চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
হারাম। শব্দটি আরবী। যা হালালের বিপরীত। তার অর্থ অবৈধ, নিষিদ্ধ। শরীয়তের পরিভাষায়, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নিষেধকৃত পন্থায় কাজ করাকে হারাম বলে’। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হারাম কে অপবিত্র হিসেবে ঘোষণা প্রদান করেছেন।
হারাম উপার্জনকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মন্দ কাজ বলে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহর বাণী, ‘আর আপনি তাদের অনেককে দেখবেন যে, দৌড়ে দৌড়ে পাপে, সীমালঙ্ঘনে এবং হারাম ভক্ষণে পতিত হয়। তারা অত্যন্ত মন্দ কাজ করছে’ -(সুরা আল মায়িদা ৬২)। হারাম উপায়ে উপার্জন এবং তা হতে ভক্ষণ অবশ্যই মন্দ এবং ঘৃণিত কাজ।
হারাম উপার্জনের বিভিন্ন পথ বা পন্থা রয়েছে। সুদের লেনদেন, জুয়ার মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ, অন্যের সম্পদ চুরি-ডাকাতি করা, মাপে বা ওজনে কম দেয়া, অবৈধ জিনিস বিক্রি করে তার গ্রহণকৃত মূল্য, এতিমের সম্পদ, জোর পূর্বক অন্যের মালামাল লুঠ করা, যাদু-টোনা করে অর্জিত উপার্জন, শরীয়ত অনুনমোদিত ব্যবসা ইত্যাদি হলো হারাম উপায়ে অর্জিত সম্পদ। এসকল উপায়ে অর্জিত সম্পদ ভক্ষণে আল্লাহ তা’য়ালা বান্দার প্রতি অসুন্তুষ্ঠ হন। তার প্রার্থনা আল্লাহ তায়ালার কাছে কবুল হয় না। হাদীস শরীফে এসেছে, ‘হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, (হাদীসের বাকী অংশ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে ব্যক্তি দীর্ঘ সফর করে ধুলামলিন চেহারা ও পোষাক নিযে আসমানের দিকে হাত তুলে ইয়া রব, ইয়া রব বলে দো’য়া করে। অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোষাক হারাম এবং তার জীবিকাও হারাম। তাহলে কীভাবে তার দো’য়া কবুল হতে পারে?’ -(মুসলীম)।
বিভিন্ন কারণে মানুষ হারামভাবে জীবিকা অর্জন করে অথবা হারামের পথ বেছে নেয়। যখন বান্দার মধ্যে আল্লাহর ভয় এবং লজ্জা থাকে না, দ্রæত সম্পদশালী বা রাতারাতি মালদার হওয়ার নেশা, লোভ-লালসা, সম্পদের বা কোন জিনিসের অতৃপ্তি ইত্যাদি কারণে মানুষ হারামের পথে পা বাড়ায়। পা বাড়ায় অন্যায়ভাবে সম্পদ অর্জনের দিকে। অথচ মানবজাতির জানা উচিৎ যে, হারাম অর্জনকে মহান আল্লাহ তা’য়ালা কবুল করেন না, বরং হারাম উপায়ে অর্জনকারীর প্রতি তিনি অসুন্তুষ্ট ও রাগান্বিত হন। ফলে তার জন্য জাহান্নাম হয় অবধারিত। হাদীস শরীফে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, হারাম দ্বারা লালিত-পালিত শরীর জান্নাতে প্রবেশ করবে না’ -(তিরমিজি)। হারাম উপার্জনকারীর ও হারাম ভক্ষণকারীর অন্তর হারামের প্রভাবে কালো হয়ে যায়। দূরে সরে যায় সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তা’য়ালার আনুগত্য থেকে। রিজিক ও বয়সের বরকত থেকে হয় বঞ্চিত। কারণ, হারাম উপার্জন বা ভক্ষণ হলো পাপকাজ। তাইতো ‘হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, পাপের ফলে চেহারা কালো হয়ে যায়, হৃদয় হয়ে যায় অন্ধকার, শরীর হয়ে যায় দূর্বল, রিজিক কমে যায়, সৃষ্টি জগতের অন্তরে তার প্রতি ঘৃণা জন্ম নেয়’।
আমাদের সমাজে হারাম উপায়ে সম্পদ অর্জন করার জন্য সবাই ব্যতিব্যস্ত। হালাল-হারামের তোয়াক্কা কেউই করেন না। কিভাবে দ্রæত সম্পদশালী হওয়া যায় এই ধ্যানমগ্ন থাকার কারণে যে কোন উপায়ে টাকা অর্জনের পথে পা বাড়ায় সমাজের আপামর জনতা। টাকা আর সম্পদের নেশায় মানুষজন হালাল-হারামের পার্থক্য না করে দেদারছে সম্পদ সঞ্চয় করে যাচ্ছে। আমরা যদি হারাম উপার্জন ত্যাগ করি তাহলে আমাদের ধন-সম্পদে প্রাচুর্য আসবে। কেননা, আল্লাহ তা’য়ালা হালালভাবে অর্জিত সম্পদে বরকত দান করবেন। আমরা কি পারি না আমাদের নিজেদের এবং সমাজের স্বার্থে হারামভাবে উপার্জন ও ভক্ষণ কে ত্যাগ করতে। আসুন আমরা হারামের পথ বর্জন করি। সমাজকে করি চির সুন্দর।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।