Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কমছে না হজযাত্রী দুর্ভোগ

আরো একটি হজ ফ্লাইট বাতিল : প্রায় ৩ হাজার যাত্রী ক্যাপাসিটি সঙ্কট

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কমছে না হজযাত্রী দুর্ভোগ। যাত্রী অভাবে বিমানের আরো একটি হজ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এতে ৪শ’ ১৯ জন হজযাত্রী পরিবহনের ক্যাপাসিটি লস হলো। এ নিয়ে বিমানের প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার হজযাত্রী পরিবহনের ক্যাপাসিটি সঙ্কট রয়েছে। এসব সঙ্কট নিরসনের জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি সর্বাত্মস প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন গতকাল সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, হজ ফ্লাইট খালি যাওয়ার ব্যাপারে কাউকে দোষারোপ নয়; সকল হজযাত্রী হজে যেতে পারবেন ইনশাআল্লাহ। বিমানের পক্ষ থেকে আগামী ২৭ আগষ্ট ও ২৮ আগষ্ট বিমানের একাধিক হজ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় শ্লট বরাদ্দ পাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। গতকাল রোববার বিকেলে ধর্মমন্ত্রী’র দপ্তরে হজযাত্রী পরিবহন সংক্রান্ত জরুরী সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। গতকাল ভোর ৫টায় বিমানের হজ ফ্লাইট (বিজি-৯০৭৯) যাত্রীর অভাবে জেদ্দার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেতে পারেনি। এ হজ ফ্লাইটের যাত্রীরা আত্মীয়-স্বজনের বাসা-বাড়ী , হজ ক্যাম্পের ডরমিটরিতে এবং হোটেলে অবস্থান করে চরম হতাশায় ভুগছেন। এ ফ্লাইটটি আগামী ২৬ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টায় হজযাত্রী নিয়ে জেদ্দার উদ্দেশে ঢাকাত্যাগ করবে। হজ ক্যাম্পে বিমানের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। গতকাল রোববার বিমানের ৬টি হজ ফ্লাইট জেদ্দার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছে। একই দিন সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের ৮টি হজ ফ্লাইট হজযাত্রী নিয়ে সউদী আরবে গিয়েছে। এনিয়ে প্রায় ৮৭ হাজার হজযাত্রী সউদী আরবে পৌঁছেছেন। গতকাল বিকেলে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে তার দপ্তরে হজযাত্রী পরিবহন নিয়ে এক জরুরী সভায় ধর্মমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, একজন হাজী রেখেও আমি হজে যাবো না। সভায় বিমান ও সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের হজযাত্রী পরিবহনের ক্যাপাসিটি বৃদ্ধির বিষয়টি গুরুত্ব পায়। সভায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি’, ধর্মসচিব মোঃ আব্দুল জলিল, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব গোলাম ফারুক, বিমানের এমপি মোসাদ্দেক আহমেদ, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মোঃ হাফিজ উদ্দিন, পরিচালক হজ সাইফুল ইসলাম, হাবের মহাসচিব মোঃ শাহাদাত হোসাইন তসলিম, সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের প্রতিনিধি, ধর্মমন্ত্রীর পিএস ড. আবুল কালাম আজাদ, এপিএস শফিকুল ইসলাম শফিক, ধর্মমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আবু সাঈদ, উপ-সচিব শরাফত জামান, আটাবের মহাসচিব আসলাম খান উপস্থিত ছিলেন। সভায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সকল হজযাত্রী হজে যেতে পারবে কি না তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভায় সাউদিয়া এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষকে অতিরিক্ত হজযাত্রী পরিবহনের অনুরোধ জানানো হয়। সাউদিয়া এয়ারলাইন্স প্রতিনিধি জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে আজকালের মধ্যে বিষয়টি জানানো হবে। বিমানমন্ত্রী মেনন বলেন, যাদের হজভিসা সম্পন্ন হয়েছে তারা সবাই হজে যেতে পারবেন। সভায় জানানো হয়, প্রায় ১ হাজার হজযাত্রীর হজ ভিসার জন্য আবেদন জানানো হয়নি।
এদিকে, হজ ক্যাম্পের পরিচালক সাইফুল ইসলাম গতকাল এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, গতকাল পর্যন্ত ১ লাখ ২৬ হাজার ১শ’ ৮৬ জনের হজ ভিসার লজমেন্ট কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রায় এক হাজার হজ ভিসার জন্য আবেদন করা হয়নি। গতকাল পর্যন্ত সউদী দূতাবাস থেকে হজভিসা ইস্যু হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৯শ’ ৫২ জনের। এসময়ে হাবের মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিম, হাবের ক্যাশিয়ার মাওলানা ফজলুর রহমান ও হাব চট্রগ্রাম জোনের মহাসচিব পেয়ারু উপস্থিত ছিলেন।
হাবের মহাসচিব তসলিম হজ ক্যাম্পে সাংবাদিকদের বলেন, সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার স্বার্থেই ১৫% হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্ট দেয়া হয়েছে। প্রতি বছরই কিছু হজযাত্রী হজে যান না। সরকারী ব্যবস্থাপনারও ২০জন হজযাত্রী হজ প্যাকেজের টাকা দিয়ে এবার হজে যাবেন না। কোনো হজ এজেন্সি হজ নিয়ে প্রতারণা করলে তারা রেহাই পাবে না। সকল হজযাত্রী এবার হজে যেতে পারবে বলেও হাব মহাসচিব আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ধর্ম মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি’র সভাপতি ও সউদী-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের চেয়ারম্যান বজলুল হক হারুন এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনিদের্শনায় সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। ঢাকাস্থ সউদী দূতাবাসের রাষ্ট্রদূতের ব্যক্তিগত তদারকিতে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও দূতাবাস কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশী হজযাত্রীদের দ্রুত হজ ভিসা সরবরাহ করেছে। বজলুল হক হারুন এমপি বলেন, হজযাত্রী পরিবহন নিয়ে হতাশার কারণ নেই। আগামী ২৭ আগষ্ট ও ২৮ আগষ্ট বিমানের ফ্লাইটের মাধ্যমে আরো হজযাত্রী পরিবহনের জন্য শ্লট বরাদ্দের চেষ্টা চলছে। যারা ভিসা পেয়েছেন তারা সকলেই হজে যেতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, যদি কেউ কোনো হজযাত্রীর সাথে প্রতারণার আশ্রয় নেয় তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে, হজ ক্যাম্পের ডরমিটরিতে মেছফালা ট্রাভেলসের (১০১৮) এর পাবনার ৭জন হজযাত্রীর ভিসা ও টিকিট না হওয়ায় তারা গত ১৮ আগষ্ট থেকে চরম হতাশায় ভুগছেন। আজ ফ্লাইট হবে কাল ফ্লাইট হবে বলে গ্রুপ লিডার আবু হানিফ শুধু শান্তনা দিয়ে বেড়াচ্ছে। হজ ক্যাম্পের ডরমিটরিতে গিলে পাবনার হজযাত্রী আব্দুল সালাম প্রমানিক , মো: হাসান আলী, নাটোরের সানা উল্লাহ মন্ডল ইনকিলাবকে বলেন, ব্রাইট হজ গ্রুপ, ঢাকা হজ কাফেলা এন্ড ট্রাভেলস ও মেছফালা ট্রাভেলসের একই মালিক। তারা কবে ভিসা হবে টিকিট কবে হবে তা’ কিছুই বলতে পারছে না। গত ১৯ আগষ্ট এসব হজযাত্রীকে হজে পাঠানোর কথা ছিল। গ্রুপ লিডার আবু হানিফ রাতে ইনকিলাবকে জানান, এখনো চারজন হজযাত্রীর ভিসা হয়নি । এ জন্য বাকিদেরকে হজে পাঠাতে পারছি না। হজ ক্যাম্পের ডরমিটরিতে অবস্থানকৃত নোয়াখালির হজযাত্রী মনির আহমেদ চৌধুরী, জয়নাল আবেদন, হাজী আব্দুর রহিম জানান, আব্দুল আজিজ ট্রাভেলস (১২৯৬) ও ইয়াহহিয়াহ ট্রাভেলসে (১২৮৮)-এর ২জন মহিলাসহ ৭জন হজযাত্রী চার দিন ধরে হজ ক্যাম্পে অবস্থান করছে। পুলিশ ভেরিবিকেশনের জটিলতার কারণে তাদের হজে যেতে বিলম্ব হচ্ছে। কলম্বিয়া ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনালের সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের ৯জন মহিলাসহ ৪২ হজযাত্রী হজ ক্যাম্পে বসে রয়েছেন। হজযাত্রী আব্দুল হান্নান, আব্দুল বারী, সিরাজুল ইসলাম ও মুকিত খান জানান, তাদের ভিসাযুক্ত পাসপোর্ট ও টিকিট এখনো পায়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হজ

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ