পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দি নিউ আরব : ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল -আবাদি মসুলে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে বিজয় ঘোষণার এক সপ্তাহেরও বেশী সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে, ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন আগ্রাসনের পর দেশটিতে শুরু হওয়া অরাজকতা থেকে ইরাক বেরিয়ে আসতে পারেনি। মসুলে ইরাকি সেনাবাহিনীর যুদ্ধপরাধ অব্যাহত রয়েছে। ইরাকি সামরিক ইউনিটগুলো, যারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জবাবদিহি করে, নিরস্ত্র ও নিরীহ লোকদের নিষ্ঠুর পন্থায় হত্যা করছে যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গ্রæপগুলোর নিন্দার পথ খুলে দিয়েছে। দি নিউ আরব পত্রিকার ইরাক বিষয়ক রিপোর্টে এ কথা বলা হয়েছে।
আইএস বাগদাদের আশপাশসহ ইরাকের বিভিন্ন স্থানে যখন বোমা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তখন আইএসের বিরুদ্ধে সরকার ও তার মিত্রদের মধ্যকার ফাটল আবার দেখা দিতে শুরু করেছে। কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকারের (কেআর জি) প্রতিনিধিত্বকারী কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রত্যাশিত স্বাধীনতার গণভোট ক্রমবর্ধমান ভাবে দুর্বল হয়ে পড়া বাগদাদের ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে আরো সুবিধা আদায়ের আলোচনার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হবে। ইরান সমর্থিত ইরাকি কর্মকর্তারা ক্ষমতাশালী মন্ত্রণালয়ের পদগুলো দখল করায় এবং সউদি আরবসহ আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সাথে আচরণে দলীয় কর্মসূচিকে জোরদার করায় এ দুর্বলতা আরো গভীর হচ্ছে।
বর্বরতার ক্ষমা নেই
মসুল থেকে আইএসকে পরাজিত করার আবাদির ঘোষণার এক সপ্তাহের একটু বেশী সময় পর দেখা যাচ্ছে আইএস দমন অভিযানে ইরাকি সেনাবাহিনীকে বিরাট মূল্য দিতে হয়েছে যা বাগদাদ যা বলছে তার চেয়ে অনেক বেশী।
আইএস পুনর্দখলিকৃত শহরের সর্বত্র ইরাকি সেনাবাহিনী ও সামরিকিকৃত ফেডারেল পুলিশ বাহিনীর উপর, বিশেষ করে মসুলের পশ্চিম অংশে হামলা অব্যাহত রেখেছে। সরকার আইএসের শেষ সদস্যদেরও নির্মূলের চেষ্টা করতে থাকার কারণে সেখানে গোলাগুলি চলার ও জঙ্গি বিমানের বোমাবর্ষণের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। সন্ত্রাস দমন অভিযানে স্থানীয় গোয়েন্দাদের সম্পৃক্ত করা ও তাদের সহায়তা নেয়ার গুরুত্ব বিবেচনা করলে এটা সমস্যাজনক বলে প্রমাণিত হতে পারে যা এখনো বর্বরতা সংঘটনকারী বাহিনীর জন্য পাওয়া সহজ নয়।
মসুলে আইএসের প্রচন্ড প্রতিরোধ এবং ইরাকি সৈন্যদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় প্রাণহানি ঘটানোর জবাবে আবাদি গত বৃহস্পতিবার শপথ ব্যক্ত করেছেন যে বাগদাদ খুনি সন্ত্রাসীদের জন্য ক্ষমা ঘোষণা করবে না। আইএসের বেপরোয়া জঙ্গিরা প্রায়ই তাদের আশ্রয় থেকে বেরিয়ে এসে অ্যাসল্ট রাইফেল থেকে গুলিবর্ষণ করছে এবং সুইসাইড ভেস্ট পরিহিত হয়ে আত্মঘাতী হামলা চালাচ্ছে। তিনি ইরাকের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে বোমাবর্ষণের কারণে সংঘটিত গণধ্বংস বিষয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সমালোচনা উড়িয়ে দিয়েছেন।
আইএস যোদ্ধাদের ক্ষমা প্রদর্শন না করার আবাদির অঙ্গীকারের অল্প পরই তিনি নিশ্চয়তা দেন যে উগ্রপন্থ’ীদের আত্মসমর্পণ বিবেচনা করা হবে না এবং তারা লড়াইয়ের আরো বিস্তার ঘটাচ্ছে। নিরাপত্তা বিভাগের মধ্যে কর্মরত গোষ্ঠিগত ঘাতকদল তাদের আটককৃত লোকদের হত্যার ফুটেজ প্রকাশ করতে শুরু করেছে। ধৃত ও আটককৃত লোকদের সন্দেহভাজন আইএস যোদ্ধা আখ্যায়িত করে ইরান সমর্থিত উগ্রপন্থী শিয়া ইসলামী মিলিশিয়ার সদস্য সম্বলিত ইরাকি বাহিনী তাদের ব্রিজ থেকে ছুঁড়ে ফেলা ও গুলি করে হত্যার নিজেদের সম্পৃক্ততার দৃশ্য চিত্রায়ন করছে।
মসুলের হাজার হাজার লোক বাস্তচ্যুত
নিউইয়র্ক ভিত্তিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, তারা ভিডিওগুলো বিেেশ্লষণ করেছে ও ঘটনাস্থল সনাক্ত করেছে। এটা নিশ্চিত যে বিচার বহির্ভূত এ বর্বরতা মসুলে সংঘটিত হয়েছে। এই বর্বরতার ভিডিও মানবাধিকার মনিটরিংকারী গ্রæপগুলোর ব্যাপক নিন্দার সম্মুখীন হয়েছে এবং শাস্তির আগে অপরাধ নির্ধারণে বিচার ব্যবস্থার ব্যবহার ও যথাযথ প্রক্রিয়ার প্রতি অসম্মান প্রদর্শনের সমালোচনার শিকার হয়েছে।
গণ ধ্বংস ও সমন্বিত শাস্তি
আইএসের নিকট থেকে মসুল পুনরুদ্ধারের অভিযান শহরটিকে ধ্বংস করেছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, যুদ্ধের সময় ইরাক সরকার ও মার্কিন নেতৃত্বাীন জোটসহ সকল পক্ষই আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করেছে যার ফল হয়েছে বিপুল সংখ্যক বেসামরিক লোকের মৃত্যু। অ্যামনেস্টি আইএসকে নির্মূল করতে জোটকে অত্যধিক সামরিক শক্তি ব্যবহারের জন্য অভিযুক্ত করেছে যা বেসামরিক লোকদের অকারণ ঝুঁকির মধ্যে নিক্ষেপ করে।
অ্যামনেস্টি বেসামরিক প্রাণহানির বিষয়টি অগ্রাহ্য করার জন্য জোটের তীব্র সমালোচনা করে বলে, আইএস-বিরোধী জোটভুক্ত দেশগুলোর ( তাদের ইরাকি মিত্ররাসহ) উচিত অ্যামনেস্টির দালিলিকৃত অভিযোগগুলোর দ্রæত ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করা। যুদ্ধেরও নিয়মকানুন আছে এবং যখন তা লংঘিত হয় অবশ্যই তার বিচার হওয়া উচিত।
একটি নিরপেক্ষ মনিটরিং গ্রæপ অ্যামনেস্টির দাবি সমর্থন করেছে যে আইএস বিরোধী লড়াইয়ে বেসামরিক লোকজন নির্বিচারে নিহত হয়েছে । ইরাক ও সিরিয়ায় বেসামরিক প্রাণহানি মনিটরিংকারী লন্ডন ভিত্তিক সংগঠন এয়ারওয়ারস বলে, শুধু জুন মাসেই ৭৪৪ জন নিহত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার দাবি করে যে ২০১৪ সালে তারা আইএসের বিরুদ্ধে ইরাকে অভিযান শুরুর পর থেকে মাত্র ৬০৩ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। মসুলের অধিবাসী প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ থেকে মনে হয় তাদের কথা আর অ্যামনেস্টি ও এয়ারওয়ারস-এর বিবরণ কাছাকাছি। তারাও মসুল ধ্বংসের জন্য জোটের বিমান হামলাকে দায়ী করেছেন।
যুদ্ধের কারণে বহু লাখ লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছ, তাদের মধ্যে লাখ লাখ লোক রয়েছে উদ্বাস্তু শিবিরগুলোতে। এইচআর ডবিøউ নিশ্চিত করেছে যে ইরাক সরকার আইএস জঙ্গিদের পরিবারবর্গের সদস্যদের পুনর্বাসন শিবিরে পাঠিয়েছে। সরকারপন্থী গ্রæপগুলো আইএস-এর সাথে সম্পর্কিত পরিবারগুলোর উৎখাত দাবি করার পর কমপক্ষে ১৭০টি পরিবারকে বলপূর্বক মসুলে পুবে একটি শিবিরে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
এই পুনর্বাসন শিবিরগুলোতে আইএস জঙ্গিদের পরিবারগুলোকে নিবিড় মানসিক ও মতাদর্শিক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং তারা যদি এতে সাড়া দেয় তারপর তাদের সমাজে পুনর্বাসিত করা হবে বলে মসুল জেলা কাউন্সিলের নির্দেশনায় বলা হয়েছে।
এদিকে এসব শিবির মানবাধিকার সংগঠন ও কর্মীদের শংকিত করে তুলেছে। তারা উল্লেখ করেন যে তাদেরকেমসুলেরর নিনেভেসহ দিয়ালা, সালাহউদ্দিন, আনবার ও বাবিল প্রদেশের গভর্নরেটগুলোতে রাখা হয়েছে। এসব ক্যাম্পে যারা আছে তাদের প্রায় সবাইই সুন্নি আরব। কিছু কুর্দি ও তুর্কমেনও রয়েছে। এসব পরিবারের সংখ্যা কয়েকশ’ হবে। এইচআর ডবিøউ এ ব্যবস্থাকে তাদের আত্মীয় স্বজনের জন্য তাদের সামষ্টিক শাস্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
কুর্দিদের উল্লাস, ইরানের রমরমা
এদিকে কুর্দিরা কেআরজি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় আসন্ন স্বাধীনতার গণভোট অনুষ্ঠান করবে এটা নিশ্চিত যা কিছু বিশ্লেষক অনেকদিন থেকেই সন্দেহ করছিলেন। তেহরানে কুর্দি সরকারের সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাজেম দাবাঘ বলেন, পরিকল্পিত গণভোট আসলে বাগদাদকে কুর্দিদের সাথে জ¦ালানি বিদ্যুত ভাগাভাগিতে বাধ্য করার কৌশল ছাড়া কিছু নয়।
নাজেম এএফপিকে বলেন, কেআরজি আসলে ঐক্যবদ্ধ, ফেডারেল ইরাকের অংশ হয়ে থাকাকেই অগ্রাধিকার দেয়। তবে প্রয়োজন মোতাবেক গণভোটকে একটি কূটনৈতিক লাঠি হিসেবে ব্যবহার করে যা দিয়ে ক্রমাগত দুর্বল হয় পড়া বাগদাদ সরকারকে ঘা দেয়া যায়।
কেআরজি যে তিনটি গভর্নরেট নিয়ে কেআরজি গঠিত শুধু সেগুলোতেই নয়, যে সব ভূখন্ড ও এলাকায় ইরাকের শাসন ছিল নাম মাত্র , কিন্তু ২০১৪ সালে আইএসের অভিযানের মুখে ইরাকি সৈন্যরা পালিয়ে যাওয়ার পর কেআরজি কার্যত নিয়ন্ত্রণ নেয় , এ বছর সে সব এলাকায় গণভোট অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করেছে। এ সব এলাকার মধ্যে রয়েছে আরব, কুর্দি ও তুর্কমেন অধ্যুষিত তেলসমৃদ্ধ এলাকা কিরকুক।
মসুল পুনর্দখলে কুর্দিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তারা মসুল অভিমুখে অগ্রসর হওয়ার সময় পথের মধ্যে পড়া বহু ছোট শহর ও গ্রাম পরিষ্কার করতে ইরাকি সেনাবাহিনীকে সাহায্য করেছে। তারা তেল রাজস্ব ভাগাভাগি নিয়ে আবাদির সাথে বিরোধে লিপ্ত। মসুলের পতন তাদের ঘরের দরজা থেকে আইএসকে সরিয়ে নিয়েছে। তবে হাবিজায় তাদের জন্য একটি বড় রকম হুমকি রয়ে গেছে।
ইরাক সরকারের অভ্যন্তরে ইরানপন্থী রাজনীতিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় এবং বাগদাদের পক্ষে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালনা করায় কেন্দ্রীয় সরকারের দুর্বলতা আরো বেড়েছে।
ইরাকি স্বরাষ্ট্রম›ত্রী কাসিম আল-আরাজি সোমবার নিরাপত্তা সহযোগিতা , গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি, সউদি আরব ভ্রমণেচ্ছুু ইরাকিদের ভিসা আবেদন সহজ করার বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক বৈঠক করেন। আরাজি বদর গ্রæপের একজন সদস্য।
ইরান সমর্থিত ইসলামী গ্রæপগুলোর সাথে সউদি আরবের সম্পর্ক উষ্ণ করার বিষয়টি কাতারের ঘটনায় ব্যাহত হয়েছে। রিয়াদ ইরাকে আরাজি ও বদরগ্রæপসহ ইরানের ছায়াশক্তিগুলোর প্রতি বাস্তববাদী অবস্থান গ্রহণ করে । ইরানপন্থী শিয়া জিহাদিদের ১৮০০ সদস্যকে হজ ভিসা দেয়ার জন্য সউদি আরব ইরাক সরকারের সাথে কাজ করেছে।
রিয়াদ যখন বাগদাদ অনুমোদিত পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সেসের সহযোগী ইরাকি শিয়া গ্রপগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করছে তখন সুন্নী মুসলিম বিশ^কে সউদি আরবের নেতৃত্ব প্রদান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একদিকে সউদি আরব ইরানের বিরোধিতা করার দাবি করে অন্যদিকে সে ইরাকে ইরানের ছায়াশক্তিগুলোকে সমর্থন করছে যারা কিনা ইরাকের সুন্নি আরবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও বর্বরতার দায়ে অভিযুক্ত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।