পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হজযাত্রী’র অভাবে বিমানের আরো দু’টি হজ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এ নিয়ে বিমানের মোট ২৩টি হজ ফ্লাইট বাতিল করা হলো। হজযাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌছেছে। অপেক্ষমান হজযাত্রীরা আত্মীয়-স্বজনের বাসা বাড়ী ও হজ ক্যাম্পে অবস্থান করে চরম হতাশায় ভুগছেন। বেসরকারী হজ এজেন্সিগুলোর ঢিলেমী এবং শেষের দিকে হজ ফ্লাইট দেয়ার আশায় অনেক হজযাত্রীর টিকিট ক্রয় করা হচ্ছে না। হজযাত্রীগণ হজ ফ্লাইটের টিকিট পাসপোর্ট হাতে না পেয়ে চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। এজেন্সি’র নিয়োগকৃত গ্রুপ লিডারদের প্রতারণার কারণেও বহু যাত্রীর টিকিট ক্রয় সম্পন্ন করা হয়নি। প্রয়োজনীয় যাত্রী না পাওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভোর ৬টা ৫ মিনিটের (বিজি-১০৭৩) ও বেলা ১টা ২৫ মিনিটের (বিজি-৫০৭৩) হজ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এতে ৮শ’ ৩৮জন হজযাত্রীর পরিবহনের ক্যাপাসিটি লস হলো। ফলে হজযাত্রী পরিবহন নিয়ে শন্কা ক্রমেই বাড়ছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক শাকিল মেরাজ গতকাল ইনকিলাবকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। হাবের অনুরোধের প্রেক্ষিতে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের লিখিত আবেদনের প্রতি সাড়া দিয়ে ঢাকাস্থ সউদী দূতাবাস কর্তৃপক্ষ আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত হজ ভিসা ইস্যুর মেয়াদ বৃদ্ধি করেছে। হজ ভিসা ইস্যুর মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না। গতকাল পর্যন্ত সউদী দূতাবাস কর্তৃপক্ষ ১ লাখ ২২ হাজার ৪শ’ ২২জন হজযাত্রীর ভিসা ইস্যু করেছে। গতকাল পর্যন্ত হজ ভিসার জন্য ১ লাখ ২৬ হাজার লজমেন্টের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। এখনো সহ¯্রাধিক হজযাত্রীর ভিসার জন্য লজমেন্ট কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়নি। এসব হজযাত্রী চরম উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। হাবের লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সকালে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের বাস ভবনে তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জরুরী সভায় ৫% হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্ট দেয়ার বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছেন। সভায় ধর্ম সচিব মো: আব্দুল জলিল, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন-সচিব হাফিজ উদ্দিন, হাবের পক্ষে হাব মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিম , হাবের ইসি’র অন্যতম সদস্য আলহাজ এডভোকেট ড. আব্দুল্লাহ আল নাসের, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব(হজ) শরাফত জামান, ধর্মমন্ত্রী’র ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আবু সাঈদ উপস্থিত ছিলেন। হাব নেতৃবৃন্দ সকল হজযাত্রী’র (কোটার মধ্যে) রিপ্লেসমেন্ট দেয়ার দাবী জানিয়েছিলেন। ইতিপূর্বে দু’দফায় ১০% হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্ট দেয়া হয়েছিল। কিন্ত দু’শতাধিক হজ এজেন্সি’র মালিক-প্রতিনিধিরা প্রয়োজনীয় হজযাত্রীর রিপ্লেসমেন্ট না পাওয়ায় বুধবার দিবাগত রাতে হজ ক্যাম্পে বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
এদিকে, হাব মহাসচিব মো: শাহাদাত হোসাইন তসলিম আরো দু’টি হজ ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ইনকিলাবকে বলেন, একের পর এক হজ ফ্লাইট বাতিল হওয়া আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। হাব মহাসচিব সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সি’র মালিকদের দ্রুত হজযাত্রী প্রেরণে কার্যকরী উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, শেষ দিকে কোনো হজ ফ্লাইট যাতে খালি না যায় সে ব্যাপারে সকলকে আন্তরিক হতে হবে। সকল হজযাত্রীই হজে যাওয়ার সুযোগ পাবেন বলেও হাব মহাসচিব আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য, গত ২৪ জুলাই বিমানের হজ ফ্লাইট শুরুর পর থেকে ই-ভিসা জটিলতা আর যাত্রী সংকটের কারণে একের পর এক বাতিল হতে থাকে বিমান ও সউদী এয়ারলাইন্সের হজ ফ্লাইট। বিমানের বাতিল হয়েছে ২৩টি এবং সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের চারটি ফ্লাইট। বাতিল হওয়া এসব ফ্লাইটে সাড়ে ৯ হাজার হজযাত্রী সউদী আরবে যাওয়ার কথা ছিল। উল্লেখ্য, এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মোট হজযাত্রীর সংখ্যা ১ লাখ ২৭ হাজার ১শ’ ৯৮ জন। হজযাত্রীদের সউদী আরবে যাত্রার প্রথম ফ্লাইট পৌঁছে ২৪ জুলাই। শেষ ফ্লাইট যাবে ২৮ আগস্ট। ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ৬ সেপ্টেম্বর ও শেষ ফিরতি ফ্লাইট ৫ অক্টোবর। গতকাল পর্যন্ত প্লানেট ইন্টারন্যাশনালের (১১০২) নীলফামারীর ডোমা’র হজযাত্রী মমতাজ আলী, হেলাল উদ্দিন ও জহির উদ্দিনের হজ ভিসা এখনো সম্পন্ন হয়নি। নীলফামারীর ডোমার গ্রæপ লিডার রুহুল আমিনের মাধ্যমে উল্লেখিত তিনজনসহ ১৪ জন হজযাত্রীর এখনো হজ ভিসা করা সম্ভব হয়নি। গতকাল তাদের মোফা আনার জন্য কার্যক্রম শুরু করার কথা জানানন,নারিতা ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলসের পরিচালক আব্দুল মান্নান। গ্রুপ লিডার রুহুল আমিন এসব হজযাত্রীর হজ প্যাকেজের টাকা নিয়ে হজ এজেন্সিতে পরিশোধ না করায় এখনো তাদের হজে যাওয়া সম্ভব হয়নি।আব্দুল মান্নান জানান, তাদের এখনো ২৮ জন হজযাত্রীর ভিসা করা সম্ভব হয়নি। শুধু খাওয়ার টাকা এখনো বুঝে পাওয়া যায়নি বলে আব্দুল মান্নান জানান। বিমান বাংলাদেশী এয়ার লাইন্স জেদ্দাস্থ সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ যাবত ২১টি শ্লট বরাদ্দ পেয়েছে। এর মধ্যে যাত্রী সংকটের দরুন ৭টি শ্লট ব্যবহার করতে পারেনি।বিমান কর্তৃপক্ষ আগামী ২৬ আগষ্টের পরিবর্তে ২৮ আগষ্ট পর্যন্ত হজ ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চেয়ে জেদ্দাস্থ সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছে। বিমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসাদ্দেক আহম্মদ সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনের বলেছেন, হজ ফ্লাইট বাতিলের কারণে বিমান প্রায় ৪০ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। হজ ফ্লাইট বাতিলের জন্য ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি বেসরকারী হজ এজেন্সিগুলোকে দায়ী করেছেন। এ জন্য তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেয়ার পরেও হজ ফ্লাইট বাতিল করতে হচ্ছে। শেষের দিকে যথাসময়ে যাত্রীর অভাবে বিমানের আরো হজ ফ্লাইট বাতিল হলে হজযাত্রী পরিবহনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হতে পারে বলেও একাধিক হজ এজেন্সি’র মালিক অভিমত ব্যক্ত করেছেন। বাংলাদেশ হজযাত্রী ও হাজী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আলহাজ এডভোকেট ড. আব্দুল্লাহ আল নাসের হজ ফ্লাইট বাতিল প্রসঙ্গে বলেন, হজযাত্রীরা যথা সময়ে সউদী আরবে যেতে না পারায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তারা উদ্বেগ ও উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। তিনি বলেন, বিমান কর্তৃপক্ষ ও পরিচালক হজ এক সাথে সমন্বয় করে কাজ করলে একের পর এক হজ ফ্লাইট বাতিল হবে না। এক প্রশ্নের জবাবে ড. আব্দুল্লাহ আল নাসের বলেন, বিমান যে সব সিন্ডিকেটের কাছে অধিকাংশ হজ টিকিট বরাদ্দ দিয়েছে তার তালিকা প্রকাশ এবং হজ ফ্লাইট বাতিলের জন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই এ সংকট থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। যে সব হজ এজেন্সি নির্ধারিত সময়ে হজযাত্রীদের টিকিট বুকিং দিয়েছেন তাদেরকে আগ থেকে তাগিদ দেয়া হলেই হজ ফ্লাইট বাতিলের সংখ্যা কমে আসবে বলে ড. আব্দুল্লাহ আল নাসের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বিমান সুষ্ঠুভাবে হজযাত্রী পরিবহনের জন্য মালয়েশিয়া থেকে দু’টি এয়ারক্রাফ্ট লিজে ভাড়ায় এনেছে। গত ২৫ জুলাই একটি এয়ারক্রাফট নিয়মিত হজযাত্রী পরিবহন করছে। লিজে ভাড়া করা আরেকটি এয়ারক্রাফট আগামী ২০ আগষ্ট থেকে হজযাত্রী পরিবহন করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।