গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
সায়ীদ আবদুল মালিক : রাজধানীর ফুটপাথের হকার উচ্ছেদ নিয়ে চলছে নানা রাজনীতি। অভিযোগ উঠেছে, দিনের বেলায় উচ্ছেদ অভিযানে নির্বাচিত কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মী আর সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা এ সাথে কাজ করলেও রাতের বেলায় হকারদের নিয়ে গোপনে পুনরায় দখলের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। গত প্রায় সাড়ে তিনমাস ধরে ঢাকার গুলিস্তান, ঢাকা মেডিকেলের আশপাশের এলাকা, সদরঘাট ও নিউ মার্কেট এলাকায় বারবার উচ্ছেদ অভিযান চালানোর পরও ওই সমস্ত এলাকা থেকে দখলদারদের এক চুলও সরাতে পারেনি। হকার উচ্ছেদ এখন দুই মেয়রের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সকালে উচ্ছেদ বিকালে দখল, বিকালে উচ্ছেদ সকালে দখল। কোনো কোনো এলাকায় ফুটপাত পার হয়ে হকাররা এখন মূল রাস্তা দখল করে নিয়েছে। আবার স্থায়ী স্থাপনা উচ্ছেদের পর তা আবার কয়েকদিনের মধ্যেই পুনঃনির্মাণ হয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
কিছুদিন আগে এক অনুষ্ঠানে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান উপরে ফিটফাট, ভেতরে সদরঘাট এই প্রচলিত প্রবাদটির বিরোধিতা করে বলেছিলেন, দেখতে যদি চাও ফিটফাট চলে এসো সদরঘাট। মন্ত্রীর এমন আশাজাগানিয়া বক্তব্য শোনার পর যদি কেউ বর্তমানে ওই এলাকায় গিয়ে থাকেন তাহলে তাকে হতাশ হয়েই ফিরতে হবে। কারণ প্রবাদের সদরঘান আর মন্ত্রীর বক্তব্যের পররে সদরঘাটের কোন তফাৎ নেই। পুরান ঢাকার বাংলাবাজার ওভারব্রিজ থেকে সদরঘাট টার্মিনালের মাত্র তিন মিনিটের সড়কের দু’পাশের ফুটপাতই একেবারে বেদখল হয়ে রয়েছে। এখানে ফুটপাত তো দূরের কথা রাস্তার অর্ধেকজুড়ে বসে থাকে হাকাররা। অথচ নৌপথে যাতায়াত করতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ এ সড়কটিই ব্যবহার করেন। ব্যস্ততম এ সড়কে এখন সকাল ১০টা পর থেকে একটানা রাত পর্যন্ত লেগে থাকে যানজট।
শুধু সদরঘাটের এ সড়কটি নয়, একই চিত্র পল্টন, গুলিস্তান, বাবুবাজার হয়ে ভিক্টোরিয়া পার্ক সড়কেও। সড়কটি থেকে ফুটপাত দখল মুক্ত রাখার জন্য ২০১২ সালের ২৬ ফেব্রæয়ারি জনস্বার্থে করা একটি রিটে উচ্চ আদালত জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত সড়কের দু’পাশের ফুটপাত দখলমুক্ত রাখার নিদের্শনা দেন। এ ছাড়া ওই এলাকায় মূল সড়ক দখল করে রাখা রড, বালু বা যে কোনো পণ্য, ট্রাক, ভ্যানগাড়ি ও ঠেলাগাড়ি পার্কিং বন্ধের নির্দেশনাও দেন আদালত। এর জন্য পল্টন, বংশাল, সূত্রাপুর ও কোতোয়ালি থানার ওসিদের ২৪ ঘণ্টার সময়ও বেঁধে দেয়া হয়। এরপর কয়েকদিন তাদের তৎপরতা দেখা গেলেও পরে তাদের আর টিকিটিও মেলেনি। সেই দীর্ঘ সড়কের অবস্থা এখন আগের চেয়েও নাজুক হয়ে পড়েছে। অথচ পুলিশ ও মন্ত্রীর দাবি-এখানে কোনো হকারই নেই।
দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব নেয়ার পর গুলিস্তানে অবৈধ হকার সরানোর জন্য মেয়র সাঈদ খোকন এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ বার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। কিন্তু অভিযানের মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর আবার তা বেদখল হয়ে যায়। এতে মেয়র নিজেই এখন চরম বিরক্ত। স¤প্রতি এক সেমিনারে তিনি বলেই ফেললেনÑ আমরাতো এখন আর ফুটপাত দখলমুক্ত করছি না। অন্তত পক্ষে তারা রাস্তা ছেড়ে দিক।
হকারদের পক্ষ নিয়ে মেয়র আনিসুল হকও বেশ কয়েকটি সেমিনারে বলেছেনÑ আমরা চাইলেই মুহূর্তে তাদের উচ্ছেদ করতে পারি। কিন্তু তাদের দিকটাও তো একটু দেখতে হবে। তাদের তো পরিবার-পরিজন আছে।
এসব হাকারদের পক্ষে রয়েছে পুলিশও। কিছু দিন আগে ডিএসসিসির অডিটোরিয়ামে যানজট নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে এক যৌথসভায় ডিএমপি ট্রাফিকের দক্ষিণ জোনের ডিসি খান মোহাম্মদ রেজওয়ান বলেন, আসলে পুনর্বাসন ছাড়া হকার উচ্ছেদ করতে গেলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
ওই সভায় তার এ বক্তব্যের বিরোধিতা করছিলেন অনেকেই। জবাবে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, গুটি কয়েক হকারদের জন্য নগরবাসীর দুর্ভোগ সহ্য করা যায় না। তা ছাড়া আমরাতো ফুটপাতে যাচ্ছি না। তারা অন্ততপক্ষে রাস্তা ছেড়ে দিক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফুটপাতে দোকানভেদে প্রতিদিন ১০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত দিতে হয় পুলিশের লাইনম্যানকে। প্রতিদিন সকাল, দুপুর ও বিকেলে টহল পুলিশ চাঁদা নেয়। পুলিশ সরাসরি এ টাকা না নিলেও তাদের নিয়োগকৃত লাইনম্যান টাকা সংগ্রহ করেন। যে কারণে বারবার উদ্যোগ নিয়েও সফল হচ্ছে না সিটি কর্পোরেশন।
হকার্সবান্ধব পুলিশ ও মেয়রের এমন অবস্থানের সুযোগ নিচ্ছে হকাররা। তারা এবার নতুন উদ্যোমে জোরেশোরে ফুটপত দখলে নেমেছেন। এবার ফুটপাতে খালি জায়গা না পেয়ে দখল শুরু করেছে রাস্তায়ও। ফলে বেকায়দায় পড়েছে খোদ সিটি কপোরেশন।
রাজধানীর ফুটপাতগুলো নিয়ে পরিচালিত বেসরকারি এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ঢাকার ৪৪ শতাংশ সড়কেই ফুটপাত নেই। ৭০ শতাংশ ফুটপাত বেদখল। এর মধ্যে ২২ শতাংশের অবস্থা খুবই নিম্নমানের। ব্যবহার উপযোগী ফুটপাত মাত্র ৮ শতাংশ। তবে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর ফুটপাতগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হলেও তার কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
পথচারীদের চলাচলের ফুটপাতে গাড়ি পার্কিং, দখল করে দোকানপাট বসানো, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিসহ ফুটপাতের বিভিন্ন অপরাধের জন্য মোটরযান আইন, সিটি কর্পোরেশন আইন এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন অধ্যাদেশ অনুযায়ী শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু যারাই এ শাস্তি নিশ্চিত করবেন তাদের মদদেই চলছে আইন ভঙ্গের মহোৎসব। সংশ্লিষ্টরা বলছেন আইন বাস্তবায়ন না হওয়ায় এখন হকাররা ফুটপাত শেষে এবার সড়ক দখলে নেমেছেন।
এ বিষয়ে নগরবিদ মোবাশ্বের হোসেন বলেন, সবাই বড়বড় কথা বলে। কিন্তু যারা কথা বলে তারাই যদি অপরাধে জড়িত থাকে তাহলে অপরাধ থামবে কিভাবে। কিছু অসাধু লোক, রাজনৈতিক নেতা এবং পুলিশ টাকার বিনিময়ে ইচ্ছাকৃতবাবে ফুটপাতে হকার বসিয়েছেন। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।