Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইরাকে সুন্নিদের সাথে সেতুবন্ধন তৈরি ও সউদী শিয়া দমন বন্ধে সহায়ক হবে

মুক্তাদা আল সদরের রিয়াদ সফর

দি নিউ আরব : | প্রকাশের সময় : ১৮ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইরাকের শিয়া নেতা মুক্তাদা আল সদর ১১ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মত সউদী আরব সফর করেছেন। তার এ সফর ছিল আন্তরিকতাপূর্ণ। ইরাক ও সউদী আরবের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা গুরুত¦পূর্ণ প্রমাণিত হতে পারে। গত সিকি শতকেরও বেশি সময় ধরে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত দুর্বল অবস্থায় রয়েছে।
ইরাকে মার্কিন আগ্রাসন ও সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর ইরাকের নতুন পরিস্থিতি সউদী আরব ধীরে মেনে নিচ্ছে। সাদ্দামের ক্ষমতাচ্যুতি ইরাকে পুরনো ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়েছে। তার সময়ে সুন্নি আরব সংখ্যালঘুরা কঠিন হাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া ও সংখ্যালঘু কুর্দিদের উপর নিপীড়ন চালিয়েছিল। ১১৭১ সালে মিসরে ফাতেমীয় খিলাফতকালে কোনো আরব দেশ প্রথমবারের মত শিয়া শাসনে আসে। ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্র বাহরাইনের পাশাপাশি ইরাক হচ্ছে আরব বিশে^ শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ।
রিয়াদ এখন নতুন ইরাকের দিকে জোর মনোযোগ দিচ্ছে। ২০০৩-এ সাদ্দাম হোসেনের ক্ষমতাচ্যুতির ১৩ বছর পর ২০১৬ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক পূর্ণাঙ্গভাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। উপসাগরীয় অন্যান্য দেশের সাথে ইরাকে ইরানের প্রভাব বিস্তার নিয়ে সউদী আরবের ভয়। ইরান চায়, শিয়া ধর্মীয় নেতাদের দ্বারা ইরাক শাসিত হোক।
ইরাকে মার্কিন দখলদারিত্বের ইতিহাসে সদর হচ্ছেন সম্ভবত সে ব্যক্তি যাকে আমেরিকানরা কম বুঝতে পেরেছে। তারা তাকে ইরানি বোড়ে হিসেবে নাগাল বহির্ভূত বলে বিবেচনা করেছে, একই সাথে বদর সংগঠনের সাথে সহযোগিতা করেছে যার কয়েক দশক ধরে সম্পর্ক রয়েছে ইরানের সাথে।
সদর তার নানা ত্রুটি সত্তে¡ও দৃশ্যমান ভাবে একজন ইরাকি জাতীয়তাবাদী যা ইরাকের অন্যান্য শিয়া ক্ষমতালোভীরা নন। যদি যুক্তরাষ্ট্রের জায়গায় ইরান ২০০৩ সালে ইরাকে আগ্রাসন চালাত ও শাসকদের ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করত তাহলে সদর তাদের বিরুদ্ধেও হয়ত লড়াই করতেন।
এ বছর তিনি আইএস-উত্তর ইরাকের বিষয়ে তার প্রাথমিক সমাধানের কথা ঘোষণা করেন। কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় যে তার সুপারিশের মধ্যে শিয়া প্রধান হাশদ আল শাবি পপুলার মোবিলাইজেশন মুভমেন্টের নিষিদ্ধ করার কথা রয়েছে। ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ২০১৪ সালে শিয়া মিলিশিয়াদের এ জোটটি গঠিত হয়।
মতপার্থক্য সত্তে¡ও এটিসহ আরো অন্যান্য বিষয়ে সউদী ও সদরের মধ্যে মিল আছে। ইরাক যে একটি শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এটা মেনে নিতে সউদী আরবের সময় লাগছে। এখন সে ইরান প্রভাবিত একটি ইরাকের বদলে ইরাকি শিয়া শাসিত একটি স্বাধীন ইরাক দেখতে চায়।
এ ব্যাপারে সদর ও সউদীরা একমত।
সদরের সউদী আরব সফরের সময় রিয়াদ নজফে একটি কনস্যুলেট খোলার জন্য তাকে এক কোটি ডলার দিয়েছে। রিয়াদ ও সদর আন্দোলনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্যই এটা করা হয়েছে। জানা গেছে, সদর শিয়া পবিত্র শহর থেকে সউদী বিরোধী সব নিদর্শন অপসারণের জন্য তার অনুসারীদের নির্দেশ দিয়েছেন। রিয়াদ ও নজফের মধ্যে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক নানা বিষয়ে তাদের এক সাথে কাজ করতে সাহায্য করবে।
তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক যে ক্ষেত্রটিতে উত্তেজনা প্রশমন করতে পারে তা হচ্ছে উভয় দেশের সংখ্যালঘুদের বিষয়। ২০০৩-এর পর ইরাকের বহু সুন্নি আরব নিজেদের বঞ্চিত মনে করে। নূরী আল মালিকির প্রধানমন্ত্রীত্ব কালে ২০১২ ও ২০১৩ সালে ইরাকি সুন্নিদের প্রতিবাদ আন্দোলন জোর করে দমন করা হয়। মালিকির রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সদর বলেন, সুন্নিদের তাদের দুর্দশার ব্যাপারে কথা বলার অধিকার আছে। তিনি এও বলেন যে সুন্নিরা যদি শান্তিপূর্ণ থাকে তবে তাদের প্রতি তার সমর্থন প্রদর্শনের জন্য তিনি আনবার প্রদেশ সফর করবেন।
তিনি সম্ভবত এটা বুঝতে পেরেছেন যে ইরাকে যদি সুন্নিরা বঞ্চিত থেকে যায় তা ক্রমশ ইরাকে বিভক্তি ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হবে।
ইরাক যখন আইএস বিরোধী লড়াইয়ে মার্কিন সাহায্যে বিজয়ী হওয়ার পর আইএসের সাথে যুদ্ধে ধ্বংসপ্রাপ্ত ইরাকি শহরগুলো পুনর্নির্মাণের কঠিন কাজে নিয়োজিত হতে যাচ্ছে তখন সদর সুন্নিদেরকে ইরাকি সমাজে পুনঃ অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে সাহায্য করতে চেয়েছেন। সদর এখনো সুন্নিদের সাথে একটি সেতুবন্ধ তৈরিতে তার রাজনৈতিক ক্ষমতা ও প্রভাবকে ব্যবহার করতে পারেন। পাল্টা চাওয়ায় সদর সউদী আরবের পূর্ব গভর্নরেট কাতিফে শিয়াদের উপর দমন চালানো বন্ধে রিয়াদের প্রতি আহবান জানাতে পারেন। এমনকি তিনি প্রায়ই সউদী বিরোধী সহিংসতা রোধে রিয়াদ ও সেখানকার মধ্যপন্থীদের মাঝে মধ্যস্থতায়ও সাহায্য করতে পারেন। এ রকম কিছু ঘটতে যদিও দীর্ঘ সময় লাগতে পারে তবুও এটা সম্ভব। সদরের এ সফর তারই একটি পদক্ষেপ হতে পারে। বহু বিষয়েই বেজায় কুখ্যাতি বিরাজ করা মধ্যপ্রাচ্যে কখন যে কি ঘটে তা কারো পক্ষেই বলা সম্ভব নয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সউদী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ