Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোলার স্কেটিংয়ের আয়ের উৎস বিদ্যুৎ!

| প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

জাহেদ খোকন : বাংলাদেশের প্রায় ৪২টি ক্রীড়া ফেডারেশন সরকারী ও পৃষ্ঠপোষকদের অনুদানে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করলেও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে রোলার স্কেটিং ফেডারেশন। তারা নিজেদের আয়ের উৎস নিজেরাই বের করে নিয়েছে। পল্টন ময়দান সংলগ্ন নব-নির্মিত শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্সের ছাদে সৌর বিদ্যুত উৎপাদন করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে তা বাইরেও বিক্রি করছে তারা। আর সেই টাকায় ফেডারেশনের রক্ষণাবেক্ষণ ও কর্মচারী খরচ উঠে আসছে। এমনটাই জানালেন রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আসিফুল হাসান। তার দেয়া তথ্য মতে, চলতি বছরের শুরুতে মাত্র ৭০ দিনে নির্মিত শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্সের ছাদ থেকে প্রতিদিন ২০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। যার মধ্যে ফেডারেশনের কাজে ব্যয় হয় ৮০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ। বাকি ১২০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ ঢাকা পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিশন কোম্পানী লিমিটেডের (ডিপিডিসি) কাছে বিক্রি করে রোলার স্কেটিং ফেডারেশন। এই বিদ্যুৎ বিক্রি থেকে প্রতিমাসে আয় হয় প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। যে টাকায় এই কমপ্লেক্সের রক্ষনাবেক্ষনসহ যাবতীয় খরচ মেটানো হয়। তাকিয়ে থাকতে হয় না জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) অনুদানের অর্থের দিকে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্সের ছাদে বসানো হয়েছে ৮০০ সোলার প্যানেল। প্রতিটি প্যানেল আয়তনে ৪ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ২ ফুট প্রস্থ। আহমেদ আসিফুল হাসান জানান, কমপ্লেক্সটি নির্মাণের সময় এর ছাদে সোলার প্যানেল বসানোর পরিকল্পনা ছিল রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজিএস) আবুল কালাম আজাদের। তারই ফল ভোগ করছে ফেডারেশনটি। যা দেশের ক্রীড়াঙ্গনে দৃষ্টান্ত হয়েই থাকলো। অথচ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম এলাকাস্থ বেশ ক’টি ইনডোর স্টেডিয়ামের ছাদ বছরের পর বছর খালিই পরে রয়েছে। এখানকার শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী জাতীয় হ্যান্ডবল স্টেডিয়াম, শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ ইনডোর স্টেডিয়াম (টিটি ও ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন), মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়াম, কাবাডি ও ভলিবল স্টেডিয়ামের ছাদেও সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেত। যদি সংশ্লিষ্ট ফেডারেশনের দায়িত্বশীলরা উদ্যোগী হতেন এবং তাদের সদইচ্ছা থাকতো। কিন্তু না, তারা কেউই নিজস্ব আয়ের উৎস খুঁজে বের করতে পারেননি। সুদুরপ্রসারী চিন্তা করতে পারেনি এসকল ভেন্যুর কর্তারা। এনএসসি’র বাৎসরিক অনুদানের অর্থ নেয়াতেই ব্যস্ত থাকেন তারা। নিজেদের ফেডারেশনের উন্নতির জন্য কোন আয়ের উৎস খুঁজে বের করার কথা ভাবতে পারেন না। বাংলাদেশ রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের কর্মকর্তারা যেটি করে দেখালেন তা দেশের সব ক্রীড়া ফেডারেশনের কর্তাদের সামনে উদাহরন হয়েই থাকবে।
শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্স নির্মাণকালে অনেকেই তা বাঁকা চোখে দেখেছে। এমনকি তখন দেশের বেশ ক’টি মিডিয়া নেতিবাচক মন্তব্যও করেছে। কিন্তু প্রায় আড়াই মাস সময়ের মধ্যে এতবড় একটি স্থাপনা নির্মাণ করে ফেললো রোলার স্কেটিং ফেডারেশন। মূলত এটি নির্মাণে বড় ভুমিকা রয়েছে ফেডারেশনের সভাপতি আবুল কালাম আজাদের। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সুদুরপ্রসারি পরিকল্পনা দিয়েছেন। এবং নিজে উদ্যোগী হয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ রেখেছেন সার্বক্ষণিক। যাতে গেল ফেব্রæয়ারিতে শেষ হওয়া চতুর্থ রোলবল বিশ্বকাপকে সামনে রেখে দ্রæত সময়ে কমপ্লেক্সটি নির্মাণ হয়। এমনটাই জানান সাধারন সম্পাদক আহমেদ আসিফুল হাসান। তিনি বলেন, ‘আমরা এনএসসিকে প্রস্তাব দেব তারা যেন বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশন জানায়, যদি এমন সোলার প্যানেল স্থাপন করতে চায় ফেডারেশনগুলো তাহলে তাদেরকে আমরা সার্বিক সহযোগিতা করবো।’
চতুর্থ রোলবল বিশ্বকাপকে সামনে রেখে নব-নির্মিত শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্স থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিপণনের ঘটনা দেশে এই প্রথম। ফেডারেশনের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ দেশের বাইরে থাকায় এ ব্যাপারে তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে যুগ্ম সম্পাদক আশরাফুল আলম মাসুম বলেন, ‘যদি কোন ফেডারেশন আমাদের সহযোগিতা চায় আমরা তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। এটি করতে পারলে ফেডারেশনেরই লাভ। আমরা নিজেরা এর উপকারিতা পাচ্ছি।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ