নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
জাহেদ খোকন : অ্যাডহক ও মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে বর্তমানে নিজেদের কার্যক্রম চালাচ্ছে দেশের বেশীরভাগ ক্রীড়া ফেডারেশনই। নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ শেষ, তারপরও নতুন নির্বাচন নিয়ে তেমন কোন মাথা ব্যথা নেই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি)। তবে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন (বাহফে) এগুচ্ছে ভিন্ন পথে। তারা নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনে সকলেই ঐক্যমত। ফলে গেল ৩০ জুলাই সর্বশেষ কমিটির মেয়াদ শেষের দিন কর্মকর্তাদের স্বদ-ইচ্ছায় বাহফে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে এনএসসি। ২৭ আগস্ট দেশের অন্যতম বড় এ ফেডারেশনের নির্বাচন। আসন্ন নির্বাচনে কাউন্সিলর সংখ্যা ৮৬ জন। নির্বাচনে পাঁচজন সহ-সভাপতি, এক সাধারণ সম্পাদক, দুই যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক এবং এক কোষাধ্যক্ষ ও ১৯ সদস্যসহ মোট ২৮ পদের জন্য লড়বেন প্রার্থীরা। এবারের নির্বাচনে মুল আকর্ষণ সাধারণ সম্পাদক পদ। যা কিনা ফেডারেশনের কার্যক্রমের মুল চালিকাশক্তি। ইতোমধ্যে এই পদে জমজমাট লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে। দ্বিমুখী লড়াই নির্বাচনী ময়দানে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। সাধারন সম্পাদক হতে আগ্রহী দুই হেভিওয়েট প্রার্থী সর্বশেষ কমিটির দুই সহ-সভাপতি খাজা রহমতউল্লাহ ও আব্দুর রশিদ শিকদার।
তফসিল ঘোষণার অনেক আগে থেকেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেশ সরগরম দেশের হকি অঙ্গন। নতুন কমিটিতে জায়গা করে নিতে প্রায় একমাস আগেই মাঠে নামেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। সবারই প্রত্যাশা সুষ্ঠ নির্বাচনের মাধ্যমে উন্নতীর ছোঁয়া লাগবে দেশের হকিতে। কিন্তু আদৌ কি তা সম্ভব? নাকি আবারও অশনি সংকেত অপেক্ষা করছে বাংলাদেশ হকির জন্য। সাধারণ সম্পাদক পদে খাজা রহমতউল্লাহ এবং আব্দুর রশিদ শিকদার নিজেদের অবস্থানে থেকে নির্বাচনে লড়তে প্রস্তুত। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে কেউ কাউকে ছাড় দিবেন না। ইতোমধ্যে রশিদ শিকদার তৃর্ণমূল পর্যায় থেকে প্রচারণা শুরু করলেও রহমতউল্লাহ এগুচ্ছেন ভিন্ন পথে। তিনি হাই কমান্ড এবং জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদ, যারা ফোরাম নামে খ্যাত তাদের আনূকুল্যে এগিয়ে যেতে চাইছেন। আর তাই যদি হয় তবে নির্ঘাত অশনি সংকেত দেখা দিচ্ছে হকিতে, এটা বলাই বাহুল্য। কারণ এই খাজা রহমতউল্লাহর দায়িত্বকালেই সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ হকির।
পেছনে ফিরলে দেখা যায়, ২০১৩ সালের জুলাই মাসের শেষ দিকে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলো হকি ফেডারেশনের সর্বশেষ নির্বাচিত কমিটি। তখন নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন খাজা রহমতউল্লাহ। এরপর নির্বাচনী জটিলতায় বিদ্রোহী হয়ে ওঠে প্রিমিয়ার লিগের পাঁচ দল যথাক্রমে ঢাকা মোহামেডান, মেরিনার ইয়াংস, বাংলাদেশ স্পোটিং, ওয়ারী ও ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব। তাদের সিদ্ধান্ত ছিলো রহমতউল্লাহ’র অধীনে ফেডারেশনের কোন কার্যক্রমে অংশ নিবেনা তারা। যে কারণে দুই বছর গভীর সংকটে ছিলো দেশের হকি। এই সময় বিদ্রোহীরা (ওয়ান্ডারার্স বাদে) প্রিমিয়ার লিগসহ ঘরোয়া সব টুর্নামেন্টই বর্জন করে। ফলে দেশে হকির জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। তবে দেরীতে হলেও সংকট কেটে যায়। অনেকটা বাধ্য হয়েই সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান রহমতউল্লাহ। ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর তিনি পদত্যাগ করলে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হন আব্দুস সাদেক। খাজা রহমতউল্লাহ বসেন সহ-সভাপতির চেয়ারে। এরপরেই বিদ্রোহীরা নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসে। বেগবান হয় হকির কার্যক্রম।
তবে আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের হকিবোদ্ধাদের মনে নানা প্রশ্ন জেগেছে। যার অন্যতম হচ্ছে- যদি হাই কমান্ড ও ফোরামের মদদ নিয়ে রহমতউল্লাহ আবারও ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসেন তাহলে কী সেই চার বছর আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না? আবারও যে ক্লাবগুলো বিদ্রোহী হয়ে উঠবে না তার গ্যারান্টি কোথায়? ২৭ আগস্টের নির্বাচনকে সামনে রেখে উষা ক্রীড়া চক্রের আব্দুর রশিদ শিকদার নির্বাচনী মাঠ গরম রাখলেও আবাহনীর খাজা রহমতউল্লাহ এতোদিন ছিলেন নিরব। রশিদ জেলা শহর গুলোতে কাউন্সিলদের সঙ্গে মতবিনিময় করে প্রচারণা চলালেও রহমতউল্লাহ ছিলেন হাইকমান্ডের অপেক্ষায়। তিনি বরাবরই ঐক্যমতের প্যানেলের কথা বলে আসছিলেন। শেষ পর্যন্ত রহমতউল্লাহকে সমর্থন দিয়েছে আবাহনী। গত ৩ আগস্ট এক সভায় আবাহনী কাছে পেয়েছে জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদ তথা ফারামকে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপি’র সেই সিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন আজম নাসির উদ্দিন, আশিকুর রহমান মিকু ও সিরাজউদ্দিন আলমগীরসহ ফোরামের অনেক নেতাই। বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে, পাপনই খাজা রহমতউল্লাহর প্যানেল ঘোষনা করবেন। খুব শিঘ্রই আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নাকি এই প্যানেল ঘোষনা দেয়া হবে।
রশিদ শিকদার আগেই ঘোষনা দিয়েছেন নির্বাচন করার। সে অনুযায়ি কাজও করছেন তিনি। প্রিমিয়ার, প্রথম ও দ্বিতীয় বিভাগ লিগের ক্লাবগুলোর ভোট আছে ৩১টি। তন্মধ্যে ২৪/২৫ টি ভোট তিনি পাবেন বলে আশা করছেন। জেলা থেকে কমপক্ষে ১৫টির বেশি ভোট রশিদের, এমন দাবী তার। সে হিসেবে ৪০ ভোট থাকতে পারে রশিদের ঝুলিতে। বিপরীতে রহমতউল্লাহ ফোরামের ৪১ ভোটের উপর নির্ভরশীল। সঙ্গে অল্প সংখ্যক ক্লাব ও সংস্থা যোগ হলেই নির্বাচিত হবে তিনি। কিন্তু ফোরামের সেই ৪১ ভোটের মধ্যে ক’টি যায় রহমতউল্লাহর ঝুলিতে এখন সেটাই দেখার বিষয়। কারণ ফোরামের অনেকেই আছেন যারা ব্যক্তিগতভাবে রশিদকে পছন্দ করেন। তারা কি নির্বাচনের সময় নিজেদের পছন্দনীয় ব্যক্তিকে ভোটদানে বিরত থাকবেন? এই ফোরামের সমর্থনেই গত নির্বাচনে খাজা রহমতউল্লাহ আসীন হতে পেরেছিলেন সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে। অথচ যখন নিজেদের মধ্যে চেয়ার পরিবর্তন করা হয় (খাজা রহমতউল্লাহ ও আব্দুস সাদেক) তখন ফোরামকে কিছুই জানাননি তিনি। এনিয়ে ফোরাম নেতা আশিকুর রহমান মিকু তখন ক্ষোভ প্রকাশ করলেও আসন্ন নির্বাচনের আগে রহমতউল্লাহ কিভাবে তাদের আনুকুল্য পেলেন তা কারো বোধগম্য নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।