Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

উ. কোরিয়াকে অবশ্যই ‘উস্কানিমূলক’ আচরণ বন্ধ করতে হবে যুক্তরাষ্ট্র

| প্রকাশের সময় : ১৩ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রশ্নের মুখে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধের সক্ষমতা : জাপানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন অর্ধ কোটি উ. কোরীয় তরুণ যুদ্ধাস্ত্রে রূপান্তরিত হবে : পিইংইয়ং
ইনকিলাব ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, উত্তর কোরিয়াকে ‘অবশ্যই তাদের উস্কানিমূলক আচরণ বন্ধ করতে হবে’। পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর হুঁশিয়ারি জোরদার এবং টেলিফোনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার কথা বলার পর গতকাল সকালে যুক্তরাষ্ট্র এ দাবি জানায়। এদিকে হোয়াইট হাউস বলছে, গুয়ামে উত্তর কোরিয়ার ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকির পর মার্কিন সামরিক বাহিনী এ দ্বীপের নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। হোয়াইট হাউস আরো জানায়, ট্রাম্প গুয়ামের গভর্নর ইদি কালভোকে টেলিফোন করে ‘আশ্বস্ত’ করেছেন যে মার্কিন সামরিক বাহিনী আমেরিকার বাকি অংশের পাশাপাশি গুয়ামের জনগণের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করবে। হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, টেলিফোনে পৃথক আলাপে ট্রাম্প ও শি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে উত্তর কোরিয়া বিষয়ক প্রস্তাব পাশ হওয়ায় এর প্রশংসা করেন। তারা উভয়ে কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনে এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেন।
এতে আরো বলা হয়, কোরীয় উপদ্বীপকে পরমাণু অস্ত্র মুক্ত করতে এ দুই প্রেসিডেন্ট তাদের পারস্পরিক অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তারা যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার ওপরও গুরুত্ব দেন যা উত্তর কোরিয় সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রেসিডেন্ট শি এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে উত্তর কোরিয়াকে অবশ্যই তাদের উস্কানিমূলক আচরণ বন্ধ করতে হবে।’
এতে আরো বলা হয়, ট্রাম্প এ বছরের শেষের দিকে চীনে শি’র সঙ্গে ‘খুবই ঐতিহাসিক’ বৈঠকের অপেক্ষায় রয়েছেন।
জাপানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন
জাপান গতকাল প্যাট্রয়েট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করছে। উত্তর কোরিয়া সম্প্রতি জাপানের ওপর দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গুয়ামে ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকি দেয়ায় জাপান এ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েনের উদ্যোগ নিয়েছে।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে এ কথা বলা হয়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে বাগযুদ্ধ তীব্র হওয়ার প্রেক্ষাপটে আঞ্চলিক উত্তেজনাও বেড়ে গেছে।
সরকারি সম্প্রচারকেন্দ্র এনএইচকে জানায়, জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে শাইম্যান, হিরোশিমা ও কোচিতে প্যাট্রয়েট এডভ্যান্সড ক্যাপাবিলিটি-৩ (প্যাক-৩) ক্ষেপণাস্ত্র পদ্ধতি মোতায়েন করছে। কারণ উত্তর কোরিয়ার হুঁিশয়ারি অনুযায়ী, তারা এ পথ দিয়েই গুয়ামে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাবে। এনএইচকে আরো জানায়, জাপান এছাড়াও পার্শ্ববর্তী ইহিমে ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ব্যবস্থা মোতায়েন করছে। জাপান সরকারের প্রধান মুখপাত্র ইয়োশিহিদা সুগা চলতি সপ্তাহে বলেন, জাপান সরকার উত্তর কোরিয়ার কোন প্রকার হুমকি বরদাশত করবে না। দেশটির সামরিক বাহিনী হুমকি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
প্রশ্নের মুখে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধের সক্ষমতা
মার্কিন সেনাবাহিনী বরাবরই দাবি করে আসছে, ইরান কিংবা উত্তর কোরিয়া তাদের দেশে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালে তা শনাক্ত করে ধ্বংস করে দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে তাদের। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, পরীক্ষামূলকভাবে ওই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা সফল হলেও বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রে যে তা একই রকম ফলাফল দেবে, তা নাও হতে পারে। কোটি কোটি মার্কিন ডলারের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্ভাব্য ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকাতে সফল হবেই, প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা তা মানতে নারাজ। ওয়াশিংটন-পিয়ংইয়ং উত্তেজনা যখন তুঙ্গে তখন উচ্চারণ করা হলো এ হুঁশিয়ারি। এর আগে পেন্টাগন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সফল পরীক্ষা চালানোর দাবি করেছে। এ সব পরীক্ষার সময় যুদ্ধের প্রকৃত পরিস্থিতি ফুটিয়ে তোলা হয়নি বলে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে,বার্তা সংস্থা রয়টার্স। অথচ মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ১৮ বছর ধরে গবেষণা এবং এ ব্যবস্থা তৈরিতে ৪০০০ কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে। মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা সংস্থা বা এমডিএ গত মে মাসে ১৮ দফা পরীক্ষা চালিয়ে ১০ বার সফল হয়েছে। আমেরিকাকে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র থেকে রক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয় গ্রাউন্ড-বেজড মিডকোর্স ডিফেন্স বা জিএমডি নামের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। জিএমডির জন্য চালানো এ পরীক্ষা সঠিক ভাবে করা হয়নি বলে দাবি করা হয়েছে। এ পরীক্ষায় উত্তর কোরিয়ার হুমকির বিষয়টি সঠিক ভাবে প্রতিফলিত হয়নি। পরীক্ষায় ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দেয়ার যে সব পদ্ধতি গ্রহণ করা হয় তা সঠিক ভাবে প্রয়োগ করা হয়নি। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থার নিশ্চিত সফলতা কখনও দাবি করা যায় না। তারা মনে করেন, এটা বন্দুক থেকে ছোড়া একটা গুলিকে গুলি করে প্রতিরোধ করার মতো বিষয়।
অর্ধ কোটি উ. কোরীয় তরুণ যুদ্ধাস্ত্রে রূপান্তরিত হবে
উত্তর কোরিয়ার ৫০ লাখ তরুণকে পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্রে রূপান্তর করা হবে। তাদের দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে বিশ্বের মানচিত্র থেকে। বাস্তব নয়, এটি উ. কোরিয়ার একটি প্রচারণামূলক ভিডিও বার্তা। ওই ভিডিওতে দেখা গেছে পিয়ংইয়ং সিটি ইয়ুথ লিগ কমিটির ফার্স্ট সেক্রেটারি মুন চোল কোরিয়ার তরুণ সমাজকে ৫০ লাখ মানব বুলেট হিসেবে ব্যবহারের শপথ নিচ্ছেন। সম্প্রতি দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সিতে প্রচারিত ভিডিওর বরাত দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম নিউজ.কম খবরটি জানিয়েছে। নিউজ.কমের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার কিম ইল সাং স্কয়ারে একটি গণসমাবেশ হয়। ওই সমাবেশে মুন চোল বলেন, এ দেশের তরুণ সমাজ ৫০ লাখ মানব বুলেট, বোমা, পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্রে পরিণত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে। সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের অনেকের হাতে বিভিন্ন সেøাগানযুক্ত ব্যানার ও পোস্টার ছিল। সেখানে লেখা- পারমাণবিক গর্জন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হামলে পড়.... আমাদের গায়ে যারা টোকা দেবে তারা মৃত্যু থেকে বাঁচতে পারবে না....... একটি প্রতিশোধমূলক ধ্বংসাত্মক হামলা হোক....... চল আমরা সর্বোচ্চ নেতা কমরেড কিম জং উনের সম্মান বজায় রাখতে বুলেট আর বোমা হই। কোরিয়ার ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্য কিম কি নামও ওই সমাবেশে বক্তৃতা দেন। যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্রদের নির্লজ্জ গ্যাংস্টারের মতো আচরণকারী আখ্যা দিয়ে কোরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের নিন্দা জানান। তিনি বলেন, কোনও নিষেধাজ্ঞা এবং চাপ দিয়েই উত্তর কোরিয়াকে শাসানো যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থনকারী দেশগুলোকে হুঁশিয়ার করে কিম কি নাম বলেন, যেসব প্রতিবেশী দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের হাতের পুতুল হয়ে নাচে তারা কোরীয় উপদ্বীপের পরিস্থিতিকে বিপন্ন করা এবং এই অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলার দায় এড়াতে পারবে না। উল্লেখ্য, উ. কোরিয়ার ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষার বিপরীতে মার্কিন প্রস্তাবে সমর্থন দিয়ে জাতিসংঘের নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে পিয়ংইয়ং-ওয়াশিংটন উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। শুরু হয় দ্ইু দেশের শীর্ষ নেতার পারস্পরিক হুমকিধামকি। এক পর্যায়ে উ. কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের গুয়ামের মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পরিকল্পনা ঘোষণা করে। জবাবে দেশটিকে ধূলায় মিশিয়ে দেওয়া’র হুমকি দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সূত্র : এএফপি, রয়টার্স ও নিউজ.কম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্র


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ