Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মসুল যুদ্ধে ইরাকি এলিট বাহিনীর ৪০ শতাংশ সৈন্য নিহত দি নিউ আরব ও আরটি

ইরাকি ও জোট বাহিনীর কাজ যুদ্ধাপরাধ : অ্যামনেস্টি

| প্রকাশের সময় : ১২ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইসলামিক স্টেটের (আইএস) কাছ থেকে মসুল জয় করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল আবাদি। কিন্তু এ যুদ্ধে ইরাকি সেনাবাহিনীর কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা প্রকাশ করেনি ইরাক সরকার। এদিকে মার্কিন প্রতিরক্ষা দলিলে দেখা যাচ্ছে, মসুল যুদ্ধে ইরাক তার এলিট বাহিনীর ৪০ ভাগ সৈন্য হারিয়েছে।
মসুল পুনরুদ্ধারের যুদ্ধে ইরাকি সেনাবাহিনীর অগ্রভাগে ছিল কাউন্টার টেরোরিজম সার্ভিস (সিটিএস) নামে পরিচিত এলিট ইউনিট। মার্কিন সেনারা এ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ প্রদান ও অস্ত্র সরবরাহ করেছিল।
বাগদাদ সরকার মসুল যুদ্ধে তাদের সেনাবাহিনীর ক্ষয়ক্ষতির কথা প্রকাশ করেনি। কিন্তু মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের বাজেট দলিলে বলা হয়, মসুল যুদ্ধে ইরাকি এলিট বাহিনীর ৪০ শতাংশ যোদ্ধা নিহত হয়েছে। ঐ দলিলে ইরাকে ২০১৮ সাল থেকে পরবর্তী তিন বছরে ২০ হাজার সৈন্যের একটি বিশেষ বাহিনী গড়ে তুলতে ১২৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার চাওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, মসুলের লড়াইয়ে সিটিএস ৪০ শতাংশ সৈন্য হারিয়েছে। এ বাহিনীর যুদ্ধ ক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে এ পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন হবে। এতে আরো বলা হয়, যুদ্ধে এ বাহিনী যেসব যানবাহন ও সরঞ্জাম হারিয়েছে তা পূরণ করতে এবং অব্যাহত প্রাণহানির মধ্যে নতুন সৈন্য নিয়োগ, তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান ও অস্ত্রসজ্জিত করতে এ অর্থ ব্যবহৃত হবে। ক্টাবর থেকে সিটিএস , ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া, কুর্দি পেশমের্গা , ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনী এবং মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট মসুল থেকে আইএসকে হঠাতে লড়াই করে আসছিল। ইতোমধ্যে মসুলের লড়াইকে দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের পর সর্ববৃহৎ নগর যুদ্ধ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সেখানে আট মাসের যুদ্ধে প্রায় ১০ লাখ মানুষ স্থানচ্যুত হয়েছে। অসংখ্য বেসামরিক লোক প্রাণ হারিয়েছে।
ইরাক সরকার মসুলের যুদ্ধে সরকারী সৈন্য ও আধা সামরিক বাহিনীর নিহতের সংখ্যা প্রকাশ করা থেকে অব্যাহতভাবে বিরত রয়েছে। তবে এ সংখ্যা বিপুল বলে ধারণা করা হয়।
জাতিসংঘ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে এক রিপোর্টে বলে যে শুধু নভেম্বরেই মসুলে ২ হাজার ইরাকি সৈন্য নিহত হয়। এ জন্য ইরাকি সাামরিক বাহিনী জাতিসংঘের সমালোচনা করে। বাগদাদ সরকার বলে, এ সংখ্যা সঠিক নয় এবং অতিরঞ্জিত।
এদিকে সোমবারও মসুলে লড়াই অব্যাহত থাকার কথা বলা হয়। পুরনো শহরের সংকীর্ণ রাস্তায় মার্কিন জঙ্গিবিমানের বোমাবর্ষণ ও গোলাগুলি বিনিময়ের শব্দ শোনা গেছে।
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মসুলে ভুল জায়গায় বোমাবর্ষণ ও মাত্রারিক্ত বোমাবর্ষণের জন্য মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটকে ভর্ৎসনা করে তা সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ বলে মন্তব্য করেছে । সে সাথে সংস্থা বেসামরিক লোকদের জীবন রক্ষায় তাদের ব্যর্থতার কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করার আহবান জানিয়েছে। অ্যামনেস্টি মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা তদন্তের জন্য একটি কমিশন গঠনের প্রস্তাব আনতে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত ৫০ পৃষ্ঠার রিপোর্টে মানবাধিকার সংস্থা মসুল পুনর্দখলের অভিযানে বেসামরিক লোকদের প্রাণহানি ও মানুষের দুর্দশার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। রিপোর্টে বলা হয়, ১৭ মার্চ শুধু একদিনে মসুলের আল-জাদিদা এলাকায় মার্কিন বোমাবর্ষণে কমপক্ষে ১০৫ জন নিহত হয়।
অ্যামনেস্টির মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক পরিচালক লিন মালুফ এক বিবৃতিতে বলেন, ইরাকি ও জোট বাহিনী বেসামরিক লোকদের জীবন রক্ষায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। তার পরিবর্তে তারা তাদের আতংকজনক গোলাগুলি বর্ষণের সম্মুখীন করেছে যা ঘনবসতি সম্পন্ন বেসামরিক এলাকায় কখনো ব্যবহার করা যায় না।
তিনি মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনী ও ইরাকি সেনাবাহিনীর আন্তর্জাতিক আইন লংঘনের কিছু ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, তারা ভুল লক্ষ্যে, বিস্ফোরক অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করে হাজার হাজার বেসামরিক লোককে হত্যা করেছে যা যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পড়ে।
আইএস কর্তৃক আন্তর্জাতিক আইন লংঘন যেমন জোরপূর্বক বিতাড়ন, নির্বিচার গণহত্যা এবং বেসামরিক লোকদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে বলেন, সন্ত্রাসীদের নিষ্ঠুরতা ইরাকি ও মর্কিনি সামরিক বাহিনীর আইনগত দায়বদ্ধতা এড়ানোর কারণ হতে পারে না।
তিনি বলেন, আাইএস লোকদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে বলে সরকারপন্থী বাহিনীগুলোর বেসাামরিক লোকদের প্রতি আইনগত দায়-দায়িত্ব হ্রাস পায় না। তিনি আল জাদিদা বোমাবর্ষণ প্রসঙ্গে বলেন, কোয়ালিশনের দুর্বল পরিকল্পনা বা দায়িত্বহীনতার কারণে বহু বেসামরিক লোকের মৃত্যু ঘটেছে।
লিন মালুফ বলেন, হত্যার মাত্রা সম্পর্কে সত্য উদ্ঘাটন ও বেসামরিক লোকদের হত্যার জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করতে একটি নিরপেক্ষ কমিশন অবিলম্বে গঠন করতে হবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে মসুল যুদ্ধে জড়িত দেশগুলোর কর্তৃপক্ষকে বিপুল সংখ্যক বেসামরিক লোকের মৃত্যুতে তাদের দায়িত্বের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করতে হবে।
উল্লেখ্য, রোববার ইরাকি প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল আবাদির মসুল পরিদর্শনের পর এবং গতকাল ইরাকে বিজয়োৎসব পালন শুরুর মধ্যে অ্যামনেস্টির এ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।
জাতিসংঘের হিসাব মতে, গত অক্টোবরে মসুল পুনর্দখলের অভিযান শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৮ হাজার বেসামরিক লোক নিহত বা আহত হয়েছে। মসুলের ৪৪টি আবাসিক জেলার মধ্যে ১৬টি ব্যাপকভাবে এবং ২২টি মাঝারি রকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।



 

Show all comments
  • শিমুল ১২ জুলাই, ২০১৭, ১:২৭ এএম says : 0
    কবে যে শেষ হবে এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইরাক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ