Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দালাইলামার আশ্রয়স্থলে

প্রকাশের সময় : ১২ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশ্বকাপের ডায়েরী, শামীম চৌধুরী, ধর্মশালা (ভারত) থেকে : ধর্মশালার চেয়েও অনেক উঁচুতে ম্যাকলিয়ডগঞ্জের অবস্থান। হিমালয় পর্বতকে খুব কাছ থেকে দেখার, হিমালয়ের উপরের তুষারপাতের দৃশ্য চোখ জুড়িয়ে নেয়ার এর চেয়ে ভাল সুযোগ তো হতে পারে না কারো। পর্যটকদের কাছে তাই ধর্মশালার গুরুত্বটা বাড়িয়ে দিয়েছে ম্যাকলিয়ডগঞ্জ। পাহাড়ের গিরিপথ বেয়ে উঠতে হবে ১৭৫০ মিটার উপরে। ছোট্ট এই শহরটিকে ঘিরে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছে স্বাধীনতাকামী তিব্বতের ধর্মীয় গুরু দালাইলামা। বাস্তুভিটে হারিয়ে ৫ হাজারের মতো তিব্বতীয় ধর্মশালায় করছে উদ্বাস্তু জীবন যাপন। তার পরও তাদের ধর্মীয় গুরু এবং স্বাধীনতাকামী নেতা দালাইলামার আশ্রয়স্থল ম্যাকলিয়ডগঞ্জ বলেই পর্যটকদের ভীড় সারা বছর লেগেই থাকে এখানে।
চীনের কব্জা থেকে তিব্বতকে স্বাধীন করার ডাকটা দিয়েছেন তিব্বতের এই বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু সেই ১৯৫৯ সালে। ১৯৪৯ সালে চীনের হাতে তিব্বত চলে যাওয়ার এক দশক পর। দীর্ঘ ৫৭ বছর ধরে দালাইলামার এই আন্দোলনে টলেনি চীন। তবে দালাইলামার আন্দোলনের সূত্রপাত যেখানে, সেই ধর্মশালায়ই এখন স্বাধীনতাকামী তিব্বতীয়দের তীর্থভুমি। তিব্বতের স্বাধীনতার বানী সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়ে নির্বাসিত জীবন যাপনে পেয়ে গেছেন নোবেল পুরস্কার। ১৯৮৯ সালে নোবেল পুরস্কারের পর পরই দালাইলামার জন্য হিমাচল প্রদেশ সরকার ম্যাকলিয়ডগঞ্জে দিয়েছে এক খÐ জমি। যেখানেই গড়ে উঠেছে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের জন্য একটি বিশাল মন্দির। যে মন্দিরের ভেতরে হয়েছে ঠিকানা দালাইলামার। এই মন্দিরকে ঘিরে গড়ে উঠেছে কমপ্লেক্স। সেখানেই ২০০০ সালে স্থাপিত হয়েছে তিববতীয়দের যাদুঘর। যাদুঘরটা উদ্বোধন করেছেন দালাইলামা নিজেই।
১৯৫০ সালের অক্টোবরে চীনের ৪০ হাজার সৈন্যের সঙ্গে স্বাধীনতাকামী তিব্বতের ৬ হাজার সৈন্যের প্রানান্ত লড়াই, সেই লড়াইয়ে প্রাণ হারানো তিববতীয় সৈনিকদের স্মৃতি স্তম্ভ উঠেছে গড়ে এখানে। চীনের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে না পেরে ১৯৫১ সালের ২৩ মে তিববতের এক দল প্রতিনিধি বাধ্য হয়ে নিজেদের দেশটিকে চীনের হাতে তুলে দেয়ার কাহিনীটাও জানতে পারবেন এখানে এসে। যাদুঘরটি মূলতঃ নির্মিত হয়েছে তিব্বতের স্বাধীনতাকামী জনতার প্রাপ্য অধিকার, স্বাধীন সার্বভৌম তিব্বত প্রতিষ্ঠায় পর্যটকদের সহানুভুতি পেতে। স্বাধীনতাকামী তিব্বতীয়দের জন্য তহবিল সংগ্রহে এখানে আছে দান বাক্স। এক ফ্রেমে টাইম লাইনÑতিব্বতীয়দের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিবর্তনকেই তুলে ধরেছে।
ধর্মশালার কাছে কৃতজ্ঞ তিব্বতের স্বাধীনতাকামী জনতা। কারণ, তাদের আন্দোলেনে যে ধর্মশালা জুগিয়েছে সাহস, আশ্রয়, বাসস্থান। ভবিষ্যত তিব্বতের খসড়া সংবিধান পর্যন্ত এখানে বসেই রচনা করেছে স্বাধীনতাকামী তিব্বতীয়রা। ১৯৯৫ সালে তিব্বত সুপ্রিম জাস্টিজ কমিশনও এই ধর্মশালা থেকেই হয়েছে পরিচালিত।
১৪তম দালাইলামা এখন তিব্বতের ধর্মীয় গুরু, তার মৃত্যুর পর দায়িত্বটা পাবেন ১৫তম দালাইলামা। তবে তাদের উত্তরসূরী হিসেবে যাকে পাওয়ার কথা, সেই পাঞ্চেনলামা শৈশব থেকেই গৃহবন্দি। ১৯৯৫ সাল থেকে তার কোন হদিস জানা নেই তিব্বতীয়দের। আদৌ পাঞ্চেনলামা বেঁচে আছেন কি না, তা জানা নেই তিব্বতীয়দেরও। পৃথিবীর সর্বকনিষ্ঠ রাজনৈতিক কারাবন্দি হিসেবে গিনেস বুক অব রেকর্ডসে নাম উঠতে পারে তার, অন্ততঃ এই বার্তা দিয়ে তিব্বতীয়দের উপর চীনের বর্বরতার কথা জানিয়ে দিচ্ছে যাদুঘরটি। জানেন, দালাইলামার এই আশ্রয়স্থলের নিরাপত্তাকর্মীরাও বাংলাদেশের ক্রিকেটের খোঁজ-খবর রাখেন। একজন তো সাকিব বলতে পাগল। পরিচয়টা বাংলাদেশী সাংবাদিক শুনে বাংলাদেশ দলের শুভকামনাও করেছেন তারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দালাইলামার আশ্রয়স্থলে
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ