পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কাশ্মীরে ভারতের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগদানকারীদের অধিকাংশকেই জাতীয় সঙ্গীত বাজানোর সময় শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য উঠে না দাঁড়িয়ে স্ব স্ব আসনে বসে থাকতে দেখা যায়। ভারতে জাতীয় সঙ্গীত বাজানোর সময় সবাইকে উঠে দাঁড়ানোর নিয়ম রয়েছে।
পিটিআই জানায়, ১৫ আগস্ট ছিল ভারতের ৭১তম স্বাধীনতা দিবস। জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে দিনটি উদযাপন উপলক্ষে রাজধানী শ্রীনগরের বকশি স্টেডিয়ামে প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি তেরঙা পতাকা উত্তোলন করার পর ভারতের জাতীয় সঙ্গীত বাজতে শুরু করে। কিন্তু সাধারণ দর্শক আসনে উপবিষ্ট ব্যক্তিদের বেশির ভাগই এ সময় জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য উঠে না দাঁড়িয়ে যার যার আসনে বসে থাকেন। তবে ভিআইপি আসনে উপবিষ্ট হাইকোর্টের বিচারক, এমএলএ, আমলা ও অফিস নির্বাহীগণ এ সময় উঠে দাঁড়ান ও জাতীয় সঙ্গীত শেষ না হওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে ছিলেন। তারপর মেহবুবা মুফতিকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। এ অনুষ্ঠান উপলক্ষে ১৮ হাজার আসন বিশিষ্ট স্টেডিয়ামটিতে মাত্র ৩ হাজারের মত লোক উপস্থিত ছিলেন। কাশ্মীরে প্রথমবারের মত স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে আসা উত্তর প্রদেশ রাজ্যের পুলিশের একটি দল স্টেডিয়ামের শূন্য আসনগুলো দেখে হতাশা প্রকাশ করে। এ দলের নেতা ডিএসপি শেওদান সিং বলেন, কাশ্মীরে স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের প্রধান অনুষ্ঠানে এত অল্প লোকের উপস্থিতি হতাশাজনক। উত্তর প্রদেশে এটা উৎসবের মত উদযাপিত হয়।
এদিকে বিশে^ সুপরিচিত ভারতের ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উত্তর প্রদেশ (ইউপি) রাজ্যের লক্ষেèৗতে অবস্থিত দারুল উলুম নদওয়াতুল উলেমার আলেম, শিক্ষক ও ছাত্ররা জাতীয় সংগীত গাওয়ার পরিবর্তে ইকবালের দেশপ্রেমের সংগীত ‘সারে জাহাঁসে আচ্ছা হিন্দুস্তাঁ হামারা’ গেয়ে উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে ভারতের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করেন।
নদওয়ার এক আলেম মওলানা খালিদ গাজীপুরী নদভী বলেন, ১৯৪৭ সাল থেকে স্বাধীনতা দিবসে পতাকা উত্তোলনের পর দেশের জন্য বিশেষ দোয়া করা আমাদের ঐতিহ্য। এ বছরও তা ঠিকমতই করা হয়েছে। কেন জাতীয় সঙ্গীত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘জনগণ মন অধিনায়ক’ গাওয়া হল না জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এতে ‘সিন্ধু’ শব্দটি রয়েছে যা এখন পাকিস্তানে। আমরা পাকিস্তানের জন্য প্রার্থনা করতে পারি না। সরকার যদি শব্দটি অপসারণ করে তাহলে আমরা গর্বভরে তা গাইব।
নদওয়া ইউপি মাদরাসা বোর্ডের অধীন নয়। মাদরাসা বোর্ড এবার সকল মাদরাসাকে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন ও তা ভিডিও করার নির্দেশ দিয়েছে। যেসব মাদরাসা স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করবে না তারা সরকারী সাহায্য পাবে না। নদওয়ার প্রিন্সিপাল ড. সাইদুর রহমান আজমি বলেন, আমরা যদিও বোর্ডের কাছ থেকে কোনো নির্দেশনা পাইনি, পত্রিকা পড়ে জানতে পেরেছি যে, সরকার চায় মাদরাসাগুলোতে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানের ভিডিও তাদের দেখানো হোক। সে কারণে আমরা অনুষ্ঠানের ছবি তুলেছি ও ভিডিও করেছি।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে আলেমগণ স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস ও তাতে মুসলমানদের অবদানের কথা উল্লেখ করেন।
মাওলানা গাজীপুরী ছাত্রদের বলেন যে, ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন নবাব সিরাজউদ্দৌলাহ ও টিপু সুলতান। নদওয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মধ্যে ছিলেন মওলানা শিবলি নোমানী, মওলানা আবুল কালাম আজাদ, আল্লামা ইকবাল ও মওলানা হসরত মোহানী।
ভারতের জাতীয় সঙ্গীত মুসলমানদের গাওয়ার উপযোগী নয় -আলেমদের ফতোয়া
এদিকে ভারতীয় আলেমগণ অনুষ্ঠান করার পক্ষে থাকলেও বাধ্যতামূলক ভিডিও করার নির্দেশের নিন্দা জানিয়েছেন। তারা ছাত্রদের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া থেকে বিরত রাখার প্রস্তাব দেন। এমনকি জনগণকেও জাতীয় সঙ্গীত না গাওয়ার পরামর্শ দেন। কারণ হিসেবে তারা বলেন, ভারতের জাতীয় সঙ্গীতে এমন কিছু কথা আছে যা মুসলমানের ঈমান আকিদা পরিপন্থী। শিরক হয় এমন কোন কথা মুসলমান বলতে বা গাইতে পারে না। সুতরাং ঈমানবিরোধী জাতীয় সঙ্গীত মাদরাসার ছাত্ররা বা মুসলমান জনগণ গাইতে পারে না। এজন্য তাদের চাপ দেওয়া কিছুতেই যুক্তিযুক্ত নয়। উত্তর প্রদেশের বিখ্যাত আলেম মাওলানা আসজাদ রেজা খান বলেছেন, ছবি ও ভিডিও ইসলাম সমর্থন করে না। অতএব মাদরাসায় অনুষ্ঠান ভিডিও করার বাধ্যতামূলক নির্দেশ পালন করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা জাতীয় সঙ্গীত ‘জন গণ মন’ মূলত ব্রিটিশ রাজা পঞ্চম জর্জের উদ্দেশে লেখা। স্বাধীন দেশে এটি জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার যুক্তি নেই। তাছাড়া এতে ব্রিটেনের রাজাকে ‘ভারত ভাগ্যবিধাতা’ বলা হয়েছে। এটি আমাদের জন্য অবমাননাকর। এতে আরো কিছু প্রশস্তিমূলক শব্দ আছে যা কোন মানুষের জন্য প্রয়োগ করা যায় না। এ কেবল আল্লাহর জন্যই শোভা পায়। মুসলমানের জন্য শিরক হতে পারে এমন কথা জাতীয় সঙ্গীতে থাকলেও তারা সেটা বলতে বা গাইতে পারে না। রাজস্থানের গভর্নর কল্যাণ সিংও জাতীয় সঙ্গীত পরিমার্জনের দাবি জানিয়েছেন।
পিলিভিত এলাকার মুফতী মাওলানা জরতাব রেজা খান বলেন, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ যেন এই বিতর্কিত নির্দেশ ফিরিয়ে নেন। নতুবা মুসলমানরা ঈমান ও শরীয়তের নির্দেশ পালনের স্বার্থেই সরকারের নির্দেশ অমান্য করতে বাধ্য হবে। উল্লেখ্য যে, গত ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে উত্তর প্রদেশের মাদরাসা বোর্ডের আওতাধীন সকল মাদরাসায় অনুষ্ঠানাদি ভিডিও করে আনার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।