Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুর্ভোগে বানভাসিরা

বিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ আগস্ট, ২০২০, ১২:০২ এএম

জোয়ারের পানিতে বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার ও পানির সঙ্কট। সাগরে জোয়ার স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৫ ফুট উচ্চতায় ধেয়ে এসে উপকূল ছাপিয়ে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল প্লাবিত। সাড়ে ৩ লাখ হেক্টর জমির আউশ ও আমনসহ বিভিন্ন ফসলী জমির ক্ষতি হয়েছে। ভেসে গেছে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৪ লাখ পকুর, দীঘির মাছ। দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে খুলনাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকার বানভাসী লাখ লাখ মানুষ। প্রবল জোয়ারের চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙে খুলনা সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের শত শত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিতে ভেসে গেছে গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগি। ধসে পড়েছে শত শত কাঁচাঘরবাড়ি। রান্না-বান্না ও গৃহস্থালীর কোন কাজ করতে না পারায় শুকনা খাবারেই নিভাতে হচ্ছে তাদের পেটের ক্ষুধা। তিনদফায় বন্যায় টাঙ্গাইলের ৭৮৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন ও মাঠ ধস এবং আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৩১ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা ও কলেজ। আনাবাদী থাকে শতশত একর ফসলি জমি।

বরিশাল ব্যুরো জানায়, দক্ষিণাঞ্চলসহ উপকূলভাগে মাঝারি থেকে অতিভারী বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে। সাগরের জোয়ার স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৫ ফুট উচ্চতায় ধেয়ে এসে উপকূল ছাপিয়ে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলকে প্লাবিত করে দেয়। ভরা জোয়ারের সাথে উজানের ঢল আর মাঝারি বর্ষণ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চালকে সয়লাব করে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ হেক্টর জমির আউশ ও আমনসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলী জমি প্লাবিত করেছে। ভেসে গেছে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৪ লাখ পকুর, দীঘি ও বরোপীটের মাছ। এসব ফসলী জমি আর পুকুর-দীঘি এখনো প্লাবনমুক্ত হয়নি। দক্ষিণাঞ্চলের ৯০টি নদ-নদীর সবগুলোই বিপদ সীমার ওপরে প্রবাহিত হয় সোমবার দুপুর পর্যন্ত। গত মঙ্গলবারেও বেশিরভাগ নদ-নদীই বিপদ সীমার ওপরে প্রবাহিত হলেও সাগর শান্ত হওয়ায় উজানের পানি গ্রহণ শুরু করে রোববার রাত থেকে। বরিশাল মহানগরীর অন্তত ৭০ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়। এদিকে, গত কয়দিনের প্লাবনসহ ভারী বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি ও মৎস্য সেক্টরের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপনের কাজ চলছে। ক্ষতির প্রাথমিক প্রতিবেদন মঙ্গলবারই ঢাকায় পাঠান হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডও উপক‚লসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিপুল সংখ্যক বেড়ীবাঁধসহ উপক‚লীয় বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন প্রস্তুত করছে বলে জানা গেছে।

খুলনা ব্যুরো জানায়, দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে খুলনাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকার বানভাসী লাখ লাখ মানুষ। প্রবল জোয়ারের চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙে খুলনা সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের শত শত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পাইকগাছা, কয়রা, রামপাল, মংলা, শরণখোলা, আশাশুনি, শ্যামনগরের বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। ভেসে গেছে হাজার হাজার বিঘা মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি।
পানিতে ভেসে গেছে গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগি। ধ্বসে পড়েছে শত শত কাঁচাঘরবাড়ি। রান্না-বান্না ও গৃহস্থালীর কোন কাজ করতে না পারায় শুকনা খাবারেই নিভাতে হচ্ছে তাদের পেটের ক্ষুধা। অনেকের বসত ঘর পানিতে ভেসে গেছে। এছাড়া দেখা দিয়েছে খাবার পানির তীব্র সঙ্কট। সব মিলিয়ে কষ্টের কোন শেষ নেই দুর্গত এলাকার মানুষের। প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এর আগে কখনো তারা এতো পানি দেখেনি। তাই অতিদ্রুত সরকারি সহায়তা প্রত্যাশা করেছে বানভাসি মানুষ। তবে বন্যাদুর্গতদের সকল প্রকার সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন। গত ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের উপক‚লীয় এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় সহস্রাধিক কিলোমিটার বেঁড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কয়রা, পাইকগাছা, শরণখোলা, মংলা, আশাশুনি, শ্যামনগর উপজেলায়। এছাড়া গত তিন মাস ধরে উপক‚লীয় এলাকার নিম্নাঞ্চলের লোকালয়ে চলে জোয়ার-ভাটা। অনেকেই এখন বাড়িঘর ছেড়ে শহরের দিকে ছুটছেন।

টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, এবছর তিনদফায় বন্যায় টাঙ্গাইলের ৭৮৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন ও মাঠ ধস এবং আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৩১ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা ও কলেজ। এবার বন্যায় যমুনায় বিলীন হয়ে যাওয়া পাইকশা মাইঝাইল প্রাথমিক বিদ্যালয় নতুনভাবে নির্মাণের জন্য এক কোটি ২০ লাখ টাকার চাহিদাপত্র প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে পাঠানো হয়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠান খোলার পরে পাঠদানে ভোগান্তি হবে বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষক। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংস্কার করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা। অপরদিকে ধনবাড়ী ও মধুপুর উপজেলার কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালীর মহিপুরে ভাঙতে শুরু করেছে মহিপুরের নিজামপুর সুধীরপুর,কমরপুর বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ। ফলে এক যুগের পানিবন্ধী দশা থেকে এলাকাবাসী মুক্তি পেলেও নতুন করে দেখা দিয়েছে পুরনো সে শঙ্কা। আর এজন্য পানি উন্নয়ন বোডের অপরিকল্পিত প্রকল্প প্রনয়নসহ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নিন্মমানের কাজকে দায়ী করেছেন এলাকাবাসী। কয়েক দফা পুনঃনির্মাণ কাজ করা হলেও তা টেকসই না হওয়ায় ফি বছরই ভেঙে যায়। এতে বছরের প্রায় ছয় মাস দুদফা জোয়ারের পানিতে বন্দি হয়ে পড়ে সাগর মোহনার কমরপুর, সুধীরপুর, নিজামপুর, পুরানমহিপুর, নজিবপুর পাঁচটি গ্রামের প্রায় দশ হাজার মানুষের নদীতে বিলীন হয়ে যায় ফসলি জমি, বসত ভিটা। আনাবাদী থাকে শতশত একর ফসলি জমি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুর্ভোগ বানভাসি

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ