দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্্শী
আকায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল্্ জামায়াতের দিক দর্শন অনুসারে একথা সুস্পষ্টভাবে বলা যায় যে, আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের কুরবত, সান্নিধ্য ও নৈকট্য লাভের জন্য ‘ওয়াসিলা’ বা মাধ্যম একান্ত প্রয়োজন। ওয়াসিলা ব্যতীত নৈকট্য লাভ মোটেই সম্ভব নয়। এই প্রসঙ্গটি আল কুরআনে এ ভাবে বিবৃত হয়েছে।
যথা : ১। ইরশাদ হয়েছে : “আল্লাহপাক আদমকে, নূহকে, এবং ইব্রাহীমের বংশধর এবং ইমরানের বংশধরকে বিশ্ব জগতে মনোনীত করেছেন। তারা একে অপরের বংশধর। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” (সূরা আলে ইমরান : আয়াত ৩৩, ৩৪, রুকু-৪, পারা-৩)।
স্মরণ রাখা দরকার যে, হযরত মূসা (আ:)-এর পিতার নাম ছিল ইমরান। তিনি ফিরাউনের সাধারণ কর্মচারী ছিলেন। কিন্তু নবী ছিলেন না। আবার হযরত ঈসা (আ:)-এর মাতা বিবি মারয়াম (আ:)-এর পিতার নামও ছিল ইমরান তিনিও নবী ছিলেন না। উপরোক্ত আয়াতে ইমরান বলতে উভয় ইমরানের অর্থই গ্রহণ করা যায়।
২। ইরশাদ হয়েছে : “কেউ আল্লাহ এবং রাসূলের আনুগত্য করলে সে নবী, সত্যনিষ্ঠ, শহীদ ও সৎকর্ম পরায়ন যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন, তাদের সঙ্গী হবে, এবং তাঁরা কত উত্তম সঙ্গী : ইহা আল্লাহর অনুগ্রহ। জ্ঞানী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।” (সূরা নিসা : আয়াত ৬৯, ৭০, রুকু-৯, পারা ৫)।
৩। ইরশাদ হচ্ছে : “হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয়কর, তাঁর নৈকট্য লাভের উপায় অন্বেষন কর, ও তাঁর পথে সংগ্রাম কর, যাতে তোমরা সফল কাম হতে পার।” (সূরা মায়িদাহ : আয়াত ৩৫, রুকু-৬, পারা-৬)।
৪। ইরশাদ হচ্ছে : “তাদেরকেই আল্লাহপাক সৎপথে পরিচালিত করেছেন, সুতরাং তুমি তাদের পথের অনুসরণ কর, বল-এর জন্য আমি তোমাদের নিকট পারিশ্রামিক চাই না, ইহা শুধু বিশ্বজগতের জন্য উপদেশ। (সূরা আনয়াম : আয়াত ৯০, রুকু-১০, পারা-৭)
৫। ইরশাদ হচ্ছে : “বল কে তোমাদেরকে আকাশ ও পৃথিবী হতে জীবনোপকরণ সরবরাহ করে অথবা শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি কার কর্তৃত্বাধীন কে জীবিতকে মৃত হতে নির্গত করে, এবং কে মৃতকে জীবিত হতে নির্গত করে এবং কে সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে? তখন তারা বলবে, আল্লাহ; বল, তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না? (সূরা ইউনুস : আয়াত ৩১, রুকু-৪, পারা-১১)।
৬। ইরশাদ হচ্ছে : রাসূলগণের ঐ সকল বৃত্তান্ত তোমার নিকট বর্ণনা করছি, যদ্বারা আমি তোমার অন্তরকে দৃঢ়তর করি-এর মাধ্যমে তোমার নিকট এসেছে সত্য, এবং মুমিনদের জন্য এসেছে উপদেশ ও সাবধান বাণী।” (সূরাহুদ : আয়াত ১২০, রুকু-১০, পারা-১২)।
৭। ইরশাদ হয়েছে : “রাসূলগণের বৃত্তান্তে বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য আছে শিক্ষা, ইহা (কুরআন) এমনবাণী মিথ্যা রচনা নয়, কিন্তু মুমিনদের জন্য ইহা পূর্ববর্তী গ্রন্থে যা আছে তার সমর্থন এবং সমস্ত কিছুর বিশদ বিবরণ, হিদায়াত ও রহমত।” (সূরা ইউসুফ : আয়াত ১১১, রুকু-১২, পারা ১৩)।
৮। ইরশাদ হচ্ছে : মূসাকে আমি আমার নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছিলাম এবং বলে ছিলাম তোমার সম্প্রদায়কে অন্ধকার হতে আলোতে আনয়ন কর, আর তাদেরকে আল্লাহর দিবসগুলোর দ্বারা উপদেশ দাও এতে তো নিদর্শন রয়েছে পরম ধৈর্যশীলও পরম কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য।” (সূরা ইবরাহীম : আয়াত ৫, রুকু-১, পারা- ১৩)।
৯। ইরশাদ হয়েছে : “মুমিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকর্ম করবে তাকে আমি নিশ্চয়ই আনন্দময় জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব।” (সূরা নাহল : আয়াত ৯৭, রুকু-১৩, পারা-১৪)।
১০। ইরশাদ হচ্ছে : আমি মানুষের জন্য এই কুরআনে বিভিন্ন উপমার দ্বারা আমার বাণী বিশদভাবে বর্ণনা করেছি। মানুষ অধিকাংশ ব্যাপারেই বিতর্ক প্রিয়।” (সূরা কাহ্্ক : আয়াত ৫৪, রুকু-৮, পারা-১৫।
১১। ইরশাদ হচ্ছে : বর্ণনা কর এই কিতাবে উল্লিখিত মারয়ামের কথা, যখন সে তার পরিবারবর্গ হতে পৃথক হয়ে নিরালায় পূর্ব দিকে এক স্থানে আশ্রয় নিল।” (সূরা মারয়াম : আয়াত ১৬, রুকু ২, পারা ১৬)
১২। ইরশাদ হয়েছে : “স্মরণ কর, এই কিতাবে উল্লেখিত ইবরাহীমের কথা, সে ছিল সত্য নিষ্ঠ, নবী। (সূরা মারয়াম : আয়াত ৪১, রুকু-৩, পারা-১৬)।
১৩। ইরশাদ হয়েছে : স্মরণকর, এই কিতাবে উল্লেখিত মুসার কথা, সে ছিল বিশুদ্ধ চিত্ত এবং সে ছিল রাসূল, নবী। (সূরা মারয়াম : আয়াত ৫১, রুকু-৪, পারা-১৬)।
১৪। ইরশাদ হয়েছে : “তবে কি তারা কুরআন সম্বন্ধে অভিনিবেশ সহকারে চিন্তা করে না? নাকি তাদের অন্তর তালাবদ্ধ।” (সূরা মোহাম্মাদ : আয়াত ২৪, রুকু-৩, পারা ২৬)।
উপরোক্ত আয়াত সমূহের মর্মের প্রতি লক্ষ্য করলে সুস্পষ্ট বুঝা যায় যে, আল্লাহ পাকের নৈকট্য প্রাপ্তির জন্য ‘ওয়াসিলা’ নির্ধারণ করা একান্ত দরকার। প্রসঙ্গত : ‘ওয়াসিলা’ বলতে কী বুঝায় এবং ওয়াসিলা নির্ধারণের বৈধ উপায় কি কি এবং তা অনুসরণের প্রতিও দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখা বাঞ্ছনীয়। নি¤েœ এতদ সংক্রান্ত বিষয়াবলীর পর্যায়ক্রমিক বিবরণ পেশ করা হলো।
১। আরবী ‘তাওয়াসসূল’ শব্দের অর্থ কাউকে মাধ্যম ও ওয়াসিলা নির্ধারণ করা বা কাউকে ওয়াসিলা বানানো। ‘তাওয়াসসূল’ শব্দের মূল অক্ষর ‘ওয়াস্লুন’ অর্থাৎ ওয়াও, সিন, লাম। এ থেকে ওয়াসিলা শব্দটিও গঠিত। আরবী অভিধানে ওয়াসিলা শব্দটির কয়েকটি অর্থ-পাওয়া যায় যথা : (ক) ওয়াসিলা শব্দের অর্থ স¤্রাট বা শাসকের নিকট কোন ব্যক্তির মান, মর্যাদা। (খ) ব্যক্তির স্তর বা মর্যাদা। (গ) নৈকট্য প্রাপ্ত হওয়া, নৈকট্য লাভ করা। যেমন বলা হয়, ওয়াসালা ফুলানুন্্ ইলাল্লাহি ওয়াসিলাতান। অর্থাৎ অমুক ব্যক্তি এমন আমল করেছে, যার দ্বারা সে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করেছে। আর আল ওয়াসিল শব্দের অর্থ আল্লাহর প্রতি আকৃষ্ট, অনুরক্ত; আল্লাহর নৈকট্য লাভে সচেষ্ট, সচেতন ব্যক্তি। (লিসানুল আরব-১১/৮৬৬)।
২. আম্বিয়া কিরাম, সিদ্দীকীন, শহীদগণ ও নেককার ব্যক্তিগণকে ওয়াসিলা বানানো বৈধ, অর্থাৎ তাদের ওয়াসিলায় আল্লাহর নিকট দুআ কামনা করা জায়েয আছে। এ প্রসঙ্গে ইমাম সুবকী বলেন, আল্লাহ তা’য়ালার সমীপে দুআতে নবী করিম (সা:) কে ওয়াসিলা বানানো সর্বোত্তম। একমাত্র ইবনে তাইমিয়্যাহ ছাড়া প্রাচীন ও পরবর্তীকালীন উলামাদের কেউ এটাকে অস্বীকার করেননি। সুতরাং সকল আলেমের পূর্বে তিনিই অবৈধতার মতের উদ্ভাবক। (রদ্দুল মুহতার-৫/৩৫০) গায়ের নবীর মান-মর্যাদার ওয়াসিলা দেয়াতেও কোন দোষ নেই। যদি আল্লাহপাকের নিকট তার মান মর্যাদার বিষয়টি পরিজ্ঞাত হয়। যেমন উক্ত ব্যক্তির নেককার হওয়া, পরিশুদ্ধ হওয়া বা ওলি হওয়া বিষয়টি সু-স্পষ্ট ও দ্বিধামুক্ত হওয়া। (রুহুল মা’আনী-৬/১২৮)।
৩. নেককার ব্যক্তিদের জীবদ্দশাতেও তাওয়াসসূল জায়েয, তাদের ইন্তিকালের পরও জায়েয। হাদীস শরীফে এসেছেÑ
(ক) হযরত আব্বাস (রা:) এর ঘটনা হতে এ বিষয়টি বুঝা যায় যে, নেককার ও আহলে বাইতিন নবুওয়্যাতের ওয়াসিলা দিয়ে সুপারিশ কবুলের আবেদন করা মুস্তাহাব। (ফাতহুল বারী-৩/১৫১) (খ) নবী ও সালেহ বান্দাদের মৃত্যুর পরে আল্লাহ তা’য়ালার দরবারে তাদের ওয়াসিলা দেয়া জায়েয। (বারিকায়ে মাহমুদিয়্যাহ-১/২৭০ উদ্ধৃতি তাসকীনুস সুদূর-৪৩৫)। (গ) আমাদের ও আমাদের মাশাইখদের মতে, আল্লাহর নিকট দু’আর মধ্যে নবী, সালেহ, সিদ্দীক, শহীদগণকে তাদের জীবিত অবস্থায় ও ইনতিকালের পর ওয়াসিলা বানানো জায়েয। দু’আয় তাওয়াসসূলের পদ্ধতি হল, দুআর সময় বলবে- হে আল্লাহ তা’য়ালা, তোমার দরবারে আমার দু’আ কবুলের জন্যও আমার প্রয়োজন পূরণের জন্য অমুকের ওয়াসিলা ধরছি। অথবা হে আল্লাহ, অমুকের মানমর্যাদার ওয়াসিলায় তুমি আমার দু’আ কবুল কর, আমার প্রয়োজন পূরণ কর। (আল মুহান্নাদ-আলাল মুফান্নাদ-১২-১৩)।
৪. তাওয়াসসূলের আরো ও একটি সহজ পদ্ধতি হল এই যে, আল্লাহ পাকের নিকট এভাবে দুআ করবে : হে আল্লাহ তাবারাকা ও তা’য়ালা! আমি অমুক অলীর ওসিলায় তোমার দরবারে আমার দুআ কবুল হওয়ার আরজু করছি। স্বীয় প্রয়োজন পূরণের আবেদন করছি। অথবা অনুরূপ কোন শব্দ বা বাক্যে আল্লাহর নিকট দু’আ করবে। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে এসেছেÑ
(ক) হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা:) আব্বাস (রা:) এর ঘটনায় বলেন- (আমরা দু’আর সময় বললাম) হে আল্লাহ পাক! আমরা তোমার দরবারে আমাদের নবী (স:)-এর ওয়াসিলা ধরে বৃষ্টির জন্য দু’আ করতাম, তুমি আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করতে। এখন আমাদের নবীর চাচার ওয়াসিলা ধরে নিবেদন করছি, আমাদের বৃষ্টি দাও। বর্ণনাকারী বলেন : অনন্তর তাদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হল। (সহীহ বুখারী-১/১৩৮) (খ) হযরত উসমান বিন হানিফ বর্ণনা করেন-জনৈক অন্ধ ব্যক্তি রাসূল (স:) এর দরবারে আগমন করে নিবেদন করলেন : আল্লাহর নিকট দু’আ করুন তিনি যেন আমাকে সুস্থ করে দেন। নবী (সা:) বললেন : তুমি যদি ইচ্ছা কর তবে ধৈর্য ধারণ করতে পার, আর এটাই তোমার জন্য উত্তম। লোকটি আবার আবেদন করলেন : আপনি দু’আ করুন। রাসূল (সা:) তাকে সুন্দর রূপে ওজু করে নি¤œরূপ দু’আ করতে নির্দেশ দিলেন- ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে যাচনা করছি, রহমতের নবী, তোমার নবী মুহাম্মাদ (সা:) এর মাধ্যমে এবং তোমার পানে মুখ করছি। তাঁর ওয়াসিলায় আমার রবের পানে আমার প্রয়োজনে মুখ করলাম যাতে আমার পক্ষে ফয়সালা হয়। হে আল্লাহ! আমার ব্যাপারে তার সুপারিশ কবুল কর। (তিরমিযি-২/১৯৮) (গ) দুআর আদবসমূহের মধ্যে একটি হল, দুআ’র পূর্বে আল্লাহ তা’য়ালার হামদ ও ছানা করা এবং নবীর মর্যাদার ওয়াসিলা ধরা, যাতে উক্ত দু’আ কবুল হয় (হুুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ-২/৬)।
৫. বুযুর্গ ব্যক্তিদের ওয়াসিলাহ না বানিয়ে সরাসরি তাদের কাছে আবেদন করা, তাদের বিপদ হতে মুক্তিদানকারী রূপে ধারণা করা শিরক। (এটা অবশ্য পরিত্যাজ্য ও হারাম)। এ ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছেÑ
(ক) মহানবী (সা:) ইরশাদ করেন-যখন তুমি সুয়াল করতে ইচ্ছা কর, আল্লাহর নিকট সুয়াল কর, যখন সাহায্য প্রার্থনা করতে ইচ্ছা কর আল্লাহর কাছে সাহার্য প্রার্থনা কর। (মেশকাতুল মাসাবীহ-২/৪৫৩) (খ) কিছু মানুষ আছে, যারা নবী ও নেককার ব্যক্তিদের কবর যিয়ারত করতে তাদের কবরের সামনে নামাজ পড়ে, দু’আ করে এবং তাদের নিকট প্রয়োজন পূরণের আবেদন করে, এ জাতি কাজ কোন মুসলিম মনীষীর নিকট বৈধ নয়। কেননা উপাসনা, প্রয়োজন মেটানোর আবেদন করা, সাহায্য কামনা করা, এসবই একমাত্র আল্লাহর সমীপে করতে হবে। (মাজমা’উ, বিহারিল আনোয়ার-২/৭৩)।
৬. আল্লাহ তা’য়ালার যাত, সিফাত, আসমাউল হুসনা, সৎ আমল যথা, সালাত, সাওম, সদকা, যিকির, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, গুনাহ, হতে বিরত থাকা। ইত্যাদিকে তাওয়াসুল করা জায়েজ আছে। এর প্রমাণ হিসেবে- বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত “হাদীসে গার” এ উল্লেখ আছে-তিন ব্যক্তি ঝড়-বৃষ্টি কবলিত হওয়ায় পাহাড়ের এক গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করে। পাহাড় হতে পতিত এক প্রস্তর খÐে গুহার মুখ বন্ধ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত কথা হল, আল্লাহ তা’য়ালা তাদেরকে নেক আমলের ওয়াসিলায় দুআ করার ফলে গুহা হতে মুক্তি দান করেন। (সহীহ বুখারী-২/৮৮৩, সহীহ মুসলিম-২/৩৫৩) এ হাদীসের দ্বারা উলামাগণ দলিল পেশ করেন যে, মানুষের জন্য মুস্তাহাব হল বিপদের সময়ে ও ইস্তিসকা ইত্যাদির সময় নিজের সৎ আমল স্মরণ করে দু’আ করবেও আল্লাহর সমীপে উক্ত নেক আমলকে ওয়াসিলা হিসেবে পেশ করবে। কেননা হাদীসে বর্ণিত ব্যক্তিরা তাই করেছেন। এবং তাদের দুআ আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে। মহানবী (সা:) উক্ত ব্যক্তিদের গুণগান ও উত্তম ফজিলত বর্ণনা প্রসঙ্গেই ঘটনাটি আলোচনা করেছেন। (মুসলিমের নবভী শরাহ-২/৩৫৩) সুতরাং নবীদের তাওয়াসসূল অর্থ হল, তাদের প্রতি ঈমান আনা, তাঁদের আনুগত্য করা, অন্তরে তাঁদের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভালবাসা রাখা ইত্যাদিকে ওয়াসিলা নির্ধারণ করা (ফাতাওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়্যাহ-২৭/১৩৩)।
৭. সৎ আমলের তাওয়াসূল যেমন বৈধ, তেমনি সৎ ব্যক্তিদের তাওয়াসসূলও বৈধ। কেননা সৎ ব্যক্তিদের তাওয়াসসূল প্রকৃত প্রস্তাবে তাদের সৎ আমলেরই তাওয়াসসূল। আসল কথা হলো :
নবী (সা:), অন্যান্য সকল নবী ও সৎ কর্মপরায়ণ ব্যক্তিদেরকে ওয়াসিলা বানানো, তাদের শাফাআত কামনা করা, ফরিয়াদ করা ইত্যাদি দ্বারা কোন মুসলমানের অন্তরে উল্লেখিত অর্থ ছাড়া অন্য কোন অর্থ নেই বা হয় না। একথা বুঝতে যার অন্তর প্রশস্ত হয় না সে নিজের উপর ক্রন্দন করুক। (শিফাউস সিকাম-১২৯, উদ্ধৃতি তাসকিনুস সুদূর-৪০৫)।
(চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।