Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নৌ পরিবহন অধিদফতরের অনিয়ম

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা

| প্রকাশের সময় : ৩১ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পঞ্চায়েত হাবিব : নৌ পরিবহন অধিদফতরের কর্মকান্ডে বিভিন্ন পর্যায়ে অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশও মানা হচ্ছে না। গত বছর নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও সেই তদন্ত প্রতিবেদন দীর্ঘদিনেও প্রকাশ করা হয়নি। এছাড়া একই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গত বছর একজন অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ করে। তবে সেই অনুসন্ধান কার্যক্রমের অগ্রগতি প্রকাশ করা হয়নি।
সম্প্রতি নৌ অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীকে দুদক গ্রেফতারের পর দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে সংস্থাটির বিরুদ্ধে উত্থাপিত নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে একটি সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠনের অনুরোধ জানানো হয়েছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে লেখা এক লিখিত অভিযোগে নৌখাত রক্ষা আন্দোলন এর সদস্য সচিব আবু হেনা মোস্তফা কামাল এই অনুরোধ জানিয়েছেন। ওই অভিযোগে বলা হয়, নৌ পরিবহন অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে নৌ মন্ত্রণালয়।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ওই তদন্ত কমিটি বক্তব্য শোনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অভিযোগকারী সিটিজেন্স রাইট্স মুভমেন্টের মহাসচিব তুসার রেহমানকে গত ৮ নভেম্বর নৌ মন্ত্রণালয়ে হাজির হওয়ার জন্য একটি চিঠি দেন। কিন্তু অভিযোগকারী ঢাকার বাইরে থাকায় নির্ধারিত দিনে হাজির হতে অপরাগতার কথা তদন্ত কমিটিকে চিঠি দিয়ে জানালেও পরবর্তী সময়ে তাঁকে আর ডাকা হয়নি। এছাড়া দুদকে করা পৃথক এক অভিযোগের প্রেক্ষিতে নৌ অধিদপ্তরের দুর্নীতি তদন্তে উপ-পরিচালক মো. জুলফিকার আলীকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ করে দুদক। তিনি অভিযোগকারীকে (তুসার রেহমান) গত ৮ডিসেম্বর দুদক প্রধান কার্যালয়ে হাজির হয়ে বক্তব্য প্রদানের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেন। অভিযোগকারী নির্ধারিত দিনে দুদকে হাজির হলেও সেদিন অনুসন্ধান কর্মকর্তা সেখানে ছিলেন না। এরপর এ বিষয়ে অভিযোগকারীকে কিছু জানানো হয়নি।
অভিযোগে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে নৌ পরিবহন অধিদফতরে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়ে আসছে। মেরিন ইঞ্জিনিয়ারদের (নৌ প্রকৌশলী) বিরুদ্ধে সেখানে কর্মরত নেভাল আর্কিটেক্ট ও মাস্টার মেরিনারদের কোণঠাসা করে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনের প্রতিযোগিতাও রয়েছে। এসব কারণে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাত্রা লাগামহীন হয়ে উঠেছে। অভ্যন্তরীণ নৌযান সার্ভে (ফিটনেস পরীক্ষা) ও নিবন্ধন, নৌযানের মাস্টারশিপ ও ড্রাইভারশিপ পরীক্ষা, বে-ক্রসিংয়ের (উপক‚ল অতিক্রম) অনুমতি প্রদান, নৌযানের নকসা অনুমোদন, সমুদ্রগামী জাহাজের নাবিকদের পরীক্ষাসহ প্রায় সকল কাজে অবৈধ অর্থ লেনদেনের খবর ইতোপূর্বে বহুবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। এছাড়া আন্ত:মন্ত্রণালয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে সমুদ্রগামী জাহাজের নাবিকদের সহজে আকাশপথে বিদেশ যাওয়ার জন্য তাঁদের নামে ইস্যু করা অধিদফতরের কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরযুক্ত বেআইনি অনাপত্তির সনদ (এনওসি) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের হাতে আটক এবং অভ্যন্তরীণ জাহাজের মাস্টার ও ড্রাইভারদের নামে শত শত জাল সনদ প্রদানের খবরও বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, অধিদফতরে তীব্র জনবল সংকট সত্তে¡ও একজন ইঞ্জিনিয়ার এন্ড শিপ সার্ভেয়ার (প্রকৌশলী ও জাহাজ জরিপকারক) এর পদ ১০ বছরের বেশি সময় শূন্য থাকলেও অদৃশ্য কারণে গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থায়ী নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। প্রচলিত রীতি ও ‘চার্টার অব ডিউটিজ’ লঙ্ঘন করে কোনো কোনো কর্মকর্তাকে সার্ভেয়ারের অতিরিক্ত দায়িত্বসহ ৬-৭টি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ায় তাঁরা মাসে সর্বোচ্চ ২-৩ দিন ঢাকার বাইরের কর্মস্থলে যেতে পারেন। অথচ কাগজে-কলমে দেখা যায়, দিনে ৪-৫টি নৌযান সার্ভে করছেন তাঁরা। নৌ নিরাপত্তার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ অর্থায়নে চার বছর আগে গৃহিত গেøাবাল মেরিন ডিস্ট্রেস্ড এন্ড সেফটি সিস্টেম (জিএমডিএসএস) প্রকল্পের পরিচালককে দিয়ে এখনো নৌযান সার্ভে, নিবন্ধন এবং অভ্যন্তরীণ ও সমুদ্রগামী জাহাজের নাবিকদের পরীক্ষা গ্রহণ করানো হচ্ছে। ঢাকার বাইরে দায়িত্বরত একজন সার্ভেয়ার মাসে আনুমানিক ১২৫টি জাহাজ সার্ভে ও ৪-৫টি নতুন জাহাজ নিবন্ধন করেন। অথচ মাসের ১৫ দিনই তিনি পরিবারসহ ঢাকায় অবস্থান করেন। গ্রেফতার হওয়া প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম ফখরুল ইসলাম গত বছর বিদেশে অবস্থানকালে একজন সার্ভেয়ার অনুমোদিত নকসা ছাড়াই ৩০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যরে কয়েকটি নৌযানের নিবন্ধন, সার্ভে ও সার্ভে ডিক্লারেশন দেন। অথচ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল অধ্যাদেশের (আইএসও) সংশ্লিষ্ট বিধিসমূহে ৩০ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যরে নৌযান নিবন্ধনের ক্ষেত্রে অনুমোদিত নকসা এবং ফিটনেস প্রদানকারী কর্মকর্তার সার্ভে ডিক্লারেশন দেয়ার ওপর কঠোর বিধি নিষেধ রয়েছে। এছাড়া নকসা অনুমোদন কমিটির প্রধান ও অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী গত বছর বিদেশে থাকাকালে কমিটির বৈঠক ছাড়াই অন্তত: ১০টি নকসা অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
নৌ নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ নৌ পরিবহন ব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে এই খাতের শৃঙ্খলা ফেরাতে নৌ অধিদফতরের সকল অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে অবিলম্বে একটি সংসদীয় তদন্ত কমিটি গঠন এবং তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে নৌ খাত রক্ষা আন্দোলন কমিটি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নৌ পরিবহন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ