পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : সারাদেশে মহাসড়কের বেহাল অবস্থা ও দুর্ঘটনার প্রবনতা বেড়ে যাওয়ায় রেলের দিকে ঝুঁকছে যাত্রীরা। ইঞ্জিন ও কোচ স্বল্পতার কারণে সে চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে রেলওয়ে। শত চেষ্টা করেও সময় মেনে চলছে না ট্রেন। গত ঈদুল ফিতরে লালমনি এক্সপ্রেস ১৭ ঘণ্টা বিলম্বে চলেছে। বেহাল দশায় পড়েছিল উত্তরবঙ্গের আরেক ট্রেন রংপুর এক্সপ্রেসও। সেই যে ঈদের আগে এই ট্রেনে বিপর্যয় শুরু হয়েছে আজ পর্যন্ত তার রেশ কাটেনি। অথচ রেল কর্তৃপক্ষ দাবি করে আসছে, ঈদে ট্রেনের কোনো সিডিউল বিপর্যয় ঘটেনি। ভুক্তভোগিদের মতে, কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী রেলের যাত্রীসেবার মান বাড়েনি। এখনও বিনাটিকিটের যাত্রীদের ভিড়ে প্রথম শ্রেণির কোচেও বাথরুমে যাওয়ার পথ থাকে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত ৫ বছরে রেলে বিনিয়োগ হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এর বিপরীতে দৃশ্যমান কোনো উন্নতি হয়নি। পুরাতন রেল লাইন জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করা ছাড়া রেলপথ বাড়েনি। দ্বিতীয় তিতাস ও ভৈরব রেল সেতুর নির্মাণ কাজ রহস্যজনক কারণে শেষ হচ্ছে না। চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিলে এই সেতু দুটির উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। গত বছর ভারত ও ইন্দোনেশিয়া থেকে ২৭০টি কোচ আমদানী করা হলেও তা ছিল চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল। যাত্রীবাহী কোচের মধ্যে ৬২৬টি মিটারগেজ ও ২৬৬টি ব্রডগেজ কোচের আয়ুষ্কাল রয়েছে। মিটারগেজের ৫৯২টি ও ব্রডগেজের ১৭২টি কোচের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। অন্যদিকে, ৬৮ শতাংশ ইঞ্জিনের আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে গেছে। এ ছাড়া ৪৫ শতাংশ পণ্যবাহী ওয়াগন ও ৭১ শতাংশ রিলিফ ট্রেনের আয়ুষ্কাল পেরিয়ে গেছে। সূত্র জানায়, রেলকে এখন সোজা হয়ে দাঁড়ানোর জন্য ইঞ্জিন, কোচ, ওয়াগন ও রিলিফ ট্রেন প্রয়োজন। এই প্রয়োজন মেটাতে গেলে আরও কমপক্ষে ২ বছর সময় লাগবে। রেলমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক সাংবাদিকদের সাথে আলাপকাল একাধিকবার বলেছেন, রেলের উন্নয়ন দৃশ্যমান হতে আরও দুই বছর সময় লাগবে।
সূত্র জানায়, ২০১২ সালে পৃথক মন্ত্রণালয় গঠিত হওয়ার পর রেলওয়ের দিকে বর্তমান সরকার নজর দেয়। এরই মধ্যে গত ৫ বছরে রেলে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করা হয়েছে। সে তুলনায় রেলের উন্নতি হয়নি। ট্রেনের সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি যাত্রী সেবার মান। সারাদেশে মহাসড়কের বেহাল অবস্থা ও প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনার কারণে রেলের প্রতি ঝুঁকছে যাত্রীরা। সেই চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে রেল। জানা গেছে, গত ঈদুল ফিতরেও আগের বছরের তুলনায় কয়েক হাজার বেশি যাত্রী পরিবহন করেছে রেলওয়ে। তবে টিকিট পেতে গিয়ে যাত্রীদেরকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ভুক্তভোগিরা জানান, রাতভর লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টিকিট হাতে পাওয়ার পর সব কষ্ট ¤øান হয়ে গেছে। কিন্তু নির্ধারিত দিনে ট্রেনে ওঠার পর সেই কষ্ট আবার নতুন করে মনে দানা বেঁধেছে। প্রতিটি ট্রেনেই ছিল বাড়তি যাত্রীদের যন্ত্রণা। এর মধ্যে বিনাটিকিটের যাত্রীই ছিল বেশি। রাজশাহীগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেসের একজন যাত্রী মতিঝিলের এক সরকারী ব্যাংকের কর্মকর্তা বলেন, এতো টাকা খরচ করে পরিবার পরিজন নিয়ে ট্রেনে যাওয়ার উদ্দেশ্যই হলো একটু আরামে ভ্রমণ করা। কিন্তু প্রথম শ্রেণির এসি কামরাতেও গাদাগাদি করে যাত্রী তোলা হয়েছিল। তাতে কোনো যাত্রী প্রয়োজনে বাথরুমেও যেতে পারেনি। ফিরতি যাত্রায়ও একই পরিস্থিতিতে যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। রেল কর্তপক্ষ দাবি করেছে, গত ঈদে ট্রেনের কোনো সিডিউল বিপর্যয় হয়নি। অথচ ঈদের চারদিন আগে থেকে ঢাকা-লালমনিরহাট রেলপথের লালমনি এক্সপ্রেস ১৭ ঘণ্টা বিলম্বে চলাচল করেছে। আরেক ট্রেন রংপুর এক্সপ্রেসও ঈদে ১৩ ঘণ্টা বিলম্বে চলাচল করেছে। সূত্র জানায়, শুধুমাত্র কোচের সমস্যার কারণে এই দুটি ট্রেনের সিডিউল মাসের অধিকাংশ সময়ই বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। বিশেষ করে রংপুর এক্সপ্রেসের কোচের ভ্যাকুয়াম পাইপ ফেটে যায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে প্রায় ১০ বছরের পুরাতন সাদা কোচ রংপুর এক্সপ্রেসে দেয়া হয়। লালমনির কোচ দুই যুগের বেশি পুরাতন। অথচ বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি দূরত্বের ট্রেন এটি। ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, রেল কর্তৃপক্ষ একটু দায়িত্বশীল হলে অন্ত:ত দূরত্বের কথা বিবেচনা করে লালমনিকে একটু ভালো কোচ দিতে পারতো। এ বিসয়ে রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, চাহিদার তুলনায় কোচ রেলে কোচ সংকট প্রকট। জানা গেছে, রেলওয়েতে যাত্রীবাহী কোচ রয়েছে এক হাজার ৬৫৬টি। এর মধ্যে মিটারগেজ কোচ এক হাজার ২১৮টি ও ব্রডগেজ ৪৩৮টি। এসব কোচের মধ্যে ৬২৬টি মিটারগেজ ও ২৬৬টি ব্রডগেজ কোচের আয়ুষ্কাল রয়েছে। আর মেয়াদোত্তীর্ণ মিটারগেজ কোচ রয়েছে ৫৯২ ও ব্রডগেজ ১৭২টি। গত বছর ইন্দোনেশিয়া ও ভারত থেকে ২৭০টি কোচ আমদানী করা হয়। তবে চাহিদার তুলনায় এ সংখ্যা খুবই কম।
অন্যদিকে, বর্তমানে রেলওয়ের বহরে ইঞ্জিন রয়েছে ২৭৮টি। এর মধ্যে মিটারগেজ ইঞ্জিন ১৮৪টি এবং ব্রডগেজ ৯৪টি। ইঞ্জিনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল ধরা হয় ২০ বছর। এ ধরনের ইঞ্জিন রয়েছে ৮৮টি, যার মধ্যে ৪৯টি মিটার গেজ ও ৩৯টি ব্রডগেজ। বাকিগুলোর মধ্যে ৩৭টি আয়ুষ্কাল ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। ৩১-৪০ বছরের মধ্যে রয়েছে আরও ৬০টি আর ৪০ বছরের ঊর্ধ্বে রয়েছে ৯৩টি ইঞ্জিন। সব মিলিয়ে ২৭৮ টি ইঞ্জিনের মধ্যে ১৯০টি ইঞ্জিনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে গেছে। এতে করে পুরাতন মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন দিয়ে সময় মেনে ট্রেন চালাতে হিমশিম খাচ্ছে রেলওয়ে। সূত্র জানায়, বর্তমান সরকারের আমলে ২০টি মিটার গেজ ও ২৬টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন কেনা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও ইঞ্জিন সঙ্কটে ধুঁকছে রেল।
এদিকে, পণ্য পরিবহনে রেলওয়ের ওয়াগন রয়েছে আট হাজার ৬৮০টি। এর মধ্যে ছয় হাজার ৮৫০টি মিটারগেজ ও এক হাজার ৮৩০টি ব্রডগেজ। পণ্যবাহী এসব ওয়াগনের মধ্যে আয়ুষ্কাল রয়েছে চার হাজার ৭৪১টি ওয়াগনের। বাকী তিন হাজার ৯৩৯টির আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে গেছে। বর্তমান সরকারের আমলে তেলবাহী ২৪৬টি ও পণ্যবাহী ২২০টি ওয়াগন কেনা হয়। এই সংখ্যাও চাহিদার তুলনায় একেবারে অপ্রতুল। পুরনো ওয়াগন দিয়ে মালবাহী পণ্য পরিবহন করতে গিয়ে প্রায়ই লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটে ট্রেন যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়ের এটাও একটা বড় কারণ।
অন্যদিকে, দুর্ঘটনাকবলিত পণ্য ও যাত্রীবাহী ট্রেন উদ্ধারে ক্রেন রয়েছে ১৪টি। এগুলোর নয়টি মিটারগেজ ও পাঁচটি ব্রডগেজ। এর মধ্যে ১০টির আয়ুষ্কাল (২০ বছর) পেরিয়ে গেছে। রেলের মেকানিক্যাল বিভাগের একজন প্রকৌশলী জানান, বর্তমান সরকারের আমলে কেনা একটি ক্রেন ঠিকমতো কাজ করে। বাকীগুলো দিয়ে কাজ চালানো গেলেও অনেক সময় নষ্ট হয়। গত মাসে অবশ্য ক্রেন কেনার জন্য রেল জার্মানীর একটি কোম্পানীর সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সেগুলো আসতেও কমপক্ষে দুই বছর সময় লাগতে পারে।
অপরদিকে, প্রতি বছর রেলের বাজেটে বরাদ্দ বাড়লেও নতুন রেলপথ নির্মাণে অগ্রগতি হয়নি। ২০১২ সালে রেল মন্ত্রণালয় গঠনের সময় সারা দেশে রেলপথের দৈর্ঘ্য ছিল দুই হাজার ৮৭৭ কিলোমিটার। গত পাঁচ বছরে নতুন এক কিলোমিটার রেলপথও যুক্ত হয়নি। রেলপথের উন্নয়ন পুরাতন রেলপথের সংস্কারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে। এই সংস্কার নিয়েও আবার রয়েছে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।