চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
আতিকুর রহমান নগরী
\ শেষ কিস্তি \
হজ্বে ক্বেরান এর পরিচয়: ক্বেরানের শাব্দিক অর্থ: মিলানো, মিশ্রন করা। পরিভাষায় মিক্বাত হতে একসাথে হজ্ব ও ওমরার নিয়ত করে ইহরাম বেধে উভয়টিকে একই ইহরামে সমাপ্ত করাকে ক্বেরান বলে।
সর্বোত্তম হজ্ব কোনটি: তিন প্রকারের হজ্বের মধ্যে কোনটি সর্বোত্তম তা নিয়ে ইমামদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।
ইমাম আবু হনিফা (রহ.)’র মতে হজ্বে ক্বেরান হচ্ছে সর্বোত্তম হজ্ব। এরপর তামাত্তু তারপর ইফরাদ। কেননা নবিয়ে করিম (সা.) বিদায় হজ্বের সময় ক্বেরান হজ্ব করেছেন এবং তার পরিবারবর্গকেও তা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাছাড়া এটা পালন করা খুবই কষ্টকর। কারণ এতে দুটি ইবাদত একসাথে করা হয়।
ইমাম শাফি ও ইমাম মালিক (রহ.)’র মতে ইফরাদ হচ্ছে সর্বোত্তম। এরপর তামাত্তু, তারপর ক্বেরান। এখানে ইমামে আযম (রহ.) এর মতটিই গ্রহনযোগ্য।
ক্বেরান হজ্বের প্রথম কাজ: ক্বেরানের মধ্যে সর্বপ্রথম ওমরার কাজ সম্পন্ন করে দিতে হবে, তারপর হজ্বের কাজ শুরু করতে হবে। এ কারণে কোন ব্যক্তি প্রথমে হজ্বের নিয়তে তাওয়াফ করলেও উমরার তাওয়াফই হবে।
ক্বেরানকারির ক্বোরবানির বিধান: ক্বেরানকারিগন ক্বোরবানির দিবসে হজ্ব ও ওমরা উভয়ের জন্য ক্বোরবানি করবে। কেননা আল্লাহতা’লা তাকে একই সময়ে একই ইহরামে হজ্ব ও ওমরা দুটিই আদায় করার সুযোগ দিয়েছেন। আই আল্লাহর শুকরিয়া হিসেবে তার উপর একটি ক্বোরবানি ওয়াজিব হবে। আর যদি ক্বোরবানির সামর্থ না থাকে তাহলে দশটি রোযা রাখতে হবে। এগুলোর মধ্যে তিনটি হজ্বের দিন সমূহে তথা সাত, আট ও নয় তারিখে রাখতে হবে। পবিত্র ক্বোরআনে ইরশাদ হয়েছে “ফামান তামাত্তাআ বিল ওমরাতি ইলাল হাজ্বি ফামাস তাইসারা মিনাল হাদয়ি ফামাল লাম ইয়াজিদ ফা সিয়ামু সালাসাতি আইয়্যামিন ফিল হাজ্বি ওয়াসাব আতিন ইলা রাজা’তুম তিলকা আশারাতুন কামিলাহ”। অর্থাৎ “যে ব্যক্তি হজ্বের সাথে ওমরাকে একত্রিত করে উপহবে হবে সে তার সাধ্যানুযায়ি ক্বোরবানি দেবে। আর যে ব্যক্তি ক্বোরবানি দিতে অক্ষম হবে সে হজ্বের সময় তিনদিন রোযা রাখবে আর যখন তোমরা হজ্ব হতে প্রত্যাবর্তন করবে তখন আরও সাতটি রোযা রাখবে।
ক্বেরান নিয়তকারি ওমরা ছেড়ে দিলে তার হুকুম: ক্বেরান পালনকারি যদি মআয় প্রবেশ না করে সোজা আরাফায় চলে যায় তবে তার ওমরা বাতিল ও মুফরিদ হিসেবে গন্য হবে। এ ওমরা ছেড়ে দেয়ার কারণে তার উপর একটি দম ও পূনরায় ক্বাযা ওয়াজিব হবে। কেননা সে নিয়তের মাধ্যমে তার উপর ওয়াজিব করে নিয়েছিল আর ওয়াজিব পরিত্যাগের জন্য ক্বাযা ওয়াযিব হয়েছে। আর যদি মক্কায় দাখিল হয়ে ওমরার অধিকাংশ কাজ করার পূর্বেই আরাফায় চলে আসে তাহলে উপরোক্ত হুকুম প্রযোজ্য হবে, তবে ওমরার তাওয়াফের অধিকাংশ যেমন: সাত চক্করের স্থলে চার চক্করের পর আরাফায় চলে গেলে তার ওমরা বাতিল হবে না। বরং ক্বোরবানির দিবসে তা পূরন করে দিবে।
হজ্বে তামাত্তুর পরিচয়: তামাত্তুর আভিধানিক অর্থ উপকৃত হওয়া বা লাভবান হওয়া। শরিয়তের দৃষ্টিতে তামাত্তু বলা হয় হজ্বের মাসসমূহে তথা শাওয়াল, যিলক্বদ ও যিলহজ্ব মাসে মিক্বাত হতে শুধু ওমরার ইহরাম বেধে ওমরার কার্যাবলি সম্পাদন করে হালাল হয়ে যাওয়া। এরপর যিলহজ্ব মাসের আট তারিখে পূনরায় ইহরাম বেধে হজ্ব সমাপন করা।
তামাত্তুকারি তাওয়াফের সাথে সাথে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দেবে: তামাত্তু আদায়কারি হাজ্রে আসওয়াদ চুম্বনের পর ওমরার তাওয়াফ শুরু করার সাথে সাথে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দেবে। মহানবী (সা.) হতে অনুরুপ বর্ণিত আছে। ইমাম (রহ.) বলেন: ‘বাইতুল্লাহ শরিফের প্রতি দৃষ্টি পড়ার সাথে সাথে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দেবে।
দমের হুকুম: তামাত্তু আদায়কারির উপর শুকরিয়া স্বরুপ ক্বিরান আদায়কারির ন্যায় একটি ক্বোরবানি করা ওয়াযিব। যদি সে ক্বোরবানি করতে অক্ষম হয় তাহলে ক্বোরবানির দিনের পূর্বে তিনটি এবং বাকি সাতটি রোযা পরে রাখতে হবে।
আইয়্যামে হজ্বের বিভিন্ন নামসমূহ: ১. যিলহজ্বের আট তারিখকে ‘ইয়াউমুত তারউইয়্যাহ’। ২.নয় তারিখকে ‘ইয়াউমুল আরাফাহ’। ৩. দশ তারিখকে ‘ইয়াউমুন নাহ্র’। ৪. এগারো তারিখকে ‘ইয়াউমুল ওকুফ’। ৫. বারো তারিখকে ‘ইয়াউমুল নাফরিল আওয়াল’ এবং ৬. তেরো তারিখকে ‘ইয়াউমুল নাফরিস সানি’ বলে।
হজ্বে তামাত্তু বাতিল হওয়ার কারণ: তামাত্তুকারি হাদি প্রেরন না করে হজ্বের মাসে ওমরার কাজ সমাপন করে নিজ দেশে ফিরে গেলে তার তামাত্তু বাতিল হবে। আর যদি হাদির জানোয়ার প্রেরন করে তাহলে ইমাম আবু হানিফা ও আবু ইউসুফ (রহ.)’র মতে তার তামাত্তু বাতিল বলে গণ্য হবে।
লেখক: প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।