পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শফিউল আলম : উজানের অববাহিকা থেকে অর্থাৎ ভারত থেকে ফের ঢল এবং বন্যার আশঙ্কা রয়েছে চলতি আগস্ট মাসেও। কার্যত জুলাইয়ে দেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যার জের আগস্টেও (শ্রাবণ-ভাদ্র) চলমান বা দীর্ঘায়িত হওয়ার দিকেই গড়াতে যাচ্ছে। হিমালয় পাদদেশীয় ও গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গসহ উত্তর-পূর্ব ভারতে অতিবৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এতে করে নদ-নদীসমূহের উজানভাগের মূল অববাহিকায় (ক্যাচমেন্ট এরিয়ায়) বৃদ্ধি পেতে পারে। তাছাড়া এ মাসেও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হারে ও পরিমাণে বর্ষণের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এদিকে দেশের প্রধান বিভিন্ন নদ-নদীর পানির সমতল এখনও বৃদ্ধির দিকে।
গতকাল (বুধবার) সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ কমিটির সভা সূত্রে জানা গেছে, আগস্ট মাসে বাংলাদেশে স্বাভাবিক অপেক্ষা কিছুটা বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ মাসের প্রথমার্ধে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে ২টি মৌসুমি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এরমধ্যে অন্তত একটি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। আগস্টে মৌসুমি ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় স্থানে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
দীর্ঘমেয়াদী আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রদানের লক্ষ্যে গতকাল বিশেষজ্ঞ কমিটির নিয়মিত বৈঠকে চলতি আগস্ট মাসের উপরোক্ত পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র ঢাকায় অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন আহমেদ। আবহাওয়া-জলবায়ুর তথা-উপাত্ত, ঊর্ধ্বাকাশের আবহাওয়া বিন্যাস, বায়মন্ডলের বিভিন্নস্তরের বিশ্লেষিত আবহাওয়া মানচিত্র, জলবায়ু মডেল, এল-নিনো এবং লা-নিনা অবস্থা ইত্যাদি উপাদান আলোচনা-পর্যালোচনা করে বিশেষজ্ঞগণ এ পূর্বাভাস প্রদান করেন। এদিকে চলতি বছরের প্রায় গোড়া থেকে আবহাওয়া এবং প্রকৃতির ক্রমাগত চরম ভাবাপন্ন ও বৈরী আচরণ অব্যাহত রয়েছে। এরফলে প্রায় সারাদেশে একের পর এক দুর্যোগে জনদুর্ভোগ নেমে আসছে। এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, মিয়ানমার, চীন পর্যন্ত বৈরী আবহাওয়ার কবলে রয়েছে। এর সক্রিয় বিরূপ প্রভাব শুরু গত মার্চ মাস থেকেই। চলছে দুর্যোগ-দুর্বিপাকের ঘনঘটা। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আবহাওয়ার ‘এল-নিনো’ অবস্থাটা (বৃষ্টি রোধকারী) কেটে গেছে নীরবে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ, ভারত, চীনেও বর্ষারোহী মৌসুমি বায়ুমালা সক্রিয় ও জোরদার রয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতে এবছর মৌসুমি বায়ুর আগমন ঘটে বেশ আগেভাগেই।
এসব কারণে মৌসুমি বায়ুর সক্রিয় প্রভাবে অতিবর্ষণের কারণে চলতি আগস্ট (শ্রাবণ ও ভাদ্র) মাসেও পাহাড়ি ঢল, বন্যা অব্যাহত থাকতে পারে এবং নতুন নতুন এলাকা বন্যা কবলিত হতে পারে এমনটি আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভারতের বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আসাম, অরুণাচল, ত্রিপুরা, মিজোরাম, মেঘালয়ে ভারী বর্ষণ হচ্ছে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে। এ অবস্থাটা অব্যাহত থাকলে ভারত থেকে উজানের অববাহিকায় পানি বেড়ে গিয়ে নদ-নদী ফের ফুলে-ফুঁসে উঠতে পারে। বাড়তে পারে ঢল ও বন্যার প্রকোপ।
এদিকে গতকাল বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে সর্বশেষ নদ-নদী পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা যায়, যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা ও সুরমা কুশিয়ারা নদ-নদীসমূহেরর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানির সমতল হ্রাস পেতে পারে এবং যমুনা নদীর পানি স্থিতিশীল হয়ে আসতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি আগামী ২৪ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানির সমতল আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেতে পারে। গতকাল পর্যন্ত দু’টি পয়েন্টে দু’টি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরমধ্যে যশোরের ঝিকরগাছায় কপোতাক্ষ নদ এবং নেত্রকোনায় কংসনদী। দেশের ৯০টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল পানি বৃদ্ধি পায় ৪৯টিতে এবং হ্রাস পায় ৩৯টিতে। অপরিবর্তিত থাকে ২টি পয়েন্টে। কুশিয়ারার প্রবাহ গতকাল ফের বিপদসীমার নীচে তবে কাছাকাছি চলে আসে। আর পদ্মা নদীর পানির সমতল বিভিন্ন পয়েন্টে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছিল। যদিও তা বিপদসীমার বেশ নিচে রয়েছে।
এদিকে গত জুলাই মাসের আবহাওয়া পূর্বাভাসে বাংলাদেশে ‘স্বাভাবিক’ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা জানানো হলেও বাস্তবে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি ঝরেছে। আর গত জুন মাসে সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়। গত মে মাসে সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৬ দশমিক ১ ভাগ কম বৃষ্টি হয়েছিল। অথচ এপ্রিলে ১০৬ ভাগ এবং মার্চে ১৫১ ভাগ বেশি বৃষ্টিপাত হয়। সার্বিকভাবে দেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়লেও অঞ্চল বা এলাকাওয়ারি বৃষ্টিপাতে অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। যেমন- পঞ্চগড় জেলাসহ বিভিন্ন স্থানে অনাবৃষ্টির কারণে ভরা বর্ষা মৌসুমেও চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। আবার স্বল্প সময়ের মধ্যে বেশিমাত্রায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বলে ইনকিলাবকে জানান, জলবায়ু ও পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. রিয়াজ আখতার মল্লিক। এতে করে নগরাঞ্চলে পানিবদ্ধতার মতো সমস্যা, জনদুর্ভোগও বেড়ে যাচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।