পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
ইনকিলাব ডেস্ক : ইসরাইলের পরিকল্পনা, খেলা, মিথ্যাচারিতা ও তার ভড়ং সম্পর্কে ফিলিস্তিনিদের চেয়ে বেশী কেউ জানে না। ইহুদি সংগঠন, অপরাধী চক্র, রাষ্ট্র ও বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে তারা লড়াই করছে শত বছর ধরে। ১৯১৭ সালে বেলফুর ঘোষণার মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনে ইহুদিদের পা রাখার ব্যবস্থা করে ব্রিটেন। সে অন্যায় পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিল ফিলিস্তিনিরা। তাদের ইহুদি বিরোধী লড়াইয়ের সেই শুরু। সে লড়াই এখনো শেষ হয়নি। ইসরাইলের নিত্য নতুন শয়তানি কৌশল ও শক্তির মোকাবেলা করতে সক্ষম হচ্ছে না ফিলিস্তিনিরা। তারা বাস করছে ইহুদিদের নতুন ও পুরনো দখলদারিত্বের অধীনে।
সম্প্রতি আল-আকসা মসজিদ বিষয়ে ইসরাইলের নেয়া ব্যবস্থা কিছু আরব হালকা ভাবে দেখলেও ফিলিস্তিনিরা তখনি বুঝতে পেরেছিল যে এর পিছনে কিছু অশুভ কোনো উদ্দেশ্য আছে। ইসরাইলিরা যা অস্থায়ী ব্যবস্থা বলে প্রবর্তন করে তা আসলে স্থায়ী হয়ে যায়। ফিলিস্তিনিরা জানে, নিরাপত্তা দমন যখনি শুরু হয় তার উদ্দেশ্য তেল আবিবের সম্প্রসারণ, ইহুদিকরণ ও বসতিস্থাপন। ফিলিস্তিনিরা বশংবদ আরবদের মত ইসরাইলিদের কথা বিশ^াস করে না যে রকম শত শত কথা তারা এতকাল বলে এসেছে।
এবার ফিলিস্তিনিরা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য তাদের নেতাদের নির্দেশের অপেক্ষা করেনি। তারা বিভক্ত নেতাদের স্বার্থের উপরে জনগণের স্বার্থকে স্থান দেয়। তারা গাজা বা রামাল্লাহ থেকে নির্দেশ পাবার অপেক্ষা করেনি। তারা জেরুজালেম এবং পশ্চিম তীর থেকে গণঅভ্যুত্থান শুরু করে। তরুণ, বৃদ্ধ ও নারীরা পাথর ছোঁড়ার জন্য সার বেঁধে দাঁড়ায় এবং ইসরাইলি সৈন্যদের সামনে ¯েøাগান দিতে থাকে।
ক্রোধ দিবসের সে দিনটিতে জেরুজালেম এক রণাঙ্গনে পরিণত হয়। বিষয়টি শুধু নামাজ আদায় নয়, তার চেয়েও অনেক বড় কিছু হয়ে দাঁড়ায়। ফিলিস্তিনিরা তাদের আরব পরিচয়ের প্রতীক তাদের রাজধানী জেরুজালেম এবং প্রথম কিবলাহ আল আকসা মসজিদের উপর তাদের পূর্ণ অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে নামে।
ফিলিস্তিনিরা জানে যে বহু আরবই তাদের জাতীয় স্বার্থ বিস্মৃত হয়েছে। আল আকসা মসজিদের ব্যাপারে ইসরাইলের গৃহীত ব্যবস্থার ব্যাপারে তাদের সরকারী প্রতিক্রিয়া হবে ওয়াশিংটনে একটি টেলিফোন কল, একটি ভীতু বক্তব্য সম্বলিত বিবৃতি এবং শান্তির আহবান। জেরুজালেম ও পবিত্র স্থানগুলো নিয়ে এ লড়াইয়ের ফল কি হবে তা নিয়ে কেউ ভাবছে না। তাদের দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের ইতিহাস ক্রমাগত ব্যর্থতা ও দুর্ভোগের ইতিহাস।
ফিলিস্তিনে গোষ্ঠিগত বিরোধ ও বিভিন্ন গ্রæপের দলাদলির যুগে জেরুজালেমের মুফতি ও সেবাস্তিয়ার আর্চবিশপ আজ এক ভাষায় বলছেন। আমরা এক জাতি এবং চার্চ অব রিজারেকশনের মত আল আকসা ফিলিস্তিনিদের পবিত্র স্থান। তা আজ ইহুদিদের দ্বারা অপবিত্র হচ্ছে এবং ফিলিস্তিনের সকল মুসলিম ও খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে ইহুদিরা ষড়যন্ত্র করছে।
চার্চগুলো থেকে এখন নামাজের আযান দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে আল আকসায় মুসলমানদের প্রবেশ বন্ধের প্রতিবাদ করে তা খুলে না দেয়া পর্যন্ত জেরুজালেমের মুফতি সকল মসজিদ বন্ধ রাখার আহবান জানান।
জেরুজালেম ও আল-আকসা ফিলিস্তিনিদের ক্রোধের তলোয়ারে শান দিচ্ছে এবং গণঅভ্যুত্থানের ইচ্ছাকে জোরদার করছে। ক্রোধ দিবসে ফিলিস্তিনি রাজধানীতে সংঘটিত ঘটনাবলী ফিলিস্তিনি সংগ্রামে নতুন গতিবেগ সঞ্চার করবে। নেতানিয়াহু বুঝতে পারবেন যে জাবারিন জনগণ ভাঙ্গবে না বা তাদের দমন করা যাবে না। আর শত বছরের যুদ্ধ যা শুরু হয়েছে ১৯১৭ সালে , ২০১৭ সালে তা শেষ হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৪ জুলাই জেরুজালেমে গোলাগুলির ঘটনায় ৩ ফিলিস্তিনি ও ২ ইসরাইলি পুলিশ নিহত হয়। এ ঘটনায় তান্ডব চালায় ইসরাইলি সৈন্যরা। এ সময় সংঘর্ষে আরো ৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়। আহত হয় ২০ জন। এরপর আল আকসা মসজিদে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ২১ জুলাই শুক্রবার জুমআর নামাজ আল আকসা মসজিদে আদায় করতে না পেরে মসজিদের সামনের পথে নামাজ আদায় করে। আল আকসা মসজিদে নিরাপত্তা ব্যবস্থার নামে ইসরাইল সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে। এর প্রতিবাদে নতুন করে শুরু হয় প্রতিবাদ। দেখা দেয় উত্তেজনা। জাতিসংঘসহ বিশে^র বিভিন্ন মহল থেকে এর বিরুদ্ধে ওঠে। জাতিসংঘ মঙ্গলবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিল যে শুক্রবারের জুমআর নামাজের আগে আল আকসা সমস্যার একটি সমাধান করতে না পারলে এক সর্বনাশা পরিণতি অপেক্ষা করছে। সর্বশেষ খবরে জানা যায়, ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ বুধবার আল আকসা মসজিদের প্রবেশপথে স্থাপিত সিসি ক্যামেরা অপসারণ করেছে এবং ফিলিস্তিনিদের মসজিদে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে। সূত্র : মিডল ইস্ট মনিটর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।