Inqilab Logo

শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

চট্টগ্রামে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরছে না

ফের মাঠে চসিক ট্রাফিক পুলিশ বিআরটিএ

| প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম


রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রামে গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা চরমে উঠেছে। যত্রযত্র পার্কিং করা হচ্ছে। সড়কে বাস, মিনিবাস দাঁড় করিয়ে চলছে যাত্রী উঠা-নামা। অবৈধ রিকশা ও টমটমের ভারে রাস্তায় চলা দায়। মহানগরীর প্রায় প্রতিটি সড়কে ব্যাপক খানাখন্দক। এ অবস্থায় উন্নয়ন কাজের জন্য সড়কে খোঁড়াখঁড়ির চলছেই। ফুটপাত কোথাও সড়ক দখল করে ব্যবসা করছে হকারেরা। নির্মাণ সামগ্রী আর ভারী যানবাহন রেখে রাস্তা দখল করা হচ্ছে। ভেঙ্গে পড়েছে ট্রাফিক ব্যবস্থা। ফলে নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। বিশৃঙ্খলা আর যানজটে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বন্দর নগরী চট্টগ্রাম। এতে সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছে।
গণপরিবহনে শৃঙ্খলা এনে ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতি করতে নেওয়া কোন উদ্যোগই সফল হচ্ছে না। কয়েক দিন পর পর নতুন নতুন উদ্যোগ নিয়ে মাঠে নামে ট্রাফিক পুলিশ, সিটি কর্পোরেশন ও বিআরটিএ। তবে কোন কিছুতেই শৃঙ্খলা ফেরানো যাচ্ছে না। এ অবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে ফের বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফুটপাত দখলম্ক্তু করতে কাজ শুরু করেছে সিটি কর্পোরেশন। মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ঘোষণা দিয়েছেন আগামী পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে নির্ধারিত স্থানে নির্ধারিত সময়ের জন্য বসতে হবে হকারদের। যেখানে সেখানে বসে ব্যবসা করা যাবে না। কর্পোরেশন যানজট কমাতে নগরীতে ৫টি টার্মিনাল নির্মাণেরও উদ্যোগ নিয়েছে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ আজ শনিবার থেকে নগরীর ১৫টি রুটে চলাচলকারী গণপরিবহনের রুট জরিপ শুরু করছে। ট্রাফিক বিভাগের সাথে থাকছে বিআরটিএও। বাস, মিনিবাস, হিউম্যান হলার, টেম্পুর জরিপ কাজ চলবে আগামী ২৪ আগস্ট পর্যন্ত। জানা গেছে নগরীর ১৫টি রুটে রুটপারমিট নিয়েও অনেক বাস, মিনিবাস রাস্তায় চলাচল করছে না। অনেক যানবাহন বাস্তবে নেইও। কিছু পরিবহন রুটপারমিট নিয়ে বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী বা পোশাক কারখানার শ্রমিকদের আনা নেওয়ার কাজে রির্ভাজ ভাড়ায় ব্যস্ত। ফলে রাস্তায় গণপরিবহনের সংকট চরমে উঠেছে। জরিপ শেষে এসব যানবাহনের রুটপারমিট বাতিল করে নতুন বাস, মিনিবাসের রুটপারমিট দেওয়া হবে।
নগরীতে গণপরিবহন বিশেষ করে বড় বাসের সংকট দীর্ঘদিন থেকে। এখাতে নতুন বিনিয়োগ আসছে কম। পরিবহন সংকটকে পুঁজি করে বাড়ছে ছোট গাড়ির জোয়ার। বিশেষ করে অবৈধ রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, টমটম ও অটোরিকশার দখলে চলে গেছে বেশিরভাগ সড়ক। এক সময় এসব ছোট যানবাহন শহরতলীতে কিংবা অলিগলিতে চলাচল করতো। এখন এসব যানবাহন বড় বড় সড়কেও চলাচল করছে। ফলে ছোটগাড়ির কারণে রাস্তায় যানজট বাড়ছে।
মহানগরীতে চলাচলরত বেশির ভাগ যানবাহনের নেই ফিটনেস সনদ। ট্রাফিক বিভাগের মতে নগরীতে চলাচলরত ৭০ভাগ যানবাহনের কোন ফিটনেস সনদ নেই। লক্কর-ঝক্কর এসব যানবাহন চলতে গিয়ে ক্ষণে ক্ষণে রাস্তায় বিকল হয়ে যাচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। গতমাসে এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে সপ্তাহ ব্যাপী অভিযান চালায় সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। অভিযানের শুরুতে কয়েকশ যানবাহন আটক করা হয়। প্রায় দুই হাজারের বেশি মামলাও হয়। তবে অভিযান শুরু হলে বেশির ভাগ যানবাহন রাস্তা থেকে হাওয়া হয়ে যায়। অভিযান বন্ধ হলে ফের রাস্তায় নামে এসব যানবাহন। ফলে বিশেষ অভিযানেও এসব যানবাহনকে ধরতে পারেনি ট্রাফিক বিভাগ।
নগরীতে চলাচলরত যানবাহনগুলোর বেশির ভাগই নির্ধারিত রুটে চলাচল করে না। নগরীর প্রধান সড়কে চলাচলকারি ৬ নম্বর রুট ও ১০ রুটের বাসও নিয়ম মানছে না। ৬ নম্বর রুটের বাস লালদীঘির পাড় থেকে পতেঙ্গা সৈকত পর্যন্ত যাওয়ার কথা থাকলে বেশিরভাগ বাস ইপিজেড পর্যন্ত চলাচল করছে। আবার ১০ নম্বর রুটের বাসও ইপিজেড কিংবা কাটগড় পর্যন্ত চলাচল করে। আর এই সুযোগে ইপিজেড থেকে কাটগড় ও পতেঙ্গা সৈকত পর্যন্ত সড়কে টেম্পু ও টমটমের দাপট চলছে।
মহানগরীতে গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্যও বাড়ছে। সকালে অফিস শুরুর সময় আর বিকেলে অফিস ছুটির সময় সড়কে যানজট আর পরিবহন সংকটকে পুঁজি করে গলাকাটা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। নগরীতে বাস, মিনিবাসের সর্বনিন্ম ভাড়া (উঠা-নামা) ৫টাকা হলেও এসময় ১০ থেকে ২০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এতে করে কর্মজীবী ও স্বল্প আয়ের লোকজনকে যাতায়াত খাতে আয়ের বিরাট অংশ ব্যয় করতে হচ্ছে। বিকেল ৩টার পর ইপিজেড এলাকায় চলাচলরত গণপরিবহন কোন নিয়মকানুনের ধার ধারে না। বাস চালকের সহকারিরা উঠা-নামা বিশ টাকা হাকতে থাকে। আর বাসের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থেকে ক্লান্ত যাত্রীরাও বাসে এমনকি বাসের ছাদে উঠে বসতে বাধ্য হচ্ছে। প্রতিদিন এমন দৃশ্য ট্রাফিক পুলিশের সামনেই। তবে কোন প্রতিকার নেই। অসহায় লোকজন বাধ্য হয়ে এভাবে ভ্রমন করছে।
এদিকে নগরপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে মাঠে নামছে সিটি কর্পোরেশন। মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রæপের সাথে বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি বলেন, নগরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে গণপরিবহন আরও বাড়াতে হবে। যানজট নিরসনে মালিক ও শ্রমিকদের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। মেয়র বলেন, পরিবহন সেক্টরে শৃংখলা আনয়নে নীতি নির্ধারনী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি যানজট নিরসনে নগরীতে ৫টি টার্মিনাল নির্মাণের লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করার কথা সভায় অবহিত করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন এবং জায়গা প্রাপ্তি সাপেক্ষে সু-নির্দ্দিষ্ট পরিবহনের জন্য আলাদা আলাদা টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে।
সভায় গণপরিবহন ও পন্য পরিবহনে প্রশাসনের অনিয়ম দুর করা রুটপারমিট প্রদান, যত্র তত্র পার্কিং বন্ধ, মোটরযান ভেহিকেল অধ্যাদেশ ২০১৭ প্রত্যাহার, ফুটপাতের হকার মার্কেট ও কাঁচা বাজারে শৃংখলা আনা, হাইড্রোলিক হর্ণ ব্যবহার বন্ধ, চালকদের লাইসেন্স প্রাপ্তি সহজতর করণ, টার্মিনাল নির্মাণ, রাস্তা মেরামতসহ ৯ দফা দাবি নিয়ে আলোচনা হয়।
একই দিন হকার্স সমিতির নেতাদের সাথে বৈঠক করেন মেয়র। মেয়র জানিয়ে দেন সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানেই আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে হকারদের বসতে হবে। কর্মদিবসে প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ব্যবসা করতে পারবেন হকাররা। তবে সরকারি ছুটি এবং বন্ধের দিন সকাল ১০টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বসতে পারবেন তারা। সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবারে বিকেল ২ টা থেকে রাত সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ পাবেন হকারেরা। হকারদের চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশন ফুটপাত মার্কিং করে নির্দিষ্ট হকার বসার সুযোগ করে দেবে। হকারদের তালিকানুযায়ী কর্পোরেশন পরিচয় পত্র দেবে। ব্যবসা পরিচালনার জন্য কোন ধরনের স্থাপনা গড়ে তোলা যাবে না। রেক্সিন বিছিয়ে ফুটপাতে নির্দ্দিষ্ট স্থানে ব্যবসা পরিচালনা শেষে অবশিষ্ট মালামাল স্ব উদ্যোগে সরিয়ে নিয়ে যাবে এবং প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে মালামাল নিয়ে এসে ব্যবসা পরিচালনা করবে। রোদ-বৃষ্টি থেকে হকারদের রক্ষা করার জন্য কর্পোরেশন পরিচয়পত্রধারী হকারদের ছাতা সরবরাহ করবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিআরটিএ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ