চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
মাওলানা এসএম আনওয়ারুল করীম
\ এক \
ইসলামের আগমন হয়েছে হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের সম্পর্ক স্থাপন করতে, গোত্রের সাথে গোত্রের মিল করতে এবং একই প্লাটফর্মে সকলের অবস্থান স্থির করতে। ইসলাম এসেছে পরাজয়, কাপুরুষতা, দুর্বলতা ও বিচ্ছিন্নতার উপকরণ দূরীভূত করতে। ইসলাম এসেছে আল্লাহর ইবাদত, ইলায়ে কালিমাতুল্লাহ, হকের বিজয়, সৎকাজ ও সেই আদর্শ প্রতিষ্ঠার পথ প্রদর্শন করতে। যার ছায়ায় মানুষ বসবাস করবে নিরাপদে। যেই সুমহান রিসালাত নিয়ে ইসলামের নবী মুহাম্মদ স. আগমন করেছেন তা বাস্তবায়ন করতে এই ঐক্যবদ্ধ একটি শক্তি অর্জিত হয়। এর সব কিছুই প্রত্যেক মুসলমানের মধ্যে সংযোগ ও সম্পর্ক স্থাপনের জন্য। আর এ সম্পর্ক হতে হবে একটি স্বতন্ত্রধর্মী সম্পর্ক। যা শালীন, মার্জিত, বর্ধনশীল ও চিরস্থায়ী।
পৃথিবীতে জাগতিক ও পার্থিব যত সম্পর্ক রয়েছে, তার আহŸায়কদের বিয়োগেই সেই সম্পর্কেরও সমাপ্তি ঘটে। তার বিয়োগের মধ্য দিয়ে তার প্রয়োজনও বিলুপ্ত হয়। ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্ক সেগুলোর মতো নয়। এটি তো এমন এক সম্পর্ক, যা রক্ত, বর্ণ, ভাষা, দেশ, পার্থিব স্বার্থ এবং অন্য যেসব জিনিস সম্পর্ককে দৃঢ় করে সেসব কিছুর ঊর্ধ্বে। এ সম্পর্কের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, মুসলমানদের মধ্যে মজবুত ও সুদৃঢ় বন্ধন সৃষ্টি করা। এটি তাদেরকে এমন একটি অবস্থানে পৌঁছায় যা বিদ্রোহীদের প্রতি কঠোর ও আপসহীন করে।
নৈতিক বন্ধনসমূহের প্রথম হলো ঈমানের বন্ধন। আর এটাই হলো সেই কেন্দ্রবিন্দু, যাতে মিলিত হয়েছে সকল মুমিন। সুতরাং ঈমান মুমিনদেরকে এমন এক ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে, যা গোত্রীয় ভ্রাতৃত্বের চেয়ে সুদৃঢ়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছেÑ
‘নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই।’ [সূরা হুজুরাত : আয়াত ১০]
কুরআন মাজীদের অন্যত্র ইরশাদ হয়েছেÑ
‘ঈমানদার নারী ও পুরুষ একে অপরের বন্ধু।’ [সূরা তাওবা : আয়াত ৭১]
হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছেÑ
‘এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই।’ [বুখারী]
আর ঈমানের বৈশিষ্ট্য হলো সংঘবদ্ধ করা ও ঐক্য সৃষ্টি করা; বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত করা নয়। এ প্রসঙ্গে নবী করীম সা. ঘোষণা করেছেনÑ ‘মুমিন বন্ধু হয় এবং বন্ধুত্ব করে। আর যে বন্ধু হয় না এবং বন্ধুত্ব করে না তার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই।’ [মুসনাদে আহমাদ]
নবী করীম সা. আরো ঘোষণা করেছেন যে, মুমিন তার অপর ভাইয়ের শক্তি। যেমন বর্ণিত হয়েছেÑ
‘এক মুমিন অপর মুমিনের জন্য প্রাচীরতুল্য। যা একে অপরকে বাঁধে শক্ত করে।’ [বুখারী]
প্রকৃত মুসলমান তাঁর অপর মুসলমান ভাইয়ের অনুভবে অনুভূত হয়, তার ব্যথায় ব্যথিত হয়, আনন্দে আনন্দিত হয়, শোকে শোকাহত হয় এবং নিজেকে মনে করে তার ভাইয়ের অঙ্গ। হাদিসে এসেছেÑ ‘মুমিনদের পরস্পরের আন্তরিকতা, সহানুভূতিশীলতা ও সহমর্মিতার উপমা হলো একটি দেহের ন্যায়। যখন তার কোনো অঙ্গ ব্যথিত হয়, সারা দেহে তা ছড়িয়ে পড়ে এবং জেগে ওঠে তার প্রতিটি অঙ্গ।’ [মুসলিম ও বুখারী]
ইসলাম তার ভ্রাতৃত্ববোধের প্রতি আহŸান ও সুশৃঙ্খল পরিচালনার মাধ্যমে সেই সম্পর্ককে করে আরো মজবুত ও শক্তিশালী। ইসলাম প্রত্যেক ওই কাজ থেকে বিরত রাখে, যা তার শক্তিকে দুর্বল করে এবং প্রভাবকে ক্ষুণœ করে। কারণ, ঐক্য সর্বদা পরিচালিত হয় আল্লাহর তত্ত¡াবধানে এবং ঐক্যের ওপর থাকে আল্লাহর রহমতের হাত। আর এটাই হলো মানুষের প্রাকৃতিক স্বভাব এবং এতেই হলো রহমত।
মুসলমানদের পারস্পরিক ঐক্য কখনো কখনো ছোট হয়। আর ঐক্য যে অবস্থায়ই হোক না কেন, তা একাকীত্বের চেয়ে উত্তম। পারস্পরিক সম্পর্ক যতই বাড়তে থাকে ততই উত্তম ও কল্যাণকর। ইরশাদ হয়েছেÑ ‘দু’জন একজনের চেয়ে উত্তম। তিনজন দু’জনের চেয়ে উত্তম। চারজন তিনজন থেকে উত্তম। সুতরাং তোমরা দলবদ্ধ হয়ে থাক। কারণ, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা আমার উম্মতকে কেবল হেদায়াতের ওপরই দলবদ্ধ করবেন।’ [ইবনে মাজাহ]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।