পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
![img_img-1719938001](https://old.dailyinqilab.com/resources/images/cache/169x169x3_1678437663_IMG-20230310-WA0005.jpg)
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : টানা বৃষ্টিতে পানির নিচে তলিয়ে গেছে রাস্তা। ফুটপাতেও হাঁটু পানি। এর সঙ্গে মিশেছে নর্দমা আর ম্যানহোলের উপচানো পানির সাথে নগরের সব ময়লা। এই গা-ঘিনঘিনে পানি কোথাও হাঁটু অবধি, কোথাও বা কোমর ছুঁই ছুঁই। পানি দেখে অনেক এলাকায় যেতেই রাজি নয় রিকশা চালকরা। সিএনজি তো রাস্তার মাঝেই বিকল হয়ে পড়ছে। আর যাঁরা বাসে উঠেছেন তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে ডুবে যাওয়া রাস্তা দেখেছেন। টানা নয় ঘণ্টার বর্ষণে রাজধানীর রাজপথে এভাবেই চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে রাজধানীবাসীকে। নগরীর চিপাগলি, বস্তি, ব্যাংক পাড়া মতিঝিল, অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি কিংবা প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদচারণা সচিবালয় থেকে সংসদ ভবন এলাকা বাদ যায়নি কোনো এলাকাই। গতকাল (বুধবার) সকালে বৃষ্টির মধ্যে ঘর থেকে বেরিয়েই কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর পানির সামনে পড়তে হয় শহরের বাসিন্দাদের। পানিবদ্ধতার সাথে কর্মস্থলে ছুটতে থাকা মানুষগুলোকে ভোগান্তি পোহাতে হয় যানজটেও। লঘুচাপের প্রভাবে ঢাকাসহ সারা দেশে গত রোববার থেকেই বর্ষণ চলছিল। এর মধ্যে মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে ঢাকায় শুরু হয় টানা বৃষ্টি। বুধবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকায় ৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গত দুইদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হলেও গতকাল ভোর রাত থেকে শুরু হয় ভারী বৃষ্টি। ফলে রাজধানীর অনেক রাস্তাঘাট ও নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে যায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন নগরীর অফিসগামী মানুষ ও স্কুলগামী ছাত্রছাত্রী-অভিভাবকরা। টানা ৯ ঘণ্টার বৃষ্টিতেই পানিতে তলিয়ে যায় রাজধানীর অধিকাংশ রাস্তা। প্রবল বৃষ্টিতে রাজধানীর শাহবাগ, মালিবাগ, মৌচাক, নিউমার্কেট, শান্তিনগর, মিরপুর, ফকিরাপুল, রাজারবাগ, নাখালপাড়া, মোহাম্মদপুর, রামপুরা, খিলগাঁও, বাসাবো, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর, কাজলা, ডেমরা, পুরান ঢাকার নাজিউদ্দিন সড়কসহ অধিকাংশ রাস্তা তলিয়ে যায় পানির নিচে। এতে ছন্দপতন হয় রাজধানীবাসীর জনজীবনে। প্রবল বৃষ্টি আর বৃষ্টির পানিতে রাস্তা ডুবে যাওয়ায় রাস্তাগুলোতে গাড়ি চলাচল ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক কম। তাই অফিসগামী মানুষ অনেক চেষ্টা করেও নির্ধারিত সময়ে পাননি যানবাহন। ফলে অনেকেই সময়মতো পৌছাতে পারেননি অফিসে। তবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে স্কুলগামী ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকরা। সকাল থেকেই বৃষ্টি থাকায় স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীদের বৃষ্টিতে ভিজে স্কুলে যেতে দেখা যায়। স্কুল কোচ ছাড়া যাদের স্কুলে যেতে হয় তাদের ভোগান্তির শেষ ছিল না। ভিজে একাকার অভিভাবকরা সন্তানকে নিয়ে স্কুলে গিয়েছেন। এ সুযোগে পোয়াবারো হয়েছে রিকশাওয়ালাদের। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেক টাকা ভাড়া হাঁকিয়েছেন তারা। বিপদে পড়ে অনেককে তাই মেনে নিতে হয়েছে অভিভাবক ও স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীদের।
পরিস্থিতি দেখার জন্য ধানমন্ডি এলাকায় গিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকনকেও হাঁটু পানিতে নামতে হয়। পানিবদ্ধতার জন্য একটানা বৃষ্টিকে দায়ী করে শিগগিরই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
রাজধানীর পানিবদ্ধতার বিষয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, পরিস্থিতি অস্বাভাবিক। আমি প্রমিজ করছি, আগামী বছর এবারের মতো দুর্ভোগে পড়তে হবে না। আমরা সার্ভে করে দেখেছি, ঢাকা শহরের প্রায় ৪৬ খালের মধ্যে ১৮টি খালের উন্নয়ন করতে হবে। এদিকে ঢাকার পয়ঃনিষ্কাশন ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার দায়িত্ব ওয়াসা তথা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকায় পানিবদ্ধতার দায় নিতে নারাজ দুই মেয়রই।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উন্নয়ন কাজের জন্য বেহাল রাস্তায় ছোটখাটো দুর্ঘটনাও ঘটছে। এর মধ্যে গণপরিবহন কম থাকায় চরম আকার ধারণ করে মানুষের দুর্ভোগ। সকাল সাতটায় রাজধানীর মিরপুর থেকে মতিঝিল অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেন রেজাউল ইসলাম। তিনি বলেন, বাসা থেকে বের হয়েই পড়তে হয় দুর্ভোগে। বৃষ্টির কারণে কোনো যানবাহন পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে দ্বিগুণ দেওয়ায় একটি সিএনজি পায়। তবে সিএনজি পেলেও যাত্রা সুখকর ছিল না। বৃষ্টিতে রাস্তায় পানি জমে আর গর্তের কারণে নাজেহাল হতে হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে বৃষ্টির পাশাপাশি যানজট ভোগান্তির মাত্রা বাড়িয়ে দেয় আরও কয়েক গুণ। সকাল সাতটা থেকেই রাজধানী সারাদিন প্রকট যানজটের কবলে ছিল। রবিন নামের একজন জানান, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কে সকাল সাতটা থেকেই গাড়ি চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। সাত মসজিদ সড়কসহ আশপাশের এলাকার রাস্তাগুলোও ছিল চরম যানজটের কবলে। মোটরসাইকেলে করেও মাত্র চার কিলোমিটার রাস্তা যেতে দেড় ঘণ্টা সময় লেগেছে বলে জানান তিনি।
পান্থপথের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরি করে আলিম। সকালে মহাখালীর বাসা থেকে অফিসে পৌঁছেছেন সোয়া দুই ঘণ্টায়। তিনি জানান, ভারি বৃষ্টির কারণে রাস্তায় যানবাহন অন্য দিনের তুলনায় কম। ফলে গাড়ি পেতেই সবার সমস্যা হচ্ছে। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পানিবন্ধতার কারণে যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে দীর্ঘ সময়। বিজয় সরণীর মোড় থেকে ফার্মগেইট বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত এক কিলোমিটার যেতেই আমার লেগেছে ৫৫ মিনিট।
সরকারি চাকুরিজীবী আজিজুর রহমানের দক্ষিণ বনশ্রী থেকে গুলশান এক নম্বরে যেতে সময় লেগেছে প্রায় দুই ঘণ্টা। প্রগতী সরণিতে পানি জমে থাকায় ওই সড়কে দীর্ঘ যানজটের কথা জানান তিনি। বিমানবন্দর সড়কে বনানীগামী রাস্তা যানজটে একপ্রকার অচল হয়ে থাকতে দেখা যায় বেলা ১০টার পর। শেওড়া বাসস্ট্যান্ডে যাত্রী ওঠানামার জন্য বাসগুলো এলোমেলোভাবে থামানোয় খিলক্ষেত থেকে শেওড়া পর্যন্ত যানজট ছিল।
উন্নয়ন কাজ চলায় যমুনা ফিউচার পার্কের পর থেকে প্রগতি সরণির প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তায় যানজট থাকায় তার চাপ পড়ে সড়কের অন্যান্য অংশেও। মেরুল বাড্ডা থেকে পল্টন মোড়ে আসতে অন্য সময় ৪০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা লাগলেও বুধবার দুই থেকে তিন ঘণ্টা লাগছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
মুকুল হক নামে রামপুরার এক বাসিন্দা বলেন, বিপদ হয়েছে অফিসযাত্রীদের। রাস্তায় গাড়ি থমকে আছে। তার ওপর রাস্তা জুড়ে উন্নয়নের বিড়ম্বনা। কাদা পানি মাড়িয়ে সড়কে চলতে হচ্ছে। ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজের জন্য মালিবাগের পুরো এলাকাতেই নাজুক পরিস্থিতি। এর মধ্যে কোথাও কোথাও হাঁটু পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। শাস্তিনগর ও মতিঝিল এলকার অবস্থাও একই রকম ছিল।
নয়া পল্টন আর কারওয়ান বাজারের মত গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সড়কে পানি জমায় যানজট ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের সব এলাকায়। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের সামনের সড়কে, অর্থাৎ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়নের পাশের রাস্তায়ও পানি জমে ছিল। সচিবালয়ের ভেতরে জমে যাওয়া পানি সরাতে ডাকা হয় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের।
ব্যাংক কর্মকর্তা সায়েম খান বলেন, এমনিতেই রাস্তার যে অবস্থা, এর মধ্যে বৃষ্টি হলে তো ঢাকা শহর সমুদ্র হয়ে যায়। এ নিয়ে কারো মাথা ব্যথা আছে বলে আমার মনে হয় না। এদিকে ইস্কাটন, পান্থপথ, রাজাবাজার ও রায়ের বাজারে ভেতরের প্রায় সব গলিতে জমে যায় পানি। স্থানীয় বাসিন্দাদের বাসা থেকে বের হওয়াই কঠিন হয়ে পড়ে। কোথাও কোথাও পানি ঢুকে পড়ে বাড়ির নিচতলাতেও। পশ্চিম রাজাবাজার এলাকার এক বাড়ির তত্ত¡াবধায়ক সাইফুল ইসলাম বলেন, চারপাশের সব সড়কেই পানি। অনেকগুলো বাড়িতেও পানি ঢুকেছে। পুরো মৌসুমে এবার এভাবে পানি জমছে। এখন আমাদের বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করতে হবে। তার আগে তো পানি নামবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।