পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : রাজধানীর পান্থপথের রাসেল স্কয়ার সংলগ্ন হোটেল ওলিওতে (ইন্টাঃ) গতকাল সকালে পুলিশ ও সোয়াট টিমের অভিযানের মধ্যে জঙ্গি সন্দেহে একজন নিহত হয়েছে। তার নাম সাইফুল ইসলাম। তার সাথে থাকা বোমার বিস্ফোরণে হোটেল ওলিও’র একাংশ ধসে পড়েছে। গত সোমবার রাত ৩টা থেকে জঙ্গি অবস্থান সন্দেহে ওই হোটেলটি ঘিরে রাখে পুলিশ ও সোয়াট টিম। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে ওই হোটেলটি প্রচন্ত শব্দে বিস্ফোরিত হয়। হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনাল পান্থপথের যে জায়গায় চারতলা ওই হোটেল ভবনের অবস্থান সেখান থেকে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ভবনের দূরত্ব মাত্র ৩০০ মিটার। গতকাল ১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সকালে সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে যান সকল শ্রেনী পেশার মানুষ। গতকাল জাতীয় শোক দিবসের মধ্যে এই বিস্ফোরণের ঘটনাটি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ভাবিয়ে তুলেছে। পুলিশ ধারণা করছে শোক দিবসের কর্মসূচি নস্যাৎ করতে এই পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এই ঘটনার পর ওই এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন ঘটনাস্থলে। ঘটনার সময় পুলিশ সদস্যরা ওই এলাকার প্রতিটি গলি এবং বিভিন্ন ভবনের ছাদে অবস্থান নেয়, সোয়াট সদস্যরা অভিযানের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। অভিযানের নাম দেয়া হয় অপারেশন অগাস্ট বাইট। অন্যদিকে আত্মঘাতী জঙ্গি সাইফুল ইসলামের লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালের পুরনো ভবনের চতুর্থ তলা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে ঢামেকে নিয়ে যাওয়া হয়। ঢামেক সূত্রে জানা গেছে, সাইফুলের লাশ ঢামেক মর্গে এসে পৌঁছায় বিকাল ৫টা ৫ মিনিটে। এরপর লাশটি জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে। পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক জানিয়েছেন, নিহত ওই যুবক নব্য জেএমবির সদস্য। আত্মসমর্পণের আহŸানে সাড়া না দিয়ে সে সুইসাইড ভেস্টে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল পান্থপথের অভিযানের বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, সন্দেহভাজন এক জঙ্গির অবস্থানের তথ্য পেয়ে সোয়াটসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই অভিযান শুরু করে। সেখানে নাশকতার সরঞ্জাম থাকতে পারে বলেও তাদের কাছে খবর আছে। ঢাকার পান্থপথে ওলিও নামের হোটেলে নিহত আত্মঘাতী জঙ্গি সাইফুল ইসলামের বাবা আবুল খয়েরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার সাহস ইউনিয়নের নোয়াকাঠি গ্রামের খয়ের স্থানীয় মসজিদের ইমাম। এ ছাড়া ঢাকায় সাইফুলকে আশ্রয়দাতা সন্দেহে ডুমুরিয়া থেকে দুই যুবককে আটক করেছে পুলিশ। তারা হলো, ডুমুরিয়ার ৯ নম্বর সাহস ইউনিয়নের ন’কাঠি গ্রামের আবু ওয়াহেদের ছেলে মো. সানি (২২) ও একই এলাকার জালাল সরদারের ছেলে ইসান (২১)। ডুমুরিয়া থানার ওসি হাবিল হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। প্রত্যক্ষর্দীরা জানান, পুলিশ কয়েক ঘণ্টা ঘিরে রাখার পর গতকাল সকাল পৌনে ১০টার দিকে চারতলা হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনাল থেকে বিকট বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ পাওয়া যায়। বিস্ফোরণে হোটেলের চতুর্থ তলার রাস্তার দিকের অংশের দেয়াল ও গ্রিল ধসে নিচে পড়ে। চতুর্থ তলার ওই ধ্বংসস্তুূপের মধ্যে একজনের দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, হোটেলের যে কক্ষে বিক্ষোরণ ঘটেছে, আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী এক যুবক সোমবার রাতে সেটি ভাড়া নেয়। হোটেলের রেজিস্ট্রার খাতার তথ্য অনুযায়ী ওই যুবকের নাম সাইফুল ইসলাম, বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়ায়। বি এল কলেজে সে অনার্স পড়ছে। আমরা ধারণা করছি, ওই যুবকই নিহত হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (গোপনীয়) মনিরুজ্জামান বলেন, সাইফুলের ওপর আগে থেকেই নজর রাখছিল পুলিশ। সে নব্য জেএমবির সদস্য। আগে শিবির করত। তার বাবা আবুল খায়ের মোল্লাও খুলনার জামাত নেতা। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হোটেলে অনুসন্ধান চালানোর সময় তার কক্ষ থেকে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। তাকে সারেন্ডার করতে বলা হয়েছিল, কিন্তু সে করেনি। সে প্রথমে একটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। অভিযান শুরু হলে সে সুইসাইড ভেস্টে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হয়। সকালে পুলিশ হোটেলটি ঘিরে ফেলার পরপরই রাসেল স্কয়ার থেকে পান্থপথ-গ্রিন রোড পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। আশপাশের প্রতিটি গলিতে অবস্থান নেয় পুলিশ ও সোয়াট সদস্যরা। ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও এনে রাখা হয়। ছুটির দিনের সকালে রাস্তার এই অবস্থা দেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে তৈরি হয় উদ্বেগ। যান চলাচল বন্ধ থাকায় স্কয়ার হাসপাতালের উদ্দেশ্যে আসা অসুস্থ এক ব্যক্তিকে পুলিশের সহযোগিতায় নিয়ে যেতে দেখা যায়। পৌনে ১০টার দিকে বিকট বিস্ফোরণের সঙ্গে হোটেল ভবনের চতুর্থ তলার দেয়াল ও গ্রিল ভেঙে নিচে পড়লে তৈরি হয় আতঙ্ক। স্কয়ার হাসপাতালে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা হাসপাতালের ভেতরে দিকে চলে যান। এর পরপরই সামনের রাস্তা দিয়ে আহত অবস্থায় একজনকে নিয়ে যেতে দেখা যায়। তেজগাঁও থানার ওসি মাজহার হোসেন জানান, ওই ব্যক্তি ব্যাংকের বুথে টাকা তুলতে যাচ্ছিলেন। বিস্ফোরণের ফলে ইটের টুকরো ছিটকে গিয়ে তার মাথায় লাগে। কিছু সময় পর সোয়াট সদস্যরা হোটেলের চতুর্থ তলার ওই অংশে দেখা যায়। বেলা পৌনে ১১টার দিকে হোটেল ভবনের চতুর্থ তলায় প্রবেশ করেন পুলিশের বোমা নিস্ক্রিকারী দলের সদস্যরা। সেখানে আরও বিস্ফোরক আছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখে তারা।
যেভাবে জঙ্গিকে শনাক্ত করা হলো
পান্থপথের হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে এই দুর্ধ্ষ জঙ্গিকে শনাক্ত করে নিউমার্কেট থানা পুলিশর একটি টিম। নিউমার্কেট থানার ওসি আতিকুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ৩২ নম্বর রোডের বাসার একটি পেছনে শুক্রাবাদ ও পান্থপথ এলাকায় অভিযান চালায় সোমবার রাত পৌণে ৩টার দিকে। পান্থপথের হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনারলের নিচ তলায় এসে পুলিশ জানতে পারে ওই হোটেলের ১৩ জন বর্ডার রয়েছে। ম্যানেজার জসিমের অনুমতি নিয়ে পুলিশ প্রতিটি কক্ষ তল্লাশি করে। ৩ তলায় ৩০১ নম্বর কক্ষে দরজায় নক করার সঙ্গে সঙ্গে ভেতর থেকে বলা হয়, এখন অনেক রাত, কাল সকালে কথা হবে। ওসি তখন দরজার পাশের জানালাটি খোলার অনুরোধ করেন। ভেতর থেকে জানালাটি খুললে ওসি বাইরের বিদ্যুতের সুইচ অন করে দেন। এতে ভেতরে দেখা যায়- একজন যুবক কালো রঙের ট্রলি ব্যাগ হাতে নিয়ে জানালার দিকে এগিয়ে আসছে। ওসি তখন বাইরে থেকে দরজা লক করে দেন। মুহূর্তের মধ্যে তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান। হোটেলের রেজিস্ট্রার বই ঘেঁটে ওসি জানতে পারেন, গত ১৩ আগস্ট খুলনা থেকে খাইরুল নামে ওই যুবক হোটেলে ওঠে। তবে রেজিস্ট্রার বইয়ের স্বাক্ষরের স্থানে সাইফুল ইসলাম নামে স্বাক্ষর করে। নিহত জঙ্গীর বাবা আবুল খয়েরের উদ্ধৃতি দিয়ে পুলিশ জানান, খয়ের নোয়াকাঠি মাঠেরহাট জামে মসজিদের ইমাম। তিনি একজন হাফেজ। আবার জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি সাহস ইউনিয়ন জামায়াতের কোষাধ্যক্ষ। তার ছেলে সাইফুল ইসলাম সরকারি বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি খুলনার নেভি কলোনিতে একটি মেসে থাকতেন। গত ৭ আগস্ট চাকরির ইন্টারভিউ দিতে খুলনা থেকে ঢাকায় যান তিনি। যাওয়ার আগে নোয়াকাঠির বাড়ি ঘুরে গিয়েছিলেন সাইফুল। সাইফুলের বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদের সূত্রে পুলিশ জানায়, ঢাকায় যাওয়ার পর সর্বশেষ গত রোববার সাইফুল বাড়িতে যোগাযোগ করেছিলেন। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, সোমবার বাড়িতে আসছে। কিন্তু সোমবার বাড়িতে আসেনি। মঙ্গলবার তার আত্মঘাতীর সংবাদ পাওয়া যায়। জামায়াতের রাজনীতি করা নিয়ে সাইফুলের সঙ্গে খয়েরের মতবিরোধ ছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।