পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আধুনিক যুগে গোটা উপমহাদেশের রাজনীতি গরু নিয়ে আবর্তিত হবে তা কেউ চিন্তা করেছেন বলে মনে হয় না। কিন্তু বাস্তবে তাই হচ্ছে। এমন বিদ্বেষ সংকীর্ণতা ও সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি ভারতকে কোথায় নিয়ে যাবে তা হয়ত হিন্দুত্ববাদি নেতারা আন্দাজ করতে পারছেন না। তবে ভারতের সাধারণ মানুষ ভেবে শঙ্কিত যে, বহুত্ববাদি ঐক্যবদ্ধ ভারত কি তার অন্ধকার ভবিষ্যতের খুব কাছাকাছি চলে যাচ্ছে? বিজেপি শাসিত ভারতে গরুকে কেন্দ্র করে যত আইন নিষেধাজ্ঞা ও ত্রাস সৃষ্টিকারী তৎপরতা তা বিশ্ববাসীর চোখে এক ধরনের পশ্চাৎপদ রাজনীতির নিদর্শন বলে বিবেচিত। একটি সেক্যুলার রাষ্ট্রে নাগরিকদের খাদ্য বিষয়ে এমন বিধি-নিষেধ ও জবরদস্তিমূলক সামাজিক চাপ স্বাভাবিক নয়। অর্থনীতিতে নোবেল পাওয়া ডক্টর অমর্ত্য সেন, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া লেখক অরুন্ধতি রায়, পশ্চিম বঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিসহ ভারতের অসংখ্য বিশিষ্টজন গরু নিয়ে বাড়াবাড়ির প্রতিবাদ করেছেন। সর্বশেষ ভারতের সদ্য সাবেক উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারী তার বিদায়ী ভাষণে বলেছেন, সরকারের অসতর্কতায় সমাজে বেড়ে ওঠা সাম্প্রদায়িক অস্থিরতায় ভারতের মুসলমানরা শঙ্কিত। এর আগে সদ্য বিদায়ী রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি তার শেষ ভাষণেও বলে গিয়েছেন, ভারতের বহুত্ববাদিতা হুমকির মুখে।
হিন্দু মৌলবাদ গরুকে যে দৃষ্টিতে দেখে, আমাদের জানা নেই সাধারণ সনাতন ধর্মীয় বিধান গরুকে সে দৃষ্টিতে দেখে কিনা? এটা হিন্দু ধর্মীয় পন্ডিতরা বলতে পারবেন। যতদূর জানি, হিন্দু ধর্মীয় বিধানে গরু খাওয়া নিষিদ্ধ নয়। বরং শ্রাদ্ধে ব্রাহ্মণদের নিরামিষ ও ডালের বদলে আমিষ খাওয়ালে অধিক পূন্যের কথা শাস্ত্রেই লেখা আছে, বিশেষ করে গোমাংসের কথা এভাবে বলা আছে যে, এতে আত্মা সবচেয়ে বেশি দূরত্বে চলে যায়। গরু খাওয়া পূর্বকার যুগে কোন শাসক কৃষি ও গবাদি পশু বিষয়ে সংকট মোকাবেলার জন্য নিষিদ্ধ করেন। যা একটি সাময়িক বিষয়। এটি ধর্মীয় বিধান নয়। তবুও এ নিয়ে অন্যদের বলার কিছু নেই। তবে আধুনিক সময়ে মানুষ যুক্তি চায়। অনেকে বলেন, গরু যদি মানুষের আমিষের চাহিদা না মেটায় বা খাদ্য না হয় তাহলে গরু পালনের সার্থকতা কী? গরু দুধ দেয়, বাচ্চা দেয়, কঠিন শ্রম দিয়ে কৃষি কাজে সাহায্য করে, গাড়ি টানে, বোঝা বয়, এর শিং, হাড়, চামড়া থেকে পয়সা আসে। শুধু তার গোশত থেকে খাদ্য ও আমিষ সংগ্রহ কোন ধর্মে নিষিদ্ধ হতেও পারে কিন্তু তাই বলে অপরাপর ধর্মাবলম্বী মানুষকে তা থেকে বঞ্চিত রাখা এবং এর জন্য হত্যা, আহত ও ভীতসন্ত্রস্ত করা কোন ধরনের নীতি? সম্প্রতি ভারতীয় গবেষকরা মত দিয়েছেন যে, গরু জবাই নিষিদ্ধ হওয়ায় ভারতের কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কোটি কোটি গরু অকেজো হওয়ার পর তা মানুষের জন্য দুর্বহ বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ভারতে খাদ্য না পেয়ে অসংখ্য গরু সরকারি গোশালায় নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করছে। মানুষের খাদ্যের জন্য সৃষ্ট গরু যে হারে বাড়ে যদি এসব খাওয়া না হয় তাহলে একসময় গরুর সংখ্যা মানুষকে ছাড়িয়ে যাবে। আর তা মানুষের জন্য এক ভয়াবহ বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। আগামী দিনে এই গরুই ভারতের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে কঠিন সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে। ধর্মীয় আবেগ থেকে যারা গরুকে মা বলে স্বীকার করেন, দেবতা বলে পূজা করেন, গোরক্ষার জন্য মানুষ হত্যায় দ্বিধা করেন না তারা কোন যুক্তিতে গরু বিদেশে পাচার করেন, গরুর গোশত রপ্তানি করে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন বা গোমাতার চামড়া দিয়ে জুতো তৈরি করেন? এসব স্থ‚ল কথা যে কেউ বলতে পারেন বটে তবে তাদের এ কথা বোঝা উচিত যে, বিশ্বাস ও আবেগ কোন যুক্তি মানে না। কিন্তু আধুনিক জগতে নিজের পছন্দ অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার নিয়ম চলে না। অন্তত গণতন্ত্র ও সেক্যুলারিজম তা বলে না।
বাংলাদেশে যেমন ৯৩% মুসলমান হওয়া সত্তে¡ও তারা মূর্তিপূজায় বাধা দেন না। যদিও মূর্তিপূজা ইসলাম ধর্মে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মুসলমানরা শূকরের মাংস ও মদ খেতে অন্য ধর্মের লোকেদের বাধা দেন না। যদিও এসব তাদের জন্য সম্পূর্ণ হারাম। তাহলে ভারতে যেসব হিন্দু গরু খান না কিংবা মাংস খাওয়ার প্রয়োজনে অন্যান্য প্রাণীর ব্যবহারকেও হত্যা বলে মনে করেন, এমনটি তারা করতেই পারেন। কিন্তু অন্য ধর্মের লোকেদের ধর্মীয় রীতি কোরবানি বা গোমাংস ভক্ষণে তারা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না। ধর্মীয় প্রয়োজনে এ মানুষগুলোই আবার পাঁঠা বলি দিয়ে থাকেন। তাহলে মুসলমানদের ধর্মীয় নিয়মের ক্ষেত্রে কেন তারা উদার ও অসাম্প্রদায়িক হতে পারেন না? এ প্রশ্ন মানুষের মনে ওঠতেই পারে।
যদি হিন্দু ধর্মেই গরু নিষিদ্ধ হয়ে থাকে তাহলে সব হিন্দু মিলে গরু নিধন রোখার যুক্তি থাকে। তা কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠির দ্বারা হোক আর সরকার কিংবা রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে হোক। এখনো বিশ্বের বুকে ভারত দ্বিতীয় বৃহত্তম গোমাংস রপ্তানিকারক দেশ। এখানে অনেকে বলতে চান, গোমাংস মানে গরুর গোশত নয়, মহিষের। ইংরেজিতে ‘বিফ’ বলতে নাকি তাই বোঝায়। যারা হিন্দু নন। মুসলিম, খ্রিস্টান, অন্য কোন ধর্মাবলম্বী বা নাস্তিক, তাদের জন্য কি গরু খাওয়া নিষিদ্ধ? একটি আধুনিক রাষ্ট্রে নিজের পছন্দ মতো খাদ্য গ্রহণের সুযোগ কি নাগরিকদের থাকা উচিত নয়? পৃথিবীর সব দেশে সব ধর্মের লোকেদের জন্য যে সুযোগ সুবিধা রয়েছে ভারতেও তা থাকা ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে গরু নিয়ে বাড়াবাড়িতে সে স্বাভাবিক নিয়ম আর থাকেনি। এ পর্যন্ত গরুকে কেন্দ্র করে বহু মানুষ হতাহত হয়েছেন। বাড়ির ফ্রিজে গরুর গোশত আছে এমন গুজব ছড়িয়ে ইউপিতে মুহাম্মদ আখলাক নামের এক মধ্যবয়সী মুসলমানকে মৌলবাদি হিন্দুরা হত্যা করে। পরে তদন্তে দেখা যায়, ফ্রিজে ছিল মহিষের গোশত। গরুর গোশত বহন করছেন এ গুজবে রেলস্টেশনে গণপিটুনি ও অসম্মানের শিকার হতে হয় দুই নারীকে। গরুর খামার থেকে গরু নিয়ে যাওয়ার সময় হতাহত হয়েছেন অনেকে। ট্রাকে করে গরু নিয়ে যাওয়ার সময় মারধরের শিকার হয়েছেন, কৃষি কাজে ব্যবহারের জন্য গরু কিনে নিয়ে যাওয়ার সময় লাঞ্ছিত হয়েছেন, গৃহপালিত গরুকে মাঠ থেকে ঘরে ফিরিয়ে নেওয়ার সময় দাঙ্গাবাজদের হামলার শিকার হয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। দিল্লি থেকে তারাবি শেষে ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরার পথে ট্রেনে কিছু লোকের আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন এক কিশোর হাফেজে কোরআন। আক্রমণকারীরা কেবল এ কারণেই তাকে ট্রেনের যাত্রীদের সামনেই হত্যা করে যে তিনি একজন মুসলমান যাদের জন্য গরু খাওয়া হালাল। এই যখন অবস্থা তখন নতুন করে আইন করার দাবি ওঠেছে যে, যেন গরুর গোশত আছে কিনা এ সন্দেহে মুসলমানদের ঘরে ঢুকে তল্লাশি চালানো যায়। উগ্র একটি গোষ্ঠি চায়, এ আইনের ফলে যখন তখন যেন মুসলমানদের রান্না ঘর ও ফ্রিজ চেক করে দেখার সুযোগ তারা পেয়ে যায়। এ আইন পাস হলে ভারতীয় মুসলমানদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি, বাড়ি ঘর, সহায় সম্পদ ও মা বোনের মান সম্ভ্রমের নিরাপত্তা বলতে কিছুই থাকবে না। প্রায় ৩০ কোটি ভারতীয় মুসলমানের খাদ্য ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে যে অস্বস্তি সেখানে সৃষ্টি হয়েছে তা ভারতীয় সমাজের জন্য কোন সুফল বয়ে আনবে না। যার প্রেক্ষিতে দেওবন্দের বিশিষ্ট আলেম আল্লামা সাইয়্যেদ আরশাদ মাদানী মোদী সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে বহু আগেই বলেছেন, যদি সাম্প্রদায়িক উদারতা ও বহুত্ববাদ ধরে রাখা না যায় তাহলে ভারত আবার বিভক্ত হবে। এমনিতেও একটি মার্কিন গবেষণা সূত্র ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে, ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের সংহতি ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে।
বাংলাদেশে ৯৩% মুসলমান। তারা তাদের ধর্মীয় বিধান মতো গরু কোরবানি দেন। ভারত থেকে গরু আমদানির সুবিধা না থাকায় গত কয়েক বছরে দেশের চাহিদা পূরণ স্থানীয় উৎস থেকেই হচ্ছে। বিশেষ করে কোরবানির ঈদে লাখ লাখ গরুর চাহিদা দেশীয় কৃষক, খামারী ও ব্যবসায়ীরা পূরণ করছেন। সারা বছর আমিষের চাহিদা পূরণ ও কোরবানির পশু সরবরাহে বিদেশ-নির্ভরতা কাটিয়ে ওঠে দেশ এখন স্বয়ং সম্পূর্ণ। সীমান্তে ভারতীয় গরুর চোরাচালান বাংলাদেশীদের জীবনহানির একটি বড় কারণ। বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশীদের অধিকাংশই গরু চোরাচালানের অপবাদ পেয়ে থাকে। বর্তমানে দেখা গেছে, নির্বিচারে গুলি ও ধরে নিয়ে যাওয়ার ভয়ে মানুষ আর সীমান্ত এলাকায় বিচরণ করার সাহস পান না। জীবিকার প্রয়োজনে সীমান্ত এলাকায় বহু মানুষ কোরবানির গরু পালন, মোটাতাজাকরণ ইত্যাদি পেশায় নেমেছেন। আসন্ন কোরবানিতে তারাসহ দেশের সকল গরু ব্যবসায়ী ও কৃষক যে লাভের আশা করছেন ভারতীয় গরুর হঠাৎ আমদানি যেন সে আশাকে নস্যাৎ না করে দেয়। যারা গরু জবাই করতে দেন না তারা কেন বাংলাদেশে তা জবাই বা কোরবানির জন্য রপ্তানি করতে চাইবেন, এ প্রশ্ন সকলের।
বাংলাদেশে কিছু মানুষ নিজেরা ইসলাম ধর্মের অনুসারী হওয়া সত্তে¡ও মুসলমানদের গরু খাওয়ার অধিকার সম্পর্কে সুবিচার করতে পারছেন না। ঢাকারই এক পত্রিকায় লেখা হয়েছে, গরু সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণী আর যারা গরু খায় তারা সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রাণী। কত বড় ধৃষ্টতা। ৯৩% মুসলমান গরু খায়। তাদের জন্য গরু খাওয়া হালাল। গরু কোরবানি দেওয়া বিধেয়। এ সমাজে বসে কেউ যখন বলে, যারা গরু খায় তারা সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রাণী তখন সবাইকে ভাবতে হবে আমরা কোথায় আছি। ভারতে বসে হিন্দুদের কেউ নিকৃষ্ট প্রাণী বলে বা লিখে কি পার পাবে? এদেশেও কোন প্রভাবশালী নেতা মন্ত্রী বা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাউকে এমন গালি দিলে আইন কি তাকে ছেড়ে দিবে? প্রথম আলো পত্রিকার কিশোর ম্যাগাজিন একটি কার্টুনসহ এ বার্তাটি দিয়ে কী বলতে চায়? কিছু বুদ্ধিজীবী নামের মানুষ তো গরু জবাইকে এমনভাবে চিত্রিত করেন যাতে মনে হয় পৃথিবীর সকল নবী রাসূল ও ধর্মীয় ব্যক্তিরা যুগে যুগে পশু কোরবানি করে ভুল করেছেন। তারা যেন বলতে চান যে, সকল নবী রাসূল ধর্মগুরু ও তাদের অনুসারী ইহুদী খ্রিষ্টান হিন্দু মুসলমান শিখ ইত্যাদি জাতি ক্ষেত্র বিশেষে সবাই অমানবিক। কেননা তাদের সবাই পশু বলি কিংবা কোরবানি দেওয়ার রীতি পালন করে থাকেন। গল্প কবিতা নাটক ইত্যাদিতে কিছু লোক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কোরবানিকে খাটো করে দেখায়। এটাও এক ধরনের মৌলবাদি কৌশল। কিছুদিন ধরে সরকারের ভেতর লুকিয়ে থাকা কিছু ধর্মবিদ্বেষী নানা ছলে কোরবানিকে হেয় নিরুৎসাহিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রয়াস পাচ্ছে। কারণে অকারণে কোরবানিকে খাটো করছে, গরুর হাট যেন তারা দু’চোখে দেখতে পারছে না, কে বা কারা গরু জবাই করতে পারবে আর কারা পারবে না তা ঠিক করে দিচ্ছে, নাগরিকদের সুবিধাজনক স্থানে গরু জবাই নিষিদ্ধ করছে, অযৌক্তিকভাবে অসম্ভব কোন সংকীর্ণ জায়গায় সবাইকে গরু নিয়ে গিয়ে জবাইয়ে বাধ্য করার পাঁয়তারা করছে, তারা এটা বুঝেও বোঝে না যে, কোরবানির ঈদে গরু জবাই একটি ব্যবসায়িক জবাই নয়। কসাই যেভাবে গরু কাটে ঈদের জবাই ও বিলি-বণ্টন এমন নয়। এখানে গরু জবাই একটি ইবাদত। একটি উৎসব। একটি সংস্কৃতি। একটি ত্যাগপূর্ণ সওয়াবের কাজ। এখানে নিজ হাতে জবাই করা, নিয়ত করা, দোয়া পড়া, শরিকদের নাম ও অংশ নির্দিষ্ট করা, পরিবারের সদস্যদের আবেগময় উপস্থিতি, নিজের অংশ, প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজনদের অংশ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠির অংশ নির্ধারণ ছাড়াও গোশত কাটা, রান্নার জন্য তৈরি ও এ ধরনের নানাবিধ কাজে বাড়ির নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ জরুরি হয়ে পড়ে। নির্দিষ্ট জবাইখানায় গরু কোরবানি বর্ণিত এসব বিষয়কে উপেক্ষা ছাড়া আর কিছু নয়। এ শ্রেণির কর্মকর্তা ও বুদ্ধিজীবী যদিও মুসলমান নামধারী এবং মুসলিম পরিচয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত কিন্তু তাদের চিন্তা কথা ও আচরণ দেখে মনে হবে যেন তাদের ভেতর বসে আছে কোন উগ্র হিন্দুত্ববাদি চিন্তার ভুত। অনেক বুদ্ধিজীবী আবার হজের সময়কার কোরবানির কথা এখানে টেনে আনেন। এরা জ্ঞানপাপী। নতুবা সউদী আরবের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কোরবানির কথা মাথায় রেখেই তারা কথা বলতেন। হজযাত্রীরা মুসাফির, তারা বাড়ি-ঘরের নিয়মে কোরবানি দেন না। এক জায়গায় সরকারি জবাইখানায় তাদের লাখ লাখ পশু জবাই হয়। না উপস্থিত থাকার বিষয় এখানে থাকে, না থাকে গোশত পাওয়ার, খাওয়ার বা বিলি-বণ্টনের প্রশ্ন। এসব কোরবানি উন্নত প্রযুক্তিতে সংরক্ষণ করে বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের জন্য প্রয়োজন মতো পাঠানো হয়। এর সাথে বাংলাদেশের সামাজিক কোরবানির তুলনা বাতুলতা ছাড়া আর কিছু নয়। সিটি কর্পোরেশন বর্জ্যরে ব্যাগ সরবরাহ করুক। মানুষকে রক্ত ও বর্জ্য দ্রুত পরিষ্কার এবং নির্ধারিত ডাস্টবিনে বা ময়লার গাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সচেতন করুক। ময়লা পরিষ্কারের জন্য ঈদের তিন দিন বাড়তি কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দিক। কিন্তু তাই বলে, কোরবানিকে হেয় করে, গোটা ইবাদতটির মাহাত্ম্যকে আহত করে যে ধরনের ঘ্যানঘ্যানানি মিডিয়ায় শুরু হয়, সেমিনার সিম্পোজিয়াম ডাকা হয়, অনেক মন্ত্রী-আমলা-মেয়রও ওই মার্কামারা সুরে কথা বলেন তখন ৯৩% মানুষের মনে শঙ্কা জাগে এরা কি সত্যিই বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনের ভাষা বোঝেন? দেখা যাবে কিছু চাবি দেওয়া লোক গরুর বর্জ্য পরিচ্ছন্ন করার ব্যবস্থা সুচারু না করে বরং এ নিয়ে বিরক্তি ও বিতৃষ্ণা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। মনে হয় পারলে তারা গরু কোরবানি নিষিদ্ধ করে দেয়। সম্ভব হলে ঘরে গরুর গোশত রান্না করাও নিষিদ্ধ করে দেয়। সুযোগ পেলে আইন করে দেয় গরু রান্না করতে হলে দূরে কোথাও গিয়ে করতে হবে।
ঢাকাসহ দেশের বহু জায়গায় অনেক রেস্টুরেন্টে ইদানিং ‘নো-বিফ’ লেখার ফ্যাশন চালু হয়েছে। পাঁচ থেকে ছয় ভাগ মানুষ খায় না এমন একটি আইটেমকে এদেশে যেভাবে কোণঠাসা করা হচ্ছে তা দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এই খাবারটি ৯৩ ভাগ মানুষের জন্য হালাল এবং তারা তা পছন্দও করে। পরিস্থিতি এমন যে, দেশের প্রায় সব মানুষ যে খাবার পছন্দ করে, এখন তাদের নিজের দেশেও তারা তা নির্বিঘেœ খেতে পারবে না। আওয়ামী ওলামা লীগ বহু আগেই একথা বলেছিল যে, ভারতের সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প বাংলাদেশেও ছড়িয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। মোদী ও সঙ্ঘ নেতারা যে ভারত বানাচ্ছেন, একশ্রেণির লোক বাংলাদেশকেও একই ধাঁচে গড়ে তুলতে চাইছেন। এ বিষয়ে সমাজ, রাজনীতি, ধর্ম ও মানবাধিকার নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের সোচ্চার হওয়ার বিকল্প নেই। ইসলাম সকল ধর্মের মানুষের অধিকারে বিশ্বাসী। বাংলাদেশের সংবিধানেও ধর্মনিরপেক্ষতার নামে এ অধিকারের কথাই বলা হয়েছে। তাহলে ৯৩% মানুষের খাদ্য, তাদের ধর্ম, সংস্কৃতি ও উৎসব-ইবাদত কৌশলে বাধাগ্রস্ত করা হবে কেন?
পবিত্র ঈদুল আজহায় পশু কোরবানি নিয়ে যারা খোঁচা মেরে মেরে কথা বলেন তাদের কোন কাজেই যে আল্লাহর রহমত বরকত ও অর্থবহ প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে না তারা কি তা বোঝেন? যদি তাই না হত তাহলে দীর্ঘ সাড়ে আট বছর উন্নতি অব্যাহত রেখেও সেই প্রথম বছরের মতোই লোডশেডিং আর ট্রাফিক জ্যাম মোকাবেলা করতে হতো না। এখনো মন্ত্রিদের রাস্তায় রাস্তায়, স্টিমারঘাটে, ফেরিঘাটে উন্নয়নের গলাবাজি করতে হয়। তেলতেলে মসৃণ রাস্তা হলে এসব গলাবাজি করতে হতো না। প্রতি ঈদেই বলতে হতো না, সব মানুষ নিরাপদে ঈদে বাড়ি ফিরবে। ইট সুরকি ও পিচের ড্রাম সাথে মন্ত্রীকে পথে পথেই কাটাতে হয়। বলতে হয়, রাস্তাঘাটের অবস্থা এই ভালো হলো বলে! মন্ত্রিরা প্রমিজ করে বলছেন, আগামী বছর আর রাস্তায় পানি জমবে না। ড্রেন, সুয়ারেজ ও খালবিল, নদীনালা উপচে পড়ছে। মলমূত্র, পানি, কাদায় সিটি মেগাসিটি একাকার। পরিবেশ বলতে সারাদেশে এক রকম ভাঙ্গাচোরা, খানাখন্দ, আবর্জনা, কাদাপানি, বর্জ্য, দুর্গন্ধভরা একটি মনুষ্যবাসের অনুপযোগী পরিবেশ। আর একশ্রেণির নির্লজ্জ আমলা ও বুদ্ধিজীবীর ভাষায় দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা কোরবানির পশুর হাট ও জবাইকৃত পশুর রক্ত-বর্জ্য। এসব লোক আসলে কোন মানসিকতা লালন করে জনগণের সামনে আজ সেটাই প্রশ্ন। নিজেদের সীমাহীন ব্যর্থতা আর নজিরবিহীন দুর্নীতি ঢাকা দিতে তারা এখন ভারতের গরুনির্ভর রাজনীতি অনুসরণে বাংলাদেশেও সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প আমদানি ও কোরবানির গরু নিয়ে নোংরা রাজনীতি করতে চাইছে। এ বিষয়ে সরকার, রাজনীতিবিদসহ সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার পাশাপাশি সোচ্চার হতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।