Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুদকের হটলাইনে ব্যাপক সাড়া

প্রতিদিনে গড়ে ১০ হাজার ফোন

| প্রকাশের সময় : ৯ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মালেক মল্লিক : দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর হটলাইনে বা কলসেন্টারের ব্যাপক সাড়া পড়েছে। চালু হওয়ার মাত্র ১২ দিনে অভিযোগকারীদের ফোন এসেছে এক লাখের বেশি। এসবের মধ্যে অন্তত ৩শ’র মতো অভিযোগ গ্রহণ করছে দুদক। হল লাইনে সেবাগ্রহণকারীদের বক্তব্য শুনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দিচ্ছে দুদক। এছাড়াও অভিযোগ কারী বিষয়টি নিয়েও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতির অভিযোগটি জানিয়ে দিচ্ছেন রাষ্ট্রের একমাত্র দুর্নীতি বিরোধী প্রতিষ্ঠানটি। এদিকে দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে তিন সদসদ্যের বিশেষ টিম গঠন করেছে কমিশন। এই কমিটির সদস্যরা রাজধানীর যে কোন স্থানে অভিযান চালাতে সার্বক্ষণিক প্রস্তুতও রয়েছে। তবে আগামীতে রাজধানীর বাইরেও এ ধরনের টিম থাকবে বলে জানিয়েছে দুদক। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন চালু হওয়ার পর এই প্রথম কোন সেবা; যা সাধারণ মানুষকে সহজে সম্পৃক্ত করতে পাচ্ছেন। জনগণের সঙ্গে দুদকের প্রত্যক্ষ যোগাযোগের মাধ্যম এই হটলাইন। এটা দেশের প্রান্তিত পর্যায়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে উঠছে। অভিযোগগুলোর মধ্যে ব্যক্তিগত অর্ভিযোগ ও ভূমি অফিসের নানা অনিয়মের বিষয়ে।
দুদক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল ইনকিলাবকে বলেন, ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। অধিকাংশ ফোন করছেন দেশের প্রান্তিক জনগণ। অল্প সময়ের মধ্যে এত ফোন পাওয়ার বিষয়ে দুদক সচিব বলেন, দুটি কারণ হতে পারে। প্রথমত দুদকের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়ছে। দ্বিতীয়ত সরকারি প্রতিষ্ঠানে জনগণ খুব বেশি অন্যায় অবিচারের শিকার হচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে তারা দুদকে এসব অভিযোগ করছেন। তিনি আরো বলেন, তবে দুদকের তফসিলভুক্ত না হওয়ায় অনেক অভিযোগই আমরা গ্রহণ করতে পারি না। দুর্নীতির অভিযোগের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে দুদকের তিন পরিচালকের নেতৃত্বে তিনটি টিম গঠন করা হয়েছে। যারা আপতত রাজধানীর মধ্যে অভিযোগের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবে। তিনি আরো বলেন, আপাতত ৫টি লাইনের কল রিসিভ করা হচ্ছে। আগামী যদি এমনভাবে সেবাকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায় তাহলে অন্তত ৩০ টি লাইন চালু করার পরিকল্পনাও রয়েছে বলে তিনি জানান।
দুদক সূত্রে জানা যায়, ২৭ জুলাই যখনই দুর্নীতির ঘটনা, তখনই অভিযোগ’ কিংবা দুর্নীতির অভিযোগ জানাতে ফ্রি কল করুন এমন বেশ কয়েকটি ¯েøাগানে গত আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে হটলাইনটি। এসময় সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছিলেন, হললাইন জনগণের সঙ্গে দুদকের সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করবে। প্রথম দিনই ফোন আসে ৪ হাজার ৯৫১টি। গত সোমবার ছিল ৯২ হাজার।
গতকাল মঙ্গলবার চালু হওয়ার ১২ দিনের মাথায় হটলাইনে ফোন কলের সংখ্যা ১ লাখ ১২ হাজারে পৌঁছায়। এতে করে দেখা যায়, ১০ কর্মদিবসে গড়ে ১০ হাজারের মতো ফোন এসেছে। যেটি সরকারী কোন প্রতিষ্ঠানে সব চেয়ে বেশি কলের রের্কড। হটলাইনের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে তাদের প্রত্যক্ষ সংযোগ স্থাপিত হবে। দ্রুত দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাবে। দুর্নীতির ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে অথবা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে এমন অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক প্রতিকার বা প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেয়া যাবে বলে জানা যায়। দুদক সূত্রে জানা যায়, হটলাইনটি সফটওয়্যারের প্রথম অংশে জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেমের আওতায় বেশি কিছু তথ্য যে কোন অভিযোগকারীর কল করার সাথে সাথেই চলে আসে। আপাতত দুর্নীতির অভিযোগ জানাতে অফিস সময়ে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত ১০৬ নম্বরে ফ্রি কল করা যাচ্ছে। একাধিক ব্যক্তি একই সঙ্গে অভিযোগ জানাতে পারেন। এ ক্ষেত্রে অভিযোগকারীর নাম ও পরিচয় গোপন রাখা হয়। অভিযোগকারী চাইলে তাঁর বক্তব্য রেকর্ড করা হয়। হটলাইনে ব্যক্তিগত বিষয়ে অভিযোগ জানাতে কল বেশি এসেছে। এর মধ্যে দুদকের আওতাবহির্ভূত অভিযোগের সংখ্যাই বেশি। এসব ক্ষেত্রে অভিযোগকারীর বক্তব্য শুনে তাঁকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেয়া হয়। ক্ষেত্রবিশেষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট ওই প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতির অভিযোগটি জানিয়ে দিচ্ছে দুদক।
কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের তিন তলায় হটলাইন স্থাপন করা হয়েছে। দেশের যে কোন প্রান্ত হতে দুর্নীতি সংক্রান্ত যে কোন কল গ্রহণ করার পর তাৎক্ষণিকভাবে সফটওয়্যার ডেটাবেইজে তথ্য লিপিবদ্ধ করেন। এজন্য ১০টি ডেস্কটপ কম্পিউটার, নেটওয়ার্ক প্রিন্টার, ভয়েস রেকর্ডার, নয়েজ রিডাকশন হেডসেট, সার্ভারের সাথে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক কানেকশন রয়েছে। অভিযোগকারীর যে সব অভিযোগের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান দেয়া সম্ভব হবে না সেক্ষেত্রে কলসেন্টার কর্মী সরাসরি ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আর ওই ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা হবেন উপপরিচালক কিংবা পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তা। অভিযোগ কেন্দ্র থেকে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর সেগুলো দুদকের সেলে পাঠানো হয়। সেখানে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত ৫ আগস্ট দুদক পরিচালক জায়েদ হোসেন খান, মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী ও সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে তিনটি টিম গঠন করে সংস্থাটি। যারা হটলাইনের অভিযোগের বিষয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবেন। কমিশন থেকে তাদের কাজের সুবিধায় পরিবহনসহ সকল সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আপতত রাজধানীর মধ্যে টিমগুলো কাজ করবে। তবে আগামীতে রাজধানীর বাইরেও এ ধরনের টিম গঠন করার চিন্তাভাবনা চলছে।
বেশি অভিযোগ: আভিযোগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আসছে ভূমি ব্যবস্থাপনায় অনিয়মের বিষয়ে। এছাড়াও ভূমি অফিস, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ, কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা),পল্লী বিদ্যুৎ, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন, মাদকদ্রব্য, নারী নির্যাতন, পাসপোর্ট অফিস, রেলওয়ে, ঘুষ লেনদেন, মোবাইল ফোনে অতিরিক্ত টাকা কেটে নেয়া, হাসপাতালে চিকিৎসকদের অবহেলা ও অনুপস্থিতি, নির্বাচন কমিশন প্রভৃতি। সবগুলো গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখছে দুদক। তবে তাদের আওতাধীন না থাকায় সবগুলো আমলে নিতে পারছে না কমিশন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুর্নীতি

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ