নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
শামীম চৌধুরী, ধর্মশালা থেকে : হিমালয় পর্বতের পাদদেশে ধর্মশালার মাঠ, বৃষ্টিতে পাহাড় বেয়ে নেমে পড়া পানি ধর্মশালা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মাঠে জমে ক্রিকেট খেলাটা অসম্ভব হয়ে পড়াই স্বাভাবিক। অথচ, ধর্মশালা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মাঠ করলো বিস্মিত! প্রচলিত আইডিয়ার ড্রেনেজ সিস্টেমে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়াম এবং বাংলাদেশের অন্যসব আন্তর্জাতিক ভেন্যুর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিয়ে সবাই যেখানে বিস্মিত। মাত্র ৫ দিন আগে ফাল্গুনে কালবৈশাখীর ঝড়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বাংলাদেশ-ভারত এশিয়া কাপের জম্পেশ ফাইনাল দেখেছে বিশ্ব। হিমাচল রাজ্য ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ও যে ধর্মশালার ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ড্রেনেজ ব্যবস্থায় হাততালি পেতেই পারে। সকাল থেকে অবিরাম বৃষ্টি থেকে পিচ এবং মাঠ বাঁচাতে পুরো মাঠকেই ঢেকে রাখা হয়েছিল কাভার দিয়ে। সেই মাঠে নেদারল্যান্ডস-ওমানের প্রথম ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষিত হওয়ার পর রাতে ফ্লাড লাইটের আলোয় বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ডের ম্যাচটি নিয়েও ছিল শঙ্কা। ধর্মশালায় দিনব্যাপী বেরসিক বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় স্থানীয় সময় ৮টা ১৬ মিনিটে পিচ কভার খুলতে পেরেছে মাঠকর্মীরা। চার চারটি সুপার সপার দিয়ে মাঠ শুকানোর কাজ সম্পন্ন করে সেই মাঠই কি না রাত ৮টা ৩০ মিনিটে ম্যাচ অফিসিয়ালরা মাঠ পরিদর্শনে সন্তুষ্ট! রাত সোয়া ৯টায় ৮ ওভার কমিয়ে ম্যাচ গড়িয়েছে মাঠে। আর এমন এক বৃষ্টি বিঘিœত কার্টেল ওভারের ম্যাচে হিমাচলের মৌসুমী আবহাওয়াকে জবাব দিতে তামীম ব্যাটে তুলেছেন ঝড়।
১২ ওভারের মধ্যে খেলা হয়েছে মাত্র ৮ ওভার। টসে হেরে ব্যাটিং পেয়ে বরং স্যাঁতসেতে উইকেট বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতায় ফেলবে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের, এমনটাই ছিল শঙ্কা। অথচ, শঙ্কা উড়িয়ে ভেজা পিচ এবং ভারি আউটফিল্ডে তামীম তুলেছেন ঝড়! যে ঝড়ে ২৬ বলে ৪ চার ৪ ছক্কায় তামীমের ব্যাট থেকে এসেছে ৪৭ রান। ৯টা ৫৫ মিনিটে মুষলধারে বৃষ্টি হানা দিলে সেখানেই শেষ করতে হয় ম্যাচ। জানেন, পরিত্যক্ত ম্যাচে ৪০ মিনিটে খেলা হয়েছে মাত্র ৪৮টি বল, সেই ৪৮ বলে বাংলাদেশের স্কোর ৯৪/২! ওভারপ্রতি ১১.৭৫! এমন বাংলাদেশকে কি আগে কখনো দেখেছে কেউ?
ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়ে আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে নিয়েছে বাংলাদেশ দল। তবে লাল রঙের নুতন জার্সিতে ধর্মশালার ম্যাড়মেড়ে দিনের আড়মোড়া ভেঙেছেন তামীম। ২০ ওভারের ম্যাচে ফিল্ড রেস্টিকশনের প্রথম ৬ ওভারে যেখানে সতর্ক ব্যাটিংকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে বাংলাদেশ টপ অর্ডাররা। সেখানে গতকাল ফিল্ড রেস্টিকশনের প্রথম ৪ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ৫২/০! প্রথম ওভারটি বাদ দিলে অবশিষ্ট ৭ ওভারের কোনোটাই ছিল না চার ছক্কাহীন! শুরুটা করেছেন তামীম আইরিশ পেসার বোলার র্যানকিংকে স্কোয়ার লেগ এর উপর দিয়ে ছক্কা, পরের বলটিতে বোলারস ব্যাক ড্রাইভে বাউন্ডারি! ওই ওভারের ১৬ রানে তামীম ঝড়ের পূর্বাভাস ছিল। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৫৮ বলে ৮৩ রানের হার না মানা ইনিংস থেকে টনিক পেয়ে এদিন অন্য এক তামীমকেই দেখেছে বিশ্ব। প্রথম ৪ ওভারে দলের ৫২’র মধ্যে তামীমের স্কোর ৩৯। আইরিশ স্পিনার ডকরেলকে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে আসার আগে স্কোর বোর্ডে তামীমের রান ২৬ বলে ৪৬। ৩টি চারের পাশে ৪টি ছক্কা! আন্তর্জাতিক টি-২০ ক্যারিয়ারে যে ছেলেটির ছক্কার সংখ্যা সর্বমোট ২০টি, সেখানে সর্বশেষ ২ ইনিংসে ছক্কা ৭টি! কি করেননি এদিন তামীম? রিভার্স সুইপে মেরেছেন বাউন্ডারি, মেরেছেন ডাউন দ্য উইকেটে ছক্কা!
পুরোপুরি স্বাধীনতা নিয়ে করেছেন ব্যাটিং, তা দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছে সৌম্য এবং রুম্মানও। ভাগ্যটাও এদিন ভালো বাংলাদেশ দলের। ইনিংসের ৪র্থ বলে মুর্তাগের বলে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে গেছেন সৌম্য, তখন রানের দেখাই পাননি এই বাঁ-হাতি। সেই সৌম্য ১৩ বলে ২০ রানের ইনিংস শেষে ফিরেছেন ড্রেসিংরুমে। প্রথম ৪ বলে মাত্র তিনটি সিঙ্গল। সেখান থেকে ম্যাক ব্রেইনকে ডাউন দ্য উইকেটে এমন এক ছক্কা, যে আছড়ে পড়ল ভিআইপি গ্যালারির উপরে! ৯ বলে ১৩ রানের হার না মানা ওই ইনিংসকেও যে হাততালি দিতে হচ্ছে। ওমানের বিপক্ষে আগামীকালকের ম্যাচটি সুপার টেনের টিকিট পেতে বাংলাদেশের জন্য হয়ে গেল অলিখিত ফাইনাল। জানেন, ওই ম্যাচটি বৃষ্টি ভেসে গেলেও কিন্তু শংকার কিছুই নেই। ২ ম্যাচ শেষে ওমানের সঙ্গে পয়েন্ট সমান হলেও (৩ পয়েন্ট) নেট রান রেটে বাংলাদেশ যেখানে +০.৪০০, সেখানে ওমানের +০.২৮৩। তবে সুপার টেন এ ওঠার লড়াইয়ের আগে ওমানকে ভয় ধরিয়ে দিতে যে ব্যাটিংটা ছিল জরুরি, সেই প্রদর্শনীটা কিন্তু ঠিকই করতে পেরেছে বাংলাদেশ দল। ধর্মশালার বৃষ্টিতে ২টি ম্যাচ ভেসে যাওয়ায় সুপার টেন এর লড়াই থেকে ছিটকে পড়তে হলো আয়ারল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডসকে। রইল শুধু তাদের আনুষ্ঠানিকতা রক্ষার ম্যাচ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।