পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গত দেড় মাসে বৈধ পথেই এসেছে লক্ষাধিক পশু : চাঁপাইনবাবগঞ্জের ওহেদপুর ও রঘুনাথপুর বিটখাটাল দিয়ে প্রতিদিন ২-৩ হাজার গরু আসছে : অবৈধ’র সংখ্যা আরো বেশি
রেজাউল করিম রাজু : গ্রামীণ জনপদে শহুরে বাবুদের আনাগোনা বাড়ছে। কোরবানির ঈদের সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে কোরবানিদাতারাও তৎপর হয়ে উঠেছেন। ফুসরত পেলেই ছুটছেন ধারেকাছের গ্রামে। কারণ কোরবানির পশু কেনা। পছন্দ আর দরদাম মিললে অগ্রীম টাকার সাথে ঈদের দু’দিন আগ পর্যন্ত গরুর খাবারের টাকাও দিয়ে দিচ্ছেন। ঘুরে ফিরছে দালালরাও। ক’দিন ধরে নগরীর উপকণ্ঠের গ্রামগুলো ঘুরে দেখা যায় এরকম দৃশ্য। প্রায় বাড়ির আঙ্গিনায় বাঁধা রয়েছে গরু ছাগল। গলায় কিংবা শিংয়ের সাথে লাল ফিতে জুড়ে দিয়ে জানান দেয়া হচ্ছে, এগুলো কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। বাড়ির বউ-ঝি ছেলেমেয়েরা এগুলোর যতœআত্তি করছে। এমন দৃশ্য বছর চারেক আগেও ছিল না। ভারত বাংলাদেশে গরু আসার উপর কড়াকড়ি আরোপ করায় ধাক্কা খায় বাংলাদেশের গোশতের বাজার। আবার কোরবানির বাজারে বিরুপ প্রভাব ফেলে। কারণ গরু মহিষের পুরো বাজার ছিল ভারতীয় গরু মহিষের দখলে। এর বিরুপ প্রভাবে দেশের গরু ছাগল লালনপালন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। সোনাদিয়ে আনা ভারতীয় গরু ছাগলে ভরে যায় হাটবাজার। বাংলাদেশকে সাইজ করার জন্য হঠাৎ করে গরু মহিষ আসার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করে। এতে কিছুটা ধাক্কা লাগলেও পরবর্তীতে তা সাপেবর হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রয়োজনের তাগিদেই নিজেরাই ফের ঘরে ঘরে গরু ছাগল লালন পালন শুরু করেছে। গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অসংখ্য খামার। বাড়িতে দু’চারটা গরু ছাগল বড় হচ্ছে ঈদকে ঘিরে। দুটো বাড়তি টাকার মুখও দেখছে বউ-ঝিরা। তাদের যতেœ বেড়ে উঠছে ঘরে ঘরে এসব গরু ছাগল। আর প্রয়োজন মেটাতে ভ‚মিকা রাখছে গোশতের বাজারে। ভারতীয় বোল্ডার জাতের গরুর চেয়ে অনেক ভালো। সুস্বাদু দেশীয় গরুর গোশত। ক্রেতাদের আগ্রহ তাই বেশি। গোশতের বাজারেও দামের কিছুটা ফারাক। কোরবানির সময় গ্রামীণ জনপদে বেড়ে ওঠা গরু ছাগল চাহিদা মেটাচ্ছে। এসব গরু ছাগল যেমন নিজ বাড়িতে খামারে বসে বিক্রি করছে। আবার ভালো দাম পাওয়ার আশায় অনেকে গরুহাটে নিয়ে যাচ্ছে। হাটে প্রতিযোগিতায় দেশি গরুর কাছে টিকতে পারছে না ভারতীয় বোল্ডার গরু। ভারতীয় গরু চলে যাচ্ছে রাজধানীর ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রামে। তা ছাড়া দেশীয় গরু বিভিন্ন আকারে হওয়ায় সাধ আর সাধ্যের মধ্যে সমন্বয় ঘটাচ্ছে। নগরীর উপকণ্ঠে ওমরপুরে স্বামী-স্ত্রী মিলে ছোট খামার গড়ে তুলেছেন মনজু কবীর দম্পতি। শখেরবসে স্ত্রী শুরু করেছিলেন পাঁচটি গরু নিয়ে খামার। বছর ঘুরতেই লাভ দেখে এবার স্বামীও তার কাপড়ের ব্যবসা বন্ধ করে দাঁড়িয়েছেন স্ত্রীর পাশে। দু’জনে চালাচ্ছেন খামার। কোরবানির সময় বিক্রির জন্য গরু তৈরি করার পাশাপাশি পালন করছেন গাভী। দুধ ও বাচ্চা দুটোই মিলছে। গরুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কুড়িতে। এবার অন্তত ১৫টা বিক্রি করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। একেকটার দাম আকারভেদে সোয়া লাখ থেকে ৪০-৫০ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছেন। লোকজন আসছে, দেখছে। তাদের আশঙ্কা, ভারতীয় গরুর যদি ঢল নামে তাহলে তারা কাক্সিক্ষত দাম পাবেন না। শুধু কবির নন, এমন আশঙ্কা বাড়িতে বাড়িতে লালন পালনকারীদের। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সেই পদ্মার পানির মতো সারা বছর পানি না দিয়ে শুকিয়ে মারা, আবার বন্যার চাপ সামলাতে সব গেট খুলে দিয়ে ডুবিয়ে মারা। গরুর ক্ষেত্রেও তাই। সারা বছর গরু মহিষ আনতে কড়াকড়ি। এমনকি রাখালকে সীমান্তে গুলি করে হত্যা করলেও কোরবানির সময় বানের পানির মতো ঠেলে দিচ্ছে গরু। প্রতিদিন হাজার গরু আসছে, আর এতে সর্বনাশ হচ্ছে এ দেশে গড়ে ওঠা ছোট ছোট খামারগুলোর। এক হিসাবে দেখা যায়, শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জের ওহেদপুর ও রঘুনাথপুর বিটখাটাল দিয়ে প্রতিদিন দুই তিন হাজার গরু আসছে বৈধপথে। আর অবৈধ’র সংখ্যা আরো বেশি। গত বছর কোরবানির ঈদের সময় জুলাই-আগস্ট মাসে এ সীমান্ত দিয়ে ১৩ হাজার গরু এসেছিল। আর এ বছর শুধু জুলাই ও মধ্য আগস্ট পর্যন্ত এসেছে লক্ষাধিক গরু। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত গরুর সংখ্যা আরো বাড়বে।
এদিকে রাজশাহী অঞ্চলের খামার ও বাড়ির গরু ছাগলেই কোরবানির চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি থেকে যাবে এমন কথা বলছেন প্রাণীসম্পদ কর্তকর্তারা। রাজশাহীর অতিরিক্ত প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা-৬ জুলফিকার আখতার হোসেন বলেন, রাজশাহীতে কোরবানির টার্গেট প্রায় তিন লাখ ১০ হাজার পশু। আর ছোট-বড় সব মিলে ১৭ হাজার খামারে পশু রয়েছে তিন লাখ ৫৪ হাজার ৫০০। যা চাহিদার তুলনায় ৪৩ হাজার পশু বেশি রয়েছে। নওগা প্রাণীসম্পদ দফতর সূত্র জানায়, তাদের ১৫ হাজার খামারে তিন লাখ পশু রয়েছে। আর চাহিদা রয়েছে এক লাখ ১০ হাজার। চাপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোর জেলায় রয়েছে চাহিদার চেয়ে বেশি সংখ্যক পশু। চাহিদার চেয়ে বেশি পশু দেশে থাকার পরও প্রতিদিন হাজার হাজার ভারতীয় গরু মহিষের আগমন চোখ রাঙাচ্ছে স্থানীয় লালন পালনকারীদের। ভারতীয় গরুর কারণে স্থানীয়রা মার খেতে পারেন। দাম পড়ে গেলে হয়তো কোরবানিদাতারা কিছুটা খুশি হবেন। কিন্তু সর্বনাশ হয়ে যাবে খামার ও বাড়িতে লালন পালনকারীদের। লোকসানে পড়লে পরবর্তীতে উৎসাহ হারাবে। এবারও কোরবানির বাজারে রাজশাহীতে নজর কাড়ছে বিদেশি জাতের ব্রাহামা গরু। বছর তিনেক আগে গরুর গোশতের যোগান বাড়ানোর জন্য সরকার বিফক্যাটেল ডেভলপমেন্ট প্রকল্প নেয়। এর আওতায় রাজশাহী, নাটোর ও নওগাঁ জেলার আট উপজেলায় শুরু হয় ব্রাহামা জাতের গরু পালন। বিদেশ থেকে বীজ এনে শুরু হয় কৃত্রিম প্রজনন। ইতোমধ্যে দেড় হাজার কৃত্রিম প্রজনন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রান্তিক চাষির গোয়ালে এসেছে ২৫০-এর বেশি এঁড়ে এবং দু’শতাধিক বকনাসহ সাড়ে চার শতাধিক বেশি বাছুর। এগুলো বড় হচ্ছে। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, দু’বছর বয়েসে ব্রাহামা জাতের গরু ৮০০ কেজি থেকে হাজার কেজি ওজন হয়। এক টনের মতো। যেখানে দেশি গরু ১০ বছরে সর্বোচ্চ ওজন হয় ৪০০ কেজির মতো। রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার খামারি ইদ্রিস আলীর গোয়ালে ১৬ মাস বয়েসী ব্রাহামা। সাড়ে ৩০০ কেজি। ব্রাহামা পালনকারীরা বলছেন, এগুলোর জন্য বেশি খাবার লাগে। যদিও দেশীয় গরুর খাবারও খায়। অনেকেই দু’বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই এসব গরু বিক্রি করে দিয়েছেন। যা ঠিক হয়নি। প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তার মতে, এর গোশত খুব সুস্বাদু। চর্বির পরিমাণ কম। তাছাড়া কোনোরকম হরমোন প্রয়োগ ছাড়াই তাড়াতাড়ি বড় ও মোটাতাজা হয়। প্রাণীসম্পদ বিভাগের কর্মীরা অচিরেই ব্রাহামার বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর সম্ভাবনা দেখছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।