Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভিনদেশী হয়েও তাদের হাতে ওমানের পতাকা

প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামীম চৌধুরী, ধর্মশালা (ভারত) থেকে : গল্পটা খুব বেশি দিনের নয়। ক্রিকেট চর্চা শুরু তাদের আশি দশক থেকে। এক সময়ে সমুদ্রগামী জাহাজ ভিড়িয়ে ব্রিটিশ নাবিকরা ওমানে যাত্রাবিরতিতে খেলতো ক্রিকেট, সত্তর দশক পর্যন্ত ওমানের কৌতুহলীরা এমন দৃশ্য দেখে নিজেদের কাছে করতো প্রশ্ন! সেই ওমানেই এখন বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে ক্রিকেট। ২০০০ সালে আইসিসি’র অ্যাফিলিটেড সদস্যপদ পেয়ে মধ্যপ্রাচ্যে অন্য এক ক্রিকেট শক্তি এখন তারা। ২০১৪ সালে আইসিসি’র সহযোগী সদস্যপদ পেয়ে ২০১৫ সালে টি-২০ আন্তর্জাতিক ম্যাচে অভিষেক। সে বছরেই টি-২০ বিশ্বকাপে বাছাইপর্বের বাধা টপকে মেগা আসরে পেয়েছে খেলার টিকিট! শত শত বর্ষের ক্রিকেট ঐতিহ্য, ক্রিকেট চর্চায় ও আইরিশরা ধাক্কা খেয়েছে ওমানের কাছে। এখন তারাই স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশকে হারিয়ে আইসিসি টি-২০ বিশ্বকাপে সুপার টেনের।
ওমান ক্রিকেটের এই বিস্ময়কর গল্পের রচয়িতা কিন্তু ওমানের কেউ নন। জামিল জাইদি নামের এক পাকিস্তানী নাগরিকের হাত ধরেই শুরু ওমানের ক্রিকেটের গল্প। পাকিস্তানে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলতেন তিনি করাচীর হয়ে। রমিজ রাজার সঙ্গে কম্বাইন্ড পাকিস্তান ইউনিভার্সিটি টীমের হয়ে ওপেনও করেছেন জামিল জাইদি। ভাগ্যান্বেষণে ১৯৮০ সালে পাকিস্তান থেকে ওমানে গিয়ে ন্যাশনাল ব্যাংক অব ওমানে চাকরি জুটিয়েছেন। চাকরির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি। নিজে নেমে পড়েছেন ব্যাট বল হাতে। অভিবাসী ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকানদের জড়ো করে ওমানে অচেনা ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করার দায়িত্বটাও নিয়েছেন এই পাকিস্তানী। ১৯৮০ থেকে ২০০৭, এই ২৬ বছরে ওমান ন্যাশনাল ব্যাংকের হয়ে সেঞ্চুরির রেকর্ডটা আজো কেউ ভাঙতে পারেনি। সেঞ্চুরির সংখ্যাটাও ২৬। নিজের গল্পটা শুনিয়েছেন গতকালÑ ‘আমি সেখানে যাওয়ার পরই ক্রিকেট চর্চাটা সেখানে শুরু। সাংগঠনিক দায়িত্বটা আমাকেই নিতে হয়েছে। ওখানে ক্রিকেট খেলে আমি যতো সেঞ্চুরি করেছি, সেই রেকর্ড এখনো কেউ করতে পারেনি।’ ওমানে ক্রিকেট প্রবর্তনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন বলেই দীর্ঘ সময় ধরে দলটির সঙ্গে আছেন জামিল জাইদি ম্যানেজার পদে। টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ছাড়াও ৬ বছর প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
হাঁটি হাঁটি পায়ে প্রিমিয়ার ডিভিশন এবং ডিভিশন ‘এ’Ñ এই দু’টি ধাপে ওমানের ক্রিকেট এখনো ছুটির দিনের খেলাতেই আছে আটকে। প্রিমিয়ার ডিভিশনে ৮টি দল, প্রথম বিভাগে ১২টি। প্রিমিয়ার ডিভিশনে খেলা হয় ৫০ ওভারের, প্রথম বিভাগে সেখানে ৩০ ওভারের ম্যাচ। যারা খেলছেন, তাদের কারো প্রধান জীবিকা ক্রিকেট নয়। চাকরিটাই প্রধান অবলম্বন, ক্রিকেটটা সেখানে এখনো পেশাদারিত্ব পায়নি। তবে জাতীয় দলে খেলছেন যারা, তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা আছে। ২৫ জন ক্রিকেটারকে কেন্দ্রিয় চুক্তির আওতায় এনে তাদেরকে বছরজুড়ে ২ ক্যাটাগরীতে নির্দিষ্ট অংকের সম্মানী দেয়া হচ্ছে। এটাই ওমান ক্রিকেট বোর্ডের তরফ থেকে বাড়তি পাওনা।
২ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১২টি টি-২০ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছে ওমান। যে ১২টি ম্যাচের মধ্যে এশিয়া কাপে আফগানিস্তান এবং টি-২০ বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের মতো প্রতিপক্ষকে হারিয়েছে দলটি। আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে ধর্মশালার রাতটা অন্যরকম উদযাপন করেছে ওমান। তবে যাদের পারফরমেন্সে টি-২০ বিশ্বকাপে এমন সাফল্য, সেই দলটির ১৫ ক্রিকেটারের মধ্যে ওমানের ক্রিকেটার মাত্র ১ জনÑ সুফিয়ান মেহমুদ। দলের অন্য ১৪ ক্রিকেটারের মধ্যে ৯ জন পাকিস্তানী, ৫ জন ভারতীয়! অভিবাসীদের নিয়ে গড়া দলটির কোচিং স্টাফও বিদেশী। শ্রীলংকার সাবেক অধিনায়ক দিলিপ মেন্ডিজ প্রধান কোচ, শ্রীলংকার সাবেক ফার্স্ট বোলার রুমেশ রতœায়েক পেস বোলিং কোচ, ভারতের সুনীল যোশী সেখানে স্পিন বোলিং কোচ।
ওমানের হয়ে জাতীয় দলে খেলার মতো একজন বাংলাদেশীকেও নাকি পেয়েছিলেন জামিল জাইদিÑ ‘মুয়ীদ নামে এক বাংলাদেশী ওমানে ক্রিকেট খেলতো। দারুণ ক্রিকেটার। উচ্চশিক্ষায় এখন সে ইংল্যান্ডে আছে।’ ওমানের ক্রিকেটে স্থানীয়দের আগ্রহ বাড়ছে, ইতোমধ্যে ৪’শর মতো ওমানীজ ক্রিকেটে লিখিয়েছে নামÑ ক্রিকেটে ওমানের ভবিষ্যৎ তাদেরকে ঘিরেই হচ্ছে আবর্তিত।
ওমানের কেউ না হয়েও খেলছেন পাকিস্তান,ভারতের একদল ক্রিকেটার ওমানের হয়ে। ম্যাচের আগে ওমানের জাতীয় সঙ্গীত বাজছে তাদেরকে সামনে রেখেই! অথচ, এখনো এই অভিবাসী ১৪ ক্রিকেটারের কেউ ওমানের নাগরিকত্ব পাবার স্বপ্ন দেখছেন না। তাদেরকে এমন সুবিধা আদৌ ওমান দিবে, এমন নিশ্চয়তাও পাচ্ছেন না জামিল জাইদি। তারপরও ওমানের জাতীয় সঙ্গীত নাকি বুকে ধারন করেন তারা, এমনটাই জানিয়েছেন ম্যানেজারÑ ‘মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোর মতো ওমান নয়। ভিনদেশীদের সম্মান করতে জানে তারা। তাই ওমানের জাতীয় পতাকার জন্য জতীয় সঙ্গীতের জন্য খেলে আমরা গর্বিত। দীর্ঘদিন সেখানে আছি বলেই ওমানের জাতীয় সঙ্গীতের অর্ধেকটা গাইতে পারি আমি।’ আয়ারল্যান্ডকে হারানোর সুখবরটা পেয়ে ওমানের পত্র-পত্রিকার শিরোনামে সেই সাফল্য। টি-২০ বিশ্বকাপে সুপার টেন এ উঠলে নাকি পুরস্কারে পকেট ভরে যাবে, এমন আশ্বাসই পেয়েছেন জামিল জাইদি। এমন ইতিহাস রচনা করতে হলে তো বাংলাদেশকে হারাতে হবে।



 

Show all comments
  • Sumon Khan ১৩ মার্চ, ২০১৬, ১০:০৪ এএম says : 0
    নিউজ টা ভাল লাগল
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভিনদেশী হয়েও তাদের হাতে ওমানের পতাকা
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ