পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শামসুল ইসলাম : যাত্রী সংকটের দরুণ বিমানের হজ ফ্লাইট এখনো স্বাভাবিক হয়নি। গতকাল শুক্রবার ভোরে ৪শ’ ১৯জন যাত্রী ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি হজ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। আজ শনিবার আরো দু’টি হজ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এ নিয়ে বিমানের ১৬টি হজ ফ্লাইট এবং সাউদিয়া এয়ারলাইন্সে’র ৩টি হজ ফ্লাইট বাতিল করা হলো। হজ ক্যাম্পে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও অধিকাংশ কর্মকর্তাদের ছুটির দিনগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে না। এতে হজ ক্যাম্পে আগত হজযাত্রীদের ডিও লেটার ও ভিসার জন্য লজমেন্টের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এটাও হজ ফ্লাইট বাতিলের একটি কারণ। হাবের শীর্ষ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। হাবের মহাসচিব মো: শাহাদাত হোসাইন তসলিম গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে হজ ক্যাম্পে বিকেল পর্যন্ত অবস্থান করেও কর্মকর্তাদের দেখতে পাননি। হাব মহাসচিব বিষয়টি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। হজ ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় হাজী ক্যাম্পের ডরমিটরিতে অবস্থান নেয়া হজযাত্রীরা চিড়া-মুড়ি খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
বগুড়ার ১২জন মহিলা হজযাত্রীসহ বেসরকারী হজ এজেন্সি মিডিয়া ট্রাভেলসের (২৭৩) ৩৭জন হজযাত্রী ভিসা না পাওয়ায় হাজী ক্যাম্পের ডরমিটরিতে চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। গতকাল শুক্রবার ভোর ৪টায় তাদের ফ্লাইট দেয়ার কথা ছিল। তাদের হজ ফ্লাইট কবে নাগাদ হবে তা’ কেউ বলতে পারছে না। মিডিয়া ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী ও গ্রæপ লিডার আহম্মদ উল্লাহকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল হাজী ক্যাম্পে সরেজমিনে গিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে। পরে গ্রæপ লিডার আহম্মদ উল্লাহ টেলিফোনে ইনকিলাবকে বলেন, মিডিয়া ট্রাভেলসের ১শ’ ১৪জন হজযাত্রীর পাসপোর্টের মধ্যে দূতাবাস থেকে হাজী ক্যাম্পে অবস্থানরত ৩৭জনের ভিসা পাওয়া যায়নি। তাদের পাসপোর্ট আজ-কালের মধ্যে দূতাবাসে প্রেরণ করা হবে। তাদের ভিসা পাওয়ার পরেই হজ টিকিট ক্রয় করা হবে। গতকাল হজ ক্যাম্পের পরিচালক হজ সাইফুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি। তার রুমে হজযাত্রীদের ডিও লেটারের ফাইল জমা পড়ে রয়েছে। দ্বিতীয় তলায় হজযাত্রীদের পাসপোর্ট যাচাই-বাছাই কমিটি’র সদস্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা নাজমূলসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সারাদিন পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন হজ এজেন্সি’র প্রতিনিধিরা পাসপোর্টের ব্যাগ নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করছে। এতে হজযাত্রীদের ভিসা লজমেন্টের কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান তার দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঘোষণা দিয়েছিলেন, হজ ক্যাম্পে হজযাত্রীদের পাসপোর্ট যাচাই-বাছাই কমিটি’র কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক ডিউটি করার ব্যবস্থা নেয়া হবে। হজ অফিস সূত্র জানায়, গতকাল পর্যন্ত ৭০ হাজার ৮২ জন হজযাত্রীর ভিসার জন্য লজমেন্টের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকাস্থ সউদী দূতাবাস বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫৭ হাজার ৮শ’ ৭৯জন হজযাত্রীর ভিসা ইস্যু করেছে। গতকাল পর্যন্ত বিমান ও সাউদিয়ার হজ ফ্লাইট যোগে প্রায় ৩৭ হাজার হজযাত্রী সউদী আরবে পৌছেছে। গত রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে চট্রগ্রামস্থ শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে বিমানের প্রথম হজ ফ্লাইট (বিজি-১০৪১) ৪শ’১৯ হজযাত্রী নিয়ে জেদ্দার উদ্দেশ্যে চট্রগ্রামত্যাগ করার কথা। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি উল্লেখিত হজ ফ্লাইটের হজযাত্রীদের বিদায় জানানোর কথা।
হজ টিকিট সিন্ডিকেটের নানা চক্রান্তের কারণেও হজ ফ্লাইট খালি যাচ্ছে। হাবের অন্যতম ইসি সদস্য ও বাংলাদেশ হজযাত্রী ও হাজী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আলহাজ এডভোকেট ড. আব্দুল্লাহ আল নাসের গতকাল শুক্রবার আশকোণাস্থ হাজী ক্যাম্পে হজ ফ্লাইট সংকট নিয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিতে গিয়ে একথা বলেন। তিনি বলেন, বিমানের অসাধু কর্মকর্তারা ১শ’ ৪জন এজেন্সি’র মাঝে হজ টিকিট বরাদ্দ দিলেও ৭০ জন এজেন্সিকে নাম-মাত্র টিকিট দিয়েছে। বাকি চৌত্রিশ জন সিন্ডিকেটের হাতে পুরো হজ টিকিট তুলে দিয়েছে। এসব সিন্ডিকেট হজ টিকিটের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে শেষ দিকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিবে। ড. আব্দুল্লাহ আল নাসের বিমানের হজ টিকিট সিন্ডিকেট চক্রকে কালো তালিকা ভুক্ত করে তাদের তালিকা প্রকাশের জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান এমপিকে অনুরোধ জানান। হজ ভিসা না পাওয়ায় প্রায় ৬ হাজার হজযাত্রী নির্ধারিত সময়ে সউদী আরবে যেতে পারেননি। এদের মধ্যে যারা ঢাকার আশপাশে থাকেন তারা বাড়ি ফিরে গেলেও দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আগতদের হজ ক্যাম্পে কষ্ট করেই দিন কাটাতে হচ্ছে। গাইবান্ধা থেকে আগত ৩২ জন হজযাত্রীরও ভোর ৪টায় হজ ফ্লাইট ছিল । হজ ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় তারা হজ ক্যাম্পের ডরমিটরিতে অবস্থান করছেন।
এদিকে, সব দেশের হজ যাত্রীদেরই পুনরায় হজে যেতে অতিরিক্ত দুই হাজার সউদী রিয়েল দিতে হবে। বাংলাদেশসহ হজ এবং ওমরাহ পালনকারী সব দেশের ২০১৫ ও ২০১৬ সালে হজ পালনকারী ব্যক্তিদের পুররায় হজে যেতে চাইলে জনপ্রতি দুই হাজার সউদী রিয়ার্ল প্রদান করতে হবে। হজ ভিসা আবেদন লজমেন্ট করার ক্ষেত্রে প্রতি এন্ট্রি ফি বাবদ দুই হাজার সউদী রিয়েল প্রদান করার নিয়ম সকল দেশের দ্বিতীয় হজযাত্রী এবং ওমরাহ পালনকারীদের জন্য সউদী আরব এই বিধান চালু করেছে। বৃহস্পতিবার ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ শাখার সহকারী সচিব এস এম মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ খবর জানানো হয়।
হজ এজেন্সীজ অব বাংলাদেশের একজন কর্মকর্তা জানান, সউদী আরবের হজ এবং ওমরা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তদের সাথে এই বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দুই হাজার সউদী রিয়েল মওকুফ করার জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু সউদী কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করে জানায় যে শুধু বাংলাদেশ নয় এই নিয়ম হজ এবং ওমরা পালনকারী সব দেশের হাজীদের জন্য করা হয়েছে। এই অর্থ মওকুফ বা স্থগিত করার কোন সুযোগ নেই। বাংলাদেশকেও পুনর্বার হজে গমনেচ্ছু প্রত্যেক হাজীকে এই দুই হাজার রিয়েল পরিশোধ করতে হবে। চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে আত্মীয়স্বজনসহ বিভিন্ন কারণে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে হজে গেছেন এমন সংখ্যা ৭ থেকে ৮ হাজার হতে পারে বলে হাবের শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন। এদিকে ধর্মমন্ত্রণালয় চলতি ২০১৭ সালের হজে অংশগ্রহণকারী সকল হজ এজেন্সির জন্য হজযাত্রীদের প্রতিস্থাপনের সংখ্যা শতকরা ৪ জন থেকে বৃদ্ধি করে ৭ জনে উন্নীত করেছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ শাখা বৃহস্পতিবার এই বিষয়েও অপর একটি আদেশ জারি করে হজ এজেন্সী ও সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানে জানিয়ে দিয়েছেন। হজ এজেন্সিস অব বাংলাদেশ হাবের আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার এবং বাস্তব অবস্থা বিবেচনা করে মৃত্যুজনিত, অসুস্থতাজনিত এবং অন্যান্য কারণে হজযাত্রীদের প্রতিস্থাপনের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। হজযাত্রীদের প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে হজ বিষয়ক কমিটি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। হাবের শীর্ষ নেতা ড. আব্দুল্লাহ আল নাসের বলেন, বৃহস্পতিবার হাবের ইসি’র সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে হজযাত্রীদের প্রতিস্থাপন ১০% চাওয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।