পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উবায়দুর রহমান খান নদভী : প্রতিদিন সংবাদপত্র ও অন্যান্য গণমাধ্যমে এখন শুধুই হতাশার খবর। চোখ খুললেই দেখা যায়, আজও ঢাকা চট্টগ্রাম বা সিলেট থেকে হজ ফ্লাইট বাতিল। ছবিতে দেখা যায়, বিপন্ন চেহারার হজযাত্রী নারী পুরুষ বসে আছেন ঘোর অনিশ্চয়তা নিয়ে। বারবার হজ ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে। প্লট বরাদ্দ নতুন করে পেলেও উড়তে পারছে না বিমান। অনেক হাজীর ভিসার দরখাস্তই করা হয়নি। অনেকে ভিসা পেয়েও ফ্লাইটে চড়ছেন না। তাদের নাকি বাড়ি ভাড়াই করা হয়নি। যত কর্তৃপক্ষ সবাই একে অপরকে দুষছেন। নিজেকে দায়মুক্ত করতে আলাদা আলাদা সংবাদ সম্মেলন করছেন তারা। এজেন্সিগুলো বলছে এক রকম, বিমান কর্তৃপক্ষ বলছে এক রকম, আর ধর্ম মন্ত্রণালয় বলছে অন্য রকম। বিমানের এমডি বলেছেন, তারা ইতোমধ্যেই ৪০ কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত তা ১৫০ কোটি হতে পারে। সবার কথা শুনে আর হজযাত্রীদের কষ্ট, কান্না ও ভোগান্তি দেখে মনে হয়, হজ বিষয়টা হঠাৎ এসে গেছে। এ যেন সরকারের জন্য এ দেশের মানুষের জন্য অজানা কোন দুর্যোগ। কিছুতেই যেন কেউই এর ব্যবস্থাপনা করে শেষ করতে পারছেন না। আসলে কি তাই? হজ তো জীবনভর চলে এসেছে। গত কয়েক বছর যাবৎ হাজীর সংখ্যা বাড়তে বাড়তে বর্তমানে লাখের ওপরে উঠেছে। হজ ব্যবস্থাপনার জন্য ২০০৯, ২০১০, ২০১১ তে সরকার সউদী আরব কর্তৃক প্রশংসিতও হয়েছিল। এরপর থেকে কী হয়ে গেল? হজ নিয়ে দুর্ভোগ যেন শেষই হয় না। এ বছর কষ্ট, দুর্ভোগ যেন সকল সীমা ছাড়িয়ে গেছে। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, নাস্তিক মুরতাদ ও ধর্মবিদ্বেষী কোন চক্র ইচ্ছাকৃতভাবে হজকে কষ্টকর, চরম অব্যবস্থাপূর্ণ প্রমাণ করে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে হজবিমুখ করতে চাইছে। কেউ কি চায় যে, দিন দিন হজের প্রতি বাংলাদেশীদের আবেগ ভালোবাসা এভাবে বাধাগ্রস্ত হোক? মানুষ হজে যাওয়ার সাহস না পাক?
ইসলামের বুনিয়াদ যে পাঁচটি বিষয়ের ওপর স্থাপিত তার অন্যতম হজ। ঈমান, নামায, রোযা ও যাকাতের মতোই হজ একটি ফরয ইবাদত। হজ অর্থ আল্লাহর ঘরের উদ্দেশে যাত্রা করে হজের মৌসুমে নির্ধারিত স্থানে গিয়ে হজের বিধি-বিধান পালন করা। যার শক্তি সামর্থ্য ও সুযোগ আছে জীবনে একবার তার জন্য হজ করা ফরয। নফল হজ ও ওমরা বার বার করা যায়। বর্তমানে সারা দুনিয়া থেকে যেসব মুসলিম নারী-পুরুষ হজে যাওয়ার সুযোগ পান তাদের সংখ্যা বিশ-পঁচিশ লাখের মতো। কিছু দিন আগেও এ সংখ্যা ছিল ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ লাখ। হজযাত্রী সংখ্যা প্রতি এলাকার মুসলিম জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে নির্ধারিত হয়। যেমন, সবচেয়ে বেশি হাজী আসেন ইন্দোনেশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া ইত্যাদি থেকে। বাংলাদেশে মুসলিম জনসংখ্যা কম-বেশি পনেরো কোটি। হজের কোটা পাওয়া যায় এক-দেড় লাখ। অথচ গত পাঁচ-সাত বছরের হাজী-সংখ্যা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে বাংলাদেশের প্রয়োজন কমপক্ষে তিন লাখ কোটা। এ বছর হজযাত্রী সংখ্যা এক লাখ সাতাশ হাজারের কিছু বেশি। কিন্তু ২০১৭ সালে আবেদন করে খুব বেশি হাজী যেতে পারেননি। যারা যাচ্ছেন তারা ২০১৬ সালে আবেদন করেছিলেন। জানা গেছে, আগামী বছরের হজযাত্রী কোটা এবারই পূর্ণ হয়ে আছে। কেউ হজে যেতে চাইলে ২০১৯ অথবা ২০ সালের জন্য চেষ্টা করতে হবে। এতে বোঝা গেল মোট তিন বছরের হজযাত্রী কোটা বর্তমান বাংলাদেশে এক বছরেই পূর্ণ হতে পারে। যার সংখ্যা চার-পাঁচ লাখের কম নয়। চলতি বছর বিগত এক-দুই বছর যারা হজ করেছেন তাদের জন্য বাড়তি দুই হাজার রিয়াল, বাংলাদেশি টাকায় কমবেশি ৪৫ হাজার টাকা জমা দেওয়ার শর্ত জুড়ে দিয়েছেন সউদী কর্তৃপক্ষ। অর্থাৎ তারা চান না যে উপর্যুপরি কেউ হজে যাক। এটা টাকা দিয়ে নিরুৎসাহিত না করে শর্ত করে দিলেই হয় যে বাংলাদেশিরা দ্বিতীয় বার হজ করতে চাইলে তাকে তিন বছর পর করতে হবে। সউদী আরবে প্রবাসীদের জন্য যেমন পাঁচ বছরের একটি শর্ত আছে, হজের শৃঙ্খলার জন্য এ ধরনের শর্ত দেওয়া কর্তৃপক্ষের নিয়মের মধ্যে পড়ে।
বাংলাদেশে যে বিপুলসংখ্যক হাজী ধর্মীয় আবেগ ও উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে হজ করে থাকেন এবং প্রতিবছরই তাদের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে, সেটিকে সৎ ও পুণ্যময় দৃষ্টিতে মূল্যায়ন করা সময়ের দাবি। হজ, ওমরা ও ধর্মীয় তীর্থভ্রমণকে নিছক লাভজনক ব্যবসা তথা পয়সা কামানোর মহা সুযোগ মনে করে কাজ করা একটি অমানবিক ও অন্যায় আচরণ। বাংলাদেশে হজযাত্রীদের সাংবার্ষিক ভোগান্তি ও সীমাহীন কষ্ট-দুর্দশা দেখে যে কেউ বুঝতে পারবে যে আমাদের দেশের কিছু লোক এখনো কতটুকু অসভ্য, জালিম ও অমানুষ রয়ে গেছে। ভালো লোক অবশ্যই আছেন। এ দেশে দুর্নীতিবাজ ও লোভী লোকজন অপকর্ম করেন, দায় নিতে হয় গোটা দেশবাসীর। দুর্নীতি করেন সমাজের প্রথম সারির লোকেরা, বদনাম হয় বাংলাদেশের। প্রতিবছরই মিডিয়ায় দেখা যায় অনেক হজযাত্রী যেতে পারছেন না। অনেকে বার বার ফ্লাইট না হওয়ার যন্ত্রণায় ভুগছেন। অনেকে বাড়ি-ঘর থেকে বিদায় হয়ে এসে হজ ক্যাম্পে পড়ে আছেন। চোর, পকেটমার, ছিনতাইকারী, এডিস মশা ও গলাকাটা হোটেল ব্যবসায়ীরা তাদের জ্বালিয়ে মারছে। অনেকে আছেন নানান বাহানায় এজেন্টরা তাদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করছে। অনেকে এমনও আছেন যাদের টাকা-পয়সা মেরে এজেন্টরা পালিয়ে গেছে। হয়তো তারা হজে যেতে পারেননি নতুবা প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ হস্তক্ষেপে ও বদান্যতায় গিয়েছেন। তা ছাড়া যারা হজে গিয়েছেন তাদের সাথে মুআল্লিমদের দুর্ব্যবহার, থাকা-খাওয়া, তাওয়াফ, যিয়ারত, কোরবানী ইত্যাদি নিয়ে ঝগড়া-ঝাঁটি, কথা কাটাকাটি ও ওয়াদা ভঙ্গের বিবরণ কেবল ভুক্তভোগীরাই দিতে পারবেন। এ-ই হচ্ছে বাংলাদেশের লাখো মানুষের নিজের জান-মাল খরচ করে একটি ফরয ইবাদত পালনের ‘শাস্তি’।
যদি বুঝতাম যে, সরকার তার টাকায় হজ করায় অথবা দশ টাকা ভর্তুকি দেয় তা হলে এ ধরনের কষ্ট মেনে নেওয়া যেত। কিন্তু লক্ষাধিক হাজী নিজের লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে হজে যাবেন, সরকার কেবল ব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলা বিধান করবে সেখানে এত দুর্নীতি, লোভ-লালসা, উদাসীনতা কেন তা কারও বুঝে আসার কথা নয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে যেসব দুর্নীতিবাজ হাজীদের কষ্ট দেন অথবা যেসব অদক্ষ ও দুষ্কৃতকারী এজেন্ট হাজীদের জিম্মি করে জন্মেরমতো টাকা কামাই করেন, বাংলাদেশের এই হাতেগোনা মানুষগুলোর কারণে বিদেশে আমাদের বদনাম। প্রবাসীদের বিদেশ যাওয়ার পথ বন্ধ হয়। হজের ক্ষেত্রে প্রতিবছর নতুন নতুন বিধি-নিষেধ, আইন ও যন্ত্রণা। যতই আইন করা হোক, সব ভেঙে অন্যায় দুর্নীতি ও চুরির পথ বের করা একশ্রেণির হজ এজেন্সি ও কর্মকর্তার কাজ। এর সাথে জড়িত আছে সরকারি লোকজন। হজ নিয়ে অপকর্ম, লাখো হাজীর চোখের পানি, বুকফাটা কান্না আর সীমাহীন হাহাকার এসব লোকের জন্য কখন আল্লাহর গজব বয়ে আনবে এ নিয়ে বহুলোকই রাত-দিন শঙ্কিত থাকেন। দেশব্যাপী বহু ওলী দরবেশ আল্লাহওয়ালা ওদের হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন, ভয়াবহ গজব থেকে যেন দেশ ও জাতি রক্ষা পায়।
অবস্থা দেখে মনে হয়, হজযাত্রীর ওপর জুলুম কত রকম ও কী কী তা স্বয়ং ইবলীসকেও বাংলাদেশ থেকে শিখতে হবে। এত ভয়ঙ্কর শয়তানীতে ভরা দেশে আল্লাহর গজব না আসার পেছনে যে কারণগুলো রয়েছে, সর্বশক্তিমান আল্লাহর দরবারে কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি যেন এগুলো তিনি দয়া করে টিকিয়ে রাখেন এবং এ দেশ ও জাতিকে ভয়াবহ আজাব-গজব থেকে রক্ষা করেন। দুনিয়ার বহু দেশে ধর্মীয় উৎসবের সময় জিনিসপত্রের দাম কমানো হয়। মুসলমানরা বহু দেশে রমযান ও ঈদে দ্রব্যমূল্য কমিয়ে দেন। ভারতসহ অনেক অমুসলিম দেশেও হজ উপলক্ষে ভর্তুকি দেওয়া হয়। পশ্চিমা দেশে হজ উপলক্ষে অনেক বিমান কোম্পানি আকর্ষণীয় অফার দেয়। আর শতকরা ৯৩ ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশে হজের সময় বিমানভাড়া দ্বিগুণ করা হয়। যুক্তি দেখানো হয়, ফ্লাইটগুলি তো একমুখী। যায় ভরে ফিরে আসে খালি হয়ে। এ যুক্তি অর্থহীন; কারণ সারা বছরের আয়-ব্যয় নিয়ে কোম্পানির লাভ-লোকসান হিসাব করা হয়। সারা বছর লাগামহীন দুর্নীতি ও পুকুর চুরির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় বিমান কোম্পানি যখন মরে যায় যায় তখন লক্ষাধিক হাজীর কাছ থেকে গলায় পাড়া দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে মনে হয় তারা সব লোকসান তুলে নেবে। সারা বছরের দুর্নীতির সকল ক্ষতি পুষিয়ে নেবে। মন্ত্রণালয়ে অগ্রিম টাকা জমা নিয়ে দুর্নীতি, সময়মতো টাকা ছাড় করা নিয়ে দুর্নীতি। (চলতি বছর টাকা ছাড়ে দেরি হওয়ায়, কিছু হাজীর দুই হাজার রিয়াল বাড়তি জমা করার কথা তাদের না জানানোয় এবং ভিসা ও টিকিট সমন্বয় না করায় প্রায় সত্তর হাজার হজযাত্রীর হজে যাওয়া প্রবল অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে, যা একটি অসভ্য ও মোটা চামড়ার সমাজের জন্য কোনো সংবাদ নাও হতে পারে। কিন্তু এসব একটি সরকার ও সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্টদের জন্য নিঃসন্দেহে চরম গাফলতি ও পাপের কাজ। যার শাস্তি সংশ্লিষ্টদের আজ হোক কাল হোক ভোগ করতেই হবে।) এবারকার হজে মন্ত্রণালয়ের গাফিলতির যে নজির স্থাপিত হয়েছে তা ক্ষমার অযোগ্য। যে ফি না দিলেও চলে সেই চেকইন ফি তারা হাজীদের কাছ থেকে নিয়েছেন। অথচ যে ফি না দিলে হজ করা যায় না সে এয়ারপোর্ট বিল্ডিং ফি তারা এবছর হজ প্যাকেজের অন্তর্ভুক্তই করেননি। বিষয়টি নিয়ে বিমানমন্ত্রী কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর সাথে। প্রধানমন্ত্রী তখন সকল কাজের কাজীর মতোই সিদ্ধান্ত দেন অন্যান্য ফি থেকে সমন্বয় করে হাজীদের বিল্ডিং ফি পরিশোধ করা হোক। এতে না হলে বিমান মন্ত্রণালয় আপাতত বাকি টাকা দিক। মানে মানে হাজীরা হজ করে আসুন পরে সব সমন্বয় করা যাবে। তাছাড়া অপ্রয়োজনীয় ফি কত বছর ধরে নেওয়া হচ্ছে, যদি তা খরচ না হয় তাহলে কি হাজীদের তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়? যদি ফিরিয়ে দেওয়া না হয় তাহলে এ বাবদ আদায় করা কোটি কোটি টাকা কাদের পকেটে গিয়েছে? এতসব প্রশ্ন, ছোট-বড় সব সমস্যা যদি প্রধানমন্ত্রীকেই দেখতে, শুনতে ও সমাধান করতে হয় তাহলে এতোবড় মন্ত্রিসভা, সরকার ও প্রশাসন দিয়ে কাজ কী? অথচ বাংলাদেশে প্রায় সব ক্ষেত্রে এমন দায়িত্বহীনতাই আমরা দেখে অভ্যস্ত।
মন্ত্রণালয় ও হজ এজেন্সির কিছু দুর্নীতিবাজ মিলে কী কী অপকর্ম হজযাত্রীদের নিয়ে করে তা সরকারের হাইকমান্ড ও বিভিন্ন এজেন্সির জানা একান্ত জরুরি। নতুবা ইসলামের এ মহান ইবাদতকে নিয়ে এ ধরনের অন্যায় চলতেই থাকবে। হজের নিবন্ধনে দুর্নীতি হয়। সফটওয়্যার নির্মাণে হয় জালিয়াতি। বোগাস নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। হাজীদের সেবায় সরকারি লোকজন পাঠানোর নাম করে নানা শ্রেণি ও পেশার এমন সব লোক পাঠানো হয় যারা হাজীদের গাইড হওয়া তো দূরের কথা সউদী আরব গিয়ে ফরয নামাযগুলো পর্যন্ত পড়ে না। হজের মাসআলা তো জানেই না তারা সে দেশের রাস্তা-ঘাট, পূর্ব-পশ্চিম পর্যন্ত চেনে না। অতীতে এমন কিছু দলীয় ক্যাডার হজগাইড নামে পাঠানো হয়েছে যারা নিয়মিত মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে। চিকিৎসক টিমের সহকারী বানিয়ে পাঠানো হয়েছে সহকারী সচিব থেকে পিয়ন, দারোয়ান, মালী পর্যন্ত। হাজীদের টাকা থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মী হজে পাঠানো হয়েছে যাদের প্রত্যেকের পেছনে খরচ দেখানো হয়েছে আট-দশ লাখ টাকা। হজের সময় শপিং ও নেতাদের ব্যাগ বহন ছাড়া তাদের আর কোনো কাজ থাকে না। নাম রিপ্লেসমেন্টে দুর্নীতি হয়। টাকার বিনিময়ে আসল হজযাত্রী বাদ করে নতুন কাউকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। টিকিটের কালো বাজারি তো একটি ওপেন সিক্রেট বিষয়। কেউ কেউ জেনেশুনে পকেটমার দল পাঠায়। বিধি লঙ্ঘন করে সন্দেহভাজন নারীদের পাঠায়। আর ফিরে আসবে না জেনেও মোটা অংক নিয়ে এমন লোক পাঠায়, যার জন্য ওমরা ভিসা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এদের অপকর্মের ফলে সাধারণ হজযাত্রীদের সন্দেহের চোখে দেখা হয়, পুলিশি হয়রানি করা হয়। হজযাত্রী পালিয়ে গেলে লাইসেন্স বাতিলের বিধান করেও লাভ হয় না। কারণ, কয়েক জন দুর্বৃত্ত মিলে কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে পালিয়ে যাওয়া যাত্রী পাঠায় এবং জেনেশুনেই লাইসেন্সটি বাতিল মেনে নেয়। হজযাত্রীদের ট্রলি ব্যাগ কেনা নিয়ে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়। কিছু হারামখোর এমনও আছে যারা শত শত হাজীর কোরবানীর টাকা ও মূল তহবিল মেরে দেয়। অর্থাৎ হাজীদের টাকা নিয়ে পশু কোরবানী না করেই বলে কোরবানী হয়ে গেছে। এ জন্য কোনো আল্লাহওয়ালা, ভদ্রলোক বা বিশিষ্ট আলেম এখন হজের খেদমতের সাথে কোনোভাবেই জড়িত হতে চান না। হজযাত্রী সেবা বংলাদেশে এখন একটি ব্যবসা কেবল নয়, দুর্নীতি ও চুরির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। টাকা বানানোর এমন উর্বর ক্ষেত্র মনে হয় এখন আর নেই। অথচ এত অব্যবস্থাপনা দুর্নীতি ও লুটপাটের ফলে সংশ্লিষ্ট কোন মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন বা তাকে অপসারণ করা হয়েছে কিংবা দায়ী কারও জেল-জরিমানা হয়েছে এমন কোনো নজির এ দেশে নেই। অনেক এজেন্ট দীর্ঘ দিন সততার সাথে হজযাত্রীর সেবা করেও দাঁড়াতে পারছেন না। অথচ কিছু দুর্বৃত্ত এ কাজটি করে অল্পদিনে কোটিপতি হয়ে যাচ্ছে। দীন ধর্মের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই এমন ব্যবসায়ীদের ঢালাওভাবে হজ লাইসেন্স প্রদান ও রাজনীতিকীকরণকেও অনেকে এসবের জন্য দায়ী করে থাকেন।
আমরা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের কাছে বিনীত আবেদন জানাই, হজব্যবস্থাপনা দুর্নীতিমুক্ত করুন। সৎ ও খোদভীরু লোকদের এতে সম্পৃক্ত করুন। যারা এসব খেদমতে জড়িত তারা সওয়াবের জন্যই হজযাত্রীদের খেদমত করুন। নিজেদের লোভ সংবরণ করুন। প্রত্যেকেই নিজ নিজ কাজ ও আচরণের ক্ষেত্রে সর্বশক্তিমান আল্লাহকে ভয় করুন। প্রতি বছর হজযাত্রী ব্যবস্থাপনার এ মহান কাজ যেসব সৎকর্মশীল আমলা, কর্মকর্তা ও খোদাভীরু এজেন্সির মাধ্যমে সম্পাদিত হচ্ছে আল্লাহ তাদের উত্তম বিনিময় দান করুন। যারা পথ হারিয়েছেন তাদের পাপ ও কলুষ যেন নির্দোষ লোকেদের স্পর্শ না করে। ইসলামের অন্যতম রোকন এই ইবাদতটি নিয়ে আর অবহেলা ও অপকর্ম যেন হতে না পারে, এ বিষয়ে ছোট বড় দায়িত্বশীল সকলে বিশেষভাবে মনোযোগী হোন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।