Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বলকানে আধিপত্য রক্ষার প্রতিযোগিতায় রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্ব

| প্রকাশের সময় : ২০ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : বলকান অঞ্চলের মধ্য দিয়ে গ্যাস সরবরাহে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে রীতিমতো যুদ্ধে নেমেছে রাশিয়া ও পশ্চিমের দেশগুলো। উভয় পক্ষই এ অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব জারি রাখতে ভূরাজনৈতিক এজেন্ডাগুলো সামনে নিয়ে আসছে। বলকান অঞ্চলে রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশগুলোর দৌড়ে মস্কোর সামনে একের পর এক প্রতিবন্ধকতা হাজির হচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলো নানা কৌশলে বলকান অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। বলকান অঞ্চলের দেশ মন্টেনেগ্রো এরই মধ্যে ন্যাটোতে যোগ দিয়েছে। আরেক দেশ মেসিডোনিয়ার নতুন সমাজতান্ত্রিক সরকার পূর্বসূরির রুশপন্থী মনোভাব থেকে সরে আসতে চাইছে। অন্যদিকে বলকান দেশগুলোকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে (ইইউ) সদস্যপদ দেয়া অথবা স্থানীয়ভাবে বিনিয়োগের মতো লোভনীয় প্রস্তাব দিতে পারে পশ্চিমের দেশগুলো। ক্রোয়েশিয়া এরই মধ্যে ইইউতে যোগ দিয়েছে। আলবেনিয়া, বসনিয়া, মেসিডোনিয়া, কসোভো ও সার্বিয়ার মতো পশ্চিমা বলকান দেশগুলোও ইইউতে যোগদান প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপে অবস্থান করছে। এখানে রাশিয়ার তুরুপের তাস জ্বালানি। ইইউ দেশগুলোর জ্বালানি চাহিদার মধ্যে এক-চতুর্থাংশই গ্যাস। অন্যদিকে ইউরোপের সার্বিক গ্যাস চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ সরবরাহ করে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি কোম্পানি গ্যাজপ্রম। ইইউর চাপে কয়লাচালিত বিদ্যুেকন্দ্রগুলো বন্ধ করতে বাধ্য হওয়ার ফলে বলকান অঞ্চলে গ্যাসের চাহিদা আরো বাড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এতে করে রাশিয়াই লাভবান হবে। রাজনৈতিক ঝুঁকি পরামর্শক প্রতিান নোভা ইউরোপার প্রধান টিমোথি লেস এ প্রসঙ্গে বলেন, সার্বিয়া, বসনিয়া, বুলগেরিয়া ও মেসিডোনিয়া গ্যাসের ক্ষেত্রে রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। রাশিয়া এখন গ্যাস সরবরাহের নির্ভরশীলতাকে রাজনৈতিক নির্ভরশীলতায় রূপ দিতে চাইছে এবং এ দেশগুলোর সঙ্গে পশ্চিমাদের অন্তরঙ্গতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও নানাভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। কিন্তু এর পরও পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাবে বলকান অঞ্চলের জ্বালানি খাতে রাশিয়া প্রত্যাশিত মাত্রায় প্রভাব বিস্তার করতে পারছে না। পাইপলাইন ছাড়া এ অঞ্চলের বেশির ভাগ দেশে গ্যাস সরবরাহ করতে পারবে না রাশিয়া। এ সুযোগটি কাজে লাগাতে পাল্টা প্রকল্প দাঁড় করিয়ে মস্কোর স্থান দখলের চেষ্টা করছে পশ্চিমা বিশ্ব। পশ্চিমা দেশ ও রাশিয়ার মধ্যে এই স্বার্থের দ্বন্দ্বে মাঝখান থেকে বলকানের গ্যাস বাজারের কৌশলগত গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। আলবেনিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্যাসকল মিলো এএফপিকে জানান, পূর্ব ও পশ্চিমকে সংযুক্ত করা জ্বালানি করিডোরের ক্রসরোডে দক্ষিণপূর্ব ইউরোপ অবস্থিত। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে খুব আকর্ষণীয় না হলেও ইউরোপের অন্যান্য কৌশলগত বাজারের ট্রানজিট টেরিটোরি ও গ্যাস মজুদের দিক থেকে এ অঞ্চলের গুরুত্ব অনেক। এ অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বিস্তারে জ্বালানিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে রাশিয়া। যার সুবাদে বেশ কয়েক বছর দখলদারিত্বের এই খেলায় জয়লাভ করেছে রাশিয়া; এবার এ পথে এগিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো। এরই মধ্যে এ অঞ্চলে বেশ কয়েকটি গ্যাস সরবরাহ প্রকল্প চালু করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। ফলে স্বাভাবিকভাবেই জ্বালানি চাহিদা পূরণের জন্য এ অঞ্চলের মস্কো নির্ভরশীলতা কমে আসবে। এ ধরনের প্রকল্পের মধ্যে ইইউর সহায়তায় তৈরি ট্রান্স-অ্যাড্রিয়াটিক পাইপলাইন (টিএপি) উল্লেখযোগ্য। এ প্রকল্পটির মাধ্যমে তুরস্ক হয়ে গ্রিস, আলবেনিয়া, অ্যাড্রিয়াটিক অঞ্চল ও ইতালিতে আজারবাইজানের গ্যাস সরবরাহ করা হবে। ২০২০ সালে প্রথম দফায় গ্যাস সরবরাহ করা হবে। ৮৭০ কিলোমিটারের এ পাইপলাইনটির মাধ্যমে বার্ষিক এক হাজার ঘনমিটার গ্যাস সরবরাহ করা যাবে। গবেষণা প্রতিান আইআরআইএসের নিকোলাস মাজুচি বলেন, এটি একটি ভূরাজনৈতিক প্রকল্প। এর মাধ্যমে গ্যাস নিরাপত্তার দিক থেকে আরো শক্তিশালী হবে ইইউ। পশ্চিম অঞ্চল এখন ককেশাসকে ধরার চেষ্টা করছে। একসময় তারা কাস্পিয়ান অথবা মধ্যপ্রাচ্যের গ্যাস খাতেও নিয়ন্ত্রণ রাখবে। অন্যদিকে বলকান অঞ্চল থেকে আলবেনিয়া পর্যন্ত গ্যাস রিং তৈরি করতে টিএপি প্রকল্পটি আরো বর্ধিত করার পরিকল্পনা করছে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র। এ রিংয়ের ভেতর মন্টেনেগ্রো, বসনিয়া ও ক্রোয়েশিয়া থাকবে। এছাড়া ক্রোয়েশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় কির্ককে ইইউর আংশিক অর্থায়নে একটি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনেরও পরিকল্পনা রয়েছে। টার্মিনালটি স্থাপিত হলে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার প্রতিযোগিতা ব্যাপক মাত্রা পাবে। এছাড়া গত মে মাসে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহে যৌথ পাইপলাইন স্থাপনের জন্য চুক্তিতে পৌঁছে বলকান অঞ্চলের সাত দেশ। মার্কিন উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির সহায়তায় প্রকল্পটি নির্মিত হবে; যা বলকান অঞ্চলে রুশ প্রভাব আরো স্তিমিত করবে। অন্যদিকে রাশিয়াও হাত গুটিয়ে বসে নেই। তুরস্কের জলসীমার ভেতর দিয়ে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহের জন্য গত অক্টোবরে তুরস্কের সঙ্গে চুক্তি সই করে দেশটি। চলতি মাসে তুরস্ক সফরে এসে সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট তুর্কস্ট্রিম পাইপলাইনটির সঙ্গে তার দেশকেও যুক্ত করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এএফপি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ