব্দ শুনলেই ত্রাণের জন্য দৌড়ে আসে

প্রকাশের সময় : ২৬ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

টি এম কামাল, কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) থেকে

খাসরাজবাড়ী ষাটোর্ধ রহিমা বেগম লাঠি ভর দিয়ে এসেছেন রিলিফ নিতে। আমির হোসেন (৫৫), শহিদুল হক (৪৫), সাইদুল ইসলাম (৪৭) সহ আরও দুই শতাধিক বানভাসি ক্ষুধার্ত মানুষের ভিড় পড়েছিল খাসরাজবাড়ী আশ্রয় কেন্দ্রে। যমুনা নদীর মাঝে চরে সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের উত্তরে এই খাসরাজবাড়ী ইউনিয়নটি এখন বন্যা ও ভাঙনে বিধ্বস্ত। ইউনিয়নের প্রায় সকল পরিবারগুলো বন্যা ও ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তরা এখন ঘরবাড়ি নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। শুধু খাসরাজবাড়ীর রাস্তাসহ বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে বানভাসি মানুষ ক্ষুধার জ্বালায় কাতরাচ্ছে। ‘ওরা ইঞ্জিনচালিত নৌকার শব্দ শুনলেই দলবেঁধে দৌড়ে আসে’। নৌকা থামানোর চেষ্টা করে। সাংবাদিকরা বানভাসি এলাকায় বন্যার্ত মানুষের দুঃখ-কষ্টের বিবরণ শুনে নাম লিখলে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে নাম লিখে দেওয়ার জন্য। তাদের বিশ্বাস এভাবেই রিলিফের স্লিপ ইস্যু হবে। গতকাল বন্যা এবং ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত খাসরাজবাড়ী, চরগিরিশ, ঢেকুরিয়া, বিলচতল, মাইজবাড়ী, পলাশপুর, নতুন মেঘাই, শুভগাছা, সিংড়াবাড়ি, পাটাগ্রাম, ভেটুয়া, ভেটুয়া, মাজনাবাড়ী, পূর্ব মাজনাবাড়ী, ছালাল, নাটুয়ারপাড়া, নিশ্চিন্তপুর এলাকা সরেজমিন ঘুরে বানভাসি মানুষের নানা দুঃখ-দুর্দশা দেখা গেছে, ত্রাণকর্মীদের সঙ্গে স্পিডবোটে ও নৌকায় যেতে যেতে দেখেছি বানভাসি মানুষের চরম দুর্দশা। খাসরাজবাড়ী, মাইজবাড়ী, শুভগাছা, কাজিপুর সদর, চরগিরিশ, নিশ্চিন্তপুর, নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নের অধিকাংশ বাড়িঘর এখন পানিতে ভাসছে। তবে তাদের নগদ টাকার অভাবে প্রকট আকার ধারণ করায় বাড়িঘর সড়াতে পারছেন না। বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও রিং বাঁধের ভিতরে বাড়িঘর, সাজানো সংসার তছনছ করে দিয়েছে। সেখনে এখনও বুকপানি। বুকপানিতেও অনেকে তাদের ঘরবাড়ি, টিনের চালা, ঘরের আসবাবপত্র খুঁজছে। কাজিপুর সদর, মাইজবাড়ী, শুভগাছা, মনসুরনগর, নিশ্চিন্তপুর, চরগিরিশ ও খাসরাজবাড়ী এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত আশ্রয় কেন্দ্র ও বাঁধের ওপরে গবাদিপশু-মানুষ একাকার হয়ে বাস করছে। ইঞ্জিনচালিত নৌকার আওয়াজ পেয়েই শিশু-নারী-পুরুষ দলবেঁধে দৌড়ে এসে নৌকা থামানোর আবেদন করছে। ওরা চায় আশ্রয়। বিশুদ্ধ পানি এবং স্বাস্থ্যসেবা তাদের জরুরি হয়ে উঠেছে। গবাদিপশুও ক্ষুধার্ত। কিন্তু ত্রাণকর্মীদের নৌকা এখানে থামেনি। ত্রাণের নৌকা খাসরাজবাড়ী, পীরগাছা, মাজনাবাড়ী, ছালাল, ভেটুয়া, চরগিরিশ, শুভগাছা, সিংড়াবাড়ী, যুক্তিগাছায় পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে বানভাসি ক্ষুধার্ত মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে নৌকার ওপর। কিন্তু ত্রাণকর্মীরা আগে থেকেই স্লিপ ইস্যু করে দিয়েছি। স্লিপ ছাড়া কাউকে ত্রাণ দেওয়া হবে না ঘোষণা দিতেই ওরা যেন বিমর্য হয়ে উঠলো। স্লিপধারী প্রায় এক হাজার বানভাসি মানুষকে ত্রাণ দেওয়ার পরও অসংখ্য মানুষ অপেক্ষা করেছে ত্রাণের জন্য। সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের কাছে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ এখনও কমেনি। ত্রাণের জন্য বানভাসি মানুষ এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছে। মাঠঘাট ডুবে থাকায় কর্মজীবী মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। সর্বত্রই যেন হাহাকার। বিশুদ্ধ পানি নেই, খাদ্য নেই। একাকার হয়েছে কাজিপুরের বন্যাকবলিত এলাকা। কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হালিম টলস্টয় ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এ ক এম শাহা আলম মোল্লা এ প্রতিনিধিকে জানান, এ পর্যন্ত ৮ মেঃটন চাল খাসরাজবাড়ী ও চরগিরিশ ইউনিয়নে বিতরণ করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কাজিপুরের বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ ইঞ্জিনচালিত নৌকার শব্দ শুনলেই ত্রাণের জন্য দৌড়ে আসে
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ