পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আল জাজিরা :১৯৮৯ সালে ভারত শাসিত কাশ্মীরে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার ও স্বাধীনতার দাবিতে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হয়। ২০০৮ সালে শুরু হওয়া ‘কাশ্মীরি ইন্তিফাদা’ নামে ব্যাপক ভাবে পরিচিত বেসামরিক প্রতিরোধ আন্দোলন এখনো চলছে। ভারতের জঙ্গি দমন তৎপরতায় এ পর্যন্ত ৭০ হাজারেরও বেশী কাশ্মীরি যোদ্ধা ও অ-যোদ্ধা নিহত নিহত হয়েছে।
এখন ভারতীয় সংবিধানের একটি অনুচ্ছেদ অপসারণের মাধ্যমে কাশ্মীর তার স্বায়ত্ত শাসনের শেষ চিহ্নটুকুও হারাতে চলেছে বলে আশংকার সৃষ্টি হয়েছে।
২০১৫ সালে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি), হিন্দু মৌলবাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস) ভাবাদর্শিকরা সংবিধানের ৩৫এ অনুচ্ছেদ বাতিল চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা একটি মামলায় সমর্থন জানান। আদালত ৬ সপ্তাহের মধ্যে এ মামলার চূড়ান্ত রায় দেবে বলে আশা করাা হচ্ছে।
সংবিধানের এই অনুচ্ছেদে জম্মু ও কাশ্মীরের অ-অধিবাসীদের স্থাবর সম্পত্তির অধিকারী হওয়া অথবা রাজনৈতিক ভোটাধিকার লাভ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উপর থেকে এ অনুচ্ছেদকে পক্ষপাত মূলক মনে হলেও এর একটি ঐতিহাসিক পটভূমি রয়েছে। অনুচ্ছেদ ৩৫এ অনুচ্ছেদ ৩৭০-এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে মূল বিধানে ভারতের সাথে কাশ্মীরের আপাত স্বায়ত্ত শাসনের সম্পর্ক স্থাপন করেছে।
বিজেপি ঐতিহাসিক ভাবেই কাশ্মীরের স্বয়ত্ত শাসন মর্যাদার বিরোধী। আর আর এসএস খোলাখুলি ভাবে দাবি করে যে কাশ্মীরে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা পীড়াদায়ক এবং দেশের জন্য মাথাব্যথা। ৩৫এ অনুচ্ছেদের অপসারণ জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে যা এ এলাকা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক বলে বিজেপি বিবেচনা করে। কাশ্মীরিরা একে বিজেপির ইসরাইলি মডেল বলে আখ্যাায়িত করেছে। তাদের আশংকা যে বিজেপি এ অঞ্চলে ভারতীয় শাসন পাকাপোক্ত করার জন্য ভারতীয়দের বসতি স্থাপন করতে চায়।
কাশ্মীর অঞ্চল ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির ক্ষত বহন করে চলেছে। দক্ষিণে জম্মু থেকে উত্তরে গিলগিট পর্যন্ত বিস্তৃত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের হিন্দু মহারাজা হরি সিং প্রথমে ভারত বা পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীন ছিলেন। দেশে রাজতন্ত্র বিরোধী আন্দোলন চলা সত্ত্ওে রাজা নিরপেক্ষ থাকার আশা করেছিলেন। যখন অধিকাংশ কাশ্মীরি স্বাধীন থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করল তখন ভারত বা পাকিস্তানের সাথে যোগদানের বিষয়টি চাপা পড়ে। মহরাজা সিদ্ধান্তহীন থাকা অবস্থায় ভারতে দেশবিভাগজনিত দাঙ্গা কাশ্মীরেও ছড়িয়ে পড়ে। তিনি কাশ্মীর থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন এবং ভারতে অন্তর্ভুক্তির কথা ঘোষণা করেন। কিন্তু এ অন্তর্ভুক্তি ছিল শংকাময়, শর্তাধীন ও অস্থায়ী যতদিন না একটি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়।
কাশ্মীরের ভবিষ্যত নিয়ে ভারত পাকিস্তানের মধ্যে এক সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের পর জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তিতে কাম্মীরকে অস্থায়ীভাবে দু’ভাগে ভাগ করে। আজাদ কাম্মীর নামে এখন যে অঞ্চলটি পরিচিততা পাকিস্তানের অধীনে একটি আদা স্বয়ত্তশাসিত অঞ্চল। কাশ্মীর উপত্যকা এবং জম্মু ও লাদাখ প্রদেশ ভারতের নিয়ন্ত্রণে আসে। কাশ্মীরের জনগণের চূড়ান্ত ভাগ্য নির্ধারণের জন্য জাতিসংঘ একটি গণভোট অনুষ্ঠানের অঙ্গীকার করে।
এক বছর আগে কাশ্মীরসহ সকল রাজা শাসিত রাজ্যগুলোকে ভারতের গণপরিষদে প্রতিনিধি প্রেরণের আমন্ত্রণ জানানো হয়। গণ পরিষদ তখন সারা ভারতের জন্য সংবিধান প্রণয়নের কাজ করছিল। মহারাজার গোষণার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে কাশ্মীরের প্রতিনিধিরা গণ পরিষদে ভারত সরকারের সাথে অনুচ্ছেদ ৩৭০-এর অনুচ্ছেদ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে আলোচনা করেন।
অনুচ্ছেদ ৩৭০-এ প্রতিরক্ষা, মুদ্রা ও পররাষ্ট্র নীতি ছাড়া আর সব বিষয়ে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বহাল রাখা হয়। এতে কাশ্মীরের আলাদা পতাকা ও সংবিধানের কথা আছে। এ অনুচ্ছেদের ফলে ভারতীয় সংবিধানের সকল প্রবিধান কাশ্মীরে প্রযোজ্য নয় এবং স্থানীয় সরকারের সম্মতি প্রয়োজন। বহু কাশ্মীরীই একে গণভোটের দুর্বল ও অন্যায্য প্রতিস্থাপন এবং এ অঞ্চলকে জবরদখলে ভারতীয় চতুর পদক্ষেপ হিসেবে দেখে। ৩৭০ অনুচ্ছেদের মত ৩৫এ অনুচ্ছেদ ১৯৪৭ পূর্ব কোনো ইতিহাস নেই।
১৯৪৭-এর আগে কাশ্মীর ছিল ব্রিটিশের অধীনে একটি রাজা শাসিত রাজ্য এবং অধিবাসীরা ছিল রাজ্যবাসী, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অধীন নয়। কাশ্মীরের মহারাজা ১৯২৭ সালে উত্তরাধিকার আইন প্রবর্তন করেন যাতে রাজ্যের অধিবাসীদের সরকারী অফিস ও জমি ব্যবহার ও মালিকানার অধিকার দেয়া হয়। রাজ্যের অ-অধিবাসীরা এ সুযোগ পাবে না। এ আইনের উদ্দেশ্য ছিল স্থানীয় হিন্দু শাসক গোষ্ঠি, যাদের অধিকাংশই ছিলেন হিন্দু কাশ্মীরি পন্ডিত, তাদের স্বার্থ রক্ষা যাতে অ-কাশ্মীরিরা প্রশাসনে প্রশাসনে প্রাধান্য বিস্তার এবং কাশ্মীরে জমি ক্রয় বা বিক্রি করতে না পারে।
ভারতের সাথে স্বায়ত্ত শাসন আলোচনায় এটি ছিল এক প্রধান শর্ত। ১৯৫৪ সালে এক প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডারে কাশ্মীরের পার্লামেন্টকে স্থায়ী অধিবাসী নির্ধারণের এবং ৩৫এ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে তাদের সুবিধা রক্ষার অধিকার দেয়া হয়। ক্রমবর্ধমান ভারতীয় আধিপত্যকে ঘৃণা করে এমন অধিকাংশ কাশ্মীরির কাছে এ আইনের অর্থ ছিল তুলনামূলক ভাবে তাদের অধিকার ও সম্পদ রক্ষামূলক।
১৯৯১ সাল থেকে এ অঞ্চলকে নিয়ন্ত্রণের জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগ ও ৭ লাখ সৈন্য মোতায়েন করা হয়। এখন সৈন্য বনাম কাশ্মীরিদের অনুপাত হচ্ছে ১ঃ৮। অর্থাৎ প্রতি ৮ জন কাশ্মীরির জন্য ১ জন সৈন্য। কাশ্মীর এখন বিশে^র সর্ববৃহৎ সামরিকীকৃত এলাকা।
ভারতীয় বসতি স্থাপনকারীদের কাশ্মীরে এনে ভারতের অনুকূলে জনসংখ্যা পরিবর্তনের ভীতি কাশ্মীরিদের জন্য প্রকৃত ভীতি। সম্প্রতি কাশ্মীর রাজ্য নির্বাচনে বিজেপির নির্বাচনী ইশতেহারে কাশ্মীরে অবসরপ্রাপ্ত সৈন্যদের কলোনি স্থাপনের জন্য তাদের সস্তাদরে জমি দেয়ার প্রতিশ্রæতি দেয়া হয়েছে। জুলাই মাসে কাশ্মীরে মোদি সরকারের গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (জিএসটি) কাশ্মীরেও কার্যকর করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এর ফলে রাজ্যের আর্তিক স্বায়ত্তশাসনের অবসান ঘটেছে।
কাশ্মেির ২০০৮ সালের ইন্তিফাদার পিছনে অন্যতম কারণ ছিল ভূমি গ্রাসের আশংকা। কাশ্মীরের রাজনৈতিক বিশ্লেষক শেখ শওকত হোসেন একে জনসংখ্যাগত সন্ত্রাস বলে আখ্যায়িত করেছেন। সে বছর কাশ্মীর সরকার হিমালয়ে হিন্দু তীর্থস্থান অমরনাথ মন্দিরের জন্য ৪০ হেক্টর বনভূমি দিতে সম্মত হয়। এতে তীর্থযাত্রীদের আশ্রয়স্থল নির্মাণের প্রস্তাব রয়েছে। পৃথক একটি বসতি প্রতিষ্ঠার শংকায় কাশ্মীরিরা এর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে। প্রতিরোধ নেতারা এ ব্যবস্থাকে রাজ্যের মধ্যে আরেকটি রাজ্য বলে আখ্যায়িত করেন। একে তারা ২০০৫ সালে পূর্ব জেরুজালেমে ইসরাইলি ভূমি কর্তৃপক্ষের নয়া বসতি হার হোমা নির্মাণের সাথে তুলনা করেন।
হিন্দু মৌলবাদী দলগুলো এখন পর্যন্ত জাতীয়তাবাদী অগ্নিশিখায় হাওয়া দিয়ে চলেছে। রাজনীতিকে প্রচন্ডভাবে ধর্মীয়করণ করছে।
২০১৫ সাল কাশ্মীর হাইকোর্ট এক ঐতিহাসিক রায়ে অনুচ্ছেদ ৩৭০কে স্থায়ী বলে উল্লেখ করে। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট ঘোষণা করে যে একমাত্র সংসদই এ অনুচ্ছেদ অপসারণ করতে পারে।
বিজেপি সব সময়ই বলেছে যে তারা প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে অনুচ্ছেদ ৩৭০ অপসারণ করবে। এখন তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে এবং কাশ্মীরে জোট সরকারেও তাদের প্রাধান্য থাকার সুবিধা নিয়ে তারা কাশ্মীরের স্বায়ত্ত শাসন এবং ৩৫এ বাতিলের চেষ্টা জোরদার হচ্ছে।
কিছু আইন বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে অনুচ্ছেদ ৩৫এ অপসারণের বাইরে। অন্যরা তা মনে করেন না। অনেকে মনে করেন, কাশ্মীরের স্বায়ত্ত শাসনের ব্যাপারে অনধিকার হস্তক্ষেপ করা হলে পরিস্থিতি ১৯৪৭ সালের পর্যায়ে চলে যাবে এবং এমনকি একটি গণভোট অনিবার্য হয়ে দাঁড়াবে।
অন্যদিকে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে কাশ্মীরি জনগণের মনোভাব হচ্ছে কর নয় মর । তাদের আন্দোলন জোরদার হচ্ছে, আর তা স্বায়ত্ত শাসনের জন্য নয়, স্বাধীনতার (আজাদি) জন্য।
কয়েক দশক ধরে ভারতের অন্যায্য রাজনৈতিক ও বর্বর সামরিকীকৃত নীতির মুখোমুখি হয়ে কাশ্মীরিরা আজ ভয় হারিয়েছে। জাতিসংঘ প্রস্তাব ও সাংবিধানিক আইন তাদের পক্ষে থাকলেও তারা আরো খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
নিবন্ধকার কবি ও রাজনৈতিক নৃবিজ্ঞানী এথার জিয়া নর্দার্ন কলোরাডো গ্রীলি বিশ^বিদ্যালয়ে নৃতত্ত¡ ও জেন্ডার স্টাডিজের শিক্ষক। তিনি ‘কাশ্মীর লিট’-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।