পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ না হওয়ায় বিপাকে পড়ছেন দেশের খামারীরা। কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ভারত থেকে গরু আমদানীতে সহযোগিতা করায় বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন দেশি খামারি ও মৌসুমি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। একই সাথে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চোরাই পথেও গরু আসার সহযোগিতা করছে বিজিবি। বর্তমানে দেশে খামারের সংখ্যা প্রায় সোয়া ৫ লাখ। দেশে এখন গরু জবাই উপযোগী গরু রয়েছে প্রায় ৪৫ লাখ, ছাগল ও ভেড়া রয়েছে প্রায় ৭৬লাখ ও মহিষ ১৫ লাখ। সব মিলে যা দেশের মোট চাহিদা সম্পূর্ণভাবে পূরণ করতে সক্ষম বলে মনে করছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, খামারি ও ব্যবসায়ীরা। দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, চামড়া ব্যবসায়ী সমিতি ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর কোরবানির ঈদে দেশে ৫০ থেকে ৫৫ লাখ গরু জবাই করা হয়। এর প্রায় ৮০ শতাংশ সরবরাহ করে আসছিলেন দেশের খামারিরা। এ বছর এর পরিমান আরো বাড়বে। এতে দেশে গরুর দাম কিছুটা বাড়লেও তেমন সংকট হবে না। গত কয়েক বছর ভারত থকে গরু আসা প্রায় বন্ধ ছিল। তবে মিয়ানমার থেকে কিছু গরু আসত। এ বছর একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে ভারত থেকে গরু আমদানি করা শুরু করায় দেশের খামারীরা লোকসানে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একই সাথে দেশের সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে অবৈধভাবে চোরাই পথে গরু আসতে সহযোগিতা করছে বিজিবি। এতে করে কুরবানী ছাড়াও সারা বছর যে পরিমান গরুর মাংস দেশে প্রয়োজন হয় তাতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। উৎসাহ হারাবেন খামারীরা, ক্ষতিগ্রস্থ হবে দেশের অর্থনীতি। যশোর, রাজশাহী, মানিকগঞ্জ ও কুষ্টিয়ার খামারিরা ভারতীয় গরু প্রবেশ ঠেকানোর দাবি করে বলেছেন, ভারতীয় গরু আসা বন্ধ হওয়ায় কোরবানির পশু সংকটের যে আশঙ্কা ছিল, তা কেটে যাচ্ছে। এরই মধ্যে মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটান থেকে প্রতিদিনই গরু আসছে। ভারতের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় বিজিবির সহযোগিতায় কোরবানির গরু আমদানির পথও উন্মুক্ত হয়েছে। এসব প্রক্রিয়ায় একসঙ্গে গরু ঢোকা শুরু হলে চাহিদার তুলনায় জোগান কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। এতে শেষ সময়ে বাজারদরে বড় ধরনের ধস নামার আশঙ্কাও করছেন খামারিরা। আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ হয়ে রাজশাহীসহ উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলা এবং আসামের ধুবরি থেকে গরু পাচার বেড়েছে। বিএসএফের একাংশের সহযোগিতায় দেশে গরু আসছে। সহযোগিতা করছে বিজিবিও এমন অভিযোগ করেছেন রাজশাহীর গরু ব্যবসায়ী রুহুল আমিন এবং কুষ্টিয়ার গরু ব্যবসায়ী আমির আলী। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, সরকার আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে গরুতেও দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক খামারিদের গরু লালন-পালনে উৎসাহিত করতে ২০০ কোটি টাকার একটি তহবিল তৈরি করেছে। এই টাকার পরিমাণ সামনের বছর আরও বাড়ানো হবে। এখন খামারীদের প্রশ্ন বিজিবির প্রত্যক্ষ মদদে ভারত থেকে অবাধে গরু আসলে কিভাবে গরুতে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের মসুরাকান্দা গ্রামের কাশফুল অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক সাহিদুল ইসলাম। আসন্ন কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য তিনি ৩৩টি গরু বাছাই করে রেখেছেন। এর মধ্যে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ১৫ মাস বয়সী ২১টি বাছুর কিনেছিলেন তিনি। এখন সেগুলো দুই বছরের একটু বেশি বয়সী গরু। প্রতিটি গরুর দাম ৮০ হাজার টাকা করে আশা করছেন এই খামারি। গরু কেনার জন্য স্থানীয় ক্রেতারা ইতিমধ্যে সাহিদুলের কাছে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন। তবে ঈদের দিনক্ষণ যত এগিয়ে আসছে, তত শঙ্কা বাড়ছে সাহিদুলের। গরুর প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ার শঙ্কায় আছেন তিনি। তাঁর এই শঙ্কার মূলে আছে ভারতীয় গরু। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ভারতীয় গরু বৈধ ও অবৈধ দুইভাবেই আসা শুরু হয়েছে। এই সংখ্যা সামনে আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সাহিদুলের মতো আরও অনেক খামারি। সাহিদুল বলেন, শুনছি ভারত থেকে বৈধ-অবৈধ পথে গরু আসতেছে। প্রতি বছর ঠিক কোরবানির সময় এমন অবস্থা হয়। আমরা সারা বছর গরু পালি। কিন্তু কোরবানির ঈদের আগে বর্ডার খুলে দেয়া হয়। এমন হইলে ব্যবসা করমু ক্যামনে? অনুসন্ধানে দেখা যায়, কোরবানি ঈদ ঘিরে একটি চক্র ভারতীয় গরু আনায় সক্রিয় রয়েছে। এত দিন অবৈধ পথে ভারতীয় গরু এলেও এরই মধ্যে বিজিবির পক্ষ থেকে বৈধ পথে গরু আনার অনুমতি দেয়া হয়েছে। বছরের পর বছর ভারতীয় গরুর ওপর এই নির্ভরশীলতা বিপাকে ফেলেছে বাংলাদেশকে। একদিকে দেশের অভ্যন্তরে গোখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি, অন্যদিকে ভারতীয় গরু আমদানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছের রমজান আলী ও আফজাল, লালমনিরহাটের ফজলুল হক, নীলফামারীর জলঢাকার মাইদুলসহ বেশ কজন খামারি জানান, আসন্ন ঈদ সামনে রেখে গরু মোটাতাজা করছেন তারা। পশুখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং বর্ষা মৌসুমে পানিতে মাঠ ডুবে যাওয়ায় গোখাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। এ জন্য ব্যয়ও বেড়েছে। তার পরও তারা লাভের আশায় কষ্ট করে পশু পালন করছেন। কিন্তু তাদের শঙ্কা ঈদ উপলক্ষে ভারত থেকে বৈধ ও অবৈধ পথে গরু আসলে লাভ তো দূরের কথা, লোকসানের মুখে পড়বেন তারা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশে গবাদিপশুর সংখ্যা প্রতিবছর ৫.৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। আগামী ২০২১ সাল নাগাদ জাতীয় উৎপাদন থেকে দেশের পুরো চাহিদা মেটাতে হলে উৎপাদন ন্যূনপক্ষে বছরে গড়ে শতকরা ৬ থেকে ৯ ভাগ হারে বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ ডেইরি ফারমারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শাহ এমরান বলেন, কোরবানির ঈদের সময় ভারত থেকে গরু এলে তাতে দেশের খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। যদি ভারত থেকে অবাধে গরু আসে, তা হলে সেটি দেশের খামারিদের জন্য আত্মঘাতী হবে। এবার দেশে কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। যা দেশের মোট চাহিদা সম্পূর্ণভাবে পূরণ করতে সক্ষম। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (স¤প্রসারণ) ড. মো. মেহেদী হাসান বলেন, দেশের আভ্যন্তরীণ উৎপাদিত পশু দিয়েই কোরবানির পশুর চাহিদা মেটানো সম্ভব। তবে অন্যান্য দেশ থেকে অবৈধভাবে পশু আমদানি বন্ধ করলে দেশীয় খামারিরা লাভবান হবেন। তিনি আরও বলেন, কোরবানির জন্য গরুর চাহিদা তুলনামূলক বেশি থাকে। চাহিদা অনুযায়ী দেশের খামারগুলোয় পর্যাপ্তসংখ্যক গরু রয়েছে। তাই ভারত থেকে গরু আমদানির প্রয়োজন নেই বলেও মনে করেন তিনি। এদিকে সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে গরু আসতে বাধা নেই বলে চলতি মাসের শুরুতে জানান বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন। বিজিবি সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে ভারত থেকে গরু আসায় অসুবিধা হবে না। এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবির মহাপরিচালক বলেন, দেশে কোরবানি ঈদের সময় গরু আসা বন্ধ করে দিলে অসুবিধা হবে। কারণ এত সংখ্যক (গরু) উৎপাদন করা যাবে না। তাতে সবার অসুবিধা হবে। বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার খবর অনুযায়ী, বছরে বাংলাদেশ থেকে ৩৯ হাজার কোটি রুপির সমপরিমাণ টাকা ভারতে পাচার হয়। বেশির ভাগটাই হুন্ডির মাধ্যমে। আমাদের হিসাবে তা ৫০ হাজার কোটিরও বেশি হবে। এর অর্ধেক পাচার হয় গরু ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে। গতকাল বিজিবির মহাপরিচালকের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে গতকাল বিজিবির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেশে ভারত থেকে গরু আসছে বৈধ করিডোর দিয়ে। অবৈধভাবে যাতে গরু না আসতে পারে সে জন্য বিজিবি সর্তক রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্থানীয় প্রশাসন ভারত থেকে গরু আনার অনুমতি দিয়ে থাকেন। এর সাথে বিজির কোন সর্ম্পক নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।