পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হিমালয় চীন তিব্বত নেপাল ভারতে বৃষ্টি-ঢল-বান কমেছে : জুন জুলাই থেকে দীর্ঘসময়ের বন্যায় ধ্বংসযজ্ঞ ভয়াবহ : লাখ লাখ মানুষ হারিয়েছে বসতঘর : সড়ক রাস্তাঘাট রেলপথ সেতু-কালভার্ট হাট-বাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাঁধসহ অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে
শফিউল আলম : হিমালয়-পাদদেশীয় অঞ্চল চীন তিব্বত ভূটান নেপাল ভারতের উজানভাগের অববাহিকায় বৃষ্টিপাত-ঢল-বান কমে গেছে। শিগগির ব্যাপক বর্ষণের পূর্বাভাসও নেই। এরফলে দেশে আরো বড় ধরনের বন্যার শঙ্কা কেটে গেছে। গতকাল (সোমবার) সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত ও পূর্বাভাস অনুযায়ী, অন্যতম প্রধান অববাহিকা গঙ্গা-পদ্মার উজানে ফারাক্কাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বৃদ্ধির হার কমতির দিকেই রয়েছে। গঙ্গার বাংলাদেশে প্রবেশমুখ পাংখা পয়েন্টে গতকাল সকাল পর্যন্ত মাত্র ২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পায়। তবে সারাদিনে ৯ সেমি হ্রাস পেয়ে সর্বশেষ বিপদসীমার ১১৩ সেমি নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গঙ্গা-পদ্মার রাজশাহী ও হার্ডিঞ্জব্রিজ পয়েন্টে ৩০ ঘণ্টায় যথাক্রমে ৭ ও ৩ সেমি বেড়ে বিপদসীমার ৯৬ এবং ৪০ সেমি নিচে ছিল। পদ্মা নদীর ভাটিতে আরও কমেছে পানি। অন্যদিকে অপর দু’টি প্রধান অববাহিকা ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং মেঘনায় (সুরমা-কুশিয়ারা ও অন্যান্য ধারা) পানির সমতল হ্রাস অব্যাহত থাকায় আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বিপদসীমার নিচে নামার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে গত জুন-জুলাই মাস থেকে এ যাবত দীর্ঘসময়ের বন্যায় দেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ হারিয়েছে মাথাগোঁজার ঠাঁইটুকু। সড়ক রাস্তাঘাট রেলপথ সেতু-কালভার্ট হাট-বাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাঁধসহ বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি ইতোমধ্যে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে গতকাল সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তে দেশের নদ-নদীসমূহের ৯০টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ১৭টি নদী ২৭টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এরমধ্যে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি বেড়ে সকাল পর্যন্ত বিপদসীমার ১৩ সেমি উপরে থাকলেও বিকেলে ছিল মাত্র ২ সেমি ঊর্ধ্বে। ৩৫টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৫৩টিতে হ্রাস পায় এবং ২টিতে অপরিবর্তিত থাকে। কেন্দ্রের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বন্যা ও নদ-নদী বিশেষত গঙ্গা-পদ্মার পূর্বাভাস প্রসঙ্গে ইনকিলাবকে জানান, গঙ্গা অববাহিকায় পানিবৃদ্ধির হার আগের চেয়ে আরও কমে গেছে। গঙ্গায় পানি আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। এর পরবর্তী ৭২ থেকে ৯৬ ঘণ্টায় ক্রমেই স্থিতিশীল হয়ে যেতে পারে। পূর্বাভাস অনুযায়ী গঙ্গা বিপদসীমা ক্রস করবে না। ফারাক্কায়ও পানিবৃদ্ধির হার কমে এসেছে। নেপাল, বিহার বা উজানভাগে আগামী ৫ দিনে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস নেই। জোয়ার-ভাটার নদী (ফ্লাশি) হওয়াতে শীতলক্ষ্যায় বা ঢাকার আশপাশের নদীগুলোতে পানি তেমন বেশি বাড়বে না। ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় স্থিতিশীল হয়ে যেতে পারে। তবে উজানের পানি নেমে আসার কারণে ভাটি ও মোহনায় চাপ বেড়ে গেছে।
এদিকে গতকাল অমাবস্যার ভরা জোয়ার এবং পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময়জুড়ে বঙ্গোপসাগর উপকূলভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি উঁচু জোয়ার বয়ে যায়, যা অব্যাহত রয়েছে। তবে তা মাত্রাতিরিক্ত বেশি না হওয়ার কারণে বন্যায় বিশেষত ভাটি ও মোহনায় তেমন ব্যাপক প্রভাব পড়েনি। সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর কোন সতর্ক সঙ্কেত নেই। নেই ভারী বর্ষণের সতর্কতা। তাছাড়া ভারতের মধ্যপ্রদেশ ও সংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপটি দুর্বল হয়ে লঘুচাপ আকারে কেটে যাচ্ছে। তবে বর্ষার মৌসুমি বায়ু দুর্বল ও লঘুচাপের বর্ধিতাংশের প্রভাবে প্রায় সারাদেশে বৃষ্টিবিহীন অবস্থায় ভাদ্রের তালপাকা ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে।
সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা এই তিনটি অববাহিকার মধ্যে গঙ্গায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনা অববাহিকার ভারতীয় ও বাংলাদেশ অংশে পানি হ্রাস অব্যাহত আছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের ভারতীয় অংশের গোহাটিতে (বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ১৮০ কিমি উজানের অববাহিকায়) ১৫ সেমি, পান্ডুতে (বাংলাদেশ সীমান্তের ১৬০ কিমি উজানে) ১২ সেমি, গোয়ালপাড়া (বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ৯০ কিমি উজানে) ১৬ সেমি এবং ধুবরী (বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ২৫ কিমি উজানে) ১৩ সেমি হারে পানির সমতল হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানির সমতল নুনখাওয়া, চিলমারী, বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি এবং সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে হ্রাস অব্যাহত আছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় পানি হ্রাস অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি অব্যাহত থাকবে। তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার অববাহিকার নদীর পানি হ্রাস অব্যাহত রয়েছে। ফলে সেখানকার বন্যার উন্নতি অব্যাহত থাকবে। গঙ্গা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও তা আগের তুলনায় অনেক কম। বর্তমানে গঙ্গা বিভিন্ন পয়েন্টে বিপদসীমার ৪০ থেকে ১১৩ সেমি নিচে রয়েছে। পদ্মা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। মেঘনা অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় উন্নতি অব্যাহত থাকবে।
পূর্বাভাস মতে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনার ভারতীয় অংশে আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টায় গড়ে ২০ সেমি পানি হ্রাস পেতে পারে। বাংলাদেশ অংশে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার বিভিন্ন পয়েন্টে আগামী ৭২ ঘণ্টায় পানি হ্রাস অব্যাহত থাকবে। গঙ্গা নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি আগামী ৪৮ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকবে, তবে ক্রমশ কমে গিয়ে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হবে। পদ্মা নদীর পানির সমতল হ্রাস আগামী ৪৮ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকবে। দেশের উত্তরাঞ্চলের বর্তমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকবে। পদ্মা নদীর পানি সমতল কমতে শুরু করায় দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলের মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মুঞ্জিগঞ্জ, শরীয়তপুরসহ নিম্নাঞ্চলের বন্যার উন্নতি শুরু হবে। গঙ্গা অববাহিকার পানি বৃদ্ধি পেলেও তা বিপদসীমার নিচে। মধ্যাঞ্চলে ঢাকার চারদিকে বালু, তুরাগ, বুড়িগঙ্গা, টঙ্গী খালের পানি বিপদসীমার নিচে এবং শীতলক্ষ্যা নারায়ণগঞ্জে বিপদসীমার কিছুটা উপরে প্রবাহিত হচ্ছিল।
গতকাল দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের সর্বশেষ প্রবাহের অবস্থান ছিল- উত্তরের যমুনা নদে পানি আরও হ্রাস পেয়ে বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি, কাজীপুর, সিরাজগঞ্জ ও ভাটিতে আরিচায় বিপদসীমার ৩৩ থেকে ৭৫ সেমি উপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। ঘাগট নদীর পানি বিপদসীমার নিচে এবং চক রহিমপুরে করতোয়া ৭ সেমি উপরে ছিল। আত্রাই নদী বাঘাবাড়িতে বিপদসীমার ৯৬ সেমি এবং ধলেশ্বরী নদী টাঙ্গাইলের এলাসিনে ৮৯ সেমি উপরে ছিল। মহানন্দা নদীর পানি রোহনপুর ও চাপাইনবাগঞ্জে আরও বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার যথাক্রমে ৫৯ ও ১৪ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পদ্মা নদীর পানি আরও কমেছে। গোয়লন্দ, ভাগ্যকুল ও সুরেশ্বরে পদ্মা যথাক্রমে বিপদসীমার ৮৪, ৩৪ ও ১৫ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অপরদিকে মেঘনা অববাহিকায় সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারা নদীতে পানি হ্রাস অব্যাহত রয়েছে। সুরমা কানাইঘাটে বিপদসীমার ১৮ সেমি উপরে এবং কুশিয়ারা নদী ৩টি পয়েন্টে বিপদসীমার ৮ থেকে ৩৩ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। নেত্রকোণা জেলায় কংস নদীর পানি আরও হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ৬৮ সেমি উপরে এবং ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় তিতাস নদীর পানি কিছুটা বেড়ে ৪৬ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।