পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘যত নেতা তত গ্রুপে’ রেষারেষি মেটেনি : পূর্ণাঙ্গ কমিটি পেয়ে ভোটের রাজনীতিতে জোরদার অবস্থানে আশাবাদী তৃণমূল কর্মীরা
শফিউল আলম : বলতে গেলে ঢিমেতালে চলছে চট্টগ্রাম বিএনপি। শুধুই মহানগর নয়; বৃহত্তর চট্টগ্রামে অর্থাৎ উত্তর ও দক্ষিণ জেলায়ও সেই একইদশা। নির্বাচনী হাওয়া আগাম বইতে শুরু করলেও চট্টগ্রামে রাজনীতির মাঠে বিএনপির তৎপরতা ফিকে হয়ে আছে। আর সাংগঠনিক কর্মকান্ড যেন ক্ষুদ্র গন্ডির মধ্যে সীমিত রয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে অতি সাম্প্রতিক সময়ের বড় দু’টি দৃষ্টান্ত হলো বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ঘোষিত ‘ভিশন ২০৩০ রূপকল্প’ এবং দলের নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি নিয়ে সমগ্র চট্টগ্রামে বিএনপির তৎপরতা খুব কমই পরিলক্ষিত হয়ে আসছে। এ ব্যাপারে নেতাদের কথা-বার্তার ভাবার্থ দাঁড়ায় অনেকটা- ‘হবে, হচ্ছে’ গোছের। অবশ্য চট্টগ্রাম বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা গতকাল সোমবার ইনকিলাবকে জানান, আগামীকাল ২ আগস্ট (বুধবার) থেকে পুরোদমে নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করা হচ্ছে। দলের কেন্দ্র থেকে নতুন সদস্য ফরম এসেছে।
তৃণমূল তথা মাঠে-ময়দানের সাধারণ বেশ ক’জন দলীয় নেতা-কর্মী সমর্থকের সাথে আলাপকালে জানা যায়, চট্টগ্রামে বিএনপি পুরনো সমস্যার জের রয়েই গেছে। মূল সমস্যা হচ্ছে ‘যত নেতা তত গ্রুপে’র বিরোধ রেষারেষি আজও মিটেনি। বৃহত্তর চট্টগ্রামের সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-এমপি ও কেন্দ্রীয় অধিকাংশ নেতার নিজ নিজ গ্রæপ কিংবা একেকটি বলয় গড়ে উঠেছে। তাদের সাথে নগর ও দুই সাংগঠনিক জেলা পর্যায়ের নেতাদের দূরত্ব রয়ে গেছে। আবার নগর ও জেলার নেতারা অনেক সময়ই কেন্দ্রীয় ‘বড়’ নেতাদের সহযোগিতা তেমন পাচ্ছেন না। এই বিরোধ ও দূরত্ব কখনও বাড়ে কখনও কমে। কিন্তু নেপথ্যে নেতায়-নেতায় সেই ‘ঠেলাঠেলি’ (স্থানীয় কর্মীদের ভাষায়) অব্যাহত রয়েছে কোথাও কম কিংবা কোথাও বেশিমাত্রায়।
তবে চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা নেতৃবৃন্দ দলের অভ্যন্তরে কোন রকমের নেতৃত্বের গ্রæপিং ও বিরোধের কথা স্বীকার করেন না। নির্বাচনী রাজনীতিতে এবং সাংগঠনিক কার্যক্রমে সমন্বয় শিগগিরই আরও বৃদ্ধি পাবে এমনটি জানান তারা। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দেয়া অসংখ্য মামলা হুলিয়া হামলাসহ ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের হয়রানি-জনিত সমস্যার কথাও তারা জানান। ক’দিন আগে উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের উদ্যোগে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি চলাকালে আওয়ামী লীগের তরফে অতর্কিতে বাধা দেয়া হয়। এমনকি প্রকাশ্যে জনসমক্ষে বিএনপির ব্যানারও জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। পুলিশ এ সময় নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। চট্টগ্রামের বিএনপি নেতারা বলেছেন, বিশেষ করে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে এখনও জোরালো জনসমর্থনের দিক বিবেচনায় বিএনপির অবস্থান শক্তিশালী। এটি গণমুখী দল। রাজনীতির মাঠে যদি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা হতো তাহলে বিএনপি আরও বেশি জনগণের কাছে পৌঁছতে সক্ষম হতো। কিন্তু সরকারি দল নানা উপায়ে বাধা-প্রতিবদ্ধকতার সৃষ্টি করছে।
এদিকে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির দীর্ঘদিন পর একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি পেয়ে সাংগঠনিকভাবে এবং ভোটের রাজনীতিতে জোরদার অবস্থানের ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মী, সমর্থকরা। একই সাথে আগের তুলনায় উজ্জীবিত হয়েছেন দলের বিভিন্ন অঙ্গ, সহযোগী ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। দলীয় কার্যালয়গুলোতে এবং নেতাদের আঙিনায় কর্মীদের আনাগোনা বেড়ে যাচ্ছে। আগামীতে নির্বাচনী ময়দানের কৌশল নিয়ে আলাপ-আলোচনা প্রাধান্য পাচ্ছে। এখানে-সেখানে স্থানীয় কর্মীদের সাথে আলাপচারিতায় তারা জানান, জনসমর্থন বিবেচনা করলে অতীত থেকেই চট্টগ্রামের মাটি বিএনপির ঘাঁটি। এখন নবগঠিত চট্টগ্রাম মহানগরীর পূর্ণাঙ্গ কমিটি একযোগে মাঠে নামলে এবং কেন্দ্রীয় সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের অভিজ্ঞতার সমন্বয় ঘটলে দলের অবস্থান আরও সুসংহত হবে। জনসমর্থনও হবে আরও জোরালো।
ঢিমেতালে যেভাবে চলছেÑ
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গত ১০ মে ঢাকায় ‘ভিশন ২০৩০ রূপকল্প’ ঘোষণা করার পরপরই চট্টগ্রামের নেতৃবৃন্দ বলেছিলেন, এখন থেকে সভা-সমাবেশ, সেমিনারের মাধ্যমে ‘ভিশন ২০৩০’ আমরা জনগণের আরও কাছাকাছি গিয়ে তুলে ধরবো। এর মধ্যদিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং একই সাথে কর্মীদের সুসংগঠিত করার কাজও এগিয়ে যাবে। চট্টগ্রাম মহানগর, জেলা বিএনপি এবং দলের সমর্থিত পেশাজীবী নেতৃবৃন্দও একই কথা বলেছিলেন। এরজন্য তারা কেন্দ্র থেকে ‘ভিশন ২০৩০ রূপকল্প’ পুস্তিকাটির ব্যাপক সংখ্যক কপি আনা হয়েছে বলে জানান। ইতোমধ্যে আড়াই মাসেরও বেশিকাল অতিবাহিত হয়েছে। অথচ চট্টগ্রাম নগরে দুয়েকটি বিচ্ছিন্ন সভা ছাড়া উত্তর ও দক্ষিণ জেলায় এ ধরনের কোন সভা-সেমিনার হয়নি। এ ব্যাপারে নেতাদের কোন আগ্রহের কথাও জানেন না তৃণমূল কর্মীরা। একই অবস্থা বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির বেলায়ও। চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলায় এই কর্মসূচির হাল অবস্থাটা হচ্ছে নেতাদের কাছে যেন ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’র মতোই।
অথচ তৃণমূলের ত্যাগী ও সক্রিয় নেতা-কর্মী, সমর্থকরা মনে করছেন, উভয় ইস্যু (‘ভিশন ২০৩০ রূপকল্প’ এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ) নিয়ে বিএনপি যদি একযোগে মাঠে-ময়দানে নামতে পারতো তাহলে আগামী নির্বাচনের লক্ষ্যে এলাকাভিত্তিক দলকে আরও সুসংগঠিত করা, জগণের সাথে সম্পৃক্ততা বাড়ানো সম্ভব হতো। এর পাশাপাশি বর্তমান সরকারের ব্যর্থতাসমূহ, অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের গুরুত্ব সম্পর্কে ব্যাপক জনগণের কাছে তুলে ধরা যেতো। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু’জন নেতা বলেছেন, ‘ভিশন ২০৩০ রূপকল্প’ নিয়ে আমরা সচেতন এবং আমজনতার কাছে যতটা বেশি যেতে পারতাম ততটা হয়নি। তবে বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান প্রাথমিকভাবে শুরু হয়ে গেছে এবং সহসা তা আরও জোরদার করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত গত ১০ জুলাই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির ২৭৫ সদস্য বিশিষ্ট ঢাউস সাইজের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করেন। ডা. শাহাদাত হোসেনকে সভাপতি, আবুল হাশেম বক্করকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর কমিটি গঠনের দীর্ঘ ১১ মাস পর এই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়। এরপর থেকে বন্দরনগরীতে তৃণমূলে দৃশ্যত কর্মীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা বেড়ে গেছে।
এদিকে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর গতকাল ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি এগিয়ে চলেছে। আগামী ২ আগস্ট থেকে মহানগরীতে নতুন সদস্য সংগ্রহের কর্মসূচি পুরোদমে ব্যাপকারে শুরু হতে যাচ্ছে। আমরা দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে ৩০ হাজার নতুন সদস্য ফরম পেয়েছি। প্রয়োজনে আরও আনা হবে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩০টিতেই কমিটি গঠনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট ওয়ার্ডগুলোতে আগামী ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যেই কমিটি গঠন করা হবে। আর এর মধ্যদিয়ে দলীয় কর্মকান্ড আরও গতিশীল হবে। চট্টগ্রাম নগরে দলের ভেতরে সমন্বয়ের অভাব এবং গ্রæপিং নেই বলে জানিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, সবাইকে তো একশত ভাগ খুশী করা সম্ভবও নয়। হয়তো দশ ভাগ ঘাটতি থাকতে পারে। চট্টগ্রামের সাবেক মন্ত্রী-এমপি, কেন্দ্রীয় নেতারাও নিজ নিজ এলাকায় তৎপর আছেন। তবে কেন্দ্রে তাদের ব্যস্ততাও রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।